রোজি কিছু দিন থেকে অসুস্থ- যা কিছু খায় বমি করে ফেলে । শরীরের ওজন কমে ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে । কোনো কিছু খাবার মতো ইচ্ছা হয় না – বমি বমি ভাব । মেয়েরা জিজ্ঞাসা করে আম্মু তোমার কি হয়েছে তুমিতো কিছুই খেতে পারো না ?
রোজি বলে কি দেখলি-আমার কিছুই হয় নি ?
না, আম্মু তুমি ঠিক বলছো না । তুমি কিছুই খেতে পারছো না – শরীর দিন দিন শুখিয়ে যাচ্ছে । তোমার চোখের রং কেমন হলুদ বর্ণ, কি হয়েছে আম্মু তুমি বলতো ?
আমার কিছুই হয় নি । অযথা আমার জন্য দুশ্চিন্তা করিস না । আম্মু তোমাকে আমরা ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাবো ।
কেন আমাকে শুধু শুধু ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাবি ?
আম্মু তুমি বুঝ না, তোমার শরীর অনেক খারাফ । রোকেয়া বলে আজ কলেজ থেকে এসে বিকালে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাবো- দেখি ডাক্তার কি বলে ? তুমি আম্মু তৈরী থেকো । না আমি যাবো না- আমার কিছু হয় নি । রোকেয়া কলেজ থেকে আসার পর বলে আম্মু তুমি চলো আমি তোমাকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাবো । রোজি বলে কেন আমাকে ডাক্তারের নিকট নিতে হবে ?
আম্মু , তুমি বুঝতে পারছো না- তোমার নিজের অবস্থা । চলো তুমি তৈরী হয়ে নাও- আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি , তোমাকে নিয়ে যাবো। বাড়িওয়ালি রাশিদ সাহেবের স্ত্রী আছিয়া বেগম রোকেয়া ও রোজির কথা কাটাকাটি শুনে ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলে কি হয়েছে? রোকেয়া কেন এত উত্তেজিত হয়ে কথা বলে ?
রোকেয়া বলে , আম্মু অনেক দিন থেকে কিছুই খেতে পারছে না – বলে বমি বমি লাগে ,তা ছাড়া দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে একবার দেখিয়ে আনতে চাই , কিন্তু আন্টি দেখেন আম্মু কেমন খুঁটি টানা দিয়ে আছে- যাবে না। আছিয়া বেগম বলে , মেয়েরা তো ভালোই বলে , যান একবার গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসেন।
রোজি বলে, দেখ তোর বাবাকে বলা হয় নি, কাজ থেকে এসে রাগ করবে যখন শুনবে যে আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছি । তা ছাড়া আমাদের কোনো টাকা পয়সা নাই যে ডাক্তার কে ফী দিতে ও ঔষুধ কিনতে পারি । আমরা কোনো রকমে দিন এনে দিন খাই অবস্থা । রোকেয়া বলে আম্মু ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা দিয়েছে ,তুমি ভয় করো না, আব্বু কিছুই বলবে না। আচ্ছা ঠিক আছে ,আমি হাত মুখ ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করে নেই ।
ডাক্তার অজিত কান্দিরপাড় লিবার্টি সিনেমা হলের বিপরীতে বসে । রোকেয়া আরো দুই একবার নিজে ও হাফসাকে নিয়ে ওর কাছে গিয়েছে । ডাক্তার রোজির চোখ, মুখ দেখে বলে আমার সন্দেহ হয় যে তোমার আম্মুর জন্ডিস হয়েছে । কিছু পরীক্ষা করা হোক এই বলে রোজি কে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করার জন্য prescribe করে । ডাক্তার বলে এই রিপোর্ট গুলি করিয়ে নিয়ে আসবে । রোজি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বলে – রোকেয়া আমার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে না । ঘরে চল-তোর আব্বু আসলে খাওয়া না পাইলে অনেক রাগ করবে । আম্মু , আব্বু এ নিয়ে রাগ করবে না । তুমি বুঝতে চেষ্টা করো -, ডাক্তার বলেছে যে তোমার জন্ডিস হয়েছে । জন্ডিস কোনো ভালো রোগ না । বেশি দেরি হবে না , চলো হাসপাতালে গিয়ে তোমার রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য দিয়ে আসি । রোজি বলে , এখন হাসপাতালে গেলে অনেক দেরি হবে, বিকেলের রান্না করা যাবে না ।
আচ্ছা আম্মু , এখন ঘরে চলো ,কাল সকালে তোমাকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাবো । আচ্ছা দেখা যাবে । পর দিন সকালে করিম দোকানে যাওয়ার পর রোকেয়া আম্মু কে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে দিয়ে বাসায় রেখে কলেজে যায় । কলেজ থেকে আসার সময় সে হাসপাতালে গিয়ে প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে এবং হাসপাতালে জিজ্ঞাসা করে । প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছে যে রোজির জন্ডিস হয়েছে । রোকেয়া ভয় পেয়ে বলে আম্মু তুমি বিশ্বাস করো না যে তোমার জন্ডিস হয়েছে ? রোজি বলে বিশ্বাস করে কি করবো যদি জন্ডিস হয়ে থাকে ?
আম্মু তুমি আগের মতো কাজ করতে পারবে না ।
তোমাকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাবো এবং দেখি ডাক্তার কি বলে?
রোকেয়া, তুই রিপোর্ট নিয়ে যা এবং শুনে আয় ডাক্তার কি বলে,আমি যাবো না । রোকেয়া অযথা তর্ক না করে বিকেলে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের নিকট গিয়ে বলে আংকেল দেখেন তো আম্মুর রিপোর্ট । ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলে ওনার জন্ডিস হয়েছে এবং কয়েকটা ঔষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বলে, তোমার আম্মু কে রেস্টে থাকতে হবে- খাওয়া দাওয়া নিয়ম মেনে চলতে হবে।
ডাক্তার ঔষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বলে ,নিয়মিত ঔষুধ খাইতে বলবে , তৈলাক্ত জিনিস খাওয়া নিষেধ, তরকারি, আখ ,বেশি বেশি পানি ও রেস্টে থাকতে হবে । রোকেয়া ফার্মেসী থেকে ঔষুধ নিয়ে ঘরে এসে বলে আম্মু তোমাকে এই ঔষুধ ও পথ্য দিয়েছে এবং তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে । রোকেয়া হাফসাকে বলে , হাফসা, আম্মুর জন্ডিস হয়েছে । কাজেই ঔষুধ রীতিমতো খেতে হবে এবং আমরা দুজনে ঘরের কাজ করবো যে পয্যন্ত আম্মু ভালো না হবে । আজ থেকে তোমার ছুট্টি এবং শুয়ে ,বসে থাকবে । রোজি মেয়েদের কথা শুনে হাসে- বলে ভালোই আজ থেকে আমি বসে বসে খাবো এবং তোমরা কাজ করবে ।
রাতে করিম বাসায় আসলে রোকেয়া ও হাফসা বলে আব্বু, আম্মুর জন্ডিস ধরা পড়েছে । করিম বলে কবে থেকে জন্ডিস ধরা পড়েছে ?
আব্বু আমরা কিছু জানি না । আম্মু কিছুই বলে নি । গতকাল আমরা আম্মুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি এবং ডাক্তার কিছু টেস্ট করেছে । আজ রিপোর্ট ও ঔষুধ নিয়ে এসেছি । করিম শুনে বলে দেখি রোজি তোমার চোখগুলি । ওহ ! তোমার চোখের রং হলুদ । তুমিতো আমাকে একবার ও বলোনি ,রোজি ! রোকেয়া ও হাফসা বলে আম্মু ,আমাদের ও বলে নি । কি ঔষুধ এনেছো ? এই দেখো বলে রোকেয়া এনে ঔষুধ দেখায় । করিম বলে ,”রোজি তুমি কাজ কম করবে এখন থেকে যে পয্যন্ত সম্পূর্ণ ভালো না হও । পর দিন সকালে করিম পকেট থেকে কিছু টাকা রোকেয়ার হাতে দিয়ে বলে ঔষুধ ও পথ্য কিনে আনবে তোমার আম্মুর জন্য । কয়েক দিন যাওয়ার পর ,হাফসা বলে, আপু , আম্মু ঠিক মতো ঔষুধ খায় না এবং নিয়ম মেনে চলে না ।
রোকেয়া বলে আম্মু তুমি যদি ঠিক মতো ঔষুধ না খাও ,আমি ভাইয়াকে চিঠি দেব – সে অনেক রাগ করবে তোমার সঙ্গে । রোকেয়া ও হাফসা বলে ভাইয়া আসুক এবং দেখে যাক । রোজি বলে কোনো দরকার নেই নসুকে বলার, সে অযথা দুঃশ্চিন্তা করবে । আমি ভালো হয়ে যাবো ,তোরা আমার জন্য চিন্তা করিস না ।
রোকেয়া কলেজে গিয়ে নসুকে চিঠি লিখে জানায় যে আম্মুর জন্ডিস হয়েছে এবং তার চিকিৎসা নেয়া হইতেছে ,তুমি আম্মুর জন্য চিন্তা করবে না । রোকেয়া কলেজে থেকে আসার পথে পোস্ট অফিস গিয়ে চিঠি পোস্ট করে দোকানে গিয়ে কিছু টুকি টাকি জিনিস নিয়ে ঘরে ফিরার পথে বাড়িওয়ালার ছেলে দিপুর সঙ্গে দেখা । দিপু বলে রোকেয়া তুমি কোত্থেকে আসতেছো ? রোকেয়া বলে আমি পোস্ট অফিস গিয়ে ভাইয়াকে একটা চিঠি পাঠিয়েছি । দিপু বলে ,শুনলাম আন্টি অসুস্থ । রোকেয়া বলে হু ! আম্মু অনেক দিন থেকে অসুস্থ, ডাক্তার ঔষুধ দিয়েছে এবং আম্মু রীতিমতো ঔষুধ খাওয়া শুরু করেছে । দিপু বলে ,আমি বিকেলে আন্টিকে দেখতে আসবো । রোকেয়া বলে আচ্ছা ঠিক আছে ।
ঝিরি ঝির বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে এবং রোকেয়া জোরে জোরে হাটতেছে ,রোকেয়া স্যান্ডেল হাতে নিয়ে লিবার্টি সিনেমা হালের সামনে এসে মুচিকে দিয়ে সেলাই করে পায়ে দিয়ে আবার হাটতে শুরু করে । কিন্তু বৃষ্টি থেমেছে না ,কাজেই সে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় পৌঁছে । রোজি চুলার কাছে বসে একটা কিছু রান্না করার জন্য চেষ্টা করতেছে । রোকেয়া বলে আম্মু ,তুমি কি করো ?
রোজি বলে আমি রাতের জন্য একটা কিছু রান্না করতে চেষ্টা করতেছি । রোকেয়া বলে আম্মু তুমি বস , সারা জীবন তুমি কাজ করেছো ,এখন না করলে কিছু হবে না । তুমি বস,আমি চা বসিয়ে দেই এই বলে চুলায় চায়ের পানি দিয়ে কাপড় ছাড়তে যায় । হাফসা এখন ও ক্লাস থেকে বাসায় আসে নি । সে কাপড় ছেড়ে বাহিরে চাপা কলে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এসে চা বানিয়ে টোস্ট বিসকুট নিয়ে রোজিকে এক কাপ ও নিজের জন্য এক কাপ নিয়ে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে হাফসার জন্য । কিছুক্ষনের মধ্যে হাফসা ভিজে ভিজে ঘরে ঢুকে এবং রোজি বলে তুই ছাতা নেস নি কেন – বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়বি । সবাই একত্রে অসুস্থ হলে কে কাকে দেখবে ?
হাফসা বলে আম্মু, আমি অসুস্থ হবো না এই বলে সে কাপড় পাল্টিয়ে হাতমুখ ধুয়ে চা নিয়ে বসে এবং রোজিকে জিজ্ঞাসা করে আম্মু তোমার শরীর কেমন? রোকেয়া বলে হাফসা দেখ আম্মু রান্না করতে গেছে । হাফসা বলে আম্মু তোমার রান্না করতে হবে না . রোজি বলে রান্না না করলে তোরা কি খাবি ? আম্মু, আমরা রান্না জানি , তোমার চিন্তা করতে হবে না ।
বিকেলে দিপু রাজগঞ্জ বাজার গিয়ে একটা পাকা পেঁপে ও একটা আনারস নিয়ে রোজিকে দেখতে আসে । রোজি বলে তুমি এত জিনিস কেন আমার জন্য এনেছো ?
দিপু বলে আন্টি তোমার শরীর কেমন ?
রোজি বলে আমি তো ভালোই আছি – রোকেয়া ও হাফসা বলে আমি অসুস্থ । দিপু এই কথা সেই কথা বলে চলে যায় ।
নসু চিঠি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লা চলে আসে এবং আম্মু কে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে বুঝিয়ে বলে,” আম্মু , তুমি কিন্তু নিয়মিতই ঔষুধ খাবে এবং নিয়ম কানুন মেনে চলবে । নতুবা তোমার অনেক অসুবিধা হতে পারে । পর দিন নসু আম্মুকে কুমিল্লা হাসপাতালে নিয়ে চিফ অফ মেডিসিনের ডাক্তারকে দেখিয়ে ঔষুধ কিনে দুই দিন বাসায় থেকে রোকেয়ার হাতে কিছু টাকা দিয়ে ঢাকা চলে যায় । রোজি ঘরের দরজা খুলে নসুর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে ।
রোজি শুয়ে শুয়ে ভাবে এইতো সেদিন আমার বিয়ে হয়েছে । বিয়ের পর বরিশাল থেকে কুমিল্লা এসেছি করিমের এক বন্ধুর পরিচয়ে । থাকার জায়গা নাই ,করিমের বন্ধুর বাসায় থেকেছি দুই মাস- করিম বেকার, অনেক খুঁজে এক দোকানে কাজ পেয়েছে তার পর বস্তির ছোট একটা ঘরে থেকে কোনো রকমে সংসার শুরু করেছি । করিম বাড়িতে গিয়ে বাবার একটু জমি বিক্রি করে কিছু টাকা এনে ছোট্ট একটা দোকানের ব্যবস্থা করে । করিম কিছু দুষ্ট লোকের প্রলোভনে পড়ে জুয়া খেলা ও মোদের নেশায় জড়িয়ে পড়ে । এ দিকে সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে এসেছে , করিমের সে দিকে খেয়াল নাই । অভাবী সংসার ,ছেলে মেয়েদের কোনো কিছুই দিয়ে মানুষ করতে পারিনি । করিম নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মদ খেয়ে জুয়া খেলে অধিক রাতে ঘরে ফিরত । সে কি ব্যাথা ,কত কেঁদেছি ,ছেলে মেয়েরা ছোট এবং দুঃখ করে কান্না কাটি করতো । নসু সংসারের দুরবস্থা দেখে রাগ করে নিরুদ্দেশ । কয়েক বৎসর তার কোনো খবর নাই । কত কি চেষ্টা, দোআ , তদবির আর শেষে একদিন স্বপ্নের মতো নসু এসে উপস্থিত । এত দুঃখের পর কি যে আনন্দ চিন্তা করতে করতে রোজির চোখে পানি এসেছে । আমি আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছি । তবু মনে এটুকু আনন্দ যে ছেলে মেয়েরা দেখতে দেখতে বড়ো হয়েছে, পড়া শুনা করে এবং আমাকে দেখা শুনা করে ।
রোজির শরীরের অবস্থা দিনের পর দিন খারাফের দিকে চলেছে. ডাক্তার বলে রোজির সিভিয়ার জন্ডিস হয়েছে . ৬-৭ মাস ঔষুধ দেয়া হলো ,কিন্তু রোজির অবস্থা কোনোক্রমে উন্নতির দিকে না গিয়ে সে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে । তার সর্বদা পেট ব্যাথা, শরীর রক্ত শূন্য- সাদা হয়ে পড়েছে । ডাক্তার বলেছে রোজি কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যেতে । নসু মায়ের অবস্থা খারাফ দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ করে । হাসপাতালে দুই মাস থাকার পর ডাক্তার রোজির অবস্থার কোনো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে নি । ডাক্তার অনেক ধরণের টেস্ট করেছে ,কিন্তু সবাই বলে তার জন্ডিস হয়েছে । কুমিল্লা থেকে করিম মেয়েদের নিয়ে সপ্তাহে দুই-তিন বার এসে কিছুক্ষন থেকে চলে যায়।
পোস্ট গ্রাজুয়েট হাসপাতাল থেকে ক্যান্সার স্পেশালিস্ট এনে বিভিন্ন টেস্ট করে দেখা গেছে যে রোজির লিভার ক্যান্সার হয়েছে এবং তাকে immediate কিমো দিতে হবে । আর অপেক্ষা না করে রোজিকে কিমো দেয়া শুরু করেছে । আব্দুল গনি ও তার বাবা আব্দুল লতিফ এসে আশ্বাস দেয় যে যত চিকিৎসা খরচ লাগে তারা কিছু বহন করবে । আরও এক মাসের অধিক সময় পার হয়েছে- রোজির চিকিৎসার কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না । লতিফ সাহেব ডাক্তারকে প্রাইভেটলি জিজ্ঞাসা করে যে আমাদের রোগীর কি অবস্থা ?
ডাক্তার, লতিফ সাহেবকে বলে, আমরা চেষ্টার ত্রূটি করছি না । এই রোগীর ক্যান্সার হয়েছে এবং তার রোগের কোনো ভালো চিকিৎসা আমাদের দেশে নাই । রোগীর অবস্থা খুবই খারাফ এবং মৃত্যু সময়ের ব্যাপার মাত্র । আপনারা তার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন । লতিফ সাহেব বলে , এই রোগীর লোকজন কুমিল্লা থেকে আসা যাওয়া অনেক কষ্টকর এবং কুমিল্লা হাসপাতাল পাঠালে কি চিকিৎসা করানো যাবে ? ডাক্তার বলে ওকে এখানে রাখা আর কুমিল্লা পাঠানো এর মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখছি না । ডাক্তার বলে আমরা রিলিজ করে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেব এবং কেস সম্পর্কে রেফারেন্স লেটার দিয়ে পাঠাবো যাতে ওখানে ও চিকিৎসা করানো যায়। লতিফ সাহেব এ নিয়ে নসুর সঙ্গে আলাপ করে এবং নসু বলে , আম্মু কে কুমিল্লা পাঠালে , বাসা থেকে সবাই এসে ডিউটি করতে পারবে । সে মতে লতিফ সাহেব নসুকে নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করিয়ে নেয় । রোজিকে রিলিজ করে দিলে অ্যাম্বুলেন্স করে কুমিল্লা নিয়ে আসে । কুমিল্লা পাসপাতালে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে রোজির চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয় ।
নসু ,রোকেয়া ,হাফসা ও আব্বু করিম ডাক্তারি চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে ফীর,ফকির দোআ,পানি পড়া দিয়ে চেষ্টা করে, কোনো সুফল দেখতে পায় নি । রোজির অবস্থা যতই খারাফ হোক না কেন ,তার কথা বার্তা ,স্বরণ শক্তি সবই সঠিক আছে । সে সবাইকে পূর্বের ন্যায় চিনতে পারে । আছিয়া বেগম হাসপাতাল থেকে এসে রশিদ সাহেবকে বলে রোজিকে চিনতে অনেক কষ্ট হইতেছে। সে মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। মৃত্যুর পূর্বে রোজির বক্তব্য ছিল ” আমার ছেলে মেয়েরা পড়া শুনা করে মানুষ হবে এবং পড়াশুনা শেষ করে তাদের ইচ্ছা অনুসারে বিয়ে ও সংসারী হবে । করিম বলে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে চেষ্টা করবো । মৃত্যুর এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে তার মুখে কোনো খাওয়া দিতে পারে নি । সবই তার মুখ থেকে পড়ে যেত । রোজির মৃত্যুতে সংসারে শোকের ছায়া নেমে আসে ।
রোজির মৃত্যুর পর বাসায় ছোট আকারে কয়েকজন লোক ডেকে আলোচনা ও দোয়ার আয়োজন করা হয় । রোজি তার ঘরের আঙিনায় কয়েকটা ফুলের গাছ লাগিয়ে প্রতিদিন গাছে যত্ন নিতো এবং রোকেয়া ও হাফসা ফুল এনে ঘরে ফুলদানিতে সাজিয়ে রেখে দিতো । মেয়েরা ফুলের গাছের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে আমরা ফুলগুলির দিকে তাকালে আম্মুর ছবি ভেসে উঠে । আম্মু কোনো দিন আমাদের একটা কটু কথা ও জোরে বলতো না । আম্মু প্রতিদিন বাগান থেকে ফুল উঠিয়ে আমাদের টেবিলে সাজিয়ে রাখতো ।
নসু, রোকেয়া ও হাফসাকে নিয়ে বাহিরে এক রেস্টুরেন্টে বসে কিছু খাওয়া সেরে গোমতী নদীর পাড়ে বসে নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং দুই বোনের হাত ধরে বলে আম্মু চলে গেছে বলে আমাদের হাল ছেড়ে দিলে চলবে না । আম্মুর উপদেশ মেনে আমাদের চলতে হবে – তাঁর মৃত্যুতে যে শুন্যতা হয়েছে ,তা থেকে ফিরে দাঁড়াতে হবে। আব্বু যদি বিয়ে করতে চায় , আমাদের কিছুই বলার নাই বরং সব ব্যাপারে সমর্থন দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর আব্বু যদি বলে বিয়ে করবে না ,তা হলে একটা কাজের মেয়ে নিয়ে ঘরের কাজ করতে হবে । তোমাদের আব্বুর দিকে নজর রাখতে হবে এবং ঘরের দিকে ও ।
দাদা লতিফ বলেন ,সবাইকেই মরতে হবে , তোমার আম্মুর মৃত্যু ছিল untimely । তুমি বড়ো ছেলে ,তোমার দুই বোন পড়াশুনা করে। ওদের পড়াশুনা করানো তোমার দায়িত্ব। তুমি মাস্টার ডিগ্রী শেষ পর্বের ছাত্র ,পড়া শুনা শেষ করে যে কোনো চাকুরীতে ঢুকে পড়ো , তোমার বোনদের দেখাশুনার দায়িত্ব নিও। ওরা দুই-তিন বৎসরের মধ্যে পড়াশুনা শেষ করলে চাকুরী এবং মতামত নিয়ে বিয়ে দিয়ে দাও। তোমার আব্বু যদি বিয়ে করতে চায় ,তাকে সহযোগিতা করবে ।
আম্মুর মৃত্যুতে নসুর দায়িত্ব অনেক বেড়েছে ,প্রতি সপ্তাহে সে কুমিল্লা আসে এবং বাবা ও বোনদের সঙ্গ দিয়ে থাকে। বোনদের নিয়ে সপ্তাহে একবার করে কোটবাড়ী বা এখানে ,সেখানে এবং সিনেমা দেখতে যাওয়া , তাছাড়া বোনদের পকেট খরচের জন্য কিছু না কিছু দিয়ে ঢাকা চলে যায় ।
.
করিম দোকান থেকে আসলে রোকেয়া ও হাফসা পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে । করিম মনে করে এ সময় মেয়েদের সঙ্গে বসে গল্প করা এবং তাদের কোনো কিছু দরকার আছে কিনা খোঁজ খবর নেয়া দরকার ।
করিম বলে তোমাদের ফরিদা ফুফু গ্রাম থেকে এসে কয়েকদিনের জন্য থাকতে চায় । রোকেয়া বলে আব্বু আমরা তো ভালোই আছি । তবে ফুফু আসলে কয়েকদিন থেকে বেড়িয়ে যেতে পারে । তিন- চার দিন পর ফরিদা তার নাতি দেলুকে নিয়ে বরিশাল থেকে এসেছে । ফুফু গ্রাম থেকে কিছু পাকা আম রোকেয়া ও হাফসার জন্য এনেছে । বরিশাল থেকে কুমিল্লা আসতে তাদের প্রায় দুই দিন লেগেছে । বরিশাল থেকে ওরা চাঁদপুর এবং সেখান থেকে বাসে কুমিল্লা টমটম ব্রিজ এসে রিক্সা নিয়ে বাসায় এসেছে ।ফুফু এসেছে সাদা রঙের শাড়ি ও চশমা চোখে দিয়ে । ফরিদা দিনের বেলা ঘুমাচ্ছে যেন নাক দিয়ে বাঁশি বাজছে । ফুফু আসার সময় পানের কৌটা ফেলে এসেছে ,এসেই করিমকে বলে আমি পানের কৌটা ভুলে রেখে এসেছি । করিম বলে আমি দোকানে গেলে সব কিছু নিয়ে আসবো । ফরিদা বলে তুমি কখন আসবে ?
আমি সন্ধ্যার পর আসবো । আমি এখন কি খাবো ? তুমি এখন দোকান থেকে আমার জন্য পান ,সাদা, জর্দা, চুন নিয়ে এস তার পর দোকানে যাবে । করিম দোকানে গিয়ে ফরিদার জন্য পান ,সুপারি,সাদা,চুন,খর,জর্দা কিনে দিয়ে দোকানে গিয়েছে যাতে মেয়েদের সঙ্গে ফরিদার কোনো কিছু নিয়ে কথা না হয় । ফরিদা রোকেয়া ও হাফসাকে বলে তোমরা তো ঘর দেখা শুনা করতে পারো । রোকেয়া বলে ফুফু আমরা তো পারি- আম্মুর অসুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুর পর আমরা সবই করে যাচ্ছি । তোমার আব্বু লিখেছে ঘরে রান্নার করার কেউ নাই এবং আমাকে আসতে বলেছে । আমি এই বয়সে রান্না করতে পারি ?
ঠিক আছে ফুফু আপনি যা মনে করেন । ফরিদা রশিদ সাহেবের ঘরে গিয়ে বলে ,এই মেয়েরা সবই করতে পারে , কিন্তু ,কিছুই করে না এবং আমাকে গ্রাম থেকে বাসার কাম করার জন্য এনেছে । আমি কি কাজের লোক যে এদের রান্না করে খাওয়াবো । আছিয়া বলে ওরা পড়াশুনা করে ,যতটুকু পারে কাজ করে । ফরিদা বলে , এরা বিয়ে দিলে পরের বাড়ি গিয়ে কাজ করবে না ?
আছিয়া কিছু না বলে চুপ করে থাকে । ফরিদা করিমকে বলে তুমি মেয়েদের বিয়ে দাও না কেন ?
করিম বলে ,আপা ,সময় হলে দেব । ফরিদা বলে ,কবে তোমার সময় হবে?
করিম বলে আপা তুমি মেয়েদের সামনে এ সব বলবে না । সে বলে- হু !
এ সব শুনে রোকেয়া ও হাফসা চোখের জল ফেলে – বলে ফুফু আপনার কাজ করার দরকার নাই । পরদিন রোকেয়া কলেজে যায় নি । সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার বমি করেছে এবং তার পর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে । তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা । সে বিছানায় শুয়ে আছে । হাফসা ক্লাস থেকে ঘরে এসে বলে আপু তোমার কি হয়েছে- অসময়ে তুমি ঘরে শুয়ে আছো?
সে বলে আমার মাথা ব্যাথা ছিল ,তাই শুয়ে ছিলাম । এখন কি অবস্থা ?
রোকেয়া বলে এখন আমার ব্যাথা নাই । রাতে জোস্নার চাঁদ দেখা দিয়েছে এবং তার আলো ঘরে পড়েছে । হাফসা বলে আপু দেখো কি সুন্দর জোস্নার চাঁদ এবং তার আলো ঘরে এসেছে । চলো একটু বাহিরে যাই আম্মুর ফুলগাছ গুলির কাছে বসে থাকি । রোকেয়া বলে চলো । কি চমৎকার ঠান্ডা বাতাসে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে ।
রোকেয়া বলে আম্মু এখানে অনেক সময় বসে গুন্ গুন্ করে গান গাইতো –“ভোমরা তুই যাসনে সেখানে ,ফুলের বনে মধু নিতে অনেক কাঁটার জ্বালা …” হাফসা এই গানের দুইটি লাইন গাইলো , রোকেয়া বলে তুই সুন্দর গান গাইতে পারিস! চলো অনেক রাত হয়েছে ঘরে যাই । ফুফু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে,রোকেয়া ও হাফসা ঘুমাতে পারে না ।
এরই মধ্যে নসু বেশ গুছিয়ে ফেলেছে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দাদার রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেছে। দাদা লতিফ বলে ,তোমার জায়গা এখানে নয় ,তুমি সারওয়ার্দী কলেজ গিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করবে। আমি ওকে তোমার ব্যাপারে বলেছি। সে তোমাকে দরখাস্তের সঙ্গে সার্টিফিকেটের এটাস্টেড কপি জমা দিতে বলেছে। নসু খুশিতে দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলে ,” দাদা তুমি আমার জীবনকে পাল্টিয়ে দিয়েছো । .” লতিফ সাহেব বলে এটা আমার কর্তব্য এবং তাই চেষ্টা করেছি । তবে তুমি পরিশ্রম না করলে এগুতে পারতে না ।
নসু কাগজ নিয়ে প্রিন্সিপাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে । অনেক সময় বসে থাকার পর নসুর ডাক পড়ে- নসু সালাম দিয়ে বলে আমাকে আব্দুল লতিফ সাহেব পাঠিয়েছেন । প্রিন্সিপাল সাহেব বলে আমি লতিফ সাহেব বলে কাউকে মনে করতে পারছি না । নসু বলে আমি কি আপনার টেলিফোন ব্যবহার করতে পারি এবং লতিফ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে পারি ? হা ,পারো বলে নসুকে টেলিফোন এগিয়ে দিলে নসু বলে দাদা প্রিন্সিপাল সাহেব তোমাকে চিনতে পারছে না । অনেক সময় কথা বলার পর প্রিন্সিপাল সাহেব বলে ওহ ! তোমার নাতি ? তার পর কাগজ দেখে বলে আমি তোমার কাগজ পত্র নিলাম -পরে ডাকবো ।
আব্দুল লতিফ তার নুতন লাল রঙের গাড়িতে করে নসুকে নিয়ে রোকেয়া ও হাফসাকে দেখতে এসেছে । দাদা রোকেয়া ও হাফসার জন্য আকাশি রঙের এক জোড়া শাড়ি ও এক জোড়া স্যান্ডেল এনেছে । তাছাড়া সে আব্দুল করিমের জন্য একটি গরদের পাঞ্জাবি নিতে ও ভুলে নি । লতিফ সাহেব রোকেয়া ও হাফসা কে নিয়ে কোর্টবাড়ি গিয়ে পুরানো দিনের স্মৃতি ও পাহাড় এবং শাল বন দেখে রেস্টুরেন্টে খেয়ে সবাইকে নামিয়ে দিয়ে ঢাকা চলে যায় ।
আব্বুর শরীর ভালো যাচ্ছে না ,কয়েকদিন থেকে সর্দি,কাশি ও জ্বর । নসু বলে আব্বু চলো, তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো । করিম বলে আমার এমন কিছু হয় নি যে তুমি আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে । বিকেলে ফরিদা বলে নসু,আমার চশমা ভাঙা । তুমি আমাকে চশমা কিনে দিও তো । নসু বলে ,আচ্ছা ফুফু । বিকেলে নসু ফুফুর চশমা পাল্টিয়ে দিয়ে করিমকে বলে – আব্বু ফুফুকে আসা যাওয়ার ভাড়া দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দাও । করিম টুক টাক কেনা কাটা করে ফরিদাকে বরিশাল পাঠিয়ে দেয় ।
রশিদের স্ত্রী আছিয়া বেগম একটা কাজের মেয়ে ঠিক করে দিয়ে বলে এ মেয়ে অত্যন্ত বিশ্বস্ত – সে সব কাজ করবে এবং আমরা দেখা শুনা করবো । করিম বলে ৩-৪ দিন সময় দিন আমরা একটু চিন্তা করে জানাবো । আছিয়া মেয়েকে বলে তুমি কয়েকদিন পর আসবে ।
রোকেয়া ও হাফসা ভোর হলে ঘরে নাস্তা তৈরী করে -দুপুরের খাওয়া পাকিয়ে কলেজে যায় এবং দুপুরে করিম এসে রুটিন মাফিক খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে । সন্ধ্যার দিকে করিম দোকান বন্ধ করে বাজার করে ঘরে আসলে মেয়েরা মাছ তরকারি গুছিয়ে রাতে পড়াশুনা করে ঘুমাতে যায় । সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই বোনে রুটি ও সকালের নাস্তা তৈরী করে দুপুরের খাওয়া রেডি করে কলেজে যায় । এই করে রোকেয়া ও হাফসার পড়াশুনা ঠিক মতো হয় না । তাই করিম মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করে জানালে আছিয়া বেগম কাজের মেয়েকে এনে কাজে লাগিয়ে দেয় । কাজের মেয়ে রেখে দেয়াতে বিকেলে রান্না, সকালের নাস্তা, ঘর পরিষ্কার করে কাপড় কাচা ,কাপড় শুকানো ও ঘর গুছানো ঠিক ভাবে হয় ।
নসু,রোকেয়া ও হাফসা বলে ,” আব্বু তুমি বিয়ে করে নাও যাতে সংসার ভালো ভাবে চলে । ” করিম বলে আমি তোমাদের বিয়ে না দিয়ে কোনো কিছু করবো না । রোকেয়া ও হাফসা বলে আব্বু আমরা পড়াশুনা করি এই মুহূর্তে বিয়ে করবো না । তুমি করে নাও তাতে সংসারে একটা স্থিরতা আসবে । আমাদের কথা তুমি এখন বাদ দাও ।
সংসারে কিছুটা স্থিরতা আসাতে মেয়েরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা শুরু করে । নসু ইউনিভার্সিটি থেকে পাস্ করে সরোয়ার্দী কলেজে অধ্যাপনার কাজ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে যোগদান করে । সে যদিও চাকরি করে, এখন পয্যন্ত লতিফ সাহেবের বাসায় থাকে এবং দাদা লতিফ সাহেবকে মেনে চলে । সে মনে করে যে ,দাদা সাহায্য না করলে আমি বা আমার বোনরা পড়াশুনা করতে পারতো না ।
লতিফ সাহেব বলে আমি তোমার উন্নতি দেখে অনেক আনন্দিত এবং আমি জীবনের শেষের দিকে একটা ভালো কাজ করতে পেরেছি বলে শান্তিতে আছি । রোকেয়া ও হাফসা বলে দাদা তুমি যা করলে আমাদের পরিবারের জন্য- জীবনে ও কেউ এ ধরণের কাজ করতো না ।
ক্রমশ: