“There is a crack, a crack in everything That’s how the light gets in..”
জীবনে আমার fail বা ব্যর্থতার ইতিহাস আছে। তবে Academically জীবনে শুধু একটি বিষয়ে একবার fail করেছিলাম। সেটি ছিল ইংরেজি ভাষায়। সম্ভবত ক্লাস ১/২ এর একটি সাময়িক পরীক্ষায়। পরবর্তীতে fail না করলেও ইংরেজিতে Excellent কখনই ছিলাম না। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র থাকলেও ক্লাস নাইন টেনের পর থেকে সাহিত্যের উপর বেশ দুর্বলতা শুরু হয়, এবং পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যের উপর দুর্বলতাটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ওই সময় ইংরেজি সাহিত্যের বই কষ্ট করে পড়তে হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা কালীন শুধু মাত্র ইংরেজি সাহিত্যের কিছু মজা নেওয়ার জন্য সাবসিডিয়ারিতে ইংরেজি সাহিত্য নেই। এইতো এভাবেই শুরু। লেখার প্রসঙ্গ এটি নয়। প্রসঙ্গ হলো রুশ ছোট গল্পের লেখক মিখাইল শোলোকভ এর একটি দুর্দান্ত ছোট গল্পের মর্মার্থ নিয়ে যা কিনা দিতে পারে আপনাকে বেঁচে থাকার অনন্য প্রেরণা !!
গত ২ সপ্তাহ আগে আমি হটাৎ করে আমাকে FB ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো McMaster Universityর একজন শিক্ষয়িত্রীর সাথে কথা হয়। উনার নাম Nawshaba Ahmed. এই নামের আমার এক বন্ধুর ভাগ্নিকে অনেক আগে তার রেসুমে এবং কভার লেটার লিখতে সাহায্য করেছিলাম, তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখে একসেপ্ট করে নিয়েছিলাম। গত সপ্তাহে হটাৎ মনে হলো তাকে জিজ্ঞেস করি কি করছে এখন, কিন্তু জানতে পারলাম আমি যার কথা মনে করেছিলাম উনি আসলে সে নয়। উনি McMasterএ Gender Studiesএ MA করতে এসেছেন। দেশে জাহাঙ্গীর নগর থেকে ইংরেজি সাহিত্যে BA এবং MA করেছেন। উনি বললেন উনি এখানে এসে প্রথম দিকে ৬ মাস টরোন্টোতে ছিলেন, তখন নাকি অনেকের কাছে আমার কথা শুনেছেন, এবং সেজন্যেই FR পাঠিয়েছিলেন। যাহোক উনার পড়াশুনা বিষয়ে কিছুক্ষন আলাপের পরে বুজতে পারলাম উনি একজন well-read ব্যক্তি।
বেশ ২/৩ ঘন্টা আলাপ হলো চার্লস ডিকেন্স, চেকভ, দস্তয়ভস্কি, টেনিসন হেমিংওয়ে, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে আরো অনেকের অনেক লেখা নিয়ে। এক পর্যায়ে উনি জানতে চাইলেন আমি মিখাইল শোলোকভ এর ছোটগল্প Men’s Fate পড়েছি কি না। গল্পটি আমি অনেক অনেক বছর আগে পড়েছিলাম। উনি শুনে বললেন উনি এপর্যন্ত এখানে উনার জানামতে কমুনিটির অন্য কাউকে জানেন না যে কিনা মিখাইল শোলোকভ পড়েছেন। ওই গল্পটির উপর ভিত্তি করে রাশিয়ান ভাষায় ১৯৫৯ সালে একটি মুভি তৈরী করেছিল, এবং সেটি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিল। আমি সাধারণত কোনো ভালো উপন্যাস বা গল্পের চলচিত্র রূপান্তর দেখি না, কারণ অনেক সময় আমার কল্পনার জগতের সাথে চলচিত্রের একেবারে গরমিল হয়ে যায়, তবে মাঝে মাঝে অনেকে খুব ভালো চলচিত্র রূপ দেন। মিখাইল শোলোকভ এর Men’s Fate গল্পটিও ওরা ভালো চালচিত্র রূপ দিয়েছেন।
দীর্ঘদিন পরে উনার সাথে আলাপকালে গল্পটির কথা মনে হওয়ায় চলচিত্রটি দেখলাম। গল্পটি দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন একজন নিবেদিত প্রাণ রাশিয়ান সৈনিকের একটি ছোটোখাটো সুন্দর সুখের সংসার, এবং দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে যাওয়া, যুদ্ধে অবর্ণনীয় কষ্ট, সহযোদ্ধা এবং স্বজনদের হারানোর ব্যথা, ফ্রন্টলাইনে জীবন বাজি রেখে জার্মানদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি ঘটনার মধ্যে দিয়ে যখন যুদ্ধশেষে বীরের বেশে বাড়িতে ফেরা তখনই জীবনে নেমে আসে বেঁচে থাকার অন্য এক যুদ্ধ, যেই যুদ্ধে যে কারো পক্ষেই বেঁচে থাকা অত্তান্ত কঠিন, কিন্তু তারপরের গল্পের নায়ক Andrei পেয়ে যায় আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার নতুন একটি উপকরণ, এবং শুরু করে নতুন জীবন। আমাদের দেশের মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস ঘাটলে এমনি ঘটনা অনেক দেখতে পাবেন তবে Andreiর মতো সবাই নতুন করে এগিয়ে যেতে পারে নি। আপনি যদি জীবনের স্ট্রাগলের কারণে সামনে শুধু অন্ধকার দেখেন, বলতে গেলে একেবারে আশাহারা এবং জীবনটা নিভু নিভু প্রদীপের মতো মনে হয় তাহলে এই গল্পটি বা চলচিত্রটি আপনাকে বেঁচে থাকার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনেক অনুপ্রেরণা যোগাবে। It’s about tolerance, perseverance and inspiration to keep our lives on, no matter what!!
আমার শিরোনামের ইংরেজি শব্দগুলি আমাদের বিখ্যাত কানাডিয়ান গায়ক, গীতিকার, আবৃত্তিকার এবং কবি প্রয়াত লিওনার্ড কয়েনের। একই ধরণের কথা গান্ধীও বলেছেন, এবং আমাদের পবিত্র কোরানেও আছে। কঠিন অন্ধকারের মধ্যেও আলোর অস্তিত্ব থাকে। লিওনার্ড কয়েনের কথাগুলি তার বিখ্যাত গান Anthemএর কয়েকটি লাইন। কথাগুলি আমার খুবই প্রিয়, এবং আমি আমার নিজের জীবনে এবং আমার অনেক ক্লায়েন্টের জীবনেও প্রমান পেয়েছি, তাই শত কষ্টে, শত ব্যথাতে বা ঘন অন্ধকারেও আল্লাহ তালা আমাকে কখনো আশাহত করেন নাই। মানুষের যখন সব শেষ হয়ে যায় বলে মনে হয় তখনও কিছু থাকে, যাকে আঁকড়ে ধরে আবারো উঠে দাঁড়ানো যায়। ঠিক তেমনি একটি বাস্তব ঘটনা বলে শেষ করছি।
ঘটনাটি আমার পেশাগত কাজের সময় ঘটে। বেশ কয়েকবছর আগে কাজ করা অবস্থায় একটি ক্রাইসিস এর সম্মুখীন হতে হয়। একজন কলিগ এসে একজন মহিলার আত্মহত্যার এটেমটের কথা বলে। তাতক্ষনিক উক্ত বেক্তির রুমের কাছে যাই। তার হাতে তখন একটি রক্ত মাখা চাকু, এবং তার রুমের দরজা বন্ধ। আমরা জানালা থেকে তার সাথে কথা বলছি। আমার কাজের শুরুর দিকের কথা। মহিলা তার হাত বেশ কিছুটা কেটে ফেলছেন, এখন তিনি চাকুটি তার গলায় বসাবেন। ৯১১ কল করা হয়েছে, কিন্তু তাদের আশা পর্যন্ত যাতে সে গলায় পোচ না দেন সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি। কোন কথাতেই কাজ হচ্ছে না। যাহোক এই সময়ে কোনো থিওরি বা কৌশলে কাজ হচ্ছিলো না, কিন্তু হটাৎ করে আমার কেন যেন ভদ্রমহিলার পোষা বিড়াল নিনির কথা মনে হলো। আমি তখন কোনো কিছু না ভেবেই বললাম, “তুমি মরে গেলে তোমার নিনির কি হবে,” এই কথা শুনে সে হাউমাউ করে নিনির নাম করে কান্না শুরু করে দিলো। তার নিজের অজান্তে হাত থেকে রক্ত মাখা চাকুটি নিচে পড়ে গেলো এবং সে ফ্লোরে বসে পড়লো, ঠিক তার ২/১ মিনিট পরেই প্যারামেডিক এসে গেলো এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
উল্লেখ তিনি এখনো বেঁচে আছেন। হাসপাতালে সুস্থ হয়ে উনি বলেছিলেন, হটাৎ করে নিনির নাম শুনতেই তার কলিজার মধ্যে যেন একটি ঝাঁকা দিয়ে গিয়েছিলো। উনি বলেছিলেন নিনির কথা মনে না পড়লে উনি হয়তো বাঁচতে পারতেন না। এমনি অনেক ঘটনা আছে যেখানে দেখা গেছে যে বড়োসড়ো কিছু নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট একটি কথা, ছোট একটি ঘটনা, ছোট একটি জিনিস ইত্যাদি আত্মহননের পথযাত্রী মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই সত্য ঘটনাটি বলার এই কারণ যে, আপনার জীবনে যত কঠিন কষ্ট, দুঃখ বা সংকট থাকুক না কেন, কোনো না কোনো কিছু আছে যেটি নিয়ে আপনি শত কষ্টকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারেন, পেতে পারেন বেঁচে থাকার আশা। হয়তো আপনার ক্রাইসিসকালীন সময়ে সেই জিনিসটির কথা মনে নাও পড়তে পারে, সে জন্য আপনার দরকার একজন ভালো শুভাকাংখীর যে আপনাকে ওই জিনিষটির কথা মনে করিয়ে দিবে, অথবা তেমন কেউ না থাকলে লজ্জা শরম বাদ দিয়ে আপনাকে অবশ্যই প্রফেশনাল সাহায্য নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে জীবন যত কঠিনই হোক না কেন, অতি মূল্যবান ! আপনার মা/জননী ১০ মাস ১০দিন অত্যান্ত কঠিন কষ্টের মধ্যে দিয়ে আপনাকে এই পৃথিবীতে এনেছেন, আপনার আত্মহনন সেই অমানবিক কষ্টের অবমাননা এবং অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে অবমাননা করা। যদি কারো কখনো ওই রকম কিছু মনে হয় দয়া করে কথা বলবেন, reach out করবেন। এই মহামারিকালীন সময়ে মহান সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে, আশাহত না হয়ে সামনের সুন্দর দিনের প্রতীক্ষায় আমাদেরকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা আমাদের মঙ্গোল করবেন। আমিন ! মুকুল। টরোন্টো।
ছবিটি দেখতে চাইলে নিচের লিংকটি ক্লিক করে Youtube দেখতে পারেন। 
FATE OF A MAN

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন