পর্ব-০২

বুকসেল্ফ, আলমারি, ফাইল ক্যাবিনেট, ট্রাংক, কার্টুন (বাক্স),  আশেপাশের বইপত্র ও লেখালেখি ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে মাথা ঘুরে যাচ্ছে। এতো লেখা যে কখন লিখেছি আর কখন ছাপা হয়েছে তা দেখে বিস্মিত হচ্ছি।

কত দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকা, কতো ম্যাগাজিন ও জার্নালে আমার লেখা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে তা আমাকেই বিস্মিত করে তুলছে।
আজ অনেকদিন যাবৎ চেষ্টা করেও   এগুলোকে কোনো শৃঙ্খলায় আনতে পারছি না । ক্রমশ হাঁপিয়ে উঠছি। কুল-কিনারা করতে পারছি না।

লেখা যেমন হোক আর  সংখ্যা যতই হোক কোনটাই ফেলতে পারি না। লেখারা যেন সন্তানের মতো। কতো কষ্ট করে রাত জেগে পড়েছি ও লিখেছি, সম্পাদকের কাছে গিয়েছি,  কখনও কখনও  অনুরোধ করেছি, তারপর প্রকাশিত হয়েছে লেখা।    কত ধরনের লেখা যে লিখেছি!
কোথাও কোথাও লেখা ছাপেনি। সম্পাদক মহোদয়ের পছন্দ হয়নি, এমনকি পড়েও দেখেননি। আবার কোথাও করেছে কাটছাঁট।

দৈনিক জনকণ্ঠের কথা বলি। তখন পর্যন্ত জনকণ্ঠ পত্রিকায় আমার বেশকটি নিবন্ধ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হলেও কবিতা ছাপা হয়নি। জনকণ্ঠ পত্রিকায়  তোয়াব খান সাহেব বহুবার মুক্তিযুদ্ধের ওপর  আমার লেখা নিবন্ধ ছেপেছেন।

কয়েক বছর ১১ নবেম্বর বেতিয়ারার শহীদ সহযোদ্ধাদের ওপর আমার স্মৃতিচারণমূলক লেখা  দৈনিক জনকণ্ঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণসহকারে প্রকাশিত হয়েছ। সে আশায় ভর করে একদিন   ১৮ লাইনের একটি কবিতা  তোয়াবখান সাহেবের হাতে  দিয়ে এলাম। বৃক্ষ মংগলের কবি নাসির আহমদ তখন জনকণ্ঠের সাহিত্যের পাতা দেখতেন। তিনি ১৮ লাইনের “নেই”  শিরোণামের কবিতাটি  (সম্পাদকের কাঁচি চালিয়ে) কাটছাট করে   ৬ লাইন বাছাই করে প্রকাশ করেন। এটি ০১ বৈশাখ ১৪০৩ বাংলা ও ১৪ এপ্রিল ১৯৯৬ সনের কথা (আজ থেকে ২৪ বছর আগের ঘটনা) ।

পরবর্তী সময়ে নাসির ( কবি নাসির আহমদের) ভাইয়ের সাথে দেখা হলে তিনি পিঠ চাপড়িয়ে বলেছিলেন,   “সামাদ সিকদার , তোমার কবিতা খুব ভালো হয়েছে। ”  তারপর,   বাংলা একাডেমির  বার্ষিক সভায় কিংবা বইমেলায় যখনই দেখা হয়েছে  তখনই নাসির ভাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন ও প্রাণখুলে কথা বলেছেন।

দেনিক সংবাদ, ইত্তেফাক, যুগান্তর,    দিনকাল,  ইনকিলাব, সমাচার,  সংগ্রাম, বাংলাবাজার, প্রথমআলো, রূপালী, লালসবুজ, আজকের কাগজ, আল মুজাদ্দেদ, মিল্লাত, আজকের প্রত্যাশা, আল আমীন, দেশজনতা, আজকের দেশ, সবুজ বাংলা, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক বার্তাসহ অন্য কোনো দৈনিকে বা সাপ্তাহিকে আমার লেখার ব্যাপারে এমনটি কখনো ঘটেনি। তারপরও জনকণ্ঠে প্রকাশিত ৬ পংক্তির কবিতার জন্যে তখন খারাপ লাগেনি।

১৯৯৬ সনে দৈনিক জনকণ্ঠে    প্রকাশিত “নেই” শীর্ষক কবিতাটি পাঠক সমীপে উপস্থিত করার লোভ সামলাতে পারছিনা। এখন নাসির ভাই এটি দেখলে আশা করি কৌতুক বোধ করবেন।

যাহোক, বলছিলাম বিসর্জনের কথা। লেখা ফেলে দেয়ার কথা। প্রতিটি ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা নিবন্ধ ও অন্যান্য লেখার মধ্যে আমার সময়,  শ্রম,  ঘাম, স্মৃতি  ও   আবেগ জড়িত। এগুলোর মায়ার বাঁধনে আমি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। প্রকাশিত লেখা ছাড়া অপ্রকাশিত লেখা এবং পান্ডুলিপির সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এগুলো কী কাজে লাগবে? কী করবো আমি?

কতোকিছুইতো ভেবেছিলাম! অবসর জীবনে হাতে অফুরন্ত সময় থাকবে তখন এই করবো, সেই করবো, কতো কিছু! প্রকৃতপক্ষে জীবন কি ওইসব চিন্তার ধারেকাছেও গিয়েছে?

( চলবে )

***লেখার  শিরোনামটি এখনও চূড়ান্ত করতে পারিনি। অনেকগুলো নাম মনে আসে, পছন্দ হয়না । একটা কিছু দিয়ে শুরু করলাম।
আমার কোনো বন্ধু,  লেখক, পাঠক বা শুভাকাঙ্ক্ষী  এই লেখা পাঠ করে যদি একটি শিরোনামের পরামর্শ দেন তাহলে কৃতার্থ হবো।

*** ইতোমধ্যে, প্রখ্যাত নৃত্য শিল্পী মুনমুন আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, কৃষিবিদ আখন্দ সাহেব, প্রিয় সালাহউদ্দিন মাহমুদ বকুল ও লুনা হায়দারসহ বেশ কয়েকজন মন্তব্য কলামে লেখাটির শিরোনামের  বিষয়ে  প্রস্তাব করেছেন। এগুলোও সক্রিয় বিবেচনায় আছে। যারা পরামর্শ দিয়েছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা তাদের জন্য।

০৯-০৫-২০২০
রূপায়ণ টাউন।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন