নরওয়ে থেকে:-
লোকে জানলে বলবে কি ? এটা আমাদের সব সাউথ এশিয়ান পরিবারের কমন একটা ডায়লগ। লোকের ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে অনেক অন্যায় করতে ও অন্যায়কে সহ্য করতে রাজি আছি তবে লোকের এই অনেয্য ভয় কে ঠিক করতে আমরা রাজি নোই।
১৯৭০ সালে শ্রমিক হিসাবে হাজারে হাজারে পাকিস্তানিরা নরওয়েতে আসেন, তাই নরওয়ের ইম্মিগ্রান্টদের বিরাট একটা অংশ পাকিস্তানী। নরওয়ের রাজধানী অসলো এর বিশাল একটা অংশ পাকিস্তানিদের দখলে বলতে পারেন। তো ১৯৭০ সালে নরওয়েতে আসবার পর পাকিস্তানিরা সবচে বেশি যে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তার তিনটি হচ্ছে ভাষা,আবহাওয়া এবং কালচারাল পার্থক্য। হাজারে হাজারে পাকিস্তানী ফ্যামিলি যখন এসেছিলেন তাই প্রতি বৎসর হয়ে শত শত ছেলেমেয়েদের জন্ম এখানে হয়েছে যারা জন্মগতভাবে নরওয়েজিয়ান কিন্তু বাপ্ মা পাকিস্তানী, এতে করে ঐসব ছেলেমেয়েরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। ওরা এদেশি সন্তান তাই স্কুল কলেজে এদেরকে এদেশের মরালিটি এবং আদর্শ দিয়ে বড়ো করা হচ্ছিলো কিন্তু সমস্যা ছিল অন্য জায়গায় , ঐসব পাকিস্তানী নরওয়েজিয়ানরা যখন ক্লাস শেষ করে বাসায় যেত তখনই বাঁধতো আসল সমস্যা, আর সমস্যা হচ্ছে কালচারাল সমস্যা। মা বাবা পাকিস্তানী হলেও ঐসব ছেলেমেয়েরা নরওয়েজিয়ান , স্কুল কলেজেও ওরা নরওয়েজিয়ান ভ্যালু নিয়ে বড়ো হচ্ছিলো আর তাইতো ঘরে আসলে তারা সে ভাবেই আচার আচরণ করতো যা তাদের পাকিস্তানী মা বাবার মোটেই সহ্য হতোনা, যার কারণে পাকিস্তানী ফ্যামেলীগুলোতে বাচ্চা কাচ্চাদের সাথে তাদের পাকিস্তানী মন মানুষিকতার মা বাবার জগড়ার কোনো শেষ ছিলোনা। অনেক (নরওয়েজিয়ান -পাকিস্তানী ) ছেলেমেয়েকে তাদের মা বাবা ঘরে নির্যাতন করতেন এবং জুর করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতেন , যে সকল বিয়ের ৫ % ঠিকতনা। আর বাস্তবিক এ কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড শহরে গত বৎসর ব্যাপী তৈরী হয়েছে মুভিটি যা গতকালকে নরওয়ের পক্ষ থেকে এবারের অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। ছবিটিতে পাকিস্তানী বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাম থেকে আসা আমার খুবই প্রিয় একজন ইন্ডিয়ান অভিনেতা আদিল হোসাইন আর পাকিস্তানী মেয়ে নেহার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১৮ বৎসরের এক ইরাকি মেয়ে। বাস্তব ভিত্তিক ছবি এবং আদিল সাহেব যেখানে অভিনয় করেছেন তাই মুভিটা সুন্দর হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। মুভিটির অভিনয় হয়েছে ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড এবং পাকিস্তানের কোনো এক গ্রামে।
ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড শহরে যখন অভিনয় হচ্ছিলো তখন আদিল সাহেবের সাথে দেখা করবার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সময় করে উঠতে পারিনি তবে মুভি যখন ক্রিস্টিয়ানস্যান্ডের সিনেমা হলে দেখাবে তখন উনার সাথে দেখা হবে নিশ্চই। সময় পেলে সবাইকে Hva vil folk si ?? লোকে কি বলবে ?? মুভিটি দেখবার আমন্ত্রণ রইলো।