নরওয়ে থেকে:-
লন্ডনে থাকতেও দেখেছি এবং নরওয়ের এই দীর্ঘ কয়েক বৎসরের অভিজ্ঞতায় যেটা বুঝেছি, তা হলো মেক্সিমাম ( বাংলাদেশী নরওয়েজিয়ানরা ) কিংবা নরওয়ে দীর্ঘ দি ন ধরে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা নতুন আসা বাংলাদেশিদের এড়িয়ে চলেন কিংবা দেখাও করতে চানান। অসলেতো অনেকেই নতুন আসা বাংলাদেশিদের কাছে নিজে যে বাংলাদেশী সে পরিচয়টাও গোপন করে রাখেন। কেন চান না ? বা কি কারণে রাস্তা ঘাটে নতুন আসা অন্য বাংলাদেশিদের কাছ থেকে নিজের বাঙালি পরিচয় গোপন রাখেন তার বর্ণনা শুনে অনেক সময় অনেক বন্ধু বান্ধবদের সাথে মনোমালিন্য করেছি। ওনাদের অনেক সময় বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে নতুন যারা আসে তাদের প্রয়োজনে আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে থাকি তাদের এগিয়ে আসা উচিত। এতে করে নতুনরা অনেক তাড়াতাড়ি এখানে নিজের জীবন গুছিয়ে উঠতে পারে। তবে নরওয়েতে বসবাসকরি সব বাংলাদেশী কিন্তু সমান নয়, অনেকেই আছেন বাংলাদেশিদের কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে থাকতেই পছন্দ করেন। ভিন দেশে থাকি। আমাদের আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্য পারিবারিক জীবন আছে, ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও সীমারেখা আছে এবং বেশিরভাগ সময়ই সবাই আমরা নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তারপরও নরওয়ের বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী আমরা কিছু সম মনা বাংলাদেশী আছি যারা অনেক বৎসর এখানে থাকি, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক ভালো এবং আমরা একে ওপরের সুখে দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং একে ওপরের সম্মানার্থে কিছু কিছু আবদার রাখারও চেষ্টা করি। এবং নিজের সামর্থ অনুযায়ী যথার্থ ভাবে নবাগতদের জন্য কিছু করবার চেষ্টা করি।
আমি যেহেতো বাংলাদেশিদের সাথে মিশতে এবং নবাগতদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি, তাই নবাগতদের সাথে অনেক প্রবীণদের না মেশার ইচ্ছা কিংবা নবাগতদের ব্যাপারে দেয়া ওইসব বর্ণনাও আমরা কাছে কেমন জানি অহেতুক মনে হতো। কিন্তু আমরা যে বাঙালি , আমাদের স্বভাব কি এত সহজে বদলায় ?
সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্তা এবং সুষ্ট পারিবারিক শিক্ষার এত অভাব যে নতু ন যারা আসেন তাদের বেশিরভাগই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত। যাদের মধ্যে না আছে সুশিক্ষা, না আছে সুশীলবোধ, না আছে কোনো কর্ম দক্ষতা। কিভাবে ? এবং কোন আশায় যে উনারা নরওয়েতে আসেন তার কোনো সঠিক কারণ আমি খুঁজে পাইনা !! একজন আদর্শ,, সুশিক্ষিত, দক্ষ এবং ব্যক্তিত্ববান মানুষ হতে হলে যে গুণাবলী থাকার দরকার ওইসকল নবাগতদের ৯০% মধ্যে তার লেশ মাত্র নাই,, তাই উনাদের জন্য কোনো কিছু করা যেমন কষ্টের, ঠিক তেমনি উনাদের জন্য কোনো কিছু করলে যে উনারা সামনে আগাতে পারবেন কিংবা আপনি যে উনাদের জন্য ভালো একটা কিছু করেছেন কিংবা করার চেষ্টা করেছেন এটুকু বুঝবার ও সামান্য সুশিক্ষা উনাদের মধ্যে নাই। নবাগতদের কাছ থেকে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই আমাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশীই নতুনদের সাথে মিশতে কিংবা উনাদের জন্য কিছু করতে ভয় পান। অসলোর মিলন ভাইকে প্রায় সব বাংলাদেশীই মুটামুটি চেনেন,, ১৯৭১ পরে নরওয়েতে আসা প্রথম সারির বাংলাদেশিদের মধ্যে উনি ১ জন। নরওয়েতে আসার পর সবাই যখন নিজেদের আখের গুছাতে ব্যস্ত ছিলেন, মিলন ভাই উনার একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ক্লাব প্রতিষ্টা করেন এবং উনার টাকা পয়সা, সময় এবং যৌবনের সুনালী দিনগুলো নতুন আসা বাংলাদেশিদের জন্য ব্যায় করেন এবং বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিনগুলোতে সবাইকে একত্রে করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা , নিজের জন্মভূমির কথা মনে করিয়ে দিতেন । যারা ওইসময় , এমনকি ৫ , ৭ বৎসর আগেও মিলন ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে, বাংলাদেশ, ডেনমার্ক , সাইপ্রাস সহ নানা দেশ থেকে বৌ বাচ্চা নিয়ে নরওয়েতে নিজের পা পাকা পোক্ত করেছিলেন এদেরই ৯৯% আজ মিলন ভাইয়ের পেছনে কথা বলেন,, সুজুগ পেলেই উনার বিরুদ্দে বিরূপ মন্তব্য করতে ছাড় দেননা। একবার ভাবুনতো বর্তমান সময়ে কেউ যদি মিলন ভাইয়ের কাছে সাহায্য চাইতে যান, আপনার মুখের দিকে থাকলে উনার প্রথমেই কি মনে পড়ে ? উনার মনে পড়ে ওইসকল বাংলাদেশিদের কথা যারা উনার খেয়ে উনারই পেছনে লেগে ছিলেন উনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য।
এত কিছুর পরও , আমার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে যারা নবাগত কিছু বুদ্ধিহীনদের জন্য অজস্র পরিশ্রম দিয়েছেন, নিজের টাকা পয়সা এবং মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন এবং ভালো করে বা ভালো করতে গিয়ে কষ্ট পেয়েছেন, তাদের জন্য সহমর্মিতা। তাই বলে নতুনদের জন্য আমরা আমাদের সহযুগিতা বন্ধ করে দেবনা। ১০% যারা আছেন , যাদের মধ্যে সুশিক্ষা ,ভদ্রতাবোধ, আছে এবং যারা আগামীতে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারবেন বলে আমরা মনে করি , তাদের প্রতি, সহযুগিতা ও ভালোবাসার দুয়ার সবসময় খুলা থাকবে।