“আর স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন হল সেটাই যেটা পুরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।” ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালামের এই উক্তিটির উদ্বৃতি দিয়ে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী হাসান মাহমুদ বললেন, আজ থাকে ৩০বছর আগে টরন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটিতে তারা শহীদ মিনারের যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন আজ সেটি সাফল্যের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে। যে কাজটি ওনারা সম্পন্ন করতে পারেননি সেই কাজটি সম্পন্ন করেছে IMLD। আর এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তিনি বাংলাদেশ কমুনিটির সবাইকে বিশেষ করে IMLD কে তাদের কৃতিত্বের জন্য শ্রদ্ধা জানান। কথাগুলো তিনি বলছিলেন “বিশ্ব জোড়া বাংলার মুখ” আয়োজিত “বিশ্বাঙ্গনে ভাষার প্রহরী ” অনুষ্টানে।
টরন্টোর “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মনুমেন্ট” (শহীদ মিনার) নির্মাণের সফল্যের এই মাইলফলকটিকে সামনে রেখে বিশিষ্ট আবৃত্তিকার, সংগঠক হিমাদ্রী রয়ের পরিচালনায় ও সঞ্চালনায় গত শনিবার ২৩ জানুয়ারী রাতে ছিল এই Facebook এ সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্টান – “বিশ্বাঙ্গনে ভাষার প্রহরী “। টরন্টোর সংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট গুণীজনদের উপস্থিতিতে শুরু হয় অনুষ্টানের মূল পর্বের। মূলপর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন –
কবি,বিশিষ্ট মানবধিকার ও সাংস্কৃতিক কর্মী জানাব হাসান মাহমুদ
নাট্যকার ও আবৃতি শিল্পী জনাব শেখর গোমেজ
সংগীত শিল্পি ফারহানা শান্তা
আবৃতি সংগঠন বাচনিকের কর্ণধার, বিশিষ্ট আবৃতিকার মেরী রাশেদীন
নাট্যকার,সংগঠক,অন্য থিয়েটার ও আন্যস্বরের কর্ণধার জনাব আহমেদ হোসেন
শিল্পী জনাব আসিক ওয়াহেদ
শুরুতে হিমাদ্রী রয় তার স্বাগত বক্তেব্যে এই শহীদ মিনার নির্মাণের পিছনে যাদের অবদান আছে তাদের সবাইকে বিশেষ করে IMLD কে অভিভাদন জানান। আর সেই সাথে এই কাজটি যেন সকল ব্যাক্তি স্বার্থ আর বিতর্কের উর্ধে থেকে আমরা শেষ করতে পারি, এই দাবিটিও রাখেন সকলের প্রতি।
এরপর আসিক ওয়াহেদের গাওয়া একটি গান দিতে অনুষ্টানের মূল পর্বের শুরু হয়। স্মৃতিচারণের মধ্যে দিয়ে মূল আলোচনা পর্বের শুরু করেন হাসান মাহমুদ। আলোচনায় উঠে আসে ৩০বছর আগের ২১শে ফেব্রুয়ারী উদযাপনের কথা। ৭৭৭ ব্লোর স্ট্রিটের দিনগুলির কথা, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল বাঙালীর প্রাণের দাবী একটি শহীদ মিনারের। বীজ রোপিত হয়েছিল একটি স্বপ্নের। আজ ৩০ বছর পরে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য উনি টরন্টোর সকল বাংলাদেশীদের বিশেষ করে IMLD কে স্যালুট জানান। ওনার আলোচনায় উঠে আসে একটি নাম – বুখারী। যিনি তার অক্লান্ত প্ররিশ্রমের মাধ্যমে সিটি থেকে একটি নির্ধারিত স্থানও পেয়েছিলেন, ডিসাইন ও অনুমোদন করিয়ে ছিলেন শহীদ মিনারের প্রকল্পের জন্য। কিন্তু অর্থাভাবে সেই স্বপ্নটি ব্যার্থতার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছিল। আর নিয়ম অনুসারে এই ব্যার্থতার কারণে সিটি জমিটির মালিকানা ফেরত নিয়ে নেয়। সেই স্বপ্নটি ক্ষনিকের জন্য ওখানে থমকে দাঁড়ায় কিন্তু থেমে থাকেনা।
নাট্যকার,সংগঠক জনাব আহমেদ হোসেন শুরুতেই IMLDকে অভিবাদন জানান তাদের এই অবদানের জন্য। তিনি শহীদ মিনার কমিটির সাথে বিভিন্ন সময় ওনার সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরে এর ডিজাইনের উপর বিশেষ আলোকপাত করেন। সেই সাথে বুখারীর অবদানের কথাটাও স্মরণ করিয়ে দেন। আরো স্মরণ করিয়ে দেন দিন শেষে আমরা সবাই বাঙালী। সব শেষে তিনি বর্তমান কমিটির সদস্যেদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং আবেদন এটাকে করেন একটা সচ্ছতার আলোতে নিয়ে আসার জন্য।
মেরী রাশেদীন তর বক্তব্যের শুরুটাই বলেন “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মনুমেন্ট” আমাদের সকলের চাওয়া। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এর সফলতার দাবিদার আমরা সবাই , বিশেষ করে IMLD। মেরী রাশেদীন আরো বলেন অর্থনৈতিক ভাবে যে যার সমর্থ মতো যেটুকু দিয়ে থাকেন না কেনো , এমনকি যিনি কিছু দিতে পারেন নি তিনিও এই কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি সবার অনুরোধ রাখেন “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মনুমেন্ট” আর এই কাজটাকে যেন আমরা সকল বিতর্কের উর্ধে রাখি কারণ এটি আমাদের প্রাণের জায়গা।
শেখর গোমেজ ৫২র ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু করেন এবং সেই সাথে ২ জন ব্যাক্তিত্ব রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম যারা আমাদের ৫২এর ভাষা আন্দোলনের কথা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানান। তিনি শহীদ মিনারকে শুরু থেকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসে এটিকে যারা মাথা তুলে দাড় করিয়াছেন তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্টানে কবিতা আবৃত্তি করেন মেরী রাশেদীন,শেখর গোমেজ ও হাসান মাহমুদ আর সংগীত পরিবেশন করেন আসিক ওয়াহেদ ও ফারহানা শান্ত।
এছাড়াও অনুষ্টানে অতিথি হিসাবে যুক্ত হয়েছিলেন টরন্টোর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ। যার মধ্যে ছিলেন – কামরুজ্জামান ভূঁইয়া (প্রত্যয়), সুশীতল চৌধুরী ,কবি নয়ন হাফিজ, মিনারা জামান (উদীচী), নওশের আলী (CSS),বাবলু হক , ফয়েজ নূর ময়না ও সুমন সাইদ।
অতিথিদের সবাই IMLD এই সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ জানান আর প্রশ্ন বিদ্ধ বিষয়গুলিকে সচ্ছতার আলোকে নিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। তবে সকলেই শহীদ মিনারের কাজ সম্পন্ন করার জন্য নিজ স্থান থেকে সাহযোগিতার আশ্বাস দেন।
“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মনুমেন্ট” তৈরীর শেষ পর্যায়ে আসে এটা নিয়ে যে কিছুটা প্রশ্ন বিদ্ধ বিষয়ের অবতারণা হয়েছে। সেটার একটি ইতিবাচক সমাধানের জন্য হিমাদ্রী রয়ের এই “বরফ গলানো ” র প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। এই আলোচনায় উঠে এসেছে অতীতের অনেক না জানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেই সাথে আরো একটা বিষয় দিবালোকের পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই শহরের সবাই দল ও মত নির্বিশেষে এটাই চান যে আমাদের প্রাণের প্রিয় এই “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মনুমেন্ট” টির কাজ সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হোক। আর সবাই এটির আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনের অপেক্ষায় আছেন।
বিগত বছরগুলিতে টরন্টোতে কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকার কারণে শহরের বাংলাদেশী কমিউনিটি ডানফোর্থের ঘরোয়া প্রাঙ্গনে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ২১শে ফেব্রুয়ারী উদযাপন করতেন। আর এই সুযোগটা দেয়ার জন্য ঘরোয়ার আলম ভাইকে ধন্যবাদ জানাতে, হিমাদ্রী রয় অনুষ্টানের জ্যেষ্ঠতম সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব হাসান মাহমুদকে অনুরোধ করলে উনি আলম ভাইকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানান।
একটি সময় উপযোগী আয়োজনের জন্য আর আমাকে অনষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানবার জন্য পরবাসী ব্লগের পক্ষ থেকে হিমাদ্রী রয় ও তার ” বিশ্ব জোড়া বাংলার মুখ ” এর জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আশা রাখি আগামীতে কোনো একটি একুশের প্রথম প্রহরে আমরা মিলবো সেখানে।