ফোন হাতে বিভিন্ন পেজে ঢু মারছিলাম। এমন সময় নীল নামের আইডি থেকে একটা ফোন আসলো আমাকে চিনতে পারছো? আমি বললাম না। সে আমাকে বললো আমি তোমার নাতনী হই। তোমার ভাগ্নীর মেয়ে। আমার চোখের সামনে ভাসে উঠলো ছোট্ট একটা পুতুল মেয়ের আদর আদর মুখ । আমি বললাম তুমি ভাল আছো নানু? সে আমাকে বলল “ হ্যা ভাল আছি। তোমাকে আমি কি বলে ডাকবো? তুমি তো ইয়াং । তোমাকে আপু ডাকবো , না নানু ডাকবো ?” আমি বললাম তুমি আমাকে নানুই ডেকো। তারপর বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর সে আমাকে জানালো সে এখন O Level পড়ে । তার একটা YouTube Channel আর একটা পেইজ আছে। যেখানে সে আপলোড করছে বিভিন্ন রকম রান্না আর খাবারের ভিডিও, পোশাকের ছবি । এখান থেকে পাওয়া যাবে তার বিভিন্ন প্রোডাকশনের ধারনা। মানুষরা ইচ্ছে করলে অর্ডার দিতে পারবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি নাম তোমার চ্যানেলের । সে বললো “ আমার চ্যানেলের নাম পোকামাকড়” । আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম খাবারের জিনিসের জন্য নামটা একটু কেমন কেমন হয়ে গেল না ! মানুষরা তো খাবারের জিনিসের নাম পোকামাকড় পছন্দ করবে না । তোমার পেইজের নাম নীল স্বপ্ন দিলে কেমন হয়? সে তড়িঘড়ি করে জানালো “ না না পোকা মাকড় আমার ভাইয়ের বাচ্চাদের নাম। ওদের নাম তো চেঞ্জ করতে পারবো না । আমার ভাই খুব মন খারাপ করবে। ওর বলার ধরন দেখে আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । মনে মনে একটু লজ্জাই পেয়ে গেলাম । তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কোন ভাইয়ের বাচ্চা এরা? তোমার ভাই কত বড়? নীল আমার প্রশ্নের উত্তরে বেশ গুছিয়ে বললো “ আমার তো একটাই ভাই । ওর বয়স সাত বছর। ওর নাম বর্ণ । ওর যখন ভবিষ্যতে ছেলেমেয়ে হবে তাদের নাম রাখবে পোকা মাকড়। তাই আমি এখন আদর করে আমার পেইজের নাম দিয়েছি পোকামাকড় ।” আমি আমার নাত্নীর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। শুধু বললাম “ না না খুব ভাল নাম রেখেছো। তারপর বললাম আমার দুটো পোকামাকড় আছে । দেখতে চাও ? খুব আগ্রহ নিয়ে নীল বলল “ দেখি দেখি পাঠাও তো ছবি ।” আমি আমার দুই ছেলে ওয়ালিদ আর তাসিনের ছবি পাঠাতেই বলল, “ এ দুটো তো তোমার ছেলেদের ছবি।”
আমি বললাম এরাই আমার পোকা মাকড়। দারুন না!
আরেক দিন নীলের সাথে কথা হচ্ছিল। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো “ নানু তুমি তো লেখালেখি কর। তোমার বইটা আমি কি করে পাবো ? “ আমি বললাম তুমি তোমার বীথি নানুর কাছ থেকে নিয়ে নিও । তারপর দেখি সে ফেসবুকে আমাদের বই হাতে একটা ছবিতে কমেন্ট করেছে “ মাঝের মানুষটির হাতের বইটি আমার পছন্দ হয়েছে।” ওটা ছিল নীলের নানা ভাইয়ের ছবি । আমি তাকে রিপ্লাই দিলাম “ ও তাই । তাহলে বইয়ের সাথে ঐ লোকটাকেও তোমার জন্য পাঠিয়ে দিবো ?” সে বলল না না তুমি আমার হয়ে তার যত্ন করো। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম ঠিক আছে আমরা দুজন মিলে তোমার জন্য স্বপ্নের রাজপুত্র খুঁজবো । কয়েক দিন পর আমার বিয়ে বার্ষিকীতে দেখি নীল আমাকে অবাক করে দিয়ে পাঠিয়েছে চমৎকার একটা গিফট । সে আমার লেখা একটা কবিতা আর কানাডায় আমার কর্মকাণ্ড নিয়ে ছাপানোর ব্যবস্থা করেছে “দৈনিক ভোরের প্রত্যাশা” নামক একটি পত্রিকায়। নিঃসন্দেহে এটি আমার জন্য অনেক বড় একটা প্রাপ্তি । আমি সত্যি ১৩ বছরের সদ্য কৈশোরে পা দেয়া এই ছোট্ট মেয়েটির এত প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা দেখে বিস্মিত । আমি এখন থেকেই নীলের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি বিশাল আকাশের মত সম্ভাবনা ।