সেই-ই কত বছর আগে “নারী” কবিতায় কবি – কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন-
“নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায়
ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু
তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নী ও বধুদের ত্যাগে
হইয়াছে মহীয়ান।”
সাম্যের এই মহান কবিতা এত বছর পরেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারন এখানে প্রিয় কবি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন জগতে নারী জাতির তাৎপর্য। যদিও এটি কবির এক মহান প্রয়াস কিন্তু দু:খজনকভাবে এখনও আমাদের সমাজ নারীদের একটুখানি হলেও হেয় করে দেখে। প্রথম বিশ্বের খয়রী মানুষগুলোও কিন্তু এর ব্যাতিক্রমি নন। বিশ্বের অন্যতম নামকরা শহর টরন্টোতে বাংলাদেশী কেনেডিয়ানদের বহু সংগঠন থাকলেও নারী প্রধান কোনও সংগঠন এমনকি শুধু অনুষ্ঠানও বিরল। কেবলমাত্র মা দিবস ও নারী দিবসে একটুখানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া নারীজীবনকে উদযাপন করার তেমন কোনও সুযোগ এখানে নেই বললেই চলে।
এমতাবস্থায় একটিমাত্র সংগঠন যেখানে নারীরাই শক্তি, নারী দ্বারা পরিচালিত এবং বাবার মত দুজন পুরুষ আখলাক হোসেন ও রফিক পাটোয়ারীর সাথে সাথে কমিউনিটির সর্বশক্তিশালী নারী নাহিদ আক্তারের নেতৃত্বে এবং সর্ববিষয়ে চৌকস ও পারদর্শি মাসুদা পলির সার্বিক তত্ত্বাবধানে একদল নারী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শহরের অন্যতম নামকরা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান “প্রমিনেন্ট প্রত্যয় কানাডা”। সাংস্কৃতিক সম্পাদক তাহমিনা, রিদি, প্রচার সম্পাদক রাহিমা মাহমুদ, কোষাধক্ষ্যা জিনাত জাহান, রিফ্রেসমেন্ট আয়োজক রোকেয়া পারভিন ছাড়াও রয়েছেন ফেরদৌসি গুলবাহার, মিতা রহমান, মিতা হাসান, রানু হাসান, ঝর্না পাটোয়ারী, রুনা ডি ক্রুজ, সুলতানা পারভিন সহ আরও অনেকে।বিশিষ্ট রিয়েলটর তাহেরা কবির আমাদের চলার পথে সর্বদাই সহায়তা যুগিয়েছেন।
এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য হল বিদেশের মাটিতে দেশিয় সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করা, ধরে রাখা এবং আগামী প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সম্পর্কে জানানো।সংগঠনটির বেশিরভাগ সদস্যই নারী এবং তারা প্রতি বছর দুটি করে অনুষ্ঠান কমিউনিটিকে উপহার দিয়ে থাকেন। যেখানে এই সদস্যদের অংশগ্রহনে অত্যন্ত চমত্কারভাবে উপস্থাপিত হয় বাংলাদেশের নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়, ফ্যাশন শো সহ আরও অনেক কিছু। জমজমাট এই অনুষ্ঠানগুলোতে প্রবেশ এবং পার্কিং দুটোই সম্পূর্নরূপে ফ্রি।সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় হরেক রকম মজাদার পিঠাপুলি ও অন্যান্য মুখরোচক খাদ্যদ্রব্য।
কমিউনিটির সদস্যগন সদলবলে আসেন নাচ গানে ভরপুর এই অনুষ্ঠানগুলো দেখতে এবং মনের আনন্দে ফিরে যান একটি ভালো সময় কাটানোর পরে।আমরা উদার নারী, আর আমরা নারীপ্রধান কিন্তু নারীসর্বস্ব নই। তাই দুজন অত্যন্ত গুনী মানুষের কথা উল্লেখ না করলেই নয় প্রথমজন আমাদের সকলের গুরু জনাব মামুনুর রশিদ। দক্ষিন এশিয়ার মিউজিকের উপর দখল যার অসামান্য। তাঁর কাছে যথেষ্ট তালিম নিয়েই আমরা আসছি আপনাদের সামনে।দ্বিতীয়জন,(কিন্তু কোনও অংশে কম যান না) বাংলাদেশের বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী, সংবাদ পাঠক, দুর্ধর্ষ অতি পরিচিত সেলিব্রেটি সাংবাদিক কামরান করিম থাকবেন স্টেজে, উপস্থাপনা করে যাবেন তাঁর নিজের হাস্যরসাত্মক স্টাইলে।
তবে এই অনুষ্ঠানগুলো সফল করা এত সহজও নয়। দৈনন্দিন জীবনের বহু কাজ ও বহু চরিত্রে অভিনয় করে তবেই এই অনুষ্ঠানের কাজ করতে হয় সকলকে।একজন নারী তো একাধারে স্ত্রী- মা- বোন হয়ে থাকেন। প্রতিটি চরিত্রের একটি করে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তার উপরে রয়েছে কর্মক্ষেত্র অথবা শিক্ষাজীবনের নানা ঝামেলা। এই সব কিছু করার পরেও প্রত্যয়ী নারীগণ নিষ্ঠার সাথে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন।
তারা যেহেতু মা আর তাই এই সংগঠনে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহনও তারা সাদরে বরন করে নিচ্ছেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানের পূর্বে নানা রকম শত্রুর মোকাবিলা করেও তারা করে যাচ্ছেন তাদের কাজ। কিছু দুষ্ট মানুষের আছে যারা এই সাফল্যের সামনে বাঁধা হয়ে থেকে গুজব ছড়িয়ে অনুষ্ঠান পন্ড করার বৃথা চেষ্টা করেন।কিন্তু এই নারীগণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয়ে সবাই মিলে নিন্দুকের কথায় কান না দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
সংগঠনের উপদেষ্টামন্ডলির বিশেষ সহযোগিতায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই এক নতুন মাত্রা যোগ করে “প্রমিনেন্ট প্রত্যয়”।তাই এবার আরও বিশেষভাবে, রং লাগিয়ে, নতুনত্ব নিয়ে প্রত্যয়ীরা আসছেন আগামী ১২ ই অক্টোবর এক পিঠা উৎসবে। ৯ ডজ রোডে অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠানে জড়ো হবে সকল কমিউনিটির সদস্যরা।জনাব মামুনুর রশিদের তালিমে আর মাসুদা পলির দিক নির্দেশনায় আমরা প্রস্তুত। আর দেরি কেন? সবাইকে নিয়ে চলে আসুন গান শুনতে, নাচ দেখতে,মজাদার পিঠা খেতে ও অনেক অনেক মজা করতে।
আর একজনের অবদানের কথা অনস্বীকার্য, তিনি হলেন বিশিষ্ট রিয়েলটর আব্দুল আওয়াল। সুসময় এবং নিদারুন দু:সময়ে এই মানুষটি আমাদের আগলে রেখেছেন সবসময়। অর্থ ও মনোবল দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের সামনের দিকে। যখন আমরা নিজেদের উপরে আস্থা হারিয়েছি তখনই তিনি প্রচন্ড উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছেন এবং সবকিছু সহজ করে দিয়েছেন আমাদের জন্য। আমরা কৃতজ্ঞ।
শীতের আগমনি ঘন্টার ধ্বনী শুনে, হেমন্তের ঝড়া পাতার বানী নিয়ে আমরা তো থাকব সারাদিন সদলবলে। অপেক্ষা করব আপনাদের জন্য আনন্দের ডালি সাজিয়ে। আমরা কৃতজ্ঞ ও অনুপ্রেরিত। আপনারা আমন্ত্রিত।