বাংলাদেশে এখন শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান তাদের ভুয়া দৃষ্টি নন্দন এবং চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনাকে আকৃষ্ট করবে, এবং অতি সহজে আপনাকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা ইউরোপ পাঠাবে। আপনার কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেবে এবং আপনার ভাগ্য খুব ভালো হলে আপনি হয়তো ঢাকা পর্যন্ত আসতে পারবেন, তা না হলে টাকা ঠিকই যাবে শুধু আপনি ঘরে বসে থাকবেন আর বিলাপ পাড়বেন। এই লেখার শেষে কানাডা আসার ২/১ টি ভুয়া বিজ্ঞাপনের নমুনা দেওয়া হলো যেগুলি কিনা আমার কোনো এক আত্মীয়কে পাঠানো হয়েছিল। কানাডাতে $৮০,০০০ বেতনে চাকরি দিয়ে আনতে চায়, এবং সহজে। আমি আজ ১৫/২০ বছর ধরে খোঁজাখুঁজি করছি যে মাত্র $১০ বেতনে কোনো শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে আনতে দেয় কিনা, এবং না কানাডা বাংলাদেশ থেকে কোনো জেনারেল লেবার আনে না। তবে দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ দেশ থেকে সামারে কিছু কিছু শ্রমিক অস্থায়ী ভিত্তিতে আনে। আর, কোনো প্রফেশনাল চাকরির জন্য লোক আনার প্রশ্নই উঠে না (খুব ব্যতিক্রম ছাড়া) কারণ এখানে অলরেডি অনেক শিক্ষিত এবং দক্ষ বেকার রয়ে গেছে। তাই নিম্নের চড়কদার বিজ্ঞাপনের মতো ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখে দয়া করে কেউ পা বাড়াবেন না।
উপরের শিরোনাম পড়ে অনেকে ভাবতে পারেন কানাডা যাওয়া বা কানাডাতে চাকরি পাওয়া তো তাহলে সহজ। না, কানাডা কেন; যেকোনো দেশে যাওয়া বা সেখানে চাকরি পাওয়া কি এতো সহজ। তবে হাঁ, যদি ভুয়াভাবে যেতে চান তাহলে হয়তো আপনার কাছে সেটা সহজ হতে পারে, কিন্তু আমি কখনই আমার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এবং দেশের ভাই বোনদের এই ভুয়াভাবে কোথাও পা বাড়ানোর একদম পক্ষপাতী নয়, কারণ আমার এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে আমার প্রায় ২২/৩ টি দেশে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আমি ওই সমস্ত দেশে এই ভুয়াভাবে আশা লোকজনদের করুন পরিণতি আমি নিজ চক্ষে দেখেছি। আমি চাইনা সেই করুন পরিণতির শিকার আমার কাছের কেউ অথবা আমার দেশের কারো হোক।
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কি কেউ কানাডাতে আসছে না বা স্থায়ী হচ্ছে না ! অবশ্যই আসছে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আমি বরং ইদানিং অনেক নতুন নতুন দেশি ভাইবোনদের দেখি। তাহলে তারা কিভাবে আসছে। এখানে আমার এই লেখার শিরোনামের দ্বিতীয় অংশের কথা খেয়াল করুন, “সঠিক পথে/সঠিক ভাবে”. হাঁ কানাডাতে সঠিক পথে এবং সঠিক ভাবে আসার অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। সেই পদ্ধতিগুলির মধ্যে আমি বেশি পরিমানে যাদেরকে এখানে দেখি তারা হলেন হয় স্কীলড ক্যাটাগরিতে এসে স্থায়ী হয়েছেন অথবা পড়াশুনা করতে এসে পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করে তারপর স্থায়ী হয়েছেন। আমি মনে করি এই দুটি পদ্ধতি বেশি জনপ্রিয় এবং অপেক্ষাকৃত অনেকের আওতার মধ্যে। বাকি আরো পদ্ধতি আছে, সেভাবেও আশা যায় তবে সেক্ষেত্রে টাকা পয়সার পরিমান অনেক বেশি থাকতে হবে। By the way, আপনি যেভাবেই আসেন না কেন এদেশের ভাষা ইংরেজিকে এড়াতে পারবেন না। তাই, এদেশে আসার আগে নিজের ইংরেজি ভাষাটাকে ঘষে মেজে চকচকে করে ফেলুন।
আপনার ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যদি ভালো থাকে তাহলে আপনি কারো কাছে না গিয়ে নিজে নিজেই কানাডা সরকারের ইমিগ্রেশন এবং সিটিজেনশিপ ওয়েবসাইটে গিয়ে সব কিছু জেনে শুনে নিজে নিজেই আবেদন করতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে সব কিছু খুব বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। এখানে অবশ্য অনেক অনেক ইনফরমেশন আছে যেগুলি থেকে নিজের প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন বের করে সেই অনুযায়ী আবেদন করা অনেকের পক্ষে ভাষার দক্ষতা থাকলেও সম্ভব হয় না। তাহলে আপনি কি করবেন ? আপনার এই কাজগুলিতে সাহায্য করার জন্য এখানকার সরকার কিছু কিছু প্রফেশনালকে লাইসেন্স দেন। উনারা এই বেপারে বিশেষজ্ঞ এবং এই কাজগুলি করে থাকেন। এনাদের অনেকের বাংলাদশেও অফিস থাকে। আপনি নিদৃষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে এনাদের সাহায্য নিতে পারেন।
এখন কথা হলো আপনি কি করে বুজবেন কোন কনসালটনেট ভুয়া, আর কোন কনসালটেন্ট সঠিক। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের হয়তো নিজেস্ব কৌশল থাকতে পারে, কিন্তু আমি যেটা করি তা হলো। আমি দেখি ওই বেক্তির লাইসেন্স আছে কি না, উনি কতখানি অভিজ্ঞ এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার সার্ভিস ব্যবহার করে কেউ সুফল পেয়েছেন কি না এবং তাদের ফিড ব্যাক নেওয়া।
আপনার কাছের কেউ এরকম কারো সার্ভিস ব্যবহার করে থাকলে তাদের সম্মন্ধে কাছে খোঁজ খবর নিন, তা না হলে চেষ্টা করে একটু সময় নিয়ে খুঁজে বের করুন কে কে সার্ভিসটি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন, তাদের ফিডব্যাক নিন এবং তখনই আপনি পা বাড়াবেন। মনে রাখবেন এখানে এবং বাংলাদেশে যেমন অসংখ ভুয়া কনসালটেন্ট, ভুয়া পরামর্শদাতা আছে তেমনি অসংখ সঠিক এবং দক্ষ ইমিগ্র্যাশন কনসালটেন্ট আছেন, তাদে খুঁজে বের করুন এবং আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকলে সময় ক্ষেপন না করে দ্রুত চলে আসুন। আর যাদের যোগ্যতা বা দক্ষতা এই মুহূর্তে নেই তারা তাড়াহুড়া না করে যোগ্যতা এবং দক্ষতা অর্জন করুন এবং তারপর আসুন।
কানাডাতে সব সময়ই লোক লাগবে তাই যথাযত যোগ্যতা না নিয়ে তাড়াহুড়া করে ভুয়া ভাবে এখানে আসার চেষ্টা করে টাকা নষ্ট এবং জীবনটাকে miserable করে তুলবেন না। আর একটি কথা এই সমস্ত দক্ষ এবং বিশ্বস্ত কনসালটেন্ট আপনার কাজ ফ্রি করে দিবেন না। এটা তাদের পেশা, এদিয়ে তাদের সংসার চলে তাই আপনাকে ফ্রি সার্ভিস দিতে হলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমি বেক্তিগতভাবে মনে করি, যদি ভালো এবং বিশ্বস্ত কোনো সার্ভিসের জন্য দুই টাকার জায়গায় পাঁচ পয়সা বেশি লাগে আমি সেই পাঁচ পয়সা দিতে রাজি আছি কিন্তু ঝামেলামুক্ত সার্ভিস চাই। যদি আমার সেই অতিরিক্ত পাঁচ পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা এখন না থাকে তাহলে আমি আগে সেটি অর্জন করব তারপর আগাবো।
আমি যখন একজন দক্ষ এবং সৎ ইমিগ্রেশন কনসালন্টেন্ট খুঁজছিলাম তখন আমি যাকে বেঁচে নিয়েছিলাম তাকে পরীক্ষা করার জন্য তাকে আমি ২/৩টি কেস (আমার কাছের লোক) দেই এবং একজনের কোনো একটি ব্যাপারে ঘাটতি ছিল। উনি কিন্তু তার কাজটি নিয়ে প্রাথমিক এসেসমেন্ট করে আবেদন পাঠিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু উনি সেটা করেন নি। উনি তাকে বললেন, ওই জিনিসটি ঠিক করে তারপর আসুন। অথচ ২/৩টি কেসই আর একজন কন্সাল্টেন্টকে দিলে তিনি সবার আবেদন নিয়ে কাজ করতে চাইলেন। প্রথম কনসালটেন্ট কিন্তু অনায়াসেই সবার আবেদন নিয়ে কাজ করতে পারতেন এবং কিছু ইনকাম করতে পারতেন, এবং তাতে আমাদের বলার কিছুই ছিল না অথচ তিনি তা করেননি। জিনসিটি হয়তো অনেকের কাছে সাধারণ, কিন্তু আমার কাছে ইন্টেগ্রিটির বিষয়।
আমার কার মেকানিক থেকে শুরু করে বাড়ির প্লাম্বার, ইলেক্ট্রিসিয়ান, মর্টগেজ এজেন্ট সবাই এরকম। তারা তাদের টুপাইস আয় করার সুযোগ থাকলেও আমাকে তারা যেটা না হলে না সেটার দিকে কখনো ধাবিত করবেন না। তারা আমার কাছ থেকে এভাবে দুই টাকা না কামিয়ে এই বিশ্বাসটি রেখেছেন বলে আমি তাদের সাথে কাজ করি এবং আরো অনেকেক রেফার করি। আপনি ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন, এমনি অনেক সৎ এবং দক্ষ কনসালন্টেন্ট পাবেন। আপনি যদি নিজের আবদেন নিজে না করতে পারেন তাহলে এরকম একজনের পরামর্শ নিয়ে তাদের মাধ্যমে চেষ্টা করুন এবং কানাডা চলে আসুন। আপনাকে স্বাগতম।
সবাই ভালো থাকবেন, এবং ভুয়া বিজ্ঞাপন বা ভুয়া কংসলানটেন্টদের থেকে দূরে থাকুন, নিজেকে বাঁচান, পরিবাকে বাঁচান এবং আপনার ভবিৎষতকে রক্ষা করুন।
ধন্যবাদ।
মুকুল