আপা জানেন, আমার ছেলে না এখন নিজে নিজে Youtube/Online গিয়ে গেম খেলতে পারে। এই বলে এক আপা আরেক আপার কাছে নিজের ছেলের প্রশংসা করছে। আরে আপা বলেন না, আমার মেয়েকে তো ওর বাবা একটা ট্যাব কিনে দিয়েছি। কি করব্ এত বিরক্ত করতো, এখন আর করেনা, সারাদিন ট্যাব নিয়ে খেলে। এটা একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে দুই মায়ের কথোপকথন। এখন আমরা আমাদের ছেলে মেয়েরা চাইলেই খুব সহজেই একটা মোবাইল, ট্যাব কিনে দিচ্ছি, আমরা আবার আমার ছেলে বা মেয়ে সেই জিনিস দিয়ে এটা করতে পারে এবং ওটা করতে পারে, এই বলে একজন আরেকজনের কাছে জাহির করছি। আবার হয়তো আমরা অনেকে আমাদের ছেলে মেয়েদের ব্যস্ত রাখার জন্য বা বিরক্ত না করার জন্য আমরা এগুলো করছি। আপনি কি জানেন? এগুলো করার মাধ্যমে আপনি হয়তো আপনার ছেলে মেয়ের ক্ষতি করছেন।
বাচ্চাদের ট্যাব বা মোবাইল কিনে দেয়া ক্ষতির কিছুনা, যদি আপনি আপনার ছেলে মেয়েকে ভালভাবে জানেন। আমরা সব বাবা মায়েরাই আমাদের ছেলে মেয়েকে ভাল হিসাবেই জানি। এখানে এই জানাটাকে নয় বরং জানা বলতে তাদের সাথে quality সময় ব্যয় করা এবং তারা যাতে তাদের ভাল লাগা মন্দ লাগা শেয়ার করে সেই ধরনের পরিবেশ তৈরি করাকে বুঝানো হচ্ছে। এখানে সমস্যা হচ্ছে তখনই, যখন আপনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে আপনার ছোট ছেলে মেয়েকে এগুলো দিচ্ছেন। আপনি নিজেও খেয়াল করলে দেখবেন, যখন আপনি Youtube অথবা অন্য কোন সাইট এ কিছু খোঁজা শুরু করেন, তখন কিন্তু না চাইতেই অনেক কিছু এসে পরে, যেটা আমাদের পরিবার এর সাথে দেখার মত অবস্থা না। তাই ভাবেন, যখন বাচ্চারা এই সব লিঙ্ক এ যাবে তখন কি ভয়ানক হতে পারে। আমি বেশ কয়েকটি এরকম ঘটনার কথা শুনেছি। আবার বাংলাদেশে তাদের বাড়ির কাজের লোকের/ক্লাস মেটের কাছে, এসব বিষয় জানতে পেরে অনেকে এর শিকার হয়েছে বলেও শুনেছি।
1174 বা LHOS এর মানে কি? আমি নিজেই জানতাম না। গুগল করে জানবেন এর অর্থ অনেক ভয়ানক। এখনকার দিনে আমাদের একটু বড় ছেলে মেয়েরা একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য টেক্সট করে। টেক্সট করার সময় আবার তারা অনেক abbreviations বা চিহ্ন ব্যবহার করে। আপনি দেখবেন অনেক ছেলে মেয়ে মোবাইল বা ট্যাব এ সব সময় ব্যস্ত থাকে যেন কি নিয়ে। আপনি কিন্তু জানেন না, আপনার ছেলে মেয়ে কি নিয়ে ব্যস্ত। আবার তাদের এই সব ভাষা বুঝার আপনার ক্ষমতা নাই। কয়েকদিন আগে রেডিও তে শুনলাম এখনকার ছেলে মেয়েরা কিভাবে অনলাইন জড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলাফল ভয়ানক হচ্ছে। আমরা অনেক আত্মহত্যার ঘটনা শুনেছি এর কারনে। বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া (viber, whatsapp, snapchat, messengers সহ অনেক) এর মাধ্যমে এরা তথ্য, ছবি (অনেক সময় নোংরা ছবি) আদান প্রদান করছে। যদি আপনি সচেতন না হন, তখন কিন্তু আপনার জীবনে বয়ে আনতে পারে অনেক বড় ভয়াবয়তা। আপনি হয়তো বলবেন, আমি চেক করি, কিন্তু কি করতেছে তা প্রকৃত প্রায় জানা অসম্ভব যদি আপনার সেই ধরনের সম্পর্ক না হয়, অথবা আপনি নিজেকে এই বিষয়ে না জানেন।
আমরা সবাই জানতে চাই, এর সমাধান কি?। এর কোন সমাধান নাই তবে সচেতন হলে বিরাট দুর্ঘটনা থেকে বাঁচবেন? আপনি বলতে পারেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা এটা করেনা? এটা সাদা লোকের ছেলে মেয়েরা করে। আপনি কিভাবে জানলেন? কি করবেন, অবশ্যই মোবাইল বা ট্যাব কিনে দিবেন, তবে সতর্ক থাকবেন বা এমন ব্যবস্থা করবেন, যাতে তারা এই সমস্ত ওয়েবসাইট এ যেতে না পারে। নিয়মিত খেয়াল করবেন। রেডিও তে বলছিল, আমরা পিতা মাতারা যদি না জানি, তাহলে আমাদের আগে এই বিষয়ে জানতে হবে। আবার অনেকে যারা এসব নিয়ে কাজ করে, তারা জানে এটা কিভাবে ওদের নাগালের বাইরে রাখতে হয়। হয়তোবা সব বন্ধ করা সম্ভব হবেনা, তবে আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। প্রয়োজনে আপনার ট্রেনিং ও লাগতে পারে।
পারতপক্ষ্যে চেষ্টা করবেন এসব জিনিস না দেওয়ার, যদি দিতেই হয়, তাহলে আপনি সেই সম্পর্কে আগে জেনে তারপর দিবেন। আবার খেয়াল রাখবেন আপনার ছেলে মেয়ের বিভিন্ন activities এর সমন্বয় আছে কিনা? বাচ্চাদের যেমন শারীরিক বিকাশের জন্য balanced diet দরকার, ঠিক তেমনি তাদের মানসিক বিকাশের জন্য balanced activities থাকা দরকার হয়। আমার লেখার উদ্দেশ্য ভীতি সৃষ্টি করা নয় বরং সচেতনতা তৈরি করা। আসুন আমরা যারা পরিবার ও ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎকে গুরুত্ব দেই, একটু সচেতন হই, পরিবারকে ও ছেলে মেয়েদের সাথে quality সময় কাটাই, আপনার পরিবার ও ছেলে মেয়েদেরকে জানি। আমি যেহেতু নিজেই এটা কম করি (লেখা, কাজ ও ব্যস্ততার কারনে) তাই আপনারা আমার লেখা পড়তে থাকেন, আমি গেলাম আমার বউয়ের এবং মেয়েদের সাথে qaulity সময় কাটাতে…।।