মজিদ ও আজিজ সাকিলার বিয়ের ইনভিটেশন কার্ডের  নমুনা তৈরি করে এনে বাসার সবাইকে বলে তোমরা দেখো পছন্দ হয়েছে কি না ? সাকিলা এস দেখে যাও । সে তার রুম থেকে না এসে বলে এতে আর দেখার কি আছে? 

মজিদ বলে, তোমার পছন্দ আর অপছন্দের  ব্যাপার আছে। তোমরা কি আমার পছন্দ আর অপছন্দ নিয়ে চিন্তা করো? 

রেবেকা বলে চুপ কর, এ  নিয়ে এখন অযথা তর্ক বিতর্ক হবে। সাকিলা বলে আম্মু, তোমার কাছে আমার কোনো মূল্য নাই । আমি যা বলি সবই মূল্যহীন এই বলে উঠে গিয়ে তার রুমের  দরজা  জোরে বন্ধ করে লাইট অফ করে দেয় ।  

মজিদ গলা উঁচু করে বলে সাকিলা, তুমি কি বলতে চাও এখানে এসে সবাইকে বুঝিয়ে বলো। প্রতিদিন তোমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি ভালো লাগে না ।  সাকিলা ঘর থেকে বলে আমার বুঝিয়ে বলার কিছুই নাই। সীমা আন্টি কোত্থেকে কোন ছেলে এনেছে, আর তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করে এমনিতেই রাজী হয়ে গেলে। আমি তোমাদের মাথার বোঝা, পার করতে পারলেই তোমরা বেঁচে গেলা।  করো তোমাদের যা ভালো লাগে। 

রহমান বলে  ঘরে যাদের বড়ো মেয়ে আছে, সবাই এদিক সেদিক ছেলে  দেখে।  এতে দোষের কি আছে?  আমরা ছেলে দেখেছি তাছাড়া ভালো ঘরের ছেলে সব বুঝে শুনেই ঠিক করেছি।  রেবেকা ,তোমরা  ভালো করে সাকিলার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে দেখো যা ভালো হয় তাই করবে। আব্বু, তোমরা আজ তিন বৎসর আমাকে  বিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের করতে চেষ্টা করতেছো। ঠিক বলছি  কিনা  বলো ? 

ঘরে যাদের মেয়ে থাকে তারা এদিক সেদিক ছেলে দেখে। এতে অন্যায়ের কি আছে?

আমার পড়াশুনা ও শেষ করতে দিতে চাও নি। রহমান বলে না, এটা তোমার ভুল ধারণা ,আমরা তোমাকে ঘর থেকে কেন বের করবো? 

না আব্বু, তুমি, আম্মু এবং ভাই মিলে  আমাকে বিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে গেলা। রেবেকা বলে দেখো মেয়ে কি ভাবে মুখে মুখে তর্ক করা শিখেছে। ও সবাইকে ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়।  না আম্মু, তোমরা আমাকে দিয়ে তর্ক  করাচ্ছো। রহমান বলে রেবেকা তুমি সীমাকে ডেকে সাকিলার সামনে রেখে আলাপ করে সব কিছু ঠিক করবে।

রহমান বলে ইনভিটেশন কার্ড যে কোনো সময় করা যাবে। আগে নিজেরা ঘরে বসে ধীরস্থির ভাবে আলাপ করো। ছেলে মেয়ে সবই আমাদের কাছে সমান। আব্বু তুমি কি ভাবে বলো,  ছেলে মেয়ে সবাই মা বাবার কাছে সমান?

তোমরা ওদের একভাবে আর আমাকে অন্য ভাবে দেখো। আমাকে মনে করো তোমাদের মাথার বোঝা, ঘর থেকে তাড়াতে পারলেই বেঁচে গেলা ।সাকিলা বলে আমি যখন অনার্স  পড়ি সে সময় আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছো। এখন ও তোমরা আমাকে পারলে কালই বিদায় করে দেবে। তোমরা কেউ আমার ভালো মন্দ চাও না। 

আব্বু আমার দাদী বলেছে দাদা যখন বিয়ে করে তখন দাদীর বয়স ছিলো ১২। সে পুতুল খেলা করতো এবং সেখান থেকে ধরে এনে বিয়ে দিয়েছে। তোমরাও আমাকে পুতুল খেলা থেকে উঠিয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে।

রহমান বলে সাকিলা তুমি ঠিক বলছো  না । আমাদের অফিসে ও আজকাল মেয়েরা  চাকুরী করে। তুমিও বড় চাকুরী করবে। আচ্ছা ঠিক আছে এখন এ নিয়ে আর কথা বলবে না। 

রেবেকা বলে, সীমা বলেছে সাকিলাকে না জিজ্ঞেস করে বিয়ের জন্য আবিদ রাজি হবে না । আবিদ সে দিন সাকিলার সঙ্গে কি কথা বলেছে , তবে সীমাকে বলেছে ওর মতামত জানার জন্য। আমি এ পয্যন্ত সাকিলার সঙ্গে এ ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে পারছি না। মজিদ ও আজিজ বলে বিয়ের এনগেজমেন্ট হয়েছে। দুই পক্ষ বসে লেনদেন ঠিক করেছে, তুমি বলো সাকিলার মতামত জানার জন্য। আম্মু তুমি কি বলতেছো আমি বুঝতে পারছি না। তোমরা আগে ওকে ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করো নি?

রেবেকা বলে ও পরিষ্কার করে কিছু বলে না। মজিদ ও আজিজ বলে আব্বু তুমি সাকিলাকে জিজ্ঞেস করো।  রহমান বলে মৌনতা সম্মতির লক্ষন। ও  তখন হাঁ, না  কিছুই বলেনি । আমরা ধরে নিয়েছি সে রাজি আছে। 

পরদিন রহমান অফিস হেকে এসে সাকিলার রুমে গিয়ে বলে , আমরা সকলে এখানে বসছি, তুমি আসো এবং তোমার যা যা মনে করো বলো। সাকিলা  চোখ মুখ লাল করে এসে বলে,  কি বলতে চাও বলো?

রেবেকা বলে তোমার যদি মনে অন্য কিছু থাকে এখনও সময় আছে আমাদের সঙ্গে বলো ।  সাকিলা বলে, সীমা আন্টিকে গুরুত্ব দিয়ে সব কিছু শেষ করে ফেলতেছো। আমি কি বলবো তোমাদের সঙ্গে। আমার দুই ভাই বয়েসে আমার বড়ো, ওদের বিয়ে দাও না কেন?

রহমান বলে ওরা ছেলে মানুষ ওদের দায়িত্ব আছে, চাকরি বাকরি নিয়ে ধীরে সুস্থে বিয়ে করবে।  সাকিলা বলে আমি মেয়ে মানুষ, আমার কোনো দায়িত্ব নাই, এটাই কি বুঝাতে চাও? 

না তা হবে কেন? তোমার আম্মু ঘর সংসার করে  আবার স্কুলে  কাজ  ও করে। তুমি ও কাজ করবে।

আমি পাশ করে চাকুরী নিয়ে ধীরে সুস্থে বিয়ে করবো।আমি মেয়ে দেখে কেবল পড়া শুনা শেষ না করেই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগছো। আর লোকজন লাগিয়েছো ছেলে খোঁজ করতে। এক ঘরে  দুই নীতি কেন? 

মেয়েদের জন্য সব সময়  ভালো ছেলে পাওয়া যায় না ।

এ কি রকম ভালো ছেলে এবং কি চাকরি করে?

এই ছেলে মাসুদ আঙ্কেলের  কোম্পানিতে এক্সেকিউটিভ রেঙ্কে  কাজ করে। সে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে  চাকুরী করে এবং মাসুদ আঙ্কেল যে কোনো সময় বের করে দিতে পারে। তাছাড়া আমি যদি সরকারী চাকুরী পাই, তাহলে দেশের  যে কোনও  স্থানে চাকুরী নিয়ে যাবো, তাতে ওর সঙ্গে  হবে আমার সংঘর্ষ। আমার পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য তোমরা অপেক্ষা করতে পারবে  না। কতখানি জুলুম আমার উপর করা হচ্ছে। আমি কি পরিবারের সবার মাথার বোঝা যে আমাকে পার করতে পারলেই সবাই মুক্তি  পাবে?

রহমান বলে ঠিক আছে তোমরা এই বিয়ে নিষেধ করে দাও। তবে তোমাকে একটা কথা দিতে হবে যে তোমার যদি কোনো পছন্দ থাকে আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। আমরা ও তোমার সুখে দুঃখের অংশীদার  হতে চাই । সাকিলা বলে বার বার তোমরা আমাকে এই কথা জিজ্ঞেস করো, তার মানে তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো না। 

রেবেকা বলে, সীমা এই কথা শুনলে অনেক কষ্ট পাবে। ওকে কিভাবে নিষেধ করি?

রহমান বলে সাকিলার মতের বিরুদ্ধে আমাদের কিছুই করা উচিৎ হবে না। তোমরা না পারলে আমি মাসুদ সাহেবকে বলে দেব এবং আবিদকে সীমা বুঝিয়ে বলে দেবে। ঠিক আছে এ নিয়ে আর কোনো কথা বলা দরকার নেই ।

পরদিন সাকিলা স্কুলে গিয়ে লাঞ্চ ব্রেকে ছুটি নিয়ে রেনুর স্কুলে গিয়ে বলে তুমি একটু আগে আগে বের হও। রেনু দুই ক্লাস মিস করে বের হয়ে সাকিলাকে নিয়ে নিউ মার্কেট গিয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুরে  ইউনিভার্সিটি পাড়ায় গিয়ে রেসকোর্স বসে। রেনু বলে, তোমার বিয়ের তারিখ তো ঠিক হয়েছে। হ্যাঁ।  তুমি মন থেকে কি তৈরি হতে পেরেছ? 

সবাই মিলে আমাকে বিয়ে দিতে চায়, ওরা কি আমার কথা শুনে, আমি না করে কি করবো? 

রেনু বলে তোমার নিজের ও মতামত আছে । তুমি না চাইলে, না করে দিবে। সাকিলা বলে আমি পরীক্ষার রেজাল্ট পয্যন্ত দেখতে চাই। তার পরে দেখে শুনে চিন্তা করবো। তুমি বরং আম্মুর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করো। ঠিক আছে আমি এই ব্যাপারে আলাপ করবো। বিকেলে ওরা দুই জনে বাসায় এসে দেখে আবিদ আগে থেকেই এসে বসে আছে ।

সাকিলা আবিদকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে নিজের রুমে ঢুকে। রেনু রেবেকাকে সালাম দিয়ে বলে আন্টি কেমন আছেন? 

আমি ভালো আছি। তুমি আসাতে ভালোই হলো ।আমি মনে মনে তোমার কথা চিন্তা করতে ছিলাম। রেনু বলে আন্টি  আপনি কি জানেন সাকিলা আপাততঃ  বিয়ে করতে চায় না। রেবেকা বলে সে বুঝলাম এখন কি ভাবে ওকে নিষেধ করবো।  তুমি জানো সব কিছু পাকা পাকি হয়েছে।রেনু বলে আপনি যা বলবেন সীমা আন্টির মাধ্যমে বলবেন। সীমা আন্টি   ওকে বুঝিয়ে বলবে। তোমরা দুই জনে গিয়ে আবিদের  সঙ্গে গল্প করো , আমি ততোক্ষণে চা নিয়ে আসি। আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি।  

রহমান সাহেব নিজের ঘর থেকে বের হয়ে আবিদকে দেখে হেসে হেসে বলে তুমি কখন এসেছো?

আবিদ সালাম দিয়ে বলে আমি এইতো ১৫-২০ মিনিট হবে এসেছি। কেমন আছো? 

ভালো আছি ।  আপনি কেমন আছেন? 

আমি ও ভালো আছি। রেনু কিচেন থেকে চা ও নাস্তা নিয়ে সালাম দিয়ে টেবিলে রেখে দেয় । রেনু সাকিলাকে ডেকে বলে এস সবাই মিলে  চা খাই। সাকিলা বলে তুমি যাও  আমি আসছি। 

ওদের দেখে আবিদ বলে সাকিলা বাসায় নেই। রেনু বলে ও আসছে আপনারা সবাই চা নেন।   ৫-৭ মিনিট পর সাকিলা এসে রেনুর পাশে বসে। রেনু আবিদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে এই যে সাকিলা এসেছে ।  আপনারা সবাই চা আর মিষ্টি নেন। আবিদ বলে আমার আম্মু, আব্বু ও সীমা আন্টি আসবে ২-১ দিনের মধ্যে। ওরা কি ভাবে কি হবে এ সব নিয়ে আলাপ আলোচনা করবে। এই বলে সে সাকিলার দিকে তাকিয়ে থাকে। 

রেবেকা বলে আমি সীমার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবো এবং তোমাদের জানাবো। আবিদ বলে ঠিক আছে। এই বলে সে কিছুক্ষন বসে থেকে বলে আমি এখন যাই। রেবেকা,রেনু ও সাকিলা পিছন পিছন গেট পর্যন্ত গিয়ে ওকে বিদায় দেয়। রেনু বলে সাকিলা এখন তৈরি না।  কাজেই আপনারা সীমা আন্টিকে বলে না করে দেন। আবিদ বার বার আশা   করে এখানে আসতেছে, এটা ঠিক না। 

রেবেকা রেনুকে বলে ছেলেটাকে কি তুমি পছন্দ করো? 

রেনু বলে আন্টি একটা মানুষকে ভালোভাবে  না জেনে শুনে কোনো মন্তব্য করা যায় না ।

রহমান বলে সব সময় কি ভালো ছেলে পাওয়া যায়? 

রেনু বলে  আঙ্কেল ,সাকিলা অত্যন্ত ভালো মেয়ে । সে ভালো ভাবে পাশ করবে এবং সরকারি কলেজে অথবা যে কোনো চাকরি পাবে । সে  যে কোনো ভালো ছেলে আশা  করতে পারে। রহমান বলে ঠিক আছে।

পরদিন রেবেকা সীমাকে টেলিফোন করে বলে ,” আমি অত্যন্ত লজ্জিত যে সাকিলাকে আমি কোনো রকমেই রাজি করাতে  পারছি না। সে কেবলই পরীক্ষা দিয়েছে এবং তাকে একটু সময় দিতে হবে। ” সীমা বলে ওরা বিয়ের বাজার পয্যন্ত করে ফেলেছে। তুমি কি বলো?  

রেবেকা বলে আমি সাকিলাকে রাজি করাতে  পারছি না । সীমা বলে দেখো ওর অন্য কোথায় ও জানা শুনা থাকতে পারে। রেবেকা বলে, আমি সে ধরণের কিছু জানি না । সীমা বলে আমি আসবো এবং ওকে বুঝাবো, ও হয়তো বুঝতে পারছে না । ঠিক আছে তুমি এস এই বলে সে টেলিফোন রেখে দেয় ।

রেবেকা রহমানকে বলে আমি সীমাকে না করতে পারছি না। ও বলে বর পক্ষ বিয়ের বাজার ও লোকজন দাওয়াত দিয়েছে। এই অবস্থায় কি ভাবে বিয়ে ফিরিয়ে দেবে? 

রহমান বলে মেয়েরা সাধারণত বিয়েতে রাজি হয় না । বিয়ে দিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। রেবেকা বলে সে আমি কি ভাবে বলবো? 

রহমান বলে তুমি চুপ করে থাকো, সে নিজ থেকে ঠিক হয়ে যাবে । তা ছাড়া মজিদ ও আজিজ এই বিয়েতে রাজি। কাল সীমা আসবে এবং সাকিলাকে বুঝাতে  চেষ্টা করবে। ঠিক আছে আসতে দাও।  

পরদিন সাকিলা ক্লাস নেয়ার পর স্কুল থেকে বের হয়ে কোন দিকে যাবে চিন্তা করতে পারছে না। স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে  শেষে সিদ্ধান্ত নিলো যে ইতিকে অনেক দিন পরীক্ষার পর দেখি নি । ওর বাসার টেলিফোন ও  ডেড । গিয়ে দেখে আসি এবং পাওয়া গেলে ইউনিভার্সিটি এলাকায় চক্কর মেরে আসবো । সাকিলা একটা রিক্সা নিয়ে আজিমপুর কলোনিতে গিয়ে ওর বাসায় নক করার সঙ্গে সঙ্গে ওর মা এসে  দরজা খুলে সাকিলাকে দেখে চিৎকার করে বলে ইতি দেখ কে এসেছে! ইতি তার রুম থেকে এসে সাকিলাকে দেখে বলে আমি  তোর কথাই এতক্ষন ভাবছিলাম। আয় ভিতরে আমার রুমে। তুই নিশ্চয়ই স্কুল থেকে আসছিস। বস, আমি কাজের মেয়েকে বলি চা দিতে। সাকিলা চেয়ারে বসে  কথা বলছে।  সে বলে বেডে আরাম করে বস।সাকিলা তুই এই দুই মাসে অনেক শুকিয়ে গিয়েছিস । কি ব্যাপার কেমন আছিস ?

সাকিলা বলে ভালো। তুই কেমন? 

আমি আর কি ,খাই আর ঘুমাই। সাকিলা বলে ইতি  চল ইউনিভার্সিটি যাবো , একটু ঘোরাঘুরি করবো তোকে নিয়ে। আচ্ছা ঠিক আছে আগে চা খেয়ে নে, ততক্ষনে আমি কাপড় ছেড়ে নেই ।  ইতি বলে আম্মু আমি সাকিলার সঙ্গে একটু ঘুরে আসি। আচ্ছা ঠিক আছে।

ওরা দুই জনে ইউনিভার্সিটি নিজেদের ডিপার্টমেন্টে গিয়ে  ১-২ জন টিচার এর সঙ্গে কথা বলে কখন ওদের রেজাল্ট হবে জেনে বের হয়ে হাটতে হাটতে টিচার স্টুডেন্ট সেন্টারে বসে গল্প গুজব করে । 

এ সময়  তাদের আর এক বান্ধবী  সুলতানা এসে উপস্থিত । সুলতানা সাকিলাকে দেখে বলে কি ব্যাপার তুমি যে অনেক শুকিয়ে গেছো। সাকিলা বলে, বস তোদের সঙ্গে আমার কথা আছে। পার্শে ফেরিওয়ালা দাঁড়িয়ে বাদাম বিক্রি করে । সাকিলা বলে এই ফেরিওয়ালা আমাদের বাদাম দাও। ইতি বলে সুলতানা তুই কি জানিস, সাকিলার বিয়ে ঠিক হয়েছে?

না তো,  কি ভাবে জানবো ? 

শোন, সাকিলা বিয়ের দাওয়াত দেয়ার জন্য এসেছে। সে তো মহাখুশির কথা। কিন্তু কোথায় এবং  ছেলে কি করে? 

ছেলে এম এ পাশ এবং একটা কোম্পানিতে বড়ো  চাকরি করে। সে আমাদের কাছে পরামর্শের জন্য এসেছে। এটাতো ভালো খবর আমরা তাকে কি পরামর্শ দেব?

 ইতি বলে সাকিলা রাজি নাই । কেন, সাকিলার পছন্দ হয় না ? 

পছন্দ বা অপছন্দের ব্যাপার নয় । সে এখন বিয়ে করতে চায় না ।  সুলতানা বলে ,সাকিলার মতো  মেয়ের যে কোনো সময় বিয়ে হবে।  উনিভার্সিটির বহু ছেলে তার পিছনে ঘোরাঘুরি করেছে। সাকিলা বলে সুলতানা কে আমার পিছনে ঘুরা ঘুরি করেছে! আমিতো কাউকে দেখিনি  । সুলতানা বলে তোর মতো  সুন্দরী আর গুণের মেয়েকে সবাই পছন্দ করে। আমাদের ক্লাসে অন্তত ৪-৫ জন ছেলে আমি দাঁড়  করাতে পারি  যারা তোকে পছন্দ করে।  সাকিলা বলে কে আমাকে পছন্দ করে অথচ আমি জানি না  ? 

সুলতানা বলে আরিফকে তুই চিনিস?  

কেন চিনবো না ওর সঙ্গে আমি এসাইনমেন্ট করেছি। সে তো একটু লাজুক ধরণের ছেলে। ঠিকই বলেছো , সে  তোর অনেক প্রশংসা করে ।  আমাকে বলেছে সাকিলা অনেক সুন্দরী, বুদ্ধিমতী মহিলা এবং সে জীবনে চেষ্টা করলে অনেক দূর যেতে পারবে। আমি আরিফকে জিজ্ঞেস করেছি তুই  কি সাকিলাকে পছন্দ করিস ? 

সে বলেছে,” আমি গ্রামে মানুষ হয়েছি আর সে শহরে ।” সাকিলা বলে তোর পেটে এতো কথা ,তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন? 

বললে কি তুই ওকে বিয়ে করবি? 

ওরা  তিন জনই হাসা হাসি শুরু করে। যাক  সুলতানা আমি জেনে খুশি হলাম যে কেউ আমাকে পছন্দ করে। 

সুলতানা বলে ,বিয়ে না করতে চাইলে না করে দেবে। তাতে অসুবিধা কি ?

ইতি বলে তাকে সবাই বিয়ে দিতে চায় এবং সে রাজি নাই। সুলতানা বলে রাজি না থাকলে না করে দিবে । বলবে আমি বিয়ের জন্য তৈরী নাই। আমাকে সময় দাও। ইতি বলে, বললেই  কি সব সমাধা হবে ? ওর মা বাবা, ভাই এবং আত্মীয়  সবাই রাজি এবং ছেলে পক্ষ এনগেজমেন্ট করে গেছে। তাতে কি? 

 রাজি নাই বলে দেবে। 

সুলতানা  বলে, আরিফ অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে, হয়তো এম এ তে ও ফার্স্ট ক্লাস পাবে । আর না পেলে ও  নাম  দশের মধ্যে থাকবে।  ওকে তুই বিয়ে কর আমি ঘটকালি করবো। ইতি আর সাকিলা হাসে, বলে তোকে ঘটকালির জন্য কত  কমিশন দিতে হবে? 

সুলতানা বলে ৫-১০ টা  চায়নিজ খাওয়াইলে-ই হবে। সাকিলা বলে ঠিক আছে । ভালো ঘটক পেয়ে গেছি। বাসায় যা সরাসরি না করে দিবি । না পারলে আমি আর ইতিকে ডাকবি। তোর ভাই মজিদ আর আজিজ তো ভালোছেলে, ওরা তোকে সাহায্য করা উচিৎ। ইতি বলে  ওরাই তো ছেলে ঠিক করেছে।

ক্রমশ:

পূর্ববর্তী নিবন্ধ“কবিতা নিশ্চিন্তপুরে”-দিলারা নাহার বাবুর কবিতা সন্ধা
পরবর্তী নিবন্ধকুঁড়ি থেকে ফুল-পর্ব ১
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন