কানাডার ইমিগ্রেশন আইনের A৩৮(১)(প) ধারাতে যে “medical inadmissibility” এবং “excessive demand” কথা বলা হয়েছে, সেটিকে কানাডার মত ইনক্লুসিভ দেশের জন্য বেমানান এবং ডিসক্রিমিনিটরী মনে করা হয়ে থাকে। এই আইনে, কোন পরিবারের একজন যদি কোন প্রকার ডিসঅ্যাবিলিটেতে ভোগে, তাহলে পুরো পরিবারের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে কানাডা আগমন বা অবস্থান নিষিদ্ব হয়ে যেতে পারে। কারন হিসাবে বলা হয় তারা কানাডার জনগনের অর্থে পরিচালিত মেডিকেল ও সোসাল সার্ভিস এর অত্যধিক চাপ ফেলে। কখন ও কিভাবে এই তথাকথিত অত্যধিক চাপটা পরে সেটিও বছর বছর নির্ধারন করে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী সর্বশেষ নির্ধারন করা হয়েছে যে, প্রতিটি নাগরিক এর বছরে স্বাস্থ্য ও সোসাল সার্ভিস এর ক্ষেত্রে ৬৬৫৫/- ডলার বরাদ্দ থাকবে। মোট ০৫ বছরের জন্য এটি হবে ৩৩,২২৫/- ডলার। কোন একজনের যেকোন ডিসঅ্যাবিলিটির জন্য এর বেশি খরচের সম্ভবনা থাকলে একটা পরিবারের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার আবেদন প্রত্যাখান করা হয়ে থাকে।
মার্সিডিস বেনিটিজ নামের একজন ফিলিপিনো কেয়ার গিভার আজ ১২ বছর ধরে সংগ্রাম করছেন তার দু বাচ্চা ও স্বামীর সংগে একত্রিত হওয়ার জন্য। তাদের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার আবেদন প্রত্যাখান করা হয়েছে, কারন তার ছেলে হ্যারল্ড এর ইন্টেলেকচুয়াল ডিসঅ্যাবিলিটি আছে।
কোষ্টারিকা থেকে আগত ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ফেলিপ মনটোয়া কে সাময়িকভাবে কানাডা ত্যাগ করতে হয়েছে কার তার ১৪ বছরের ছেলের ডাউন সিনড্রোম আছে যা কানাডার স্বাস্থ্য সেবার ফান্ডের উপর অত্যধিক চাপ পরবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইমিগ্রেশন কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪-২০১৬ এর মধ্যে মোট ১১০০ আবেদনকারীকে এই কারনে প্রত্যাখান করা হয়েছে। পরিবারের কোন একজন সদস্যের মানসিক ও আচরনগত সমস্যা কে সবচেয়ে বেশি কারন বলে মনে করা হয়েছে।
গ্লোবাল নিউজ অনুসন্ধানে একটি চমকপ্রদ বিষয় বেরিয়ে এসেছে। তারা প্রমান পেয়েছে যে, বছরে প্রতিজনের জন্য স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে বরাদ্দের যে, থ্রেসল্ড দেওয়া হয়েছে তাতে প্রতিবছর যে ২৭-৪০ বিলিয়ন ডলার সোসাল এ্যাসিটেন্স খাতে ব্যয় করা হয় তা এই হিসাবে অন্তভর্’ক্ত করা হয়নি। এটি একটি ভুল এবং মস্তবড় ভ’ল কারন এই বিশাল অংকের অর্থ হিসাবে নিলে থ্রেসল্ড হবে ৭৪০৪/- ডলার। এই ভুলের ফলে হাজারো পরিবারের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে কানাডায় পরিবার নিয়ে একত্রে থাকার স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গ্যাছে।
কোন পরিবারের যদি নিজেদেরই সামর্থ্য থাকে যে, তাদের পরিবারের কারও ডিসঅ্যাবিলিটির জন্য সমস্ত ব্যয়ভার তারাই বহন করতে পারবে, আইন অনুযায়ী তাদেরকেও প্রত্যাখান করা হয়। দক্ষিন আফ্রিকার ডেভিড র্যাল্প এবং নেদারল্যান্ডস এর ডার্ক কর্নেলিস উভয়ের সামর্থ্য আছে তাদের বাচ্চাদের ডিসঅ্যাবিলিটির জন্য সমস্ত ব্যয়ভার বহন করার। তাদের আবেদনও প্রত্যাখান করা হয়েছে।
আশার কথা বর্তমান কানাডার ইমিগ্রেশন মিনিষ্টার অনারেবল আহমেদ হুসেন বলেছেন যে, শুধুমাত্র কারও ডিসঅ্যাবিলিটির জন্য তাকে বা তার পরিবারকে প্রত্যাখান করা মোটেই কানাডার ইনক্লুসিভ ইমিগ্রেশন আইনের সংঙ্গে মানানসই নয়। আরেকটি সুখের কথা,সিটিজেনশিপ এবং ইমিগ্রেশন বিষয়ক ষ্ট্যান্ডিং কমিটি এই অ৩৮(১)(প) ধারাটি বাতিল করার জন্য পার্লামেন্টে সুপারিশ করেছে।
মো: হাসান সাজ্জাদ ইকবাল, রেগুলেটেড ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, কানাডা, রুম ১১২, ৩০০০ ড্যানফোর্থ এ্যাভিনিউ, ইউনিট ৩, ফোন ৬৪৭৩৯০২৬৬৮।
সাজ্জাদ ভাই, আপনার তথ্যবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ. আশা করি এই ব্লগে আপনার লেখা অনেককেই অনুপ্রাণিত করবে. ভালো থাকুন.