বত্রিশ দিন ঘরবন্দী, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে। বেডরুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রহমান সাহেব। বাইরে নিস্তব্ধ নেইবারহুড,পশ্চিমের এই শহরে এমনিতেই লোকসংখ্যা কম, লকডাউনের কারণে শহরটিকে পরিত্যক্ত শহর বলে মনে হচ্ছে। উইন্টার ছেড়ে সামার আসছে, গাছের শাখায় সবুজ পাতারা উঁকি দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই তাঁকে নষ্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। ফিরে যান সাত বছর আগের ফেলে আশা দিনগুলোতে,,,,,
নিস্তব্ধ রাত, হাসপাতালের আইসিইউ এর সামনে দেড়ফুট চওড়া সাতফিট লম্বা একটা লোহার বেঞ্চ, কেবিন ছেড়ে গায়ে একটা ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে বেঞ্চে শুয়ে আছেন রহমান সাহেব। আইসিইউ এর ভিতরে তাঁর স্ত্রী, কখন কি প্রয়োজন হয়, যদি কেবিন থেকে আসতে দেরী হয়,তাই বেঞ্চিতে। প্রায় তাঁকে স্ত্রীকে নিয়ে আইসিইউতে আসতে হয়, দুটো কিডনিই বিকল, সপ্তাহে তিনদিন ডায়লাসিস চলে। হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়, তাৎক্ষণিকভাবে আইসিইউ। রাতের পর রাত লোহার বেঞ্চিতে কাটিয়ে দিতেন রহমান সাহেব,,,,,
জানালায় দাঁড়িয়ে তাঁর চোখ ভিজে ওঠে, স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে শ্বাসকষ্টের সেই নিদারুণ দৃশ্য, দুহাত উপরে তুলে বাতাস ধরার কি প্রচন্ড চেষ্টা!!!
,,সমগ্র বিশ্বটাই আজ আইসিইউ। দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষের একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য কি প্রাণপণ চেষ্টা!! এক লক্ষ ষাট হাজার মানুষ প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে,,,
আইসিইউ এর সামনে কেউ থাকেনি!!!
,,,, শরৎ বাবুর সেই কথাগুলো খুব মনে পড়ছে,,
” মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে- যেন একটিও করুনার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়৷ মরিবার সময় যেন কাহারও একফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে৷”