ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড, নরওয়ে থেকে:-
ঐদিন কাঁথা কম্বল ব্যাগের মধ্যে ভাঁজ কৈরা হনহন করে এয়ার পোর্টের দিকে ছুটছি,, মাঝ পথে গেদু চাচার সাথে দেখা,, নাকে আতরের তীব্র গন্ধ এসে লাগলো,, রমজানের মাস তাই লম্বা কইর রা একটা সালাম দিলাম,, জিজ্ঞেস করলাম, চাচা কেমন আছেন ?
উনি বললেন,- কি আর কমু মনু, বয়স হৈছে হাতে পায়ে ব্যথা, ব্লাড প্রেসার আরো কত কি।
উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন,- মনু ব্যাগ ট্যাগ লইয়া কই যাও ??
বললাম চাচা জার্মান যাই,,
উনি বললেন ঐদিকটায় কেন যাও মনু ??
বললাম, চাচা শুনলাম জার্ম্মানিতে নাকি বিরাট ধনী বিত্তশালী বাংলাদেশিরা থাকেন, করোনা মহামারীর জন্য খারাপ অবস্থায় পড়া জার্মানিতে বসবাসকারী স্টুডেন্টদের জন্য এবং অন্যান্ন সাধারণ বাংলাদেশী ফ্যামিলিগুলোর জন্য সরকার নাকি বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে অর্থ অনুদানের প্রস্তাব দিয়েছিলো কিন্তু জার্মান প্রবাসীরা, বিশেষ করে জার্মান আওয়ামীলীগ নাকি তা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী এবং সাধারণ বাংলাদেশী ফ্যামিলিগুলোর মাঝে নিজেদের পকেট থেকে ইউরো বিলাচ্ছেন, দরজায় দরজায় গিয়ে খাবার দিচ্ছেন ! জার্মান আওয়ামীলীগ নাকি দেশে মাইনষেরে ঘর কইররা দিবো,, আমি এতদিন ধরে আওয়ামী পলিটিক্সের সাথে জড়িত আছি, ভাবলাম মুফতে যদি জার্মান আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছ থেকে একটা ঘর পাওয়া যায়, মুফতে কিছু ইউরো পকেটে ভরা যায় ! !
গেদু চাচার জন্ম গোপালগঞ্জের এক গ্রামে,, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রামের ছেলে উনি,ছোটবেলা থেকে আওয়ামী পলিটিক্সের সাথে জড়িত,,, বঙ্গবন্ধু উনার ধ্যান জ্ঞান, অন্তর আত্মা। ১৯৭৫ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর রাগে দুঃখে গেদু চাচা জার্মানি পাড়ি জমান, আজ প্রায় ৪৫ বৎসর ধরে ইউরোপের ভিবিন্ন দেশে থাকতে থাকতে এখন নরওয়েতে এসে স্তায়ী আবাস গড়েছেন। গেদু চাচা আমার প্রিয় একজন মানুষ, উনি আমাকেও অনেক স্নেহ করেন, ভালোবাসেন।
গেদু চাচা আমার জার্মান যাত্রার অভিলাষ এবং ওখানের আওয়ামীলীগারদের কাছ থেকে মুফতে ঘর খসানোর কথা শুনে বিকট শব্ধে ৩ মিনিট ধরে হাসলেন,, গেদু চাচার বিকট হাসি শুনে আমি সহ রাস্তায় হেটে যাওয়া অন্যরাও আচমকা চমকিত,, নরওয়েতে সচরাচর রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে কেউ এতো বিকট শব্ধে হাসেন না তাই কিছু কিছু পথচারীরা আমাদের দিকে উষ্মার দৃষ্টিতে তাকালো,, গেদু চাচার অনেক বয়স হয়েছে , কে কি মনে করলো তাতে গেদু চাচা থুড়াই কেয়ার করেন।
হাঁসি থামিয়ে দিয়ে গেদু চাচা বললেন,, মনু বাড়ী যাও,, ভুলেও ওদিকটায় যাইয়োনা। নরওয়েতে সুখে শান্তিতে আছো , ভালোই আছো, ওদিকটায় গিয়ে বাপ্ দাদার দেয়া নামটা নষ্ট কইরোনা, পরিশ্রম করে নরওয়েতে নিজের যে নাম কামাইছিলা তাও খুয়াইওনা।
আমি বললাম : চাচা ঐযে ইউরোগুলা দিতেছে, সাথে করে মুফতে যে বাড়িটা পাওয়ার আশা করছিলাম তার কি হইবো ?? উনি বললেন বাড়ি যারে পাগলা বাড়ি যা,, ওদিকটায় গেলে কিচ্ছুতো পাবিই না তবে নিজের একাউন্টে যে টাকাটা আছে সাথে করে দেশে নিজের যে বাড়িটা আছে সেটাও খুয়ানোর সমূহ সম্ভাবনা আছে ।
জার্মান আওয়ামীলীগ সম্মন্ধে গেদু চাচার ৪৫ বৎসরের অভিজ্ঞতা,, তাই উনার কথা ফেলে না দিয়ে মুফতে পাওয়া বাড়িটার আশা ছেড়ে নরওয়েতে নিজের ঘরেই ফিরতে হলো।
গেদু চাচা আমার অনেক প্রিয় একজন মানুষ,, গেদু চাচার মতো, অভিজ্ঞ, আদর্শীক এবং নীতিবান রাজনীতিকরা যেন অনেক অনেক বৎসর বেঁচে থাকেন এই দোয়া করি । গেদু চাচারা আছেন বলেই আমরা নবীনরা অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারি।