প্রচন্ড বৃষ্টির শেষে বেশ মনোরম আবহাওয়া। দিগন্তবিস্তৃত জুড়ে নীলাভ জোৎস্নার ঢল নেমে শহরের বুক জুড়ে অপরূপভাবে আলোকিত হয়ে আছে চারদিক। তন্মধ্যে বিজলীর উজ্জ্বল আলোতে গোটা শহরটাই যেন নবনধূর মতো সুসজ্জিত সাজে সেজে আছে। দক্ষিণার মিহিন বাতাস আমোদিত হয়ে আছে রংবেরংএর ফুলের মধুর সৌরভে। আপাতদৃষ্টিতে প্রকৃতির বুকে যেন নেমে এসেছে আনন্দোৎচ্ছল সমারোহ। গ্রেট-ইষ্টার্ণহোটেল প্রাঙ্গণে সারি সারি লাক্সারী বাস আর অগণিত বিদেশী পর্যটকদের সমাগম। চলছে অবিশ্রান্ত আনা গোনা।
ততক্ষণে রোমান্টিক ছায়া পড়ে যায় মহুয়ার চোখেমুখে। উচ্ছাসে ও’ একেবারে উতলা হয়ে ওঠে। স্বভাবসুলভ চপলতায় ওষ্ঠের ফাঁকে খুশীর ঝিলিক দিয়ে ওঠে। উন্মুক্ত অন্তর মেলে চারিদিকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে, -‘বাহঃ, কি মনোরম পরিবেশ, তাই না নিখিল দা!’
ঘাঁড় ঘুরিয়ে নিখিলেশ বলল,-‘শুধু তাই নয়, রোমাঞ্চকর পরিবেশ বলতে পারেন।’
-‘বাব্বা, আপনি তো খুব রোমান্টিক মানুষ দেখছি!’
কথাটা শুনে শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলি যেন আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে নিখিলেশের। আবেগের প্রবণতায় চোখমুখ থেকে ঝোরে পড়ছে উচ্ছাস। একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বলে,-‘কেন? আগে ছিলাম না বুঝি!’
-‘না না, আমি বলছিলাম, আজকের মতো এতোটা ছিলেন না।’
-‘আপনি জানলেন কি করে? এসব তো আপনার জানার কথা নয়! বলে কোণা চোখে তাকায় নিখিলেশ। নিঃশব্দে হেসে বলল,-আজকের মতো মানে! এর আগে আমায় কতবার দেখেছেন, বলুন তো!’
-‘আ হা, শুভ্রাদির বিয়েতে বুঝি দেখিনি!’
-‘সে তো কয়েক মুহূর্ত মাত্র। একবার দেখেই কি মানুষ চেনা যায়?’
-‘আলবাট্ যায়! মানুষ চিনতে অন্তত আমার ভুল হয় না। যদি কেউ ছলনা না করে।
-‘বেশ, তা নয় মানলাম। আর আপনি?’
-‘আমি? আমি কি?’ বড় বড় চোখ পাকিয়ে তাকায় মহুয়া।
থমকে দাঁড়ায় নিখিলেশ। সিগারেটটা মুখে পুরে একটা টান দিয়ে বলল,-‘আপনি তো এক্কেবারেই বেরসিক, আবেগ-অনুভূতিহীন মহিলা।’
গাল ফুলিয়ে প্রতিবাদের সুরে মহুয়া বলে -‘হুঁম্, নিখিল দা, ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি!’
নিখিলেশও কম যায় না। ব্যঙ্গ করে বলে,-‘করবেন কি শুনি! পুলিশ ডাকবেন?’
-‘হ্যাঁ ডাকবোই তো! শুভ্রাদিকে আজই সব বলে দেবো গিয়ে।’
-‘হো হো করে হেসে ওঠে নিখিলেশ। সহাস্যে বলল,-‘বৌদি বিশ্বাসই করবে না। দুটো নয়, পাঁচটা নয়, একটা
মাত্র দেবর। কত আদরের বলুন তো!’
-‘ও, তাই বুঝি!’
-‘ইয়েস ম্যাডাম!’ বুড়ো আঙ্গুলটা দেখিয়ে বলে,-‘হুঁম্ হুঁঃ, বৌদিকেও সাইজ করে রেখেছি। কিছু বলার সাহসই হবে না!’ বলে হোঃ হোঃ করে হেসে ওঠে।
চটে গিয়ে মহুয়া বলল,-‘ও এই কথা! থাকেন বিদেশে। সেখান থেকে শুভ্রাদিকে কন্ট্রোল করেন আপনি! সব আপনার হাতের মুঠোয়। দাঁড়ান, শুভ্রাদিকে এক্ষুণি ফোন করছি।’ বলে হন্ হন্ করে দ্রুত গতিতে পিছন দিকে হাঁটতে শুরু করে। ওর পিছে পিছে এগিয়ে গিয়ে নিখিলেশ বলল,-‘আরে, আরে যাচ্ছেন কোথায়? দাঁড়ান। কি মুশকিল। রসিকতাও বোঝেন না। আই এ্যাম যাষ্ট যোকিং।’
নিখিলেশের একটা শব্দও শ্রুতিগোচর হোল না মহুয়ার। পিছন দিকে পা বাড়াতেই থমকে দাঁড়ায়। বুক ধড়াস করে কেঁপে ওঠে। ঠোঁট কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে সারাশরীর। রুদ্ধ হয়ে যায় কণ্ঠস্বর।-এ কি, এ কেমন করে সম্ভব! এ যে স্বপ্নেরও অতীত! অথচ নিতান্ত বাস্তব সত্য। যা ক্ষণপূর্বেও কল্পনা করতে পারেনি। কল্পনা করতে পারেনি, পলকমাত্র দৃষ্টিপাতে ওর কোমল হৃদয়ে এমন কঠোর আঘাত এসে লাগবে। জীবনের এতবড় পরাজয় এভাবে নীরব নির্বিকারে মেনে নিতে হবে, তা কখনোই ভাবতে পারেনি মহুয়া।
মুহূর্তের এক অদৃশ্য ঝড়ে হৃদয়পটভূমি ওর তোলপাড় হয়ে গেল। নড়ে ওঠে মহুয়ার পাঁচবছরের আঁকড়ে ধরে থাকা ভালোবাসা নামের শক্ত খুঁটিটা। অনুভব করে, পায়ের নীচের মাটিটা যেন একটু একটু করে সড়ে যাচ্ছে। এতো আলোর মাঝেও ক্রমশ চোখের সামনে যেন অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলছে। নালিশ জানায় দেব-দেবতার কাছে। -হে ভগবান্, কেন তুমি আমায় এ দৃশ্য দেখালে! এ সংসার থেকে কেন আমায় উঠিয়ে নিলে না! আমি যে সহ্য করতে পাচ্ছিনা! আমায় শক্তি দাও ঠাকুর, আমায় শক্তি দাও!
মনে মনে বিড় বিড় করতে করতে আঁচলে মুখ গুঁজে হঠাৎ অস্ফূট আর্তনাদ করে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ে মহয়া।
মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল নিখিলেশ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ওঠে। ওকে প্রচন্ড ভাবিয়ে তোলে। আচমকা মহুয়ার বিরূপ আচরন লক্ষ্য করে বিস্মিত দৃষ্টি মেলে হাঁ করে চেয়ে থাকে। কিছুতেই ভেবে কূল পায় না, হঠাৎ কি হলো মহুয়ার! এ তো বড় আশ্চর্য্যময় ঘটনা! এতক্ষণ দিব্যি হাসছিল, কথাবার্তা বলছিল। ঠাট্টা তামাশাও করছিল। হঠাৎ এমন কি ঘটলো! শরীর খারাপ হলো না তো! মেয়েদের কখন কি হয়, বোঝা বড় মুশকিল।
কিছুতেই স্বস্তি পায় না নিখিলেশ। অজানা আশক্সক্ষায় মনের ভিতর কেমন আনচান করে ওঠে। এক ধরণের অনুতাপবোধে নিজেকেই অপরাধী মনে হয়। বড্ড কষ্ট পায় মনে মনে ।
বয়ে যায় বেশ কিছুটা সময়। মহুয়া তখনও মুখ তোলে না। লজ্জায় অপমানে পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিখিলেশ অস্বস্তিবোধ করলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক গলায় বলল,-‘হোয়াট্ হ্যাপেন্ড্ মহুয়া? আর ইউ ও.কে? প্লীজ্ সে সামথিং!’
মন্ত্রের মতো হঠাৎ কাঁন্না থেমে গেল মহুয়ার। ভুলেই গিয়েছিল যে, নিখিলেশ ওর সাথে আছে। কিন্তু নির্লজ্জ বেহায়ার মতো কেমন করে বলবে ওর ব্যর্থ প্রেমের কথা। ওর প্রেমের পাঁচালীর কথা। কেমন করে বলবে, ওর প্রিয়তম হবুস্বামী জয়ন্তর ব্যভিচারের কথা। প্রতারণার কথা। কিছুক্ষণ আগে ও’ জয়ন্তকে সচোক্ষে দেখেছে। হ্যাঁ, জয়ন্তকে ঠিকই দেখেছে মহুয়া। সঙ্গে ছিল একটি যুবতী মহিলা। পরনে জিন্সের প্যান্ট, হাইহীল জুতো। মহিলার লাজ শরমের বালাই নেই। শরীরের উর্দ্ধাংশ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। সে আর অন্য কেউ নয়, জয়ন্তর বসের একমাত্র আদরণীয়া কন্যা মিস্ মিলি আচার্য্য। পাশাপাশি দুজনে হাত ধরাধরি করে হা হা হি হি করতে করতে গ্রেট-ইষ্টার্ণ হোটেলের করিডোর দিয়ে ঢুকতে দেখেছে, একথা ও’ কেমন করে বলবে? কেমন করে বলবে, মিটিংএর দোহাই দিয়ে জয়ন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, প্রতারণা করেছে। মহুয়ার স্বপ্নের রাজপ্রাসাদটাকে ভেঙ্গে চূড়মার করে দিয়েছে। জয়ন্ত একজন ফ্রড, প্রতারক, লম্পট, চরিত্রহীন পুরুষ। মনের সন্দেহ কখনও বাস্তবে পরিণত হতে পারে, তা স্বচোক্ষে দৃষ্টিগোচর না হলে কখনো বিশ্বাস হতো না। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী মহুয়া স্বয়ং নিজেই। একথা কেমন করে বলবে। আজ ওর ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে, জয়ন্তকে ও’ মনে-প্রাণে ভালোবেসে ছিল। ওকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিল, ভরসা করেছিল। এ কথা ও’ কেমন করে বলবে!
ততক্ষণে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে সন্নিকটে এগিয়ে আসে নিখিলেশ। মহুয়ার পাশে এসে দাঁড়াতেই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের উষ্ণ অনুভূতিতে বিদ্যুতের শখ খাওয়ার মতো শিহরিত হয় মহুয়ার সারাশরীর। মুখ তুলে তাকাতেই রেশমী জোছনার নির্মল আলোয় নিখিলেশের দৃষ্টিগোচর হয়, মুক্তোর মতো অশ্রুকণায় মহুয়ার চোখের কোণে চিক্চিক্ করছে। মুখখানা বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে আছে। বড্ড অম্বাভাবিক লাগছে। কারণ অনুসন্ধানে প্রচন্ড উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। ওর চোখেমুখে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সুস্থির হয়ে একদন্ডও অপেক্ষা করতে পাচ্ছে না। হঠাৎ ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে একরাশ বিস্ময় নিয়ে সাবেগে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে,-‘এ কি মহুয়া, তোমার চোখে জল! তুমি কাঁদছো? আই মিন, হঠাৎ কাঁন্নাকাটি করছেন কেন? কি হয়েছে?’
এতক্ষণ লজ্জায় অপমানে দুহাতে মুখ ঢেকে রেখেছিল মহুয়া। এ মুখ ও’ দেখাবে কেমন করে! কি জবাব দেবে এখন নিখিলেশকে। কি বলে নিস্তার পাবে। ওইবা কি মনে করছে! মহুয়ার সম্বন্ধ্যে কি ভাবছে! কিন্তু আজ ওর মান-সম্ম্রাম-ইজ্জত সব ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছে জয়ন্ত। সব শেষ হয়ে গিয়েছে মহুয়ার। কিছুই আর অবশিষ্ঠ নেই। আজ ও’ নিঃশ্ব, সর্বসান্ত। জয়ন্তকে ভালোবাসার হিসেব কষতে কষতে বড় অসহায় মনে হয় নিজেকে। শরীর, মন দুটোই ক্লান্ত, ভারাক্রান্ত।
ইতিপূর্বে হঠাৎই নিখিলেশের মৃদু স্পর্শের কোমল অনুভূতিতে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায় মহুয়ার। অপ্রত্যাশিত নিখিলেশের প্রেমিকসুলভ কণ্ঠস্বরে ওর বুক কেঁপে ওঠে। ঠোঁট কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে হৃদয়-মন-প্রাণ সারাশরীর। নিজের কানদু’টোকে কিছুতেই বিশ্বাস হয় না। বিস্ময়ে অভিভূতের মতো চোখের দৃষ্টি স্থির হয়ে আসে। এতটুকু জড়তা নেই নিখিলেশের, সংকোচবোধ নেই। মহুয়ার মসৃণ পৃষ্ঠদেশে মৃদু হস্ত সঞ্চালণ করে বলে,-‘আমি কি এতোই পর মৌ? কোনো সম্পর্কই কি আমাদের নেই? দাদার শালিকা হিসেবে অন্তত এটুকু জানবার অধিকার আমার নিশ্চয়ই আছে। তোমার কি হয়েছে আমায় বলবে না? বলো মৌ, আমায় বলবে না?’
স্পর্শকাতরতায় লজ্জাবতী পাতার মতো পলকেই শরমে নূয়ে পড়ে মহুয়া। এক অভাবনীয় আনন্দ-বেদনার সংমিশ্রণে চোখের তারাদুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে। নিখিলেশের আবেগাপ্লুত প্রেমস্পর্শে এক অভিনব অনুভূতিতে শান্ত হয়ে আসে ওর দেহ, মন সারাশরীর। ছুঁয়ে যায় হৃদয়পটভূমি। মুছে যায় ওর মনের পূঞ্জীভূত সমস্ত গ্লানি। খুঁজে পায় নিজের অস্তিত্ব, আপন সত্ত্বা। অনুভুব করে নিজের পরিপূর্ণ জীবন। এ যেন এক অনাস্বাদিত আনন্দ। যা ভাষায় বয়ান করা যায় না। আজ যেন পৃথিবীকে আরো বেশী সুন্দর মনে হয়। যেদিকে তাকায় সব নতুন লাগে।
কিন্তু আকস্মিক মন-মানসিকতার কেন এরূপ প্রতিক্রিয়া মহুয়ার? এরূপ চৈতন্যোদয়ের হেতুই বা কি? সবটাই কি মনের ভ্রম? তবে কেন নিখিলেশের পুরুষালী দেহের গন্ধ্যে এক ধরণের নেশায় ক্রমশ ওকে মাতাল করে তুলছে?
মহুয়া নতুন করে কল্পনায় বিচরণ করতে থাকে, এক স্বপ্নময় দেশে, এক রঙ্গিন পৃথিবীতে। ফিরে যায় অতীতের স্বপ্ন বিজড়িত সেই দিনগুলিতে। যেদিন ভালোবাসার নৈবেদ্য নিয়ে মরিয়া হয়ে ছুটে গিয়েছিল নিখিলেশের কাছে। অথচ ভাগ্যের কি অদ্ভুত লিখন! একসময় যাকে মনে প্রাণে চেয়েছিল, একান্তআপন করে কাছে পেতে চেয়েছিল, আজ সেই নিখিলেশ মহুয়ার হাতের মুঠোয়। ওকে একান্তে নিঃভৃতে নিবিড় করে কাছে পাবার এই-ই সুবর্ণ সুযোগ। ইচ্ছে করছে নিজেকে সঁপে দিতে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে, ঘন পশমাবৃত নিখিলেশের প্রশ্বস্ত বক্ষপৃষ্ঠে আঁছড়ে পড়তে। ওর বলিষ্ঠ বাহুদ্বয়ের বন্ধনে পিষ্ঠ হয়ে যেতে। মন চাইছে, নিখিলেশ ওর উষ্ণ বুকের মাঝে টেনে নিয়ে সজোরে আলিঙ্গন করুক। প্রেমালিঙ্গনে জড়িয়ে ধরুক। কল্পনায় চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই মহুয়ার। কিন্তু নিখিলেশ? ওর মনের ঠিকানা তো সম্পূর্ণ অজানা। কোনদিন কি খুঁজে পাবে মহুয়া? কিন্তু তাই-ই বা কেমন করে সম্ভব?
পরিণয়ের কথা ভাবতেই আঁতকে ওঠে মহুয়া। অনাগত বিরূপ বিশৃক্সক্ষল পরিস্থিতির আনুমানিক চিত্র কল্পনায় উদয় হতেই শিউড়ে ওঠে। তীব্র দংশণ করে বিবেকে। না না, এ হতে পারে না! কিছুতেই না! এ বড়ই অন্যায়, অবিচার। ভালোবাসা বেচা-কেনার দ্রব্য-সামগ্রী নয়। চাইলেই পাওয়া যাওয়া না। সহজ সরলতার সুযোগ নিয়ে নিখিলেশের মতো একজন সৎ, মহৎ, আদর্শ এবং চরিত্রবান পুরুষ মানুষকে প্রতারিত করবে কোণ্ সাহসে? কোণ্ অধিকারে? এতড়ব স্পর্দ্ধা অন্তত মহুয়ার নেই। এ তো কল্পনা করাও পাপ। কিন্তু আজ যে তামাশা ও’ করলো, সেটা কি নিছক ছেলেমানুষী বলে উড়িয়ে দিতে পারবে মহুয়া? এতক্ষণ নিশ্চয়ই টের পেয়ে গিয়েছে নিখিলেশ। কিছুই আর গোপন করা গেল না। নিখিলেশের কাছে আজ ও’ কত ছোট হয়ে গেল।
দীর্ঘ সময় ধরে দ্বিধা আর দ্বন্দের অন্তর্কলহে জর্জরিত মহুয়ার বিষাদে ছেয়ে যায় শরীর আর মন। প্রচন্ড রাগ হয় নিজের উপর। নিজেকেই গিল্টি ফিল করে। ধ্যাৎ, নিখিলেশ চলে গেলেই ভালো হতো! কেন যে ওকে বাঁধা দিতে গিয়েছিল! বাইরে বেরিয়ে না এলে অন্তত জয়ন্তর প্রেমলীলার সাতকাহন এমন নীরব নির্বিকারে ওকে সহ্য করতে হতো না।
জয়ন্তর মুখখানা চোখের পর্দায় ভেসে উঠতেই পিত্ত্বি জ্বলে ওঠে মহুয়ার। চাপা উত্তেজনায় দাঁতে দাঁত চিবিয়ে নিজের মনে বিড় বিড় করে ওঠে,-মরুক জয়ন্ত, রসাতলে যাক্। মেয়েদের মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই ওর পেশা, জয়ন্ত কাউকে ভালোবাসতে পারে না, কোনদিনও না।
ইচ্ছে হচ্ছিল, চিৎকার করে জয়ন্তকে গালিগালাজ করবে, ওকে অপদস্থ করবে। কিন্তু সেই প্রবৃত্তিও আর হলো না। শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। নিখিলেশও নাছোড়বান্দা। সহজে ছাড়বার পাত্র নয়। মহুয়ার গা-ঘেষে দাঁড়ায়। চকিতে হাত প্রসারিত করে ওর চিবুকটা তুলে ধরে। রাতের আলো আঁধারে দুধসাদা গায়ের রং যেন ওর আরো সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে।
হঠাৎ দৃষ্টি বিনিময় হতেই মৃদুকণ্ঠে আদেশের সুরে নিখিলেশ বলল,-‘মুখ তোলো মহুয়া। আজ মনে হচ্ছে স্বয়ং বিধাতার সেটিই ইচ্ছে। তাকাও আমার দিকে। জানতে চেয়েছিলে না, আজ আমি কেন এসেছি! যেকথা বলার সুযোগ হয়তো কোনদিনও পেতাম না। কই, মুখ তোলো। কি হলো। কথা বলো মৌ। এক্ষুণিই লোকজন এসে ভীঁড় করবে, সেটা কি ভালো হবে। মুখ তোলো মৌ, মুখ তোলো।’
হঠাৎ যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেল। দু’হাতে কানদুটো চেপে ধরে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে মহুয়া,-‘ষ্টপ্ ইট্ নিখিল দা, প্লীজ্! দোহাই আপনার। ঐ নামে আমায় ডাকবেন না প্লীজ্। মরে গিয়েছে মৌ। আজ থেকে ও’ মৃত। ওনামে আমায় কখনো ডাকবেন না।’ বলে আঁচলে মুখ ঢেকে ফেলে। কিন্তু কি বলতে চায় নিখিলেশ? কেন এসেছে ও’? তবে কি সবই ওর পূর্বপরিকল্পিত? সব জেনে শুনে মহুয়াকে আজ প্রপোজ করতে এসেছে? কিন্তু ওর কোনো খবরই তো মহুয়ার জানা নেই। তা’হলে?
মুহূর্তে শরমের আবরণটুকু সড়ে গেল মহুয়ার। সবিস্ময়ে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে চোখ তুলে তাকাতেই সহাস্যে নিখিলেশ বলল,-‘খুব চটেছ মনে হচ্ছে! হোয়াটস্ রং?’ বলতে বলতে দু’হাত প্রসারিত করে দেয়।
মহুয়া প্রতিবাদ করে ওঠে,-‘আপনি ভুল করছেন নিখিলেশ বাবু। এ হয় না, হতে পারে না।’
-‘কেন হতে পারে না! ভালোবাসা তো পাপ নয়।’
-‘কিন্তু আমার অতীত? আমার অতীত সম্বন্ধ্যে আপনি কিছুই জানেন না।’
-‘আমি জানতেও চাই না! তবে আজ যেটুকু আমার বোধগম্য হলো, তাতে শুধু এটুকুই বলবো, জীবনে ভুল-ক্রুটি মানুষের হতেই পারে। হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর তার সংশোধন যথা সময়েই করে নিতে হয়। যে সুযোগ দ্বিতীয়বার আর আসে না!’
-‘তাতে আপনার লাভ?’
-‘লাভ ক্ষতির হিসেব আমি রাখি না মৌ। কারণ জীবনে সেটাই বড় কথা নয়। এছাড়া কিছুই কি তুমি অনুভব করতে পারো না? তোমার কোনো অনুভূতিই কি নেই? বলো মৌ, বলো! চুপ করে থেকো না। আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই? সামান্য অবহেলায় জীবনের পরম পাওয়ার সার্থকতা এমন নীবর নির্বিকারে ব্যর্থ হতে দিও না, প্লীজ্! হয়তো আর কোনদিনও আমাদের দেখা হবে না।’
-‘কেন? আপনি যে বলছিলেন এখন কোলকাতাতেই থেকে যাবেন।’
-‘সে তো তোমার জন্যে! তুমি কি মনে করো বৌদি কিছুই টের পায়নি? বৌদি আমায় সব বলেছে।’
-‘কি বলেছে শুভ্রাদি?’
-‘মনে পড়ে সেদিনের কথা? ভেবে দ্যাখো তো একবার, আমি ইংল্যান্ড যাচ্ছি শুনে তুমি উ™£ান্ত হয়ে যেদিন আমাদের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলে। হন্যে হয়ে দোতলার উপরে নীচে সেদিন তুমি শুধু আমাকেই খুঁজছিলে, কিন্তু কেন? মুখে না বললেও তোমার বিষন্নময় মুখখানা লক্ষ্য করে বৌদি ঠিকই আন্দাজ করেছিল। খোলা খাতার মতো তোমার অসহায় চোখদুটো দেখে অনায়াসে বুঝে নিয়েছিল, তোমার অব্যক্ত মনের কথা। তুমি প্রায়শঃই ফোন করে শুধু একটা কথাই জানতে চাইতে, আমি কতদিন বিদেশে থাকবো। কখন দেশে ফিরবো, কবে আসবো। বলো সত্যি কি না!’
-‘হলেই বা, আজ তার কিইবা মূল্য আছে!’
-’আলবাত্ মূল্য আছে মৌ! সেটা তোমার মনকেই জিজ্ঞ্যেস করে দ্যাখো না! এ্যাক্চুয়েলি, আমারই দুর্ভাগ্য, দ্যাট্ ইস্ মাই ফল্ট্! কখনো সেভাবে চিন্তা করিনি। ভাববার অবকাশও পাইনি। একটু হীন্টও পাইনি।’
-‘তা’হলে আপনি আমায় দয়া করছেন বলুন!’
-‘ছিঃ মৌ, একথা তুমি বলতে পারলে! জানি, ভালোবাসা কখনো গায়ের জোরে ছিনিয়ে নেওয়া যায় না। কিন্তু ভালোবাসাও কখনো স্থান-কাল-পাত্রের ধার ধারে না। এর জন্ম হয় এক অভিনব কোমল অনুভূতি থেকে। যার বিশ্লেষণমূলক কোনো ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। কিন্তু সবই যে আজই এরকম নাটকীয়ভাবে ঘটে যাবে, তা স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করিনি।’
-‘তা’হলে কেন এসেছিলেন আপনি?’
-‘কেন এসেছি এখনও বুঝতে পারছো না! কোলকাতায় ল্যান্ড করে আমি সরাসরি তোমায় দেখবার জন্যেই চলে এসেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, খুব ভুল করেছি।’
-‘হুঁমঃ, আপনি লন্ডন থেকে খালি হাতে এসেছেন বুঝি! আপনার লাগেজ কোথায়?’
নিঃশব্দে হেসে ফেলল নিখিলেশ। বলল,- সে তো রাম বাহাদুর এসেছিল এয়ারপোর্টে। আমার লাগেজ ওওই নিয়ে গিয়েছে। আসলে, আমারই বোঝার ভুল। রং আইডিয়া বেস করে এখন নিজেই ট্রাবলে পড়ে গিয়েছি। বাট ডোন্ট ওয়ারি! আই ডু নট ওয়ান্ট টু গীভ ইউ এনি প্রেসার। কিন্তু এভাবে আমায় অপদস্থ করো না প্লীজ!
-‘আর আপনি যা করছেন, তাতে আমি অপদস্থ হচ্ছি না! আমায় অপদস্থ করছেন না? অপমান করছেন না?’
অস্ফূট হাসলো নিখিলেশ। বিষন্নময় দৃষ্টি মেলে মহুয়ার দিকে একপলক চেয়ে বলল,-‘তোমাকে অপমান করবার বিন্দুমাত্র স্পৃহা আমার নেই মৌ। তার আগেই যেন মৃত্যু বরণ করি।’
ফোঁস করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,-‘দোষ আমারই। যাক্গে, অযথা তর্ক-বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। তাতে ফল ভালো হয় না। অজান্তে কোনো ভুল-ভ্রান্তি কিছু ঘটে থাকলে আমায় ক্ষমা কোরো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। চলো, তোমায় পৌঁছি দিয়ে আসি।’ বলে ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করে নিখিলেশ।
হঠাৎ বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো মহুয়ার। মুখে যাই বলুক, এতক্ষণ ভিতরে ভিতরে এক ধরণের কোমল অনুভূতির তীব্র জাগরণে মন-প্রাণ দোলা দিয়ে উঠছিল। মুহূর্তের জন্য অবিশ্বাস্যকর মনে হলেও বিস্ময়ে চোখের তারাগুলি স্থির হয়ে আসছিল। আবেগে আপ্লুত হয়ে এমনভাবে অন্তর দিয়ে ভালোবেসে কখনো কেউ ওর সাথে কথা বলেনি। কিন্তু নিলর্জ্জ বেহায়ার মতো নিজেকেই বা ধরা দেবে কেমন করে! কোন্ শব্দের মালা গেঁথে নিখিলেশকে নতুন করে ভালোবাসার ডোরে বাঁধবে, প্রেম নিবেদন করবে।
সময় ক্রমশ বয়ে যাচ্ছে। দূরত্বের ব্যবধানও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। হয়তো এ লগ্ন কোনদিনও আর ফিরে আসবে না মহুয়ার জীবনে। মাথা কুঁটে মরে গেলেও এমন শুভক্ষণ জীবনে কোনদিনও আর ফিরে আসবে না। ফিরে পাবে না মহুয়া। নাঃ, আর নয়। যে ভুল একবার করেছিল, দ্বিতীয়বার সে ভুল কোনো মতেই আর হতে দেবে না।
ততক্ষণে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে নিখিলেশ। আর ভাবতে পারছে না মহুয়া। অবলীলায় নিজের মান-সম্মান, ক্রোধ, আত্মমর্যাদা সব বিসর্জন দিয়ে নিখিলেশের পিছন পিছন দ্রুত ছুটে গিয়ে দুইহাতে নিখিলেশের হাত টেনে ধরে। ঠোঁটের কোণায় হাসির ঝিলিক তুলে বলে,-‘এই যে মিষ্টার, আমায় ফেলে যাচ্ছেন কোথায়? কেমন মানুষ আপনি? এ্যাঁ? বাব্বাঃ, এতো রাগ আপনার!’
থমকে দাঁড়ায় নিখিলেশ। মলিন মুখে একপলক চেয়ে অসন্তোষ গলায় বলল,-‘আজ আমার জায়গায় তুমি হলে কি করতে?’
চোখ সরিয়ে নেয় মহুয়া। শাড়ির আঁচলটা দাঁতে চিপে ধরে। মাথাটা নত করে বলে,-‘কি করতাম তা জানিনা, তবে এতক্ষণ আমিও যোগ করছিলাম।’
চাপা উত্তেজনায় নিখিলেশ বলল,-‘বিশ্বাস করি না। বলো যাচাই করছিলে।’
-‘সে যাই-ই বলুন, তাতে কি এসে যায় আপনার। জিতটা তো আপনারই হলো, তাই না!’
–
-‘ওকথা বলছো কেন! জিত আমাদের দুজনের হয়েছে। আজ যদি তুমি বাইরে বের না হতে, আমি যদি ফিরে যেতাম, তা’হলে বলবো, দিঘীভরা জলের এতো সন্নিকটে এসেও আমরা তৃষ্ণার্তই রয়ে যেতাম। আমাদের এ মিলন হয়তো কোনদিনই ঘটতো না! সত্যি কি না বলো!’
একগাল হাসলো মহুয়া। হাসিটা বজায় রেখে বলল,-‘বাব্বাঃ, এত্তো ক্যাল্কুলেশন! কথাও বেশ বলতে শিখেছেন তো!’
মহুয়ার টোলপড়া গোলাপ গালদুটো টিপে ধরে নিখিলেশ বলল,-‘উম্ হুঃ, শিখেছেন নয়, বলো শিখেছ।’
শ্বাশত লজ্জায় আঙ্গুল কাঁমড়ে ধরে মহুয়া। আনন্দে আত্মহারা, দিশেহারা। চোখদুটো আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে ওঠে। হৃদয়ের দুকূল প্লাবিত করে রক্তের স্রোতের মতো শরীরের প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে অব্যক্ত খুশীর বন্যা ছড়িয়ে পড়ে। চোখেমুখ থেকে ঝোরে পড়ছে আবেগ-উচ্ছাস। নজর এড়ায় না নিখিলেশের। অপ্রত্যাশিত খুশীতে নৈঃশব্দে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফ্যালে। পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে অগ্নিসংযোগে টান দিয়ে নতুন উদ্যাম-উদ্দীপণায় ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে যায়। হঠাৎ মহুয়ার কোমল মসৃণ তর্জনিতে প্রেমস্পর্শে আলতো চুম্বন করতেই লজ্জা আর খুশীর সংমিশ্রণে চোখমুখ উজ্জ্বল দীপ্তিময় হয়ে ওঠে মহুয়ার। শিশির কণার মতো বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণায় নিখিলেশের কোমল হৃদয়পটভুমি ভিজে একেবারে কোমলতরো হয়ে ওঠে। মহুয়াকে সজোরে উষ্ণ বক্ষপৃষ্ঠে প্রেমালিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে। মহুয়া বাঁধা পড়ে যায় নিখিলেশের প্রেমজ্বালে। অচীরেই সঁপে দেয় নিজেকে। উন্মুক্ত তারায় ভরা রাতের আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকে একযুগল বন্দি। মেতে ওঠে হৃদয় সঙ্গমে। হারিয়ে যায় এক নতুন ভুবনে। কেটে গেল আরও কিছুক্ষণ সময়।
হঠাৎ শীতাতাপ মিহিন বাতাসে আপাদমস্তক শিহরণে শিহরিত হয় দুজনের। শাড়ির আঁচলে গা-টা ঢেকে মহুয়া বলল,-‘কপালে না থাকলে এই দূরাবস্থাই হয়!’
অবাক কণ্ঠে নিখিলেশ বলল,-‘আবার কিসের দূরাবস্থা এখন?’
-‘বারে, আজ যে তোমা….!’ বলতে বলতে থেমে যায় মহুয়া। পরক্ষণেই বলল,-‘ধ্যৎ, এখন মুখে আসছে না। কাল থেকে বলবো….!’
হেসে ফেলল নিখিলেশ। অভিযোগের সুরে বলল,-‘তোমরা মেয়েরা এতো লজ্জা পাও কেন বলো তো! এগুলি তো সব বিধাতার। দেখি, দেখি, আমার প্রিয়তমার মুখখানা একবার দেখি। ’
-‘হুঁমঃ, যাও তো! জ্ঞান দিচ্ছে! বিধাতাকে দায়ী করছে। ওরকম প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে এলে বলতে খুবই সহজ লাগে!’
মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে নিখিলেশ বলল,-‘ওকে ম্যাডাম, জো জি চাহে, কহিয়ে! মুঝে কবুল হ্যায়। কিন্তু কি যেন বলছিলে তুমি!’
-‘বলছিলাম, আমাদের কপালে আজ আর অন্নই জুটলো না! হোটেল রেঁস্তরা এতক্ষণে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’
-‘ডিনারের কথা বলছো! আজ নয় নাই করলাম। কিন্তু আজকের দিনটা যে আমাদের জীবনের একটা মোষ্ট ইন্পর্টেন্ট দিন হয়ে থাকবে। কি ঠিক বলছি না। ভাগ্যিস, অন্ রাইট্ টাইমে টেক্সিটা এসে পড়েছিল!’
মুচকি হাসল মহুয়া। নিখিলেশ বলল,-‘চলো, বৌদিকে একটা ফোন করি গিয়ে। সারপ্রাইজটা কেমন হবে বলো তো!’
সমাপ্ত