দুই মাস হাসপাতালে রাখার পর ফ্লোরাকে নার্সিং হোম পাঠানো হয়েছে, যেখানে রয়েছে ফিজিওথেরাফি, ২৪ ঘন্টা নার্স এবং ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠার সুযোগ । এখানে থাকা খাওয়া চিকিৎসা, তার সঙ্গে সে পাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সুবিধা, তবে মোটা অংকের ডলার খরচের বিনিময়ে । ফ্লোরার বাবা মা দুইজনে বাংলাদেশে ডাক্তারি প্রফেশন ও প্রচুর অর্থের মালিক, ওরা তাদের মেয়েকে যত সম্ভব দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত । ডাক্তার শাহরিয়ার বলেন এ দেশে চিকিৎসা হওয়াতে আমার মেয়ে তাড়া তাড়ি উঠে দাঁড়িয়েছে । আমরা প্রথম দিকে ওকে দেখে মনে করেছিলাম যে সে আর কোনো দিন ও সম্পূর্ণ ভালো হবে না । কিন্তু সে যে চিকিৎসা পেয়েছে, তা দেখে আমরা অত্যধিক আনন্দিত, দ্রুত সুস্থতা আশা করছি ।
ওর মা রৌশনারা বলেন, ফ্লোরা তুমি ভালো হয়ে যাবে বলে ডাক্তার বলতেছে এবং আমরা এর চেয়ে আর কি বেশি চাই ?
ফ্লোরা বলে আম্মু, এ দেশের ডাক্তার হাত পা ভাঙা জোড়া দিয়ে দেয়া তেমন কঠিন কিছু মনে করে না, এরা অনেক কঠিন যেমন ওপেন হার্ট সার্জারি, হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট, আরও কত কি জটিল চিকিৎসা ও করে থাকে । মা বাবা দুইজনই তার চিকিৎসার উন্নতি দেখে বলে, আল্লাহ তুমি আমাদের কান্না শুনেছ,আমাদের মেয়েকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছো । আমরা তোমাকে যেভাবে দেখেছি, ভাঙা হাড়কে প্লাস্টিক সার্জারি করে জোড়া লাগানো এটা অস্বাভাবিক , যেখানে চিকিৎসা হবে কিনা বলতে পারিনি বা কি ধরণের চিকিৎসা হবে, সে স্থলে তুমি দাঁড়িয়ে হাঁটা হাঁটি করছো ।
ফ্লোরা এটা অনেকটা তোমার ইচ্ছাশক্তির (will power) উপর নির্ভর করেছে । ফ্লোরা ডাক্তার, নার্স এবং থেরাপিস্টের নির্দেশ মেনে দৈনিক ব্যায়াম, হাঁটা, চলাফেরা করে নিজেকে সুস্থ করে তুলছে। সে এখন কারো সাহায্য ছাড়াই আস্তে আস্তে হাঁটা, চলা ফেরা করতে পারে । মোট দুই মাস ফিজিও শেষ করে ওকে বাসায় পাঠানো হয় । সে এখন হাঁটার সাহায্য হিসাবে হাতে একটা বেত নিয়ে ক্লাসে যায় এবং আস্তে আস্তে ইউনিভার্সিটি ক্লাস শুরু করে ।
বাসা ঘিঞ্জি, ফ্লোরার মা বাবা ফ্লোরিং করে রাতে ঘুমায় এবং মেয়ের দেখা শুনা করে । লি বলে আংকেল আপনারা ফ্লোরে ঘুমাবেন এটা হয় না, আমার রুম ছেড়ে দিলাম ওখানে আপনারা ঘুমান । ফ্লোরার মা বাবা বলে তোমার পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়েছে,আর ক্ষতি করতে চাই না ।
ফ্লোরার মা বাবা তাকে ইউনিভার্সিটি হোস্টেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ,যেখান থেকে ক্লাস ও লাইব্রেরি ওয়ার্ক অতি সহজে করতে পারবে । ডিপার্টমেন্টাল হেড অনেক চেষ্টা করে ফ্লোরার জন্য আর একটা বাঙালি মেয়ের সঙ্গে হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ।
ফ্লোরার নুতন রুম মেট হাফসা অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । সে প্রথমে ফ্লোরাকে অসুস্থ বলে নিতে আপত্তি করেছিল , পরে ওর মা বাবার সঙ্গে আলাপ হয়ে জানতে পেরেছে যে ফ্লোরা অর্থনীতি বিভাগের পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট এবং বাংলাদেশি । তাই হাফসা বলেছে যে ফ্লোরা তুমি আমার রুমে থাকতে পারবে । শাহরিয়ার ও রৌশনারা দুইজনে বলে হাফসা তুমি ফ্লোরাকে একটু দেখা শুনা করবে যে পয্যন্ত না সে সুস্থ হয়ে উঠে । সে বলে আংকেল ও আন্টি আপনারা এ নিয়ে চিন্তা করবেন না, এটা আমেরিকা, এখানে ওর চিকিৎসা না হলে আর কোথাও হবে না, তাছাড়া আমি দেখা শুনা করবো ।
ডাক্তার শাহরিয়ার একজন ইন্সুরেন্স লইয়ার নিয়োগ করে কে বা কাহারা গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরাকে অজ্ঞান করে ফেলে চলে যায়, তার বিরুদ্ধে কেস দিয়েছে । কিন্তু আজও পুলিশ কোনো ইনফরমেশন সংগ্রহ করতে পারে নি কারণ রাস্তার ক্রসিংয়ে ক্যামেরা ছিল না, নিউজে দেয়া স্বত্তেও কেউ এগিয়ে এসে কোনো রকম খবর দিতে পারে নি ,তথাপি আজিজকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়েছে কেস চালিয়ে যাওয়ার জন্য ।
হাফসার বাবা মা এলমহার্স্ট ,নিউ ইয়র্ক সিটি, আমেরিকা থাকে ।ওর বাবা নুরুল ইসলাম ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার ও মা দিলারা স্কুল টিচার ১৯৮৬ সনে আমেরিকা গ্রীন কার্ড নিয়ে এসেছে । হাফসার জন্ম আমেরিকায়,সে মা বাবা ও বন্ধুদের নিকট বাংলা শিক্ষা করেছে,তবে সে বাংলা ভালো ভাবে পড়তে বা লিখতে পারে না। হাফসা ছোট কাল থেকেই পড়াশুনায় মনোযোগী এবং গিফটেড স্টুডেন্ট । সে অত্যধিক মেধাবী ছাত্রী বলে স্কলারশিপ নিয়ে শিকাগো ইউনিভার্সিটি পড়াশুনা করতে এসেছে ।
হাফসার রুম মেট লিসা হোস্টেল থেকে প্রাইভেট রেসিডেন্সে চলে যাওয়াতে ফ্লোরা এই সুযোগ পায় । ফ্লোরার মা বাবা হাফসার সঙ্গে একত্রে দিতে পেরে নিশ্চিত হয়ে দেশে চলে যাবার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় ।
ফ্লোরা বলে তোমরা অনেক কষ্ট করেছো, কয়েকদিন ঘুরে এ দেশ দেখে দেশে ফেরত যাবে । ডাক্তার শাহরিয়ার ও মা রৌশনারা ফ্লোরাকে হোস্টেলে দিতে পেরে নিশ্চিন্তে দুই সপ্তাহের জন্য ওয়াশিংটন, ক্যালিফর্নিয়া, নেউয়র্ক এবং আরও কিছু জায়গা ঘুরে এসে দেশে যাওয়ার জন্য আমিরাত এয়ারলাইন্স বুকিং দিয়ে রুট কন্ফার্ম হলে, যাওয়ার দিন মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না । রাতে ফ্লাইট, ফ্লোরা ও আজিজ ওদের শিকাগো এয়ারপোর্ট নিয়ে যায় । ওরা লাগেজ বুকিং দিয়ে এয়ারপোর্ট টিম হর্টনে গিয়ে কফি খেয়ে শেষ বিদায় কেঁদে ফেলে , ফ্লোরা জড়িয়ে ধরে বলে তোমরা কত কষ্ট করেছো আমার জন্য । আজিজ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে দুই হাত দিয়ে সিক্ত চোখ মুছে ওদের বিদায় দিয়ে ফ্লোরাকে নিয়ে ফিরে আসে ।
ফ্লোরা সপ্তাহে দুই দিন থেরাফি নেয় ,তা ছাড়া দৈনিক ইউনিভার্সিটি ব্যায়ামাগারে শরীরচর্চা করে নিজেকে সুস্থ করে তুলতে সব ধরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । সে দুর্ঘটনায় পড়ে পড়াশুনায় এক সেমিস্টার পিছিয়ে গিয়েছে । তাকে ইউনিভার্সিটি থেকে সব ধরণের সুযোগ দিয়েছে এবং ইউনিভার্সিটি তার স্কলারশিপ অটুট রেখেছে । সে অত্যধিক ভালো ছাত্রী এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে পড়াশুনায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে ।
লি , হাফসা, ফ্লোরা এবং আজিজ ন এক সাথে লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে এবং রাতে রেস্টুরেন্টে ব্র্যাকে চা বা কফি খেয়ে গল্প করে লাইব্রেরি কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে যায় । এখানে দিন রাত ২৪ ঘন্টা লাইব্রেরি খোলা থাকে, যার যখন খুশি পড়াশুনা করে বা কম্পিউটার ল্যাবে কাজ করে ।
ফ্লোরা রুমে তার কাপড় ভাঁজ করতে কষ্ট হইতেছে দেখে হাফসা বলে আপু তুমি রুমে কিছুই করতে হবে না । আমি রুম পরিষ্কার, লন্ড্রি এবং সবই করবো । ফ্লোরা ছোট বোন হিসাবে হাফসাকে বেশ আদর করে । হাফসা বলে আপু তোমাকে পেয়ে আমি অনেক খুশি এবং আগে নিজেকে কিছুটা একাকী মনে হতো, কিন্তু আজকাল মনে হয় না । ওরা একত্রে সিনেমা দেখা, এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ করে গ্রীষ্মে মিশিগান লেকের পাড়ে গিয়ে বসে গল্প করে সময় কাটায় ।
লি বলে ফ্লোরা তুমি আমাকে ছেড়ে চলে আসায় আমি একাকী হয়ে পড়েছি । বাসায় আসলে কারো সঙ্গে কথা বলার থাকে না, বাসা ভাড়াও অনেক দিতে হয় । ফ্লোরা বলে যেহেতু আমি বাসা ছেড়ে চলে এসেছি,তুমি একজন রুম মেট দেখে নিয়ে নাও ।
ফ্লোরার রুমে আমিনাহ নামে একটি মেয়ে এসেছে । সে উনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় বৎসরের ছাত্রী । ফ্লোরা বাসা ছেড়ে দেয়ার পরে আমিনাহ অনেক অনুরোধ করে লি কে রাজি করিয়ে রুম ভাড়া নেয় । তার মাথায় আলাদা লম্বা বিনুনি চুল এবং আফ্রিকান জাতীয় ড্রেস পড়ে চলা ফেরা করে। সে বাসা ভাড়া নেয়ার সময় বলেছিলো বাসায় বাহিরের কোনো লোক আনবে না। কিন্তু দুই তিন মাস যাওয়ার পর তার এক বন্ধু এনে বাসায় ঢুকিয়েছে । আমিনাহ ক্লাস শেষ করে সপ্তাহে চার দিন বিকেলে কাজ করে । সে এত ব্যস্ত থাকে যে সে বা তার বন্ধু ঠিক ভাবে বাসা পরিষ্কার ও করে না, তা ছাড়া কিচেনে রান্না করে থালা বাসন সিংকে রেখে চলে যায় । এ নিয়ে লি ফেং অসুন্তষ্ট হলে সে বলে তুমি অসুবিধা মনে করলে নিজে পরিষ্কার করে নিও ।
লি: আমিনাহ তুমি আমার সঙ্গে অসঙ্গত এবং অভদ্র ব্যবহার করছো, আমিনাহ আমি কেন তোমার থালা বাসন পরিষ্কার করবো?
আমিনাহ: আমি বা আমার বন্ধু অত্যন্ত ব্যস্ত থাকি, সব সময় পরিষ্কার করতে পারি না, তুমি পছন্দ না করলে, নিজে পরিষ্কার করিয়ে নিও ।
লি: তুমি বাথরুম ব্যবহার করো এবং চুলে রং লাগাও, কালি সারা বাথরুমে এখানে সেখানে লেগে থাকে, তুমি বা তোমার বন্ধু পরিষ্কার করো না । এটা সম্পূর্ণ অস্বাস্থকর, তুমি পড়াশুনা করো,কিন্তু পরিষ্কার থাকতে চাও না ।
আমিনাহ: লি তুমি আমাকে বা আমার বন্ধুকে কিছু শিখাইতে যেও না, তোমার পছন্দ না হলে এখান থেকে অন্যত্র চলে যাও ।
লি: এটা আমার বাসা, তোমাকে থাকতে দিয়েছি ,আমি কেন চলে যাবো?
আমিনাহ: যেহেতু তুমি, আমি এবং আমার বন্ধুকে পছন্দ করো না ।
লি: আমিনাহ তুমি বাহির থেকে পোড়া মাছ নিয়ে এসে রান্না করো, তার গন্ধে আমি এখানে থাকতে পারি না ।
আমিনাহ: আমি তোমাকে বার বার বলবো না, তোমার পছন্দ না হলে অন্যত্র চলে যাও, আমাদের খাবার উপর তোমার ভক্তি শ্রদ্ধা নেই , তুমি কি ধরণের মানুষ?
এ নিয়ে প্রতি দিনই নিজেদের মধ্যে কথা কাটা কাটি হয় । আমিনাহ এবং ওর বন্ধু দুই জন হয়তো পরামর্শ করেছে যে বিরক্ত করলে লি এখান থেকে চলে যাবে,ওরা দুই জন বাসা নিয়ে নেবে ।
লি আজিজ ও ফ্লোরাকে দেখলেই বলে আমি নরকে বাস করি, যে মেয়ে আমার রুমে এসেছে, সে পোড়া মাছ এবং আরও বিভিন্ন ধরণের খাওয়া খায় যার গন্ধে আমি বাসায় থাকতে পারি না । কিছু বলতে গেলে সে তেড়ে এসে আমাকে আক্রমণ করে এবং বলে তুমি পছন্দ না হলে অন্যত্র চলে যাও । সিংক ভর্তি থালা বাসন রেখে দিয়ে বাসা থেকে চলে যায় । আমি কিচেন ব্যবহার করতে পারি না । মূলত আমি রুম থেকে বের হতে পারি না, তার ফ্রেন্ড এসে রাত্রে থাকে এবং বাথরুমে পানি, ময়লা কাপড় রেখে দিয়ে চলে যায় । আমি বাথ রুম ও ব্যবহার করতে পারি না । সে জোরে তার রুমে টেলিভশন চালিয়ে রাখে যাতে আমি বিরক্ত হয়ে কিছু বলি এবং ঝগড়া করি । ফ্লোরা বলে তুমি ধর্য ধরে থাকো, আমি একটু সুস্থ হয়ে একটা বাসা নিয়ে তুমি ও হাফসা মুভ করবো ।
লি ইউনিভার্সিটি আমিনাহ যে সেক্শনে পড়ে,সেখানে ফ্লোরাকে নিয়ে গিয়ে দেখা করে এবং বলে আমিনাহ তুমি একটু মানুষের মতো ব্যবহার করতে শিখ ।
আমিনাহ কিছু না বলে ওকে এড়িয়ে চলে যায় ।
লি বাসায় আসলে সে বলে তুমি তোমার বন্ধুকে নিয়ে আমাকে আক্রমণ করতে গিয়েছো?
লি : দেখো আমি তোমাকে আক্রমণ করতে যাই নি , তুমি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করো । আমি তোমাকে এখানে থাকতে দিয়েছি, এটা কি তার প্রতিদান?
আমিনাহ: তুমি আমার এবং আমার বন্ধুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করো ।
লি: তুমি যখন বাসা নিয়েছো, তুমি বলো নি যে তোমার অন্য লোক আছে, তা হলে আমি তোমাকে থাকতে দিতাম না ।
আমিনাহ : আমার বন্ধু অস্থায়ীভাবে এখানে থাকে,ও বাসা পাইলে চলে যাবে । তাতে কি, আমরা তোমার রুমে থাকি না, আমার বন্ধুরা আসবে তুমি রাগ করবে কেন?
লি : দেখো, তোমার লোক জন আসলে আমার পড়াশুনার অসুবিধা হয়, ওরা হৈ চৈ,সোর্ গোল করে এবং কিচেন , বাথরুম নোংরা করে রেখে চলে যায় । সিংক ভর্তি থালা বাসন ময়লা শুদ্ধ থাকে । তুমি বাসা নেয়ার সময়, এ সব বলো নি ।তুমি জোরে টেলিভশন,মিউসিক বাজাও এতে আমার অনেক অসুবিধা হয় ।
আমিনাহ: তোমার পড়াশুনার অসুবিধা হয়, আমার তো হয় না ।
লি : তুমি বা তোমার লোকজন ও সবে অভ্যস্ত, কিন্তু আমি অভ্যস্ত না ।
আমিনাহ : তোমার অসুবিধা হলে অন্যত্র মুভ করো এবং আমরা লোকজন এখানে আসবে, তুমি বাধা দিতে পারবে না । তুমি কি চাও আমি এখানে কয়েদী হিসাবে থাকি ?
লি লাইব্রেরিতে গিয়ে বলে ফ্লোরা, আমার অনেক অসুবিধা হইতেছে , আমি আমিনার সঙ্গে আর থাকতে পারবো না । রাতে আমার ভয় হয় যদি ও বা তার লোক জন আমাকে আক্রমণ করে ।
আজিজ বলে তোমার অসুবিধা হলে ফ্লোরা, হাফসা ও তুমি সহ একটা তিন কামরা বাসা নিয়ে একত্রে থাকো । ওই মেয়ের সঙ্গে তুমি বাদানুবাদ করে কোনো লাভ হবে বলে আমি মনে করি না । সে হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুমি সরে পড়লে ওর লোক জন নিয়ে থাকবে । কাজেই এখানে অযথা কথা কাটা কাটি করে কোনো লাভ হবে না ।
ফ্লোরা বলে আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখানে থাকছি, আমি বা হাফসা মুভ করতে পারবো না । লি তুমি বরং আমাদের হলে কোনো সিট খালি হলে চলে আসবে?
অবশ্যই ।
আমরা ডিপার্টমেন্টে আলাপ করে দেখি যদি কোনো ব্যবস্থা করতে পারি ।
ফ্লোরা: তুমি বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে লাইব্রেরিতে আসবে এবং রাত পড়াশুনা করে বাসায় গিয়ে শুয়ে থাকবে, ওর সঙ্গে কোনো কথা বলবে না ।
লি: আমিনাহ ওর ফ্রেন্ড নিয়ে অনেক রাত পয্যন্ত হৈ চৈ করে এবং আমি ঘুমাতে পারি না । অনেক সময় ওরা আমার রুমের দরোজায় আওয়াজ করে, আমি চুপ করে থাকি, কোনো জবাব দেই না ।
আজিজ : অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা না হওয়া পয্যন্ত ধর্য্য ধরে থেকো । খামাখা ঝগড়া করে ওদের সঙ্গে পারবে না, চুপ করে থাকা ভালো ।
লি: না, কেন আমি চুপ করে থাকবো?
আজিজ: তুমি কি ওর সঙ্গে দস্তাদস্তি করতে পারবে?
লি : ওর বন্ধু বান্ধব আছে, আমার ও আছে , ও যদি আমাকে ধমক দেয়, আমি ও দেব । ও মনে করে আমি সোজা শান্ত মেয়ে, কিছুই করতে পারবো না । দুই এক দিন ওর নোংরা থালা বাসন সিংক থেকে ছুড়ে ফেলে দেব , আস্তে ও ঠিক হয়ে যাবে ।
আজিজ: তোমার যা ভালো লাগে তাই করো ।
লি ওই দিন বাসায় গিয়ে সিঙ্ক থেকে নোংরা থালা বাসন ফ্লোরে রেখে দিয়ে নিজে কিচেন ব্যবহার করে তার খাওয়া নিজের রুমে রেখে দিয়ে ইউনিভার্সিটি চলে যায় । সে ওই দিন কাজে না গিয়ে লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে এবং তার চাইনিজ বন্ধুদের ডেকে রাতে বাসায় নিয়ে দেখে আমিনাহ কি করে?
আমিনাহ : লি তুমি সিংক থেকে নোংরা থালা বাসন আমার রুমের সামনে রেখে দিয়েছো । বলো, তুমি আমার জিনিস পত্র ফ্লোরে কেন রেখেছো?
লি: তুমি এখানে ঠিক ভাবে থাকবে, আমি তোমাকে রুম দিয়েছি , তোমার বন্ধুদের দেই নি, এখানে কোনো রকম জোর দেখাবে না ।
লি এবং তার বন্ধুরা বলে তুমি এখানে কি থাকতে চাও?
হ্যাঁ ।
থাকতে চাইলে সুন্দর ভাবে থাকবে এবং বাহির থেকে কোনো লোক আনতে পারবে না , তোমাকে অনেক বার বলা হয়েছে,তুমি কথা শুনো না ।
আমি ৯১১ কল দিয়ে পুলিশ এনে দেখাইবো?
আমিনাহ : তুমি আমাকে পুলিশের ভয় দেখাবে না ।
লি পলিশ কল দিলে দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে উপস্থিত । পুলিশ বিবরণ শুনে বলে আমিনাহ যেহেতু বাসা লি ভাড়া নিয়েছে, তোমার কোনো নাম নাই , তুমি অন্যত্র বাসা দেখে চলে যাবে এবং আজ থেকে এখানে অন্য কোনো লোক আনবে না । পুলিশ দুই জনকে ভালোভাবে বুঝিয়ে চলে যায় ।
পর দিন লি আজিজ, ফ্লোরা ও হাফসাকে বলে কাল রাত আমি পুলিশ এনেছি । পুলিশ আমিনাহ কে নোটিশ দিয়েছে ।
আজিজ : দেখো, বাসায় গিয়ে আজ আবার কোন অবস্থা হয় , আমিনাহ লোকজন নিয়ে হামলা করে কিনা ।
লি আজ ও ওর বন্ধুদের বাসায় ডেকেছে এবং বাসায় গিয়ে দেখে আমিনাহ সিংক ও বাথরুম পরিষ্কার করে রেখেছে ।
আমিনাহ: লি শুনো, কাল এই সামান্য ব্যাপারে পুলিশ ডেকে আনা প্রয়োজন ছিল না । আমরা নিজেরাই আলাপ আলোচনা করে মিটমাট করতে পারতাম ।
লি: দেখো, তুমি যদি ভালো ভাবে থাকতে পারো আমার কোনো অসুবিধা নেই , তবে তুমি বাসা পরিষ্কার করে রাখবে, না পারলে, অন্যত্র চলে যাবে । তাছাড়া তুমি বাজার থেকে পোড়ানো মাছ, শুটকি ঘরে এনে রান্না করো । আমি জানি, এগুলি তোমাদের দেশীয় খাবার, কিন্তু এখানে তুমি যাদের সঙ্গে থাকো, তাদের পছন্দ,অপছন্দের ব্যাপার ও রয়েছে । যদি তুমি দেশীয় খাবার খেতে চাও, নিজেরা এক দেশি লোক একত্রে থাকো, এতে কেউ বাধা দেবে না ।
আমিনাহ : তুমি আজ আবার তোমার নিজেদের লোক নিয়ে ঝগড়া করতে এসেছো । আমি কি কাউকে ডাকি তোমার সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য?
লি: আমি কি ভাবে জানবো তোমার কি মতি গতি?
আমিনাহ: দেখো, আমি তোমার সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না ।
লি কিচেনে গিয়ে দেখে সে আজ পরিষ্কার করে রেখেছে, ঠিক আছে । তুমি আজ যেভাবে পরিষ্কার করে রেখেছো, অন্য দিন ও রাখবে । লির বন্ধুরা কতক্ষন বসে চলে যায় ।
পর দিন আজিজ রেস্টুরেন্টে কাজে গিয়ে লি কে জিজ্ঞেস করে আমিনার সঙ্গে তোমার মিমাংসা হয়েছে?
কাল রাতে আমার বন্ধুদের নিয়ে বাসায় গিয়েছিলাম, কাল বাসা পরিষ্কার করে রেখেছে । এমনটি হলে আমার কোনো অসুবিধা নেই ।
আজিজ: কি দরকার ঝগড়া ঝাটি করা?
আমি তো ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না । কিন্তু ও পোড়া মাছ,শুটকি এবং মাথায় কালি দিয়ে সারা বাথ রুম ময়লা করে রাখে, যা আমি সহ্য করতে পারি না ।
তুমি যেভাবে টাইট দিয়েছো, মনে হয় সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ।
পর দিন আমিনাহ তার বন্ধুদের নিয়ে বাসায় রান্না করে খেয়ে গানের আসর বসিয়েছে । লি ঘরে ঢুকার মতো কোনো রাস্তা পাচ্ছে না । সে দরজা থেকে ভিতরে না ঢুকে ৯১১ পুলিশ কল দিয়ে বলে তোমরা আমার বাসায় এসে দেখে যাও ।
পুলিশ এসে বলে কার নামে এই বাসা?
লি বলে এই বাসা আমার নামে । আমিনাহ বলে আমি সাব লেট্ নিয়েছি ।
পুলিশ বলে এখানে এতগুলি লোক কেন?
ওরা আমার বন্ধু আমাকে দেখতে এসেছে, আমি আমার পার্টনার এর কোনো ডিসটার্ব করি না । ওরা এখনই চলে যাবে এই বলে ওরা চলে যায় ।
পুলিশ লি কে বলে তোমার কি কি অসুবিধা হয়?
লি পুলিশকে বলে তোমরা অবশ্যই দেখেছো এখানে কতগুলি লোক সে জড়ো করেছে । সে প্রায় অনেক লোক নিয়ে আসে এবং আমি বাসায় হাঁটার জায়গা পয্যন্ত পাই না । তা ছাড়া সে ঘর অপরিষ্কার করে রাখে, আমি বাথ রুমে যাইতে পারি না,কিচেন নোংরা জিনিস পত্র দিয়ে ভরে রাখে ।
আমিনাহ তোমার কি অসুবিধা হয় ?
আমিনাহ বলে আমি আমার নিজের দেশের খাওয়া তৈরী করে খাইলে লি বাধা দেয় । আমি চুলে রং করলে সে আমাকে অপছন্দ করে ।
লি বলে আমিনাহ চুলে আলগা বেণী বাঁধে, তাতে আমার কোনো কিছু বলার নেই, তবে সে বেনিতে রং করে এবং সারা বাথ রুম কালি দিয়ে ময়লা করে রাখে, ওটাতে আমার আপত্তি ।
পুলিশ শুনে বলে আমিনাহ তুমি তোমার কান্ট্রি ফুড খাবে এবং লি তুমি তোমার কান্ট্রি ফুড খাবে এ দেশের আইন মোতাবেক আমরা বাধা দিতে পারি না । তোমরা দুই জন্যে মিলে মিশে ঘর পরিষ্কার করবে, তোমরা পড়াশুনা করো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা স্বাস্থ রক্ষার প্রধান কারণ, দুই জনেই জ্ঞানী লোক ।
তোমরা মিলে মিশে চলবে ।
না পারলে, আমিনাহ যে হেতু বাসা লি এর নামে,তুমি বাসা দেখে চলে যাবে ।
আমিনাহ বলে স্যার, আমি চলে যাবো বাসা পাইলে ।
যে কত দিন থাকবো, আমার দেশি খাওয়া নিয়ে বাধা দিলে, আমি কোর্টের স্বরণাপন্ন হবো । পুলিশ বলে আমি এর কোনো সমাধান দিতে পারবো না, তবে মিলে মিশে থাকতে চেষ্টা করবে ।
এই গঠনার পর দুই মাস চলে গেছে, আমিনাহ মাসিক ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে । ভাড়া চাইলে বলে আমার কাছে ভাড়া দেয়ার মতো পয়সা নাই ।
লি অনেক ঝামেলায় পড়েছে এ নিয়ে ফ্লোরা ও আজিজের সঙ্গে আলাপ করেছে । ওরা বলে তুমি কোর্টে যাও , এই দেশে ভাড়া সংক্রান্ত ক্যাসের জন্য কোর্টে কোনো ফী দিতে হয় না । আর যদি পারো বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে এস ।
লি বলে আমি ওর ভয়ে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে আসবো কেন ?
আজিজ বলে এটা তোমার ব্যাপার,তুমি আমিনাহ এবং ওর লোক জনের সঙ্গে পারবে না ।
আজিজ বলে যেহেতু প্রাইভেট প্রপার্টি, তুমি ও বাসা ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দাও । বাড়ির মালিক এগিয়ে এসে তোমাদের উভয়কে কোর্টে কেস করে বাসা থেকে উঠিয়ে দেবে । যেহেতু তোমার সঙ্গে বাড়িওয়ালার ভালো সম্পর্ক আছে, তুমি বাসা আলাদা ভাবে নিতে পারবে এবং ফ্লোরা সম্পূর্ণ সুস্থ হলে বাসায় ফিরে যাবে । তোমরা দুই জনে অথবা বাড়ির মালিক আর একটা ছোট রুম করে দিলে হাফসাকে নিয়ে থাকতে পারবে ।
বাড়ির মালিক মি: গুরপ্রিত সিং, গত তিন মাস এই বাসার ভাড়া পায় নি । সে কোর্টে গিয়ে বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য কোর্ট কতৃক নোটিশ দিয়েছে । প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর কোর্ট কেস পড়ে, ওরা উপস্থিত হয়ে বলে, আমাদের ভাড়া দেয়ার মতো পয়সা নাই ।
ক্রমশ :