আমার এই লেখাটি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে। আমি যেই বিষয়টি তুলে ধরবো আর তা হল trap এবং অভিবাসীদের মানসিক সাস্থ্য। আপনারা অবশ্যই কমেন্টস করবেন, আপনারা আমাকে আক্রমণ করেও কিছু বলতে বা লিখতে পারেন কারন আমি এই বিষয়গুলো positive হিসাবেই দেখি..অন্তত আপনি আপনার মনের ভাবটাতো প্রকাশ করার সুযোগ হয়েছে বা পেয়েছেন। সবার ক্ষেত্রে এটা আবার প্রযোজ্য নাও হতা পারে……।
Poverty Trap কথাটি প্রথম শুনি আমার ক্লাস টিচার এর কাছ থেকে। তিনি নিজেও একজন অভিবাসী, এখন ইউনিভার্সিটি তে ক্লাস নেন। উনি ক্লাসে অভিবাশিদের সুখ দুঃখ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনা করতে poverty trap নিয়ে কথা বলেন। পরবর্তীতে এই বিষয়টা নিয়ে অনেক জানার চেষ্টা থেকে আজকের এই লেখা। কানাডা তে যারা আসেন তাদের প্রত্যেকেরই অনেক বড় বড় চাহিদা থাকে। বাস্তবিক পক্ষে খুব কম লোকই তাদের চাহিদা অনুযায়ী সফল হতে পারে। আবার অনেকে আবার অনেক ভালো অবস্থানে চলে যায়। আমার জানামতে অনেকে আছেন যারা এখানে অনেক অনেক সফল। আবার অনেকে পড়ে যায় এই ট্র্যাপ এর মধ্যে। বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা আসেন তাদের জীবনের এমন এক মুহূর্তে যখন এখানে নতুন ভাবে শুরু করতে পারেনা, আবার পারেনা তারা দেশে গিয়ে থাকতে। তাদের এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব মানসিক সাস্থ্যে অনেক প্রভাব ফেলে।
ধরলাম মিঃ রহিম সাহেব তার জীবনের এমন একটা সময়ে কানাডাতে এলেন (বলা যায় ৪০ বা ৪৫ বয়সে, এটাকে অনেকে আবার sandwich generation ও বলে, কেন বলে পরে বলবো) দেশে সে একজন বড় কর্মকর্তা ছিলেন। কানাডা তে আসার পর সেখান থেকে নতুন ভাবে শুরু করা অনেক জটিল হয়ে যায় তার জন্য। কি করবেন তা নিয়ে পরে যান এক সমস্যায়। এ সময়ে এসে যে সবায় যে এই ট্র্যাপ এ পরে তা নয়। তাদের অভিবাসি জীবনের Honeymoon phase পার করার পর তারা বুঝতে পারে এখন কিছু একটা করতে হবে। অনেকে ছোট খাট ডিগ্রি নিয়ে জীবন চালিয়ে নেন। অনেকে আবার জীবন চলার মতো কাজ খুজে নেন বিভিন্ন survival জব করে। তারা যে সবায় অসুখি হন তা নয়, অনেকে আবার এখানে থাকার কারন খুজেন বা তৈরি করেন। যেমন অনেকে বলেন তারা এখানে আছেন কারন তাদের বাচ্ছাদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের জন্য। আবার অনেকে এখাণকার Health Care system কে অনেক গুরুত্ব দেন। আবার অনেকের আবার দুই দেশের দুর্নীতি ও লাইফ সেকিউরিটিকে একটা কারন হিসাবে দেখেন। কারন যেইটাই হোক না কেন আপনি কতটা মানসিক ভাবে সন্তুষ্ট সেটাও গুরুত্বপূর্ণ ।
ট্র্যাপ এর প্রথম ধাপ- কানাডা না বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্তহীনতা। আমার জানামতে অনেকে আছেন যারা এই সমস্যায় আছেন। কি করবেন বাংলাদেশে ফেরত যাবেন না কানাডা এ থাকবেন কঠিন এক সিধান্ত। যদি আপনার পিছুটান থাকে তবে এই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে সময় আরও বেশি লাগে। ধরুন আপনি বাংলাদেশে একটা ভাল জব করতেন সেখান থেকে ছুটি নিয়ে কানাডা তে আসলেন অথবা মনে মনে ভাবেন কিছু না হলে আবার ফেরত যাবো এবং আগের জায়গায় আবার জব নিবো অথবা কাজ বের করে নিবো। এখানকার লাইফ টা অনেক challenging , ফলে কুনো কারনে বিফল হলে, না আমি আর থাকবনা, বাংলাদেশে চলে যাবো। আমার জানামতে, যারা একটা একক সিধান্তে আসতে পারেন তারা এখানে অনেক অনেক ভাল থাকেন বা ভাল করেন।
তবে কোনটা শুনবেন? মনবিগ্যানিরা বলেন আপনি দেখেন আপনার জন্য কোনটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যেকের কাছে একেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ , আপনার কাছে কোন বিষয়টার value বেশি, অনেকের কাছে তার পরিবার আগে, আবার অনেকের কাছে ক্যারিয়ার আগে, এটা ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়, আবার অনেকে সমাজের চাওয়া টাকে বড় করে দেখেন, তাতেও কোন সমস্যা নাই। আপনার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা Identify করুন, সেটা কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ dig-down করু্ন, যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের মতামত নিন, সেটা বাংলাদেশ থেকে হতে পারে আবার এখানে এসে হতে পারে, নিজেকে প্রকাশ করুন কারন যতক্ষণ না আপনি প্রকাশ করছেন ততক্ষণ আপনি বুঝতে পারবেন না আপনি সঠিক না ভুল। আপনি যদি confident হন তাহলে আবার অন্য কথা। তবে আপনার সিধান্ত টা এমনভাবে নেয়া উচিৎ যাতে পরে আবার আপসোস না হয়। যেটাই হবে …ও আমি তো এটা জানতাম। মনবিগ্যানিরা বলেন তাহলে আপনার কষ্ট কম হবে পরবর্তীতে। এটা অনেক টা ছেঁড়া পকেট এ কোন কিছু না রাখার মত। আপনি অন্তত জানেন আপনার পকেট ছেঁড়া ফলে সেখানে কোন কিছু রাখবেন না।
ট্র্যাপ এর ২য় ধাপ- যখন কেউ বুঝে না বুঝে একটা থেকে আরেকটা কোর্স করে আর OSAP loan এ জরিয়ে যায় । অনেকে আবার ভাবেন তাদের আর এই loan পরিশোধ করতে হবে না। এটা কিন্তু সত্য না, আপনি যদি ট্র্যাপ এর মধ্যে থাকতে চান তাহলে ঠিক আছে, আর যদি এ থেকে বের হয়ে এসে কিছু করতে চান তখন অনেকটা জটিল হয়ে যায়, ধরুন আপনি একটা জব করতে চান পাশাপাশি একটা বাড়ি কেনার জন্য ভাবছেন, তখন কিন্তু ছয় মাস ছয় মাস করে বেশিদুর যেতে পারবেন না, আবার এই সময় যতটা রিস্ক নেয়া প্রয়োজন হত, সেটা করতে না পাওয়ার কারনে ট্র্যাপ এর মধ্যেই থেকে যাবেন। অনেকে ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করে এই চাপ এর মধ্যে জীবন যাপন করে। আপনি যদি দেখেন এইটা কোন প্রভাব ফেলছেনা আপনার মনে তাহলে কিন্তু ঠিক আছে। তবে অনেক পিতামাতা তাদের জীবনের না পাওয়া চাওয়াগুলো বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেন, যাক এটা নিয়ে আরেকদিন বলব…।
ট্র্যাপ এর ৩য় ধাপ- যখন আপনি আপনার সক্ষমতা এর বাইরে কোন কিছু করেন, সহজে বলা যায় মনে করেন আপনি একটা বাড়ি কিনলেন আপনার সক্ষমতার বাইরে, সেটা চালানোর জন্য আপনার যে ধরনের জব দরকার তা নাই ফলে দুই তিনটা জব করতেছেন নিজের ভালমন্দ খেয়াল না করে, আপনার হয়তো আরও ভাল কিছু করার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু আপনি ট্র্যাপ এর মধ্যে পরে গেছেন।
ট্র্যাপ এর ৪র্থ ধাপ- আপনি যখন কোন গভর্নমেন্ট হাউসে থাকেন, বা গভর্নমেন্ট এর সুবিধাগুলো (Social Assistance-ODSP, OW) নিতে যান বা নিচ্ছেন। এই বিষয়টা যে সব সময় খারাপ তা নয়, কিন্তু আপনার যদি মনে হয় যে আমি আর কিছু করবোনা, যদি কিছু করি তাহলেতো গভর্নমেন্ট কে ফেরত দিতে হবে,তার জন্য আপনি যেভাবে পরিশ্রম করার দরকার ছিল সেভাবে করছেন না, তাহলে বুঝবেন আপনি ট্র্যাপ এর মধ্যে আছেন, এখান থেকে বের হতে আর পারছেন না যা আপনার শারিরিক, সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আমাদের জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ট্র্যাপ এর মধ্যে পড়ি, এখানে সামান্য কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি অভিবাসিদের আলোকে..।
তাহলে আপনি কি করবেন? আমি যদিও বলেছি এই লেখার মধ্যে, আবার অনেকে ট্র্যাপ কে পজিটিভ হিসাবে দেখে, তারা বলে জীবনটাকে নাকি আরও বেশি জানা যায়। আমার পরবর্তী ধাপ এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বলব (ইনশাল্লাহ)…
চলবে ………….