একাউন্টিং এ একটা কথা আছে; সন্দেহজনক এবং খারাপ ঋণ (doutful and bad debt )। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যারা বাকিতে ব্যবসা করে,হিসাব মিলাতে গেলে ধরে রাখে কিছু অর্থ সংগ্রহ হবে না; যদি সন্দহজনক অর্থ সংগ্রহ হয়ে যায়, এই অর্থ পরের বৎসর লাভের খাতায় দেখানো হয়, না হলে ব্যাবসায়ের লোকসান হিসাবে দেখানো হয়।
জনগণের টাকায় দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবসা পরিচালিত হয়ে থেকে। জনগণ তাদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকে নিরাপদে আমানত রাখে ; এটাই সারা দুনিয়ার প্রচলিত নিয়ম। আগেকার দিনে মানুষ সোনাগহনা, টাকাপয়সা বাড়িতে মাটির নিচে গর্ত করে লোহার সিন্দুকে রেখে দিতো এবং সে যুগে হীরা জহরত, সোনা গহনা মাটির নিচে রেখে দেয়া নিরাপদ মনে করতো। কিন্তু আজকাল ব্যাংকের যুগ , কেউ এভাবে রাখে না, সবাই টাকা পয়সা, ব্যাংকে জমা রাখে । ব্যাঙ্ক এ সব অর্থ জনগণকে ঋণ হিসাবে দিয়ে সুদ ও মূলধন এক সঙ্গে বা কিস্তিতে গ্রহণ করে– এটাই মূলত ব্যাংকের ব্যবসা । এই অর্থ জনগণের , নিরাপদ রাখা -ব্যাংকের দায়িত্ব। এই ঋণ যদি কোনো কারণে সঠিক ভাবে আদায় করা না যায়, তাকে বলা হয় খেলাপি ঋণ।
এই খেলাপি ঋণ আবার কয়েকভাবে বিভক্ত : ক) তিন মাসের মধ্যে অনাদায়ী ঋণ খ) ছয় মাস – এক বৎসর পর্যন্ত অনাদায়ী ঋণ গ) এক বৎসরের থেকে পাঁচ বৎসর বা তার ও অধিক সময় অনাদায়ী ঋণ।
খেলাপি ঋণ অনাদায়ে কারণ :
ক) সহজ লভ্য মনে করে প্রয়োজন না থাকলে ও অতিরিক্ত ঋণ নেয়া খ) ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপন করে ঋণ নেয়া গ) ঋণের অর্থকে দীর্ঘস্থায়ী সম্পদে পরিণত করা , যেমন : জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকের অগোচরে ভিন্ন ব্যাবসায়ে বিনোয়োগ,ঋণ নিয়ে গা ঢাকা দেয়া বা বিদেশে চলে যাওয়া ঘ) এ ছাড়া ও গ্রাহকের নানা কারণে ব্যবসা নষ্ট হওয়া; এ সব কারণে ঋণ খেলাপি হয়।
ক) কিছু সংখ্যক লোক ফাঁকফোকর খুঁজে এবং ঋণ পরিশোধ করতে হবে না ভেবেই ঋণ নিয়ে থাকে খ) ব্যাংকের অদক্ষ্য বা অসাধু কর্মচারী যারা ভালোভাবে কাগজপত্র না দেখে ঋণ দিয়ে থাকে গ) সরকারি বা সমাজের প্রভাবশালী ব্যাক্তি প্রভাব খাটিয়ে ঋণ আদায় করে। এই সব লোক- ঋণ খেলাপির জন্য দায়ী।
খেলাপি ঋণ আদায়ের উপায় :
এ সব ঋণ খেলাপিদের পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ঋণ খেলাপিদের নিজ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করণ এবং বিদেশে ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করে থাকলে তা আদায়ের ব্যবস্থা করণ। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কতৃক সমস্ত রাষ্ট্রীয় বা বাণিজ্যিক ব্যাংকে যে সব নির্দেশনা দিয়ে থাকে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলা। ঋণ খেলাপিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা অতীব প্রয়োজন। সর্বোপরি ঋণ খেলাপিদের সহজ কিস্তিতে ঋণ আদায়ের সময় সীমা বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
খেলাপি ঋণ থেকে রক্ষার উপায় :
ক) রাষ্ট্রীয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক ও ব্যাংকের প্রতিষ্ঠানিক প্রভাব মুক্ত রাখা উচিৎ । খ) সর্বদা যাচাই বাছাই করে ঋণ দেয়া প্রয়োজন যাতে ঋণ আদায়ে সমস্যা না হয়। গ) ঋণ আদায়ে আদালতের শক্ত আইন প্রক্রিয়া, জেল জরিমানা থাকা বাঞ্চনীয়। ঘ) ঋণের বিপরীতে ঋণ গ্রহণকারীর জমাকৃত সম্পদের মূল্যের সঠিক বাজার দর যাচাই করণ থাকলে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় করা সহজ হতে পারে। খেলাপিদের ঋণের প্রভাবে গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় – নেতিবাচক প্রভাব পড়ে , আমানতকারীরা লাভ পাচ্ছেন কম; দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে।