সেলফোনের পর্দার উপরে অতি ক্ষুদ্র একটি পোকা। দূরন্ত গতিতে ছুটে বেড়াচ্ছে, খেলছে, উড়ে যাচ্ছে আবার ফিরে আসছে। পর্দার সবটা জায়গার দখল নিয়ে ঘুরে ঘুরে নেচে যাচ্ছে অবিরাম। একা!
আমি তার আনন্দের মাত্রা জানি না, আমি তার স্বপ্ন জানি না, আমি তার জীবনের চাওয়া জানি না, আমি জানি না তার কোনো কাছের জন আছে কি-না, জানি না কিছুই আদি-অন্ত!
ওর আনন্দের সাথে আমি ঠিক মিশেও যেতে পারছি না, তবে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি না। আছি নীরব দর্শকে! ইচ্ছে হচ্ছিল আরেকটা ফোন থাকলে অন্য হাতে তার চঞ্চলতার ভিডিও নিতাম। না, সে হয়তো নিশ্চয়ই কোনো সেলিব্রিটি হতে আসেনি। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর সেলিব্রিটি হওয়ার সাধ জাগে কি-না আমার জানা নেই।
মানুষ ছাড়া অন্যকোনো প্রাণীর গল্পও আমাদের তেমন টানে না। এটাই সত্যি! আসলে মানুষ ছাড়া অন্যকোনো প্রাণীর অস্তিত্বও তো আমরা স্বীকার করি ততোটুকুই যতোটা আমাদের ভোগের জন্যে, মনোরঞ্জনের জন্যে কেবল প্রয়োজন। সত্যিটাকে আরেকটু টেনে বললে হয়তো বলতে হয়, পৃথিবীতে আজ উপরের দিকের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের কিছু মানুষ আছে যারা অন্য মানুষদের অস্তিত্বও ঠিক তেমন ভাবেই স্বীকার করে। তাদের অধিকারকে ঠিক ততটুকুই মেনে নেয় যতটুকু তাদের নিজেদের সুবিধার জন্যে প্রয়োজন! এমনই যখন অবস্থা, সেখানে এই মহা মহাকালের বুকে সম্পূর্ণ তাৎপর্যহীন কয়েকটি মুহুর্তে অতি ক্ষুদ্র এক পোকার আনন্দ-বেদনাকে নিয়ে কিছু ভাবলে, তাকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে কে শুনবে, কে পড়বে!? বরং জোয়ারের স্রোতের মতো ভেসে আসতে পারে ‘উন্মাদ’ আখ্যা!
আমাদের সময়টা তো এখন শুধু তুমি-আমি, কে কার সাথে পরকীয়া করলো, কে কার ঘর ভাঙলো, কে কার কতোটুকুন জমি জবর দখলে নিলো, কোথায় কয়টা বোমা পড়লো… এইসব গল্প নিয়েই বিভোর থাকার! আমাদের মস্তিষ্কের উর্বর ভূমিতে এখন এইসব বিষয় বীজের ডালা-পালাগুলো খুব সানন্দে বাড়ে! এ সব জেনেশুনেও কেন জানি ইচ্ছেটাকে মুমূর্ষুরতার ক্যানভাসে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলাম!
তবে এও সত্যি, একটু পরে নিশ্চয়ই আমিও ভুলে যাবো পৃথিবীতে এমন একটি জীবনের অস্তিত্ব আছে কিংবা ছিলো যে আমারই হাতে ধরা সেলফোনের পর্দাকে তার আনন্দের পৃথিবী বানিয়েছিলো! কোনোদিনই আর ভাববো না কতক্ষণ বা ক’দিন ছিলো তার জীবনানন্দের আয়ু? ভাববো না শেষ বিদায়ের সময় তার মনেও কি কোনো আক্ষেপ ছিলো? তার আত্মাও কী কোনো অবিনাশীদের মিছিলে শামিল হ’লো? ভাববো না কিছুই। কারণ আমিও তো সেই…!
সৌম্য প্রকৃতির সৌম্য সকাল। গীর্জার চ্যাপেল থেকে ভেসে আসছে অর্গানের সুর। মন কেমন করা! কিছুটা বিষণ্ণতা! এক নবজাতকের মতো পবিত্রতা ছুঁয়ে যাচ্ছে হৃদয়ের মিহি বাতাস! বাইরের পার্কিং লটে বসে আমি কারোর একাগ্র চিত্তকে পড়ছি, শুনছি, ধারণ করছি! আমাদের হৃদয়ের সুবাসিত শুভ্রতাগুলো কেন কখনো খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় না!?
#পোকা
(নক্ষত্রহীন রাতের আকাশ’ এর একটি উপস্থাপন / A presentation from ‘Starless Night Sky’)
______ ফরিদ / মে ৫, ২০২৪