প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাকে বেশ আকর্ষণ করে, সময় পেলে  ঘুরতে ইচ্ছে করে। আমি কিছু দেশ যেমন,পাকিস্তান, ভারত,আফগানিস্তান,নাইজেরিয়া,ইংল্যান্ড,আমেরিকা ঘোরাঘুরি করার সুযোগ পেয়েছি। ১৯৮৮ সন থেকে টরন্টো, কানাডা পরিবার নিয়ে বাস করি। এই কানাডার গ্রীষ্মের সৌন্দর্য্য কে না পছন্দ করে! প্রতি বৎসরই কিছু নতুন নতুন স্থান দেখার সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। ২০২৩ সনে বড়  ছেলে গালিবকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য হ্যালিফ্যাক্স, নোভাস্কোশিয়া গিয়েছিলাম। নোভাস্কোশিয়া,  কানাডার একটি সমুদ্র বন্দর ও সুন্দর শহর , এই বন্দর দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বহু সৈন্য ও স্বরণার্থী (ইমিগ্র্যান্ট) ইউরোপ থেকে কানাডা এসেছে এবং হালিফ্যাক্সের  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত যুদ্ধ জাহাজ,মিউজিয়াম আজ ও নোভাস্কোশিয়াতে   সে স্মৃতি বহন করে।  এবারের পরিকল্পনা ছিল, নিউ ইয়র্ক ও লং আইল্যান্ড হয়ে  ঘুরে আসবো ।  আমি কখনও পূর্ব থেকে কোনো কিছু পরিকল্পনা করতে পারি না বা করলেও সে পরিকল্পনা ঠিক থাকে না।

আমার স্ত্রী এবং ছেলেরা দুই সপ্তাহ পূর্বে লম্বা ড্রাইভ করে (১০ ঘন্টা )  নিউ ইয়র্ক গিয়েছে ।  ওরা ও নিউ ইয়র্ক, লং আইল্যান্ড, ওয়াশিংটন এবং ভার্জিনিয়া ঘুরে এসেছে। আমাকে বলা হলেও আমি রাজি হয় নি,গাড়িতে দীর্ঘ সময় বসে থাকা এক ধরণের অস্বস্তিকর অবস্থা ,সে জন্য ওদের ওই প্রস্তাবে সায় দেই নি।   লম্বা ড্রাইভ এ  যেতে আমার ধর্য্য থাকে না, তাই প্লেন এ চলে যাই ; পিয়ারসন এয়ারপোর্ট থেকে লাগোর্ডিয়া, নিউ ইয়র্ক মাত্র ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট ; এয়ার কানাডায়  লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট,নিউ ইয়র্ক  পৌঁছে লাগেজ নিতে যাবো, দেখি রাজীব আমার ভাইয়ের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।  অনেকদিন হয় ওকে দেখিনি যদিও ফোন আলাপ হয়, দেখে  খুবই খুশি হলাম এবং জড়িয়ে ধরে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম।

আগে থেকেই আমি আমার বড়  ভায়রা  ফজলুল হক সাহেবের ছেলে সোহেল ও রুবেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে যে আমি ওদের ওখানেই উঠবো।  সোহেলের বৌ পপি এবং রুবেলের বৌ দিলরুবা আমার থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছে।  এয়ারপোর্ট থেকে ১০ মিনিটের পথ,তাছাড়া ওরা দুইজনেই  এক বিল্ডিং এ থাকে,উপর নিচ করে দুই পরিবারের সঙ্গে মিলে মিশে ১০ দিন থাকা যাবে এই ভেবেই ওখানে উঠেছি।  রাজীব বলে “জেঠাজি আপনি আমার ওখানে ও থাকতে পারবেন। ” আমি রাজি হলাম না এই ভেবে যে ও একা অন্যদের সঙ্গে থাকে,আমি একাকী,নিরুৎসাহিত হবো ।     

নেউয়র্ক আমার পরিচিত জায়গা,১৯৮৬ জানুয়ারী থেকে ১৯৮৮  জুলাই পর্যন্ত আমি এই শহরে ছিলাম,কাজেই আমার মোটামোটি সবই দেখা।  তবে এই দীর্ঘ সময়ে আমি অনেক কিছু ভুলে গিয়েছি।  রাতে ভালো ঘুম হলো,পর দিন দুপুরের দিকে রাজীব আমাকে নিয়ে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি,স্ট্যাটেন আইল্যান্ড,আরও কিছু কিছু জায়গা ঘুরে দেখে  বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয় হয় । সোহেলের ছেলে মিহাদ বলে, দাদা নেউয়র্ক আপনার কেমন লাগছে? আমি হেসে বলি নেউয়র্ক পুরানো শহর এবং অনেকদিন হয় এই শহরে আমি দুই বৎসরের ও অধিক সময় ছিলাম। তেমন কোনো পরিবর্তন দেখছি না,তাছাড়া নেউয়র্ক কয়েক শত বৎসরের পুরাতন শহর,উডসাইড,এলমহার্স্ট,জ্যাকসন হাইট ,ব্রোকল্যান, কনি আইল্যান্ড,জ্যামাইকা, যে  সব এলাকায় বাঙ্গালীরা থাকে, সবই পুরাতন বিল্ডিং এবং দেখার তেমন কিছু নেই। তবে ম্যানহাটন,স্ট্যাচু অফ লিবার্টি,UNO বিল্ডিং এবং আরও অনেক  এলাকা দেখার মতো আছে। 

তিন দিন নিউ ইয়র্ক কাটিয়ে লং আইল্যান্ড ভাগিনা সেলিমের বাসায় চলে গেলাম।  সেলিমের শ্বশুর ( সিদ্দিক ) সাহেব  ও শ্বাশুড়ি ওর বাসায় আছে, আমার আপন জন।  সিদ্দিক সাহেবের সঙ্গে আমার নাড়ির টান, এক গ্রামের, তাছাড়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশুনা করেছি।  যত দূরেই থাকিনা কেন, আমাদের মধ্যে রয়েছে বন্ধুর সম্পর্ক।  

আমরা এক গ্রামে মানুষ হয়েছি,ছোটকাল থেকে অনেক স্মৃতি জড়িত,কাজেই আত্মীয় না হলে ও আত্মার সম্পর্ক।  আমরা পাড়া বেড়াতাম,গ্রামের কোন গাছের আম মিষ্টি  ,জাম,  লিচু পেড়ে মজা করে খেতাম।        

  সিদ্দিক  সাহেব  সামাজিক মানুষ,ফেইসবুক ও বিভিন্ন মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লিখেন।  এই বৃদ্ধ বয়সেও ভালো শরীর স্বাস্থ্য রক্ষা করে চলেছেন।  যেহেতু আমি কিছুটা লেখালেখি নিয়ে অবসরে আছি ,সময় সময় একে অপরের খোঁজ খবর রাখি।    

তিন দিন  সেলিমের বাসায় ছিলাম, সে সময় সিদ্দিক সাহেব ও আমাকে নিয়ে সেলিম লং আইল্যান্ড সমুদ্র সৈকত,পার্কস,বিনোদন কেন্দ্র,- ওল্ড অর্চার্ড” (কোভ নেক),থিওডোর রুজভেল্ট (জুনিয়র) সাগামোর হিল এস্টেটের আপেল বাগান , টমাস রুজভেল্টের জাদুঘর, দেখে খুবই আনন্দ পেয়েছি। থিওডোর রুজভেল্ট জুনিয়র  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম রাষ্ট্রপতি, যিনি ১৯০১ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মিউজিয়াম তাঁর শাসনামলের অনেক স্মৃতি দেখে অভিভূত হয়েছি , তাঁর বাসস্থান দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।  তাঁর বাড়ি দেখে মনে হয় নি কোনো কিছু পুরাতন , মনে হলো সবই নতুন।   

এর মধ্যে ভাগ্নি সায়মার বাসায় ,বোন হালিমা,ভগ্নিপতি মুসলিম পাটোয়ারী,হেলাল ও সবার নাতিনাতনিদের সঙ্গে খাওয়া আনন্দ করার সৌভাগ্য হয়েছিলো, ফাঁকে একদিন ভাগিনা ডাক্তার আসিফ,ওর স্ত্রী এবং দুই নাতিকে দেখার সৌভাগ্য হয় , অল্প সময়ের ঘোরাঘুরি খুবই ভালো লেগেছে। 

লং আইল্যান্ড থেকে নিউ ইয়র্ক আসার পর শরীরে কিছুটা ঠান্ডা লেগে যায়,আমি সেপ্টেম্বর (শরৎকাল ) মনে করে শীতের কাপড় নেই নি।  এ দেশের পাগলা আবহাওয়া,এই গরম এই ঠান্ডা,পরিবর্তন হতে দেরি হয় না।  সে যাই হোক,বাকি সময় রাজীব আমাকে বেশ সঙ্গ দিয়েছে,কনি আইল্যান্ড সমুদ্রের পাড়, পার্কস ( চমৎকার রিক্সা ভ্রমণ ) ও বিনোদন কেন্দ্র, ডোনাল ট্রাম্পের টাওয়ার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।  ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (ডব্লিউটিসি) নিউ ইয়র্ক সিটির লোয়ার ম্যানহাটনের ভবনগুলি, একই সাইটে মূল সাতটি বিল্ডিং প্রতিস্থাপন,দুটি বিল্ডিং  ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার সময় ধ্বংস হয়েছিল। এ বিল্ডিং দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। 

সমাপ্ত   

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্বেতাঙ্গ জাতির উপকথা
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন