মানুষের চোখের এত বেশি ক্ষমতা যে কেউ মারা গেলেও আমরা তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। হাত পা নড়ে না, আঙুলের সামনে প্রিয় কিছু এনে দিলেও সে স্পর্শ করে না। জোর করে ধরেও তাকে দাড় করানো যায় না। তবু চোখের দিকে তাকালে মনে হবে লাশটা তাকিয়ে আছে। যেন মৃত মানুষটার একটা অঙ্গ অলৌকিক কোন কারণে বেঁচে আছে।
স্বজনরা কাফনের কাপড় উঠিয়ে সেই চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। সারাজীবন ধরে যে কথাটা বলাই হল না, আজ মাটিতে পুতে ফেলার আগে বলবার যেন শেষ সুযোগ! কেউ তাকিয়ে থাকে একদম শূন্য চোখে। বিদায় লগ্নে এসে কবেকার কোন কথা রাখতে পারেনি সেসব কথা খুব মনে পড়ে।
প্রত্যেকের কান্নার স্বর শুনে মনে হয় তারা একই কথাই বলছে কিন্তু আসলে তা না। একেকটা মানুষ একেকটা কথা ভেবে ভেবে প্রায় একই রকম ভঙ্গিতে কাঁদে !
আগুন্তুকেরা লাশের গাড়ির গ্লাস দিয়ে চোখের দিকে তাকায়। নাকে তুলা দেয়া, মুখ ফুলে যাওয়া মানুষটার চোখ তখনো মিটমিট করে। একদম চিরচেনা পরিচিত সেই তাকানোর ভঙ্গিটা একধরণের বিভ্রম তৈরি করে। প্রিয় মানুষটা হামাগুড়ি দিয়ে বলতে শুরু করে – তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর, সে আসলে মারা যায়নি।কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে ভালোই লাগে। যদী সত্যি প্রিয় মানুষগুলা আবার ফিরে আসতো, ঐমুহুর্ত কেমন হতো?
হায়রে আদৌ আর কখনও দেখা হবে না। শুধু অবচেতন মনে সেই স্পর্শ অনুভব করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই।