সন্মানিত পাঠকবর্গ অবহিত আছেন যে, আমার সর্বাধিক লেখা ছাপা হয়েছে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমাচার পত্রিকায়। দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখাসমূহ সন ও তারিখের ক্রমানুসারে পাঠকের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সাথে সাথে কিছু আলোচনাও করছি। এর আগে ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর পর্বে, ক্রমিক নম্বর ০১ থেকে ৩৯পর্যন্ত মোট ৩৯ টি লেখা উপস্থাপন করেছি। এখন, এ পর্বে, ক্রমিক নম্বর ৪০ থেকে শুরু করে ৪৭ নম্বর পর্যন্ত মোট ১০ টি কবিতা তারিখের ক্রমানুসারে উপস্থাপন করছি। তন্মধ্যে ৪৬ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে ৩ টি কবিতা। এ পর্বে মোট ১০ টি কবিতা নিয়েই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি ।

৪০. ‘তুমি শুধু নাম নও’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৬ নভেম্বর ১৯৯৬। ‘তুমি শুধু নাম নও’ কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি৷

তুমি শুধু নাম নও আজ।
তুমি ছিলে প্রত্যয়ের প্রতীক জ্যোতিস্মান।

তুমি শুধু নাম নও –
শতাব্দীর সীমানা পেরিয়ে তুমি চলে গেছো দুর বহুদূর।
তুমি শুধু নাম নও –
দেয়াল থেকে নামিয়ে ফেলেছে ছবি
নিষিদ্ধ করেছে শ্লোগান
তবুও তুমি নায়ক, শতাব্দীর মহানায়ক।

তুমি শুধু নাম নও –
সেদিন তোমার জন্য ফেরারি পাখিরা
খুব ভোরে কেঁদেছিল, শূণ্যতায় করুণ কোরাসে
মানুষের রক্তে কেঁদেছিল একান্ত শিকড়ের স্বর
এমন সর্বনাশা মৃত্যু দেখেনি তো কেউ কোনদিন!

৪১. ‘তওবা করার সাহস নাই’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৬। ‘তওবা করার সাহস নাই’ কবিতাটির অংশ বিশেষ এখানে তুলে ধরছি।

সারা জীবন গোনাহ করে
তওবা করার সাহস নাই
জায়নামাজে দাড়িয়ে ভাবি
পড়বো কি না নামাজ তা-ই।
দিলের ভেতর জমে আছে
গজবী পাথর
সদা আমি ত্রস্ত থাকি
ভয়েতে কাতর।
কীভাবে মোর মরণ হবে
নাই তো জানা নাই
সময় মতো শেষ তওবাটি
করতে আমি চাই।

৪২. ‘জীবনানন্দ’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৪ জানুয়ারি ১৯৯৭। এই কবিতাটির প্রথমাংশ পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।

জীবনে আনন্দ নেই
জীবনানন্দ খুঁজি তাই
খাল নদী ধানক্ষেতে
তার ছোঁয়া পাই।

কাঁঠাল পাতা ঝরে পড়ে
কাক শালিকের দেশে
মাছরাঙা উড়ে যায়
হিজল গাছের পাশে।

যার যেখানে সাধ চলে যায়
জীবনানন্দ রয়ে যায় এইখানে
মেয়েলি হাতের সকরুণ শাখা
নীরবে নিভৃতে চুম্বকের মতো টানে।

৪৩. ‘একুশ’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘একুশ’ কবিতাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।

মাঝরাতে নেমেছি পথে
চারদিকে চেনা মুখ
মনে মনে
অলৌকিক অন্ধকার ;
মনে হয় রক্তাক্ত হৃদয়টা
পড়ে আছে
নতজানু আমারই কাছে।
অথচ এখনো স্তব্ধ আমি
ব্যাকুল হাত দুটি হতে
খসে যায়
সুনীল দুঃখগুলো
লোকে বলে ফুল।
অবশেষে
ভালোবাসার সরল বিশ্বাসে
হৃদয়ের কার্নিশ ধরে
অশনি সংকেত হয়ে
হৃদয়ের ঘন্টাধ্বনি
বাজে অহরহ
খুলে যায় স্মৃতির এলবাম।

৪৪. ‘ঈদের আনন্দ’ শিরোণামের একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকায় ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘ঈদের আনন্দ’ কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।

আমায় ছুঁয়ে গেছে ঈদের আনন্দ আজ
মুগ্ধ শিহরণে শিহরিত আমি
চেনা জানা শব্দের শিল্প মেলায়।
এমন খুশির দিনে
বিচিত্র চিন্তারা সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।
বিস্মিত হই –
এ বাংলায় আমি
ঈদেরই আনন্দ নিয়ে বড় হয়েছি
সে বাংলায় আমি আজ
দ্বিধাযুক্ত সংলাপে বিভোর ,
হৃদয়ের মধ্যিখানে কালো ছায়া দেখে
সংকুচিত হই ;
আমার উচ্চারণে আজ কোন শুদ্ধতা নেই।

৪৫. ‘বসন্ত বাতাস’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৮ মার্চ ১৯৯৭। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর ১৬ নম্বর পৃষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।

গেরিলা যুদ্ধের মতো আবীর মাখানো
হৃদয়ে আমার যুদ্ধ চলে ঝড়ের অন্ধকারে
জীবন যেন আন্তঃনগর ট্রেন
লম্ফ দিয়ে চলে আজকাল।
নিদারুণ সুখের কোন সোনার পালংক
দেখেছিলাম ভিন্ন এক গোধূলি আলোয়
সারি সারি মমির কংকাল এসে
সুখস্বপ্ন দুরে ঠেলে দিলো।

এসব অলক্ষুণে কথা আজ থাক
সুন্দর জীবনের আলোচনা হোক
ফুল নদী নক্ষত্র গাছ আর ঝর্ণা
এই হোক চলমান জীবনের উপমা
হীরার মতো চোখ, মুক্তার মতো দাঁত
ভরে দিক জীবনের অন্তহীন শুন্যতা
‘সুখের নাগরদোলায় কেটে যাক দিন
বসন্ত বাতাস আজ দোলা দিয়ে যাক।

৪৬. ‘সামাদ সিকদারের ৩ টি কবিতা’। ‘সে আমি’, ‘তুমি পাশে থাকলে’ এবং ‘কোথায় যাবো, কোথায়’ আমার লেখা এই তিনটি কবিতাই ‘তিনটি কবিতা’ শিরোণামে দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ১৯৯৭। এই তিনটি কবিতাই পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-তে পৃথক পৃথক ৩টি কবিতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘সে আমি’ কবিতাটি ‘ত্রিবান্দ্রাম’ শিরোনামে আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের ৩৪ পৃষ্ঠায় স্হান পায়। কবিতাগুলো এরকম –

১. সে আমি
যে মন মুহূর্তে পৌঁছে যায় সীমানা পেরিয়ে
দুরে বহুদূরে, প্রান্ত সীমা ছুঁয়ে
তাকে তুমি কী দিয়ে বাঁধবে বলো
কী করে রাখবে জড়িয়ে?
যে আমি বিজলির মতো চলে যাই লক্ষ যোজন দুর
সে আমাকে শৃঙ্খলিত করতে চায়
কে এমন শক্তিধর, এমন অসুর?
যে আমি আলোর বেগে ধাবমান পাখি
শ্রাবণ আকাশে শ্যানদৃষ্টি চোখে
সে আমি চলবই তো, এমন সাধ্য কার
অমৃতের সন্তানেরে রুখে?

২. তুমি পাশে থাকলে
তুমি পাশে থাকলে মনে হয়
পৃথিবীটা রয়েছে হাতের মুঠোয়,
তুমি পাশে থাকলে মনে হয়
দুঃখ লজ্জা কিছু নেই, নেই কোন ভয়।
তুমি পাশে থাকলে মনে হয়
আমি সিন্দবাদ নাবিক সুনিশ্চয়,
তুমি পাশে থাকলে মনে হয়
একদিন আসবেই কাংখিত জয়।

৩. কোথায় যাবো, কোথায়
আমার সকল দিন ভেসে গেছে শ্রাবণের মেঘে।
কোথায় যাবো আমি, উড়তে পারি না আর
কোথায় যাবো, রমনা পার্কে? সেখানে তো যায়না এখন কেউ, কোন ভদ্রলোক!
কোথায় যাবো, আর কোথায়?
বোটানিক্যাল গার্ডেন?
সেখানে তো নষ্টামিতে ভরা।
চন্দ্রিমায় মাস্তানের উৎপাত
সংসদ চত্বরে হাইজ্যাক
কোথায় যাবো, কোথায়…

৪৭. ‘ইলিজি’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৮। কবিতাটি পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরছি।

রাতভর তার নিঃশ্বাস নেবার শব্দ শুনেছি
তার নিঃশ্বাস ছিল ধীর এবং শান্ত
তার বুকের ভেতরে লুকানো জীবনের তরঙ্গ
দৌঁড়া-দৌঁড়ি করছিল এদিক-সেদিক

সকাল হতে না হতেই সেই দুঃসংবাদ এলো
চোখ হয়ে গেলো শরতের সকালের মতো
ভেসে ওঠে একটি প্রাণের কথকতা
অন্যরকম একটি সকাল দেখলাম এই পৃথিবীতে।

 

(চলবে)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন