আমাদের প্রায় সবার নামের-ই বিভিন্ন অংশ রয়েছে। প্রথম, মধ্যম ও শেষ অংশ (ফার্স্ট, মিডল ও লাস্ট নেইম)। আমার জীবনে শুধু একজনকেই জানি যাঁর এসব ছিল না- শুধু একটি নাম। তিনি অবশ্য সরকারি ফর্ম পূরণের সময়ে, বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণের সময়ে প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলায় পড়তেন। ফার্স্ট, মিডল ও লাস্ট নেইম—কোন ঘরে কী লিখবেন? আমার নামে আবার একটি অংশ বেশি—চার অংশ: মোহাম্মদ জাকির হোসেন সরকার।
এই একাধিক নাম নিয়ে প্রথম বিপত্তির শুরু বাংলাদেশ থেকেই। বাংলাদেশের এক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় যোগ দেয়ার পর জানলাম, আমার ডিপার্টমেন্টের একজন পুরোনো সহকর্মীর নাম প্রায় আমার নামের কাছাকাছি—তাঁর নামে ‘র’ ছিল না। দূর থেকে ডাকলে বা ফোনে আমাদের দু’জনের একজনকে চাওয়া হলে বোঝা যেত না যে কাকে চাওয়া হচ্ছে: ‘জাকী’ না ’জাকির’। এই নিয়ে সভায় আলোচনা হলো। আমি যেহেতু তাঁর পরে সেই সংস্থায় যোগদান করেছিলাম তাই আমাকে প্রস্তাব করা হলো; ‘হোসেন’ না ’সরকার’ নামে আমি পরিচিত হতে চাই। অনচ্ছ্বিা সত্ত্বেও আমার বহুল পরিচিত ‘জাকির’ নামের স্থলে নতুন করে ‘সরকার’ নামে পরিচিত হতে শুরু করলাম। কেউ কেউ আবার ‘গভর্ণমেন্ট ভাই’ বলেও সম্বোধন করতে শুরু করলেন।
কাজের সুবাদে লাইবেরিয়া যাওয়ার পর আমি আমার বহুল পরিচিত নাম উদ্ধার করতে সচেষ্ট হলাম। তবে আমার সহকর্মীরা ‘জাকির’ নাম ডাকার চেষ্টা করলেও কেউ কেউ আবার ‘জাকী’ ডাকা শুরু করলেন। একদিন সেখানকার মানবউন্নয়ন কর্মকর্তা কোনভাবে তার কৌতুহল সম্বরণ করতে না পেরে আমাকে একটি প্রশ্ন করলেন। তোমার স্ত্রী বা কন্যার নামের শেষেতো ‘সরকার’ নেই। তোমার স্ত্রী’র নাম ‘কে এম খাদিজা নাজিম’ আর তোমার মেয়ের নাম ‘নাবিহা তাহসিন নুহা’। এমন কেন? এ রকম প্রশ্নের সম্মুখীন আগে আমি কখনো হয় নি। প্রশ্ন আনকমন; তাই একটা কিছু বলে দিলাম। যেমন: ‘নাজিম’ আমার শ্বশুড়ের নাম। আমার স্ত্রীকে আমি কখনো নাম পরিবর্তনের কথা বলিনি। সেটা তাঁর বিষয়, অধিকার….ইত্যাদি। এ শুনে সেতো আমাকে সত্যিকারের মানবাধিকার কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন [উল্লেখ্য, আমি লাইবেরিয়ায় মানবাধিকার উপদেষ্টা পদে কাজ করছিলাম]। পাশাপাশি, বিয়ের পর তাঁদের সমাজে নারীদের কিভাবে স্বামীর নামের অংশ গ্রহণ করতে হয় সে বিষয়ে একটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে দিলেন।
কানাডায় আসার পর আমার ছোট মেয়ের জন্ম হলো। আমার স্ত্রী ছোট মেয়ের নাম রাখলেন ‘রেহমা সাবেরিন রিজা’। অনলাইনে তাঁর জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে চিন্তায় পড়লাম। লাস্ট নেইম হিসেবে ’রিজা’ আমার বা আমার স্ত্রী’র লাস্ট নেইমের সাথে মিলে না। তাই বলতে হবে কেন এই নাম? এটা কি ধর্মীয়? সংস্কৃতিগত?…..ইত্যাদি। কোন একটাতে টিক দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করলাম। আর, আমার নাম নিয়ে বিপত্তিতো শেষ হলো না। কোনভাবেই জাকির নামে পরিচিতি পাচ্ছি না। বিদেশি সহকর্মী, সহপাঠী বন্ধুরা মোহাম্মদ নাম নিয়েই আমাকে ডাকতে পছন্দ করেন। হয়তবা মোহাম্মদ নামটা মনে রাখা তাঁদের জন্য সহজ। জাকির বা সরকার নামটি ঠিকমতো উচ্চারণ যেমন করতে পারেন না, তেমনি মনেও রাখতে পারেন না। হোসেন ছাড়া আমার নামের বাকী তিনটি অংশই ব্যবহৃত হয়েছে, হচ্ছে। সে হিসেবে আমার নামের একাধিক অংশকে স্বার্থক বলা চলে। কি বলেন? আপনার নাম নিয়ে এরকম কোন অভিজ্ঞতা আছে? ইচ্ছা করলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।
টরেন্টো, ৮ জানুয়ারি ২০১৭।