আজকের একটা মজার ঘটনা বলি, আমি কাজ করি Oshawa Downtown এ। সেখানে তেমন একটা বাঙালি দেখা যায়না যেমন দেখা যায় Toronto তে। ওখানে বাংলাদেশি একটা খাবারের দোকান আছে। আজকে দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে আরেক বাঙালি ভাইকে দেখলাম। ওনাকে আমি আগেও দেখেছি তবে কখনও কথা বলা হয়নি। আজকে পাশাপাশি খেতে বসাতে জিজ্ঞাস করি, ভাই আপনি কি বাংলাদেশি? ভাই শুনে মনে হল খুশিই হলেন অবাক হওয়ার চেয়ে। কথা প্রসঙ্গে উনি জানতে পারেন আমি social service field এ কাজ করি। উনি তখন এক বাংলাদেশি ভাইকে সাহায্যের জন্য আমাকে বলেন। উনি বলতে লাগলেন যে কিছুদিন আগে উনি BCCB তে কিছু সংখ্যক লোক RBC Bank এ নিয়োগ দেয়া হবে বলে বিজ্ঞাপন দেন এবং উনার সাথে contact করতে বলেন। Long story short, পরে জানা যায় উনি যার জন্য সাহায্য করার কথা বলেছেন সে আমার আপন ভায়রা ভাই। আমিই আমার ভাইরা ভাইকে উনার পোস্টটা শেয়ার করেছিলাম কারন আমার ভায়রা ভাই বাংলাদেশে একটা ব্যাংক এ জব করতো, এখানে এসে আরও কিছু ডিগ্রি নিয়েছে বা ডিগ্রি আপডেট করেছে social service field এ। কিন্তু সেভাবে এখনও কোন কাজ খুজে পায়নি বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারনে। এখন যেহেতু তার একটা কাজ দরকার জীবিকা নির্বাহের জন্য তাই তাকে বলেছিলাম উনার সাথে যোগাযোগ করতে। উনি আমার ভায়রা ভাই এর লেখাপড়া ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে তাকে তার field এ কাজ করে এমন কারও সাথে connection করাতে চাচ্ছেন। উনি ইতিমধ্যেই একজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলেছেন।
উনি যেটা বললেন, সেটা হল পৃথিবীটা কত ছোট। আসলে আমার লেখার যেটা কারন সেটা হল উনার সাহায্য করার মানসিকতা। আমি জানি এখানে অনেকে আছেন যারা অন্যকে সাহায্য করার জন্য তৈরি আছেন। আপনি যেকোনো সময় যেকোনো অবস্থায় চান না কেন তারা আপনার জন্য সাহায্য করতে উদগ্রীব। আমি এমনও দেখেছি অনেকে তাদের অনেক সমস্যার পরও সাহায্য এর জন্য কোন কার্পণ্য করেনা। দুইটা নাম বললাম এখানে BCCB এর Rimon ভাই এবং আমদের প্রিয় মুকুল ভাই। অনেকে বলেন তাদের একটা স্বার্থ আছে, আমি বলি স্বার্থ তো অবশ্যই আছে। তাদের এই স্বার্থের কারনে যদি কারও উপকার হয় তাহলে তাদের এটা আরও বড় সার্থকতা।
কানাডাতে আসার পর যেটা শুনে আসছি অনেকের কাছে তা হল যে, আমরা বাঙ্গালীরা বাঙ্গালীকে সাহায্য করিনা। অনেকেই বলতে শুনি যে, এই এরিয়ায় থাকবিনা, এখানে অনেক বাঙালি থাকে। এটা বলতে বলতে একেবারে প্রতিষ্ঠিত ধারনা করে ফেলেছে। আমরা সবসময় বলি যে, চাইনীজরা খুবই একতাবদ্ধ, তারা একে অপরকে সাহায্য করে, এমনকি অনেকে Indian বা Sri Lankan দেরও কথা বলে। আমি মনে করি ইহা সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত ধারনা। এটা ঠিক যে, চাইনীজ রা এখানে অনেকদিন ধরে আছে, তাদের তুলনায় আমরা অনেক পিছনে সবকিছুতে। তারা এখানে এসেছে অনেক আগে, সেই তুলনায় আমরা এসেছি অনেক পরে। আমাদের বেশির ভাগই আসি বিভিন্ন skilled categoryযে, ফলে এখানকার প্রাথমিকভাবে যে কাজগুলি করতে হয় তা করতে অনেকেই আমরা ইতস্তত বোধ করি। কিন্তু আমি দেখেছি এই ক্ষেত্রে চাইনীজরা বা শ্রীলংকানরা কম দিধাদন্দে ভুগে। এখানে দেখা যায় বাঙ্গালীদের মধ্যে যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারা প্রতিজনই তাদের একক প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে। তাদের অনেকে চেলেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আমি একটা বাংলা নাটক দেখেছিলাম অনেক আগে। গল্পটা এমন যে শাশুড়ি তার বউমার সাথে অনেক খারাপ আচরন করতো। একদিন শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, উনার জীবনে উনি আগে অনেক শাশুড়ি দ্বারা লাঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছেন। তাই যখন উনি দেখেন উনার বউমা সে প্রতিকুলতা পাচ্ছেন না তখন উনার অবচেতন মনে একটা বউয়ের প্রতি খারাপ আচরন করার প্রবনতা অনুভব করেন। আমি বলছি না যে এখানে সবাই খারাপ বা সবাই সাহায্য করতে চায়। সবকিছুরই ভালো ও খারাপ দিক আছে। তবে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি আমরা আসলে কম সাহায্য কামনা করি অন্য মানুষের কাছে। সেটা হতে পারে আমাদের বিরুপ ধারনার কারনে অথবা সেই ধরনের কোন প্লাটফর্ম না থাকার কারনে।
পরিশেষে আরেকটা ঘটনা বলি আমার পরিচিত এক ইন্ডিয়ান আমাকে একদিন জানালো যে সে এক বাংলাদেশি আপার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছে। পরে আমি যেটা জানলাম আর তা হল, আমি যেই সময়ে এখানে এসে কি করবো এই সিধান্তহীনতায় আছি তারও কয়েক বছর আগে সে এখানে এসে কি করতে হবে তা জেনেছে। পরে আরও জেনেছি সে যার কাছে সাহায্য নিয়েছে তার কাছ থেকে আমরা বাঙ্গালীরা একটু সাহায্য চাইতেই দিধাদন্দে ভুগি বেশি। আমি অনেক আশাবাদী মানুষ, আমি মনে করি এখন আমাদের অনেকে ভাল ভাল অবস্থানে আছে, আমাদের আছে সাহায্য করার জন্য অনেক নিবেদিত প্রান। আমাদের শুধু দরকার ছিল একটা প্লাটফর্ম এর এবং BCCB তার অনেকটাই পুরন করেছে। আমাদের এখন প্রয়োজন নিজেকে প্রকাশ করার এবং সাহায্য কামনা করা। সবশেষে সবাইকে ভাষার এবং ভালোবাসার মাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার মতামত কামনা করছি।
চলবে………