নাহ ! আর চুপ করে থাকা যাচ্ছে না !! এখন কিছু না বললেই নয়। কিন্তু কাকে বলবো ? কয়জন কে বলবো ?? এ সব ভাবতে ভাবতে ভীষণ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত । আমি আসলে বলতে চাচ্ছি সারা বিশ্বে বিরাজমান করোনা ভাইরাস এর কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে।এ ভাইরাস এর কারণে সারা বিশ্বে সৃষ্ট নিজিরবিহীন সমস্যাবলী নিয়ে সর্বত্রই আলোচলা-সমালোচলা। বিশ্বের আর সব দেশের মতোই আমরা কানাডায় যারা বসবাস করি তারা প্রায় সবাই সরকারের প্রতিনিয়ত ঘোষণা-হুঁশিয়ারির কারণে এখন সেলফ কোয়ারেন্টাইন বা সেলফ আইসোলেশন এর কারণে গৃহবন্দী । এ গৃহবন্দী অবস্থাই এ মহামারী থেকে পরিত্রান লাভের একমাত্র পথ। এটা এখন সর্বজন স্বীকৃত।
এহেন পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে থেকে সময় কাটানো যে একেবারে কঠিন হয়ে উঠেছে ! অগত্যা বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফেসবুকের মাদ্ধমে যোগাযোগ করা,ফোনে কথা বলা ,মেসেজ আদান-প্রদান করা ,টেলিভিশন দেখা ও শোবার আগে কিছুক্ষন বই পড়া ইত্যাদি কাজগুলি এখন দৈনন্দিন রুটিন কাজে পরিণত হয়েছে। তবে সকালে ঘুম থেকে জেগে ফজর নামাজ পরে আগে কম্পিউটার ওপেন করে এ-মেইল চেক করে ব্যাঙ্ক হিসাব, আবহাওয়া ও আরো কিছু কাজ শেষ করে ফেসবুক ওপেন করি। আবার বিকালেও দীর্ঘ সময় ফেসবুকে ঢুকে নিউজ ফিড চেক করে সময় পার করছি। অর্থাৎ ফেসবুকে এখন আগের থেকে অনেক বেশি সময় দিচ্ছি। আর ফেসবুকে বর্তমান বিশ্বে বিরাজমান করোনা নিয়েই শতকরা ৯৫ ভাগ আলোচলা-সমালোচলা! কানাডা ও বিশ্বের অন্য সব দেশে ও সেই সাথে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ,এ বিষয়ে কার কি করণীয় বা কে কি করছে বা করা উচিত এটাই এখন ফেসবুকে আমাদের বন্ধুদের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
তো প্রথম প্রথম কয়েকদিন এ সব বিষয়ের আলোচলা-সমালোচনা কিছুটা গুরুত্ব দিলেও আজকাল যেন একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা!! কার কথা শুনবো ? আর কতই বা শুনবো ?? এতো মনগড়া এবং এতই অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা যে কোনো কোনো বিষয়ে একেবারে কিছু না বললেও চলে না। করোনা ভাইরাস এর কারণে সৃষ্ট “কবিড -১৯” এর বিষয়ে যে সব জ্ঞানগর্ভ (??) আলোচনা-পরামর্শ , ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তার ব্যাখ্যা ও এ জন্য আর একদলের প্রতিবাদ, আবার বাংলাদেশে এ বিষয়ে কি হচ্ছে তার সচিত্র ( অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়া বা বানোয়াট ) তথ্য পরিবেশন করে বিশেষজ্ঞ সাজছেন ! করোনার চিকিৎসার জন্য বহুজন বহু ঔষধ দিচ্ছে। কেউ বলছে, কুইনাইন খাও, কেউ বলছে কালজিরা খাও। কেউ বলছে, কিছুক্ষন পর পর এক ঢোক করে লেবু দিয়ে গরম পানি খাও। করোনা গলা থেকে নিচে নেমে যাবে। আবার অনেকে ধর্মীয় উপদেশও দিচ্ছে। অমুক সূরা পড়। এর চেয়ে খারাপও আছে। কেউ কেউ কোরোনার চিকিৎসার জন্য গো মূত্র, উট মূত্র এই সবও প্রেস্কাইব করছে। আমার কথা হচ্ছে, তাহলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ভাক্সিন বের করার জন্য ব্যয় করা কি দরকার? উট, মূত্র, গো মূত্র বোতলজাত করে ফার্মেসীতে রাখার বন্দবস্থ করা হলে কেমন হয়?? আবার কানাডার প্রধান মন্ত্রী বা সরকারের গৃহীত কর্মসূচির ভুল অনুবাদ বা ব্যাখ্যা করছেন ! সুতরাং বুঝতেই পারছেন ফেসবুক থেকে কি সব বিষয় আমরা এখন পাচ্ছি !!
এতকিছু দেখতে দেখতে ক্লান্ত-ভ্রান্ত হলেও প্রতিদিন সকালে কম্পিউটার ওপেন করছি,ফেসবুকে চোখ রাখছি। কি করবো ,সময় যে কাটতে চায় না ! ফেসবুকে করোনা ভাইরাস নিয়ে আজকের নিউজফীডে যা যা দেখলাম তার কিছু কিছু উল্লেখ করছি :…..
আজ এক বন্ধু বাংলাদেশের কথা এভাবে লিখেছেন,,,,
“আওয়ামী লীগ সরকার তথ্য গোপন করে প্রমান দিতে চাচ্ছে তারা করোনা ভাইরাস কন্ট্রোলে ব্যাপকভাবে সফল। আসলে অসংখ্য মানুষ করোনায় মারা গেছে।“ কিন্তু তিনি কোনো সোর্স বা তথ্যের উল্লেখ করেন নাই।
একজন নিম্নের ফটোটি পোস্ট করেছেন ,,,,, “”যখন সেবার চেয়ে ক্যামেরার দিকে মন বেশি থাকে …….
মেসেনজরে দেখলাম এই পোস্টটি ,,,, “Tomorrow at 5 PM sharp Bangladesh time Praying for Protection from COVID 19 Collectively all muslims from all around the world reciting following prayers at the same time at 4pm Pakistan time; 3 pm UAE, Baku & Oman; Saudi time &Qatar 2pm;Canada 7am;10pm Australia Sydney or search about ur respective time accordingly) Location:(Wherever you are please recite at the same time because all Muslims reciting these prayers all over the world) 100 times HasbonAllao wanaimal Wakeel 100 times La ilaha illa anta subhanaka inni kuntu minazzAlimeen. 100 times Durud sharef.(Shortest durud “SALLALlaho Elehe Wassalam” or Durud Ibrahimi which ever is easy for u) Please Forward to all of your contacts so that maximum ppl can be a part of this collective prayer.”
কেউ কেউ বাংলাদেশের প্রশাসনের কর্মকর্তা/পুলিশ কে গালাগালি গালাগালি করছে প্রকৃত সত্য না জেনেই। আবার পাশাপাশি দেখছি একজন জেলা প্রশাসক বা পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নিজে কাঁধে বহন করে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছেন !! এ সব ভিত্তিহীন /বানোয়াট পোস্ট আরো আছে !!
হ্যা ,,,করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেকে কবিতাও লিখেছেন ! এটি কোন নিম্নমানের কবিতা বা আবৃতি কারক নন !! দয়া করে নিম্নের ইউ টিউব লিংকটি ক্লিক করলে কবিতাটি শুনতে পারবেন। কবিতাটি ব্রততি বন্দোপাধ্যায় আবৃতি করেছেন ,,,,
কানাডায় আমাদের বাঙালি কমুনিটির অনেকে করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালীন সময়ে কিছু জনসেবা মূলক কাজকর্মও করছেন। নিম্নের এই পোস্টটি আমার এক পরিচিত জনের। তিনি লিখেছেন, ,,,,
”” সমস্যার সাথে সমাধানও আছে। ঘাবড়ালে চলবে না।
আমরা প্রতিদিন আট/দশটা পরিবারে বাজার–সদাই পৌঁছে দেবার চেষ্টা করছি। যাঁরা গাড়িতে করে ডেলিভারী করতে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা বিপদ মাথায় নিয়েই যাচ্ছেন।
গাড়ীর ভেতরে কোনো বাজার– সদাই থাকবে না। সব পেছনে থাকবে। আপনার বাসার সামনে গিয়ে গাড়ীর পেছনটা আপনার দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হবে। চালক গাড়ী থেকে কোনো অবস্থাতেই বের হবেন না। আপনি নিরাপদে গাড়ীর পেছনে আসবেন।
ভেতরে থেকে চালক গাড়ীর ডালা খুলে দেবেন। আপনি গাড়ীর পেছন থেকে প্যাকেট নিয়ে নিজ হাতে গাড়ীর ডালা ভালোভাবে বন্ধ করে দেবেন। নতুন গ্লোভস ব্যবহার করবেন।
আজ যাঁরা নিজেদের অর্থে বাজার করে ডেলীভারী করে দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে মুস্তাফিজ ভাই, কালাম ভাই এবং তরুণা হাসান অন্যতম। তাঁরা নিজেদের ডেলিভারীর পাশাপাশি আমার নিজের স্পন্সর করা চারটা ডেলিভারীও করে দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা তাঁদের প্রতিদান দেবেন।
চাহিদার তুলনায় যোগান খুব কম। সামনের দিনগুলোতে যে কী হবে কে জানে!! আমরা সবার পাশে সবাই থাকবো। যাঁরা দান করবেন তাঁরা আমার কাছে অর্থ পাঠাবেন না। আপনি দিতে চান এটা বলুন। কাকে দিতে হবে আমি তাঁদের নাম আর ফোন নাম্বার আপনাদেরকে দিয়ে দেবো। নিজের হাতে তাঁদেরকে দিন। আপনার ভালো লাগবে। আমার কাজের চাপ কমবে।
আপনার প্রতিবেশীর খোঁজ নিন। যদি কেউ অভাবে থাকেন তবে তাঁদের সাহায্য করুন। কোনো কারণে যদি না পারেন তবে তাঁদের নাম আর ফোন নাম্বার আমাকে দিন অথবা আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলুন।
কোনো ছবি তুলবেন না। কারো তথ্য অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
ডান হাতে দান করলে যেন বাম হাত টের না পায়।“”
আমার এ সব উদাহরণ কাউকে ছোট-বড় করার জন্য নয়,আমার সামাজিক যোগাযোগ মাদ্ধমের বন্ধুদের করোনা ভাইরাস বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বর্ণনা মাত্র। আমার এ কর্মকান্ডে কেউ আহত হলে বা আমার প্রতি গোস্বা করলে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। সেই সাথে অযাচিত ,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কোনো বিষয়ে আমাকে মেসেজ না পাঠানো বা ফেসবুকে পোস্টকালে আমাকে ট্যাগ না করতে অনুরোধ করছি। মহান আল্লাহের কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেনো আমাদের এই অবস্থা থেকে সত্তর মুক্তি দেন।
সবশেষে, করোনা ভাইরাস নিয়ে এক বন্ধুর একটি কার্টুন দিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন ! সুস্থ থাকুন।