রহমান রিক্সা থেকে নেমে ডাক্তার আজমল সাহেবের চেম্বারে ঢুকে দেখে আজ রোগীর অনেক ভিড় । সে রেবেকার সমস্ত ব্লাড ওয়ার্ক ও এক্সরে রিপোর্ট নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে রিসেপশনিস্ট রাকীব কে বলে আপনি আমার সিরিয়েল কি লাগাতে পারেন?
জ্বি হ্যাঁ, অবশ্যই লাগাতে পারি । সে রেজিস্ট্রি খাতায় নাম এন্ট্রি করে বলে আপনি বসুন ।
রহমান বলে রুগী আছে ,আমি কি একটু ঘুরে আসবো?
জ্বি । একটু ঘুরে আসেন, ততক্ষনে ভিড় কমে যাবে । সামনেই মসজিদ , আছর নামাজ পড়ে এসে ঢুকতেই রাকীব বলে ডাক্তার সাহেব একবার বাহিরে এসেছিলেন এবং আমি আপনার কথা বলেছি । আপনি বসেন বেশি দেরি হবে না । রহমান বলে দেরি হলে ও আমার কোনো তাড়া নেই , আমি অপেক্ষা করবো ।
আপনি কি ডাক্তার সাহেবকে রিপোর্ট দেখানোর জন্য?
হ্যাঁ, তাই । বসেন ডাক্তার সাহেব এক সময় চেম্বার থেকে বের হলে রিপোর্ট গুলি দিয়ে দেব। রহমান বসে আছেন এক ঘন্টার ও অধিক সময় ধরে, পাঁচ জন রোগী শেষ করেছেন মাত্র। এক পর্যায়ে ডাক্তার বাহিরে এসে দেখে রহমান বসে রয়েছে। ডাক্তার বলে হে রহমান তুমি কি রিপোর্টগুলি এনেছো ?
হ্যাঁ। দেখি সব রিপোর্ট আমাকে দাও, এই বলে সে রিপোর্ট গুলি নিয়ে গিয়ে ভালো ভাবে দেখে বলে আমি একজন স্পেশালিস্টকে রেফার করবো । ওয়েটিং রুমে অন্যান্য রোগীরা বলে উনি তো আমাদের পরে এসেছেন । রাকীব বলে উনি স্যার এর আত্মীয়, দেখলেন না ডাক্তার সাহেব নিজে এসে নিয়ে গেছেন । বেশি দেরি হবে না, এখনই বের হয়ে যাবেন ।
ডাক্তার আজমল বলে তুমি এই রিপোর্ট নিয়ে এখনই গ্রীন রোডে ডাক্তার মনোয়ারাকে দেখাও আমি বলে দিচ্ছি । রহমন বলে তুমি কি দেখলে এই রিপোর্টে ?
সে বলে আমার মনে হয় ব্রেস্ট এ ইনফেকশন জাতীয় কিছু এবং এটা অবহেলা করা ঠিক হবে না,প্রপার ট্রিটমেন্ট নিতে হবে । তা ছাড়া মনোয়ারা এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ ডাক্তার । রহমান মন খারাপ করে বলে তুমি কি সিরিয়াস কিছু সন্দেহ করতেছো?
ডাক্তার বলে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দরকার রয়েছে । ডাক্তার আজমল সঙ্গে সঙ্গে মনোয়ারাকে টেলিফোন করে বলে আমি একটা রোগীর রিপোর্ট পাঠালাম ,আপনি একটু যত্ন সহকারে দেখে তার প্রপার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন । মনোয়ারা বলে ঠিক আছে পাঠিয়ে দেন,আমি দেখে দেব । রহমান সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট গুলি এবং আজমলের নোট নিয়ে মনোয়ারার চেম্বারে গিয়ে রিসেপশনিস্ট রহিমাকে দেখায় । রহিমা বলে আপনি বসেন এবং এই রোগী বের হলে আপনাকে ভিতরে যাইতে দেব ।
মনোয়ারা কয়েক মিনিটের মধ্যে রহমানকে ভিতরে ডেকে রিপোর্ট দেখে বলে রোগী কোথায়? রহমান বলে ওকে আমি আনি নি । আপনার বাসা কত দূর ?
আমি ধানমন্ডি থাকি । রোগী নিয়ে আসেন আমি দেখে দেব । ঠিক আছে আমি বাসায় গিয়ে ওকে নিয়ে আসি এই বলে রহমান একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় গিয়ে বলে রেবেকা তুমি চলো, আমি ডাক্তার মনোয়ারার সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট করে এসেছি । সে বলে আমি এখন রান্না চড়িয়েছি , কি ভাবে যাবো?
রহমান বলে ও সব সাকিলা আর কাজের মেয়ে দেখুক, তুমি চলো ।
না, আমার যাইতে ভালো লাগে না । না, ডাক্তার আজমল আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে । তুমি না গেলে কি করে হবে?
সাকিলা বলে আম্মু আমার সঙ্গে চলো, আব্বু তুমি আর একটা রিক্সা নিয়ে এস আমি আম্মুকে নিয়ে যাই ।
মনোয়ারার চেম্বারে সবই মেয়ে রোগী । ওদের যাওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যে সেক্রেটারি ওকে ভিতরে পাঠায় । মনোয়ারা ভালো ভাবে দেখে জিজ্ঞেস করে আপনি কবে থেকে অসুস্থ বোধ করছেন?
আপা আমি প্রায় এক বৎসর থেকে একটু একটু ব্যাথা অনুভব করছি ।
কোনো ডাক্তারের সঙ্গে কি আলাপ করেছেন ?
না, তবে ডাক্তার আজমল আমাদের পারিবারিক ডাক্তার । আমি লজ্জায় এ নিয়ে কোনো আলাপ করিনি । অসুখে লজ্জার কি আছে ?
এটা তো আলাপ করার মতো রোগ,আগে আলাপ করলে হয়তো উনি আপনাকে কোনো ডাক্তারের কাছে রেফার করতেন । আমি আপনাকে দুই সপ্তাহের ঔষুধ দিচ্ছি, দুই সপ্তাহ পর এসে দেখিয়ে যাবেন ।
রাত শিকাগো USA থেকে আজিজ টেলিফোন করে সাকিলাকে বলে আম্মুর অবস্থা কেমন?
সাকিলা বলে ভাইয়া ডাক্তার টেস্ট করিয়ে আজ-ই ঔষুধ দিয়েছে এবং দুই সপ্তাহ পর আবার যাইতে বলেছে । আম্মুর হঠাৎ করে কি হয়েছে?
সাকিলা বলে আম্মু অনেক আগে থেকেই কমপ্লেইন করতেছেন । ডাক্তারের কথা বললে, বলে এ ভাবেই সেরে যাবে এই করে গাফিলতি করে আজ এ পর্য্যায়ে এসেছে । এটা আমাদের গাফিলতি যে জন্য এতটা খারাপ হয়েছে । আম্মুকে অনেক আগে থেকেই ট্রিটমেন্ট করানো দরকার ছিল যা করানো হয় নি । আজিজ বলে যা হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা না করে এখন ভালোভাবে ট্রিটমেন্ট করাও । আমরা দেখছি ,তুমি চিন্তা করবে না এই বলে সাকিলা লং ডিসটেন্স ফোন দীর্ঘায়িত না করে রেখে দেয় ।
বিকেলে আবিদ অফিস থেকে বের হয়ে নিউ মার্কেট গিয়ে হুমায়ুন আহমেদের লেখা দুইটা গল্পের বই, কিছু কমলা এবং আঙ্গুর নিয়ে সাকিলাদের বাসার গেটে এসে রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা । সে সালাম দিয়ে বলে শুনলাম আন্টি অসুস্থ । রহমান বলে তুমি ঘরে এসে বস । সাকিলা বাগানে পানি দিতে ছিল । ওকে দেখে একটু অস্বস্তি বোধ করে । রেবেকা রুম থেকে বের হয়ে কাজের মেয়েকে বলে আমাদের একটু চা দাও । সাকিলা কোনো কিছু না বলে গাছে পানি দিয়ে আস্তে করে ওর রুমে গিয়ে ঢুকে ।
আবিদ বলে আন্টি আপনার শরীরের কি অবস্থা?
এইতো আছি এক রকম । রহমান ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে এবং সাকিলা এসে সবাইকে চা দিয়ে নিজে ও বসে । রেবেকা বলে তুমি অনেক গুলি ফল এনেছো যা দরকার ছিল না । আপনার অসুখ শুনে দেখতে আসলাম,ভাবছি কি নেবো ? সাকিলা তোমার জন্য হুমায়ুন আহমেদের লেখা দুইটি বই এনেছি । সাকিলা একটু মিচকি হেসে বই দুইটি নিয়ে পাতা উল্টাচ্ছে এবং বলে হুমাযুন আহমেদ আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক । আবিদ বলে সে জন্যই আনলাম । সাকিলা বলে ধন্যবাদ ।
কিছু সময় বসে কথা বলতেছে এবং এ সময় মোশারেফ টঙ্গী থেকে এসে ঘরে ঢুকেছে । সে সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে আবিদ সবার সঙ্গে বসে চা খেয়ে কথা বলতেছে । রহমান পরিচয় করিয়ে বলে এ আবিদ তোমাদের হেড অফিসে এক্সেকিউটিভ অফিসার । মোশারেফ বলে আমি নাম শুনেছি, কারখানার লোকজন বলতে একমাত্র ম্যানেজার হেড অফিসে যায় এবং সবাইকে চিনে । আবিদ বলে ভালোই হলো পরিচয় হয়ে ।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, আজ পূর্ণিমার চাঁদ উঠছে । বাহিরে বাগানের প্রস্পুটিত ফুলের গন্ধে চারিদিক থেকে মৌমাছির গুন্ গুন্ শুনা যাচ্ছে । আবিদ বলে আমি বাসায় যাই এই বলে বিদায় নিতে চাইলে রেবেকা বলে আমাদের যা রান্না হয়েছে ,তুমি খেয়ে যেও । প্রতিদিন এসে না খেয়ে যাও এটা ভালো দেখাচ্ছে না । না, আন্টি আপনি ভালো হয়ে যান পরে একদিন খাবো । আমি কবে ভালো হবো আর তোমাকে খাওয়াবো ,তুমি বরং খেয়ে যাও ।
আবিদ বলে আন্টি আমার মেসে ও রান্না হয়েছে । আজ না আর একদিন এসে খেয়ে যাবো । রহমান বলে তুমি কি কারো সঙ্গে শেয়ার করে থাকো । জ্বী না, আমি আলাদা থাকি , তবে আমার পার্শে একটা মেস আছে যেখানে আমি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে খাই । রেবেকা বলে তুমি অনেক জিনিস নিয়ে এসে না খেয়ে গেলে কেমন দেখায়?
আন্টি ও কিচ্ছু না, আপনার জন্য এনেছি ।
মোশারেফ বলে মামী আমিও চলে যাচ্ছি । রেবেকা বলে কেন তুমি খেয়ে যাও । তুমিতো আর কারো সঙ্গে শেয়ার করে খাও না । না, মামী খাইতে গেলে আমার টঙ্গী যাইতে অনেক দেরি হবে । তাছাড়া আমি রাতের খাওয়া সেরে আসছি । বলো কি তুমি বিকালেই রাতের খাওয়া সেরে ফেলো । হ্যাঁ , মামী আমি কাজ থেকে এসে একদিকে রান্না বসিয়ে দেই এবং অন্য দিকে কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে নেই । খাওয়া তৈরী হলে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলি । সাকিলা বলে তুমিতো ভালো রান্না শিখেছো তাই না ?
ভালো আর কি?
সব কিছু একত্রে মিশিয়ে একটা খিচুড়ির মত করে ফেলি, মাছ বা মাংস ঝামেলা ওর ধারে কাছে আমি নাই । মনে চাইলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসি ।
আবিদ ও মোশারেফ একত্রে বের হয়ে যায় । রহমান ও সাকিলা ওদের পিছনে পিছনে গিয়ে গেট বন্ধ করে দিয়ে একটু বাগানে বসে । সাকিলা ঘরে এসে আবিদের বই নিয়ে নিজের টেবিলে গিয়ে বইগুলি নাড়াচাড়া করতেই একটা সংক্ষিপ্ত নোট বই থেকে বের হয়ে আসে । সাকিলা নোট টি বার বার পড়ে এবং ভাবে আবিদ কি সত্যি আমাকে ভালো বাসে?
আবিদের সঙ্গে আমার বিয়ের কথাবার্তা ও এনগেজমেন্ট হয়েছে ,ও আমাকে একটা চিঠি বা নোট পাঠানো অযোক্তিক কিছু না । আমি রাজি হলে এর মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়ে যেত । নোটের উল্টো দিকে ওর বাসার ঠিকানা এবং অফিসের টেলিফোন নম্বর দেয়া আছে । সে হয়তো ভাবে আমি অফিসে না গেলে ও টেলিফোন করবো । সে এর আগেও কয়েক বার বাসার নম্বরে টেলিফোন করে আমাকে পায় নি ।
সাকিলা পরদিন স্কুল ছুটির পর তার বান্ধবী ইতির বাসায় যায় । ইতি সাকিলাকে দেখে বলে আয় বস । সাকিলা বলে আম্মুর শরীর অনেক খারাপ বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে । ইতি জড়িয়ে ধরে বলে তুই কাঁদলে আমার মন খারাপ লাগে. যা হাত মুখ ধুয়ে আস ,আমি চা নিয়ে আসি ।
সাকিলা বলে গতকাল আবিদ অনেক ফল ও আমার জন্য হুমায়ুন আহমেদের দুইটি বই এবং বইয়ের মধ্যে এই নোট আমাকে দিয়েছে এতে তার বাসার ঠিকানা যেখানে সে একা থাকে ও তার অফিসের টেলিফোন নম্বর দিয়েছে । তা ছাড়া কয়েকবার বাসায় টেলিফোন করেছে । আমি একবার ও টেলিফোন ধরি নি । ইতি বলে চল চা খেয়ে সুলতানার সঙ্গে দেখা করি । সুলতানা তোকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবে । এ সাকিলা হাঁসতে হাঁসতে বলে,সুলতানা আমার ভালো কৌঁসুলি ।
সাকিলা চা খাইতে খাইতে ইতি কাপড় পাল্টিয়ে ওর আম্মুকে বলে ,আমি ওর সঙ্গে একটু ইউনিভার্সিটি পাড়ায় যাবো । যা তবে বেশি দেরি করবি না । ইতি তুই আমাকে নিয়ে চল সাকিলার আম্মুকে একবার দেখে আসি । আম্মু ঠিক আছে আমরা যাবো ।
সুলতানা পরীক্ষার পর ইউনিভার্সিটি হল ছেড়ে দিয়েছে । ওরা দুই জনে একটা রিক্সা নিয়ে সুলতানার বংশাল রোডের বাসায় গিয়ে উঠেছে । দরজায় কড়া নাড়তেই কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে সালাম দিয়ে বলে আপনারা ভিতরে আসেন, আমি খালা মনিকে ডেকে দিচ্ছি । সুলতানা এসে বলে কিরে সাকিলা ও ইতি তোরা সকাল সকাল কেন আসলি না?
সাকিলা বলে আমি স্কুল করে দেরি করেছি । তুইতো এখন সন্ধ্যা হলে-ই দৌড় দিবি, বস আমি তোদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করি । আমি কেবল- ই ইতির বাসায় চা খেয়ে বের হয়েছি । চা দশ বার ও খাওয়া যায় এবং তাছাড়া দেখি আর কিছু খাওয়ানো যায় কিনা । আমাদের এখন কিচ্ছু খাবার ইচ্ছা নেই , তুই বস তোর সঙ্গে কথা আছে. সুলতানার আম্মু এসে বলে তোমরা কেমন আছো ?
ইতি বলে আমরা ভালো আছি ,আপনি কেমন আছেন আন্টি ?
আমি ভালো আছি । তোমরা টেবিলে গিয়ে বস খাওয়া দিচ্ছি । না, আন্টি আমরা এখানে গল্প করতে আসছি , আমাদের এখন কিচ্ছু খাবার ইচ্ছে নেই , সুলতানা তুই বস তোর সঙ্গে কথা আছে ।
সুলতানার আব্বু রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে এবং বললে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া পাঠিয়ে দেয় । বাবুর্চি আগেই রাতের জন্য বিরিয়ানি পাঠিয়ে দিয়েছে এবং টেবিলে বিরিয়ানী দেয়া হয়েছে , গরম ধোঁয়া উঠতেছে । সুলতানা টানা হেচড়া করে বলে সাকিলা তুই স্কুল থেকে এসেছিস, খেয়ে নিয়ে বস কথা বলবো । ইতি বলে বিরিয়ানী দেখলে আমার এমনিতেই ক্ষিদে পেয়ে যায় । সুলতানা হেঁসে বলে এই জন্যই বলছি আগে খেয়ে নিয়ে বসে গল্প করবো ।
ওরা তিনজনে বসে আলাপ করতে গিয়ে সুলতানা বলে সাকিলা তোর মাবাবা ও দুই ভাই আবিদকে পছন্দ করেছে । ভালো পরিবার এবং ওরা সব কিছু দেখেই পছন্দ করেছে । তুই নিজেও একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখ । নিষেধ তো যে কোনো সময় করা যায় ।
সাকিলা বলে আমার স্বপ্ন BCS পরীক্ষা দেব, না হয় সরকারি কলেজে চাকুরী করবো । তুই পরীক্ষা দিবি ,ও তোকে নিষেধ করবে কেন ?
তাতো জানি না । ওর সঙ্গে আলাপ করে রাজি করিয়ে নিবি, বলবি আমাকে ঘরে বসিয়ে রাখা যাবে না । সে কি বুঝে না ,নিশ্চয়ই রাজি হবে ।
আন্টির শরীর অসুস্থ ,এই মুহূর্তে ও সব বাদ দিয়ে আগে আন্টিকে দেখ। তোর আব্বুও অবসর নিয়েছেন ,কাজেই সব কিছু ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিবি ।
ইতি চল রাত হয়ে যাচ্ছে , দেরি হলে আম্মু দুশ্চিন্তা করেন । সুলতানা বলে উইকেন্ডে একটু সময় নিয়ে আসবি । একটা রিক্সা নিয়ে ইতিকে নামিয়ে দিয়ে সাকিলা বাসায় ফিরে দেখে আম্মু বাগানে বসে আছে । রোজ রোজ এত দেরি কেন করিস?
আম্মু আমি ইতিকে নিয়ে একটু সুলতানার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি । ওর আম্মু না খাইয়ে দিলো না । তাই একটু দেরি হয়ে গেছে । যা কাপড় পাল্টিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয় । রহমান মাগরিবের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে একটু হাঁটা হাঁটি করে বাসায় এসে সাকিলাকে দেখে বলে তোমার দেরি হয়েছে । জ্বি আব্বু, আমি এক বাসায় গিয়েছিলাম ।
কাজের মেয়ে টেবিলে রাতের খাওয়া দিয়েছে । সাকিলা বলে আমি সুলতানার বাসায় খেয়েছি ।এখন আর কিছুই খাইতে ইচ্ছা করে না । রহমান বলে কি খেয়েছো?
সুলতানার আম্মু ওদের হোটেল থেকে বিরিয়ানী আনিয়ে আমাদের খাইয়ে দিয়েছে । না, না করেছিলাম । আমাদের না খাইয়ে ছাড়লো না । ইতি ও সুলতানার আম্মু বলেছে ওরা তোমাকে দেখতে আসবে । কবে আসবে আগে থেকে একটু জানাস । ঠিক আছে ।
দুই সপ্তাহের ঔষুধ শেষ হওয়ার পর সাকিলা রেবেকাকে নিয়ে ডাক্তার মনোয়ারার চেম্বার এ গেলে ভালোভাবে দেখে বলে আমি তেমন কোনো পরিবর্তন দেখছি না । আরও দুই সপ্তাহের ঔষুধ দিলাম দেখি কি হয় । দুই সপ্তাহ পর যদি একই অবস্থা দেখি,তাহলে অন্য ডাক্তারের নিকট পাঠাবো । আর যদি ইম্প্রোভ দেখি, আমি একই চিকিৎসা চালিয়ে যাবো । সাকিলা গ্রীন রোড থেকে ঔষুধ খরিদ করে রেবেকাকে নিয়ে ঘরে আসে । সাকিলা আলাদা ভাবে ডাক্তারকে বলেছে আপনি কি মনে করেন?
দেখা যাক, এই ট্রাইটমেন্টের ফলে কি দাঁড়ায় । সাকিলা চোখের জল দুই হাত দিয়ে মুছে বলে আন্টি আপনি দেখেন কি ভাবে সাহায্য করতে পারেন?
মনোয়ারা বলে ভালো হয়ে যাবে সে আসা করছি ।
রেবেকা বলে কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
না, আম্মু তোমার অসুখ দেখলে আমার মন খারাপ থাকে ।
আজ আবার রাতে সাকিলার ঘুমের ব্যাঘাত হইতেছে । সে শুনে বাহিরে খট খট ঘোড়ার পায়ের আওয়াজের মত বাসার সামনে কিছু একটা হাঁটতেছে । সাকিলা চিৎকার শুরু করেছে । সে পরিষ্কার দেখে কেউ একজন তার রুমে ঢুকে হাঁটা হাঁটি করে তার মাথার কাছে বসে গায়ে হাত দিয়েছে । সে চিৎকার করে বলে কে কে ?
লোকটা তার দিকে তাকিয়ে হাঁসতেছে । সে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । তার আওয়াজ শুনে রেবেকা নিজের কামরা থেকে এসে বলে কি হয়েছে সাকিলা ?
সাকিলা চোখ লাল করে রেবেকার দিকে তাকিয়ে বলে আমাকে ছেড়ে দে, আমাকে ছেড়ে দে ।
রহমান রুম থেকে এসে বলে কি হয়েছে?
রেবেকা বলে ওর তো জ্ঞান ফিরে আসে নি । রহমান কোরানের আয়াত পড়ে তার মাথায় ও শরীরে হাত দিয়ে মুছে দিয়ে এবং মাথায় একটু তেল ও পানি দিয়ে ডাকতেছে সাকিলা,সাকিলা । অনেক্ষন পর সে চোখ খুলে বলে হুঁ! সাকিলা বলে ঠক ঠক আওয়াজ করে আমার কাছে এসেছে । রহমান বলে কে এসেছে?
ঐ যে দেখো না সে এখন চলে যাচ্ছে ।
রহমান মনে মনে বলে রেবেকা এক দিকে অসুস্থ ,আর এক দিকে সাকিলা অসুস্থ । আমি কি করে দুই জনকে সামলাবো?
রেবেকা বলে আমি ওর কাছে ঘুমাবো এই বলে তার বেডে শুয়ে রহমানকে বলে তুমি লাইট অফ করে গিয়ে শুয়ে থাকো । রহমান বাহিরে গিয়ে বসে থাকে এবং কিছু সময় পর পর এসে দেখে সাকিলা ঘুমাচ্ছে । এ ভাবে রাত শেষ হয়ে যায় ।
ঘুম থেকে উঠে সাকিলা হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে তৈরী হয়ে স্কুলে যাবে ,রেবেকা ও রহমান বলে তোকে স্কুলে যাইতে দেব না, বাসায় রেস্টে থাক ।
কেন আম্মু ?
রহমান বলে তুমি রাত্রে অনেক দুঃস্বপ্ন দেখে কাঁদো,আর্তনাদ করো, তোমাকে কোনো ফীর ফকিরের নিকট নিয়ে যাব,কিছু তদবির করানো দরকার । আমার কি হয়েছে ?
মনে নাই তুমি রাতে চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছো । তোমাকে কিছু পানি পড়া বা তাবিজ এনে দেব । আব্বু আমি এ সবে বিশ্বাস করি না । আমার কাছে ভালো লাগে এখন স্কুলে যাবো । কিছু না শুনে সাকিলা বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে স্কুলে চলে যায় ।
রহমান স্থানীয় এক ফীরের নিকট গিয়ে বলে ,হুজুর আমার মেয়ে প্রায়-ই রাতে ভয় পেয়ে চিৎকার করে ঘরের মানুষ জন একত্রে জড়ো করে । ফীর সাহেব সব বিবরণ শুনে বলেন মনে হইতেছে কোনো বদ জীনের আসর ওর উপর কেউ করেছে । এই তাবিজ নিয়ে ওর গলায় পরিয়ে দেবেন আর এই পানি পরা দিলাম, ওর সঙ্গে পানি মিশিয়ে বাড়ির চারিদিকে ছিটিয়ে দেবেন এবং এক সপ্তাহ পর আসবেন আমি ইস্তেখারা করে দেখি । রহমান কিছু হাদিয়া দিয়ে তদবির নিয়ে বাসায় চলে আসে ।
ক্রমশ :