চাকুরীতে জয়েন করে ডিএমডি স্যারের সাথে কথা বলছিল শামা । আসলে সে ডিএমডি স্যারের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল। অফিস সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জেনে নিচ্ছিলো তার কাজের অংশ হিসাবে। তখনই বাইরে অপেক্ষা করছিল বেশ লম্বা করে এক ভদ্রলোক বেশ হাসি হাসি মুখে। লোকটাকে বাইরে এতোক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শামার খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো । কিন্তু ডিএমডি স্যার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে শামার কথা শুনছিলেন মনোযোগ দিয়ে। শামার কথা শেষ হলে তিনি হাত উঁচু করে ডাকলেন “ আসেন রাসেল সাহেব। পরিচয় করিয়ে দেই। ইনি শামা রহমান। আজ থেকে কাজ করবেন অডিট ম্যানেজার হিসাবে। আর ওয়ার্কার ওয়েল ফেয়ারটাও উনি দেখবেন। আপনার কাজের সাথে খুব একটা মিল না থাকলেও মাঝে মাঝে আপনাদের একে অপরের ইনফরমেশন অনেক কাজে লাগবে। আফটার অল আপনি লেবার ল টা দেখছেন। আপনি তো একটু ফ্রি আছেন, তাই না? রাসেল সাহেব হাসি মুখেই বললেন
“ জ্বি স্যার!” ডিএমডি স্যার বললেন, “ আপনি তাহলে শামাকে সব ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গিয়ে একটু পরিচয় করিয়ে দিন। যাতে সে দ্রুত তার কাজগুলো বুঝে নিতে পারে।” স্যারের কথা শুনে শামা উঠে দাঁড়ায়। রাসেল সাহেব বললেন “আসুন ম্যাডাম আমার সাথে। এই কর্পোরেট অফিসটা বার তলা বিশিষ্ট। সেখানে অনেক অনেক ডিপার্টমেন্ট। অনেক অনেক লোকজন। এধরনের অফিসে কাজ করে অভ্যস্ত শামা। মানুষজনের সাথে কথা বলতে তার ভাল লাগে। তাই রাসেল সাহেব যখন পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তার খুব সমস্যা হয়নি নিজেকে তুলে ধরতে। আর সবাই তার কাজে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন তা বুঝিয়ে দিতে। দুপুর পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে শামার সাথে সাথে রাসেল সাহেবও খুব ক্লান্ত ছিলেন। লাঞ্চ ব্রেকের সময়ে বললেন “ ম্যাডাম অনেক তো ঘুরা হলো চলেন আপনাকে রুমে পৌঁছে আমি লাঞ্চ করবো।’’ শামা রাসেল সাহেবের কথার ধরনে হেসে ফেলে বলেন “সরি আমার জন্য আপনি অনেক কষ্ট করছেন । আপনি লাঞ্চ ব্রেকে যান। আমি রুমে যেতে পারবো।’’ রাসেল সাহেব মজা করে বললেন “ আমি তো আপনার প্রতিবেশি। একই ফ্লোরেই আপনার আর আমার ডিপার্টমেন্ট। তাই একসাথে গেলেও খুব সমস্যা নেই।” শামা খুব ছোট করে বলে “ও আচ্ছা।” এভাবেই এই অফিসে কাজের পাশাপাশি মানুষগুলোর সাথে পরিচয় শামার। তার কাজের পরিধিটা একটু ব্যাপক। এজন্য শামা কখনোই খুব একটা ফ্রি টাইম কাটাতে পারে না। তার রুমেও দেখা যায় কোন না কোন এডমিন অফিসার আছেন তাদের কাজের প্রয়োজনীয় আলোচনা নিয়ে। রাসেল সাহেবের কাজের চাপ তেমন থাকে না। সপ্তাহে একটা দুইটা কাজ থাকে। যেখানে কোর্ট আর অফিসের ঝামেলা থাকে। রাসেল সাহেবের এমন ঝিমানো কাজ খুব একটা ভাল লাগে না। তিনি খুব বন্ধু বৎসল মানুষ। তার ভাল লাগে হৈ হৈ করে সবার সাথে আড্ডা দিতে । কবিতা, গল্প লিখতে। ঘুরে বেড়াতে। দেখা যায় তিনি দুই তিন মাস পর পরই ছুটি নিয়ে চলে যান বন্ধুদের সাথে চিটাগাং, রাঙ্গামাটি, ভারত। মাঝে মাঝে শামার রুমে আসেন। এসেই পিয়নকে চা দিতে বলেন। তারপর বলেন, “ম্যাডাম এত কাজ করে কি করবেন? একটু আসে পাশে তাকিয়ে দেখেন কত মানুষ কাজে ফাঁকি দিচ্ছে! ম্যাডাম আপনি বরং আমার একটা কবিতা দেখে দেন। শামা হাসতে হাসতে তার কবিতা দেখে। দু একটা শব্দ এদিক সেদিক করে দেয়। অনেক সময় কিছুটা রিল্যাক্স টাইমে অন্য অফিসারদের সাথে রাসেল সাহেব তার ভ্রমণের সময়ের বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কাহিনী খুব জমিয়ে গল্প করেন। শামার সাথে তার চমৎকার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সহকর্মীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শামা বুঝতে পারে রাসেল সাহেব তাকে খুব পছন্দ করেন। সেটা তিনি তার কেয়ারিং মনোভাব দিয়েই বুঝিয়ে দেন। শামার প্রতিটি পদক্ষেপ তার নখদর্পণে। রাসেল সাহেবের উচ্ছ্বাস, ছেলেমানুষি তার ভাল লাগে । কিন্তু শামা তার শালীনতা আর ভদ্রব্যবহারের মাধ্যমে নিজের চারপাশে একটা দেয়াল তৈরি করে রাখে। যে দেয়ালটা চাইলেই কেউ ভেদ করতে পারে না। শামা যেন নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞা করে বসেছে কারো প্রেমে না পড়ার। এমনই ভাবে দিন পার হচ্ছিল ভাল লাগা আর ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে। সেদিন একটু সকালেই শামা অফিসে আসে কিছু কাজ হাতে নিয়ে। নিজের ডেস্কে বসেই অডিট রিপোর্ট দেখছিল খুব মনোযোগ দিয়ে। খুব নিঃশব্দে কখন রাসেল সাহেব তার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন সে টের পায়নি। রাসেল সাহেব তার হাতে একটা গিফটের প্যাকেট হাতে দিয়ে বলেন, “ম্যাডাম আমাকে তো পাত্তা দেন না। দেখেন গিফটটা পছন্দ হয় কিনা!” শামা ধীরে ধীরে প্যাকেট খুলে দেখে একটা চমৎকার প্রচ্ছদের কবিতার বই রাসেল শাহরিয়ারের লেখা। সে আস্তে আস্তে উল্টাতে থাকে বইয়ের পাতা । উৎসর্গে এসে তার চোখ আটকে যায় । যেখানে লেখা “ আমার সেই প্রিয় মানুষটিকে যাকে এখনো বলতে পারিনি ভালবাসি অনেক অনেক ।” রাসেল সাহেব একটি গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলেন “গোলাপটা কি নেয়া যায় এখন?” শামা হেসে ফেলে হাতটা বাড়িয়ে দেয়।