নিচের খবরে দেখা যাচ্ছে মানুষ কোরোনার ভয়ে দলে দলে গোমূত্র পান করছে। বিষয়টি হাস্যকর, ব্যাঙ্গাত্মক বা তুচ্ছ মনে হলেও একটু ভালো করে চিন্তা করলে দেখা যাবে এটি আসলে দুঃখ্যের বিষয়। কারণ এই একবিংশ শতাব্দীতে বসেও আমরা কতটা অজ্ঞ এবং পিছিয়ে আছি। শুধুমাত্র স্বাক্ষর জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষকে শিক্ষিত করা বা শিক্ষিত বলা যায় না। আর অজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়ও থাকে অনেক বেশি। তখন মানুষ মরণের ভয়ে এমন ভীত থাকে যে, ওই ডুবন্ত মানুষের মতো যা পায় তাই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। এক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। আমরা এই যুগে যেখানে মঙ্গলগ্রহে যন্ত্র পাঠাচ্ছি এবং পৃথিবী থেকে সেটা নিয়ন্ত্রণ করছি, সেখানে এই পৃথিবীরই বিপুল সংখক মানুষকে এখনো তাদের মন-মানষিকতার উন্নয়ন বা সত্যিকারের তথ্যবহুল বা শিক্ষিত করতে পারি নাই। তা না হলে, মির্ত্যুভয়ে স্বপ্নে/খোয়াবে পাওয়া গাছগাছড়া, ডেটল পান, গো মূত্র পান ইত্যাদি জিনিস মানুষ করতো না। এগুলি আধুনিক যুগে আমাদের ব্যার্থতা, বিশেষ করে আমাদের পাবলিক হেলথের সাধারণ মানুষকে স্বাস্থসচেতন করতে অনেক ব্যার্থ।

দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর আগে আমার এক প্রয়াত বোনের কোনো এক সমস্যার কারণে আমার মাকে এক কবিরাজ বলেছিলো যদি আমার বোনকে শিয়ালের লিভার বা কলিজা খাওয়ানো যায় তাহলে তার সমস্যা কেটে যাবে। অবশ্যই শিয়ালের কেন, গরু ছাগলের কলিজাতেও অনেক আয়রন থাকে, সেটি আমাদের উপকারে আসতেও পারে, কিন্তু ওই কবিরাজ তার স্বপ্নে পাওয়া দাওয়াই কোনো পুষ্টিগত গুনের বিচারে খেতে বলেননি, যেমনটি কি না গোমূত্র পানও মানুষ সেটি জেনে করছে না। অবকাঠামোগত, প্রযুক্তিগত, আধুনিক সমরাস্ত্র ইত্যাদি অনেক বিষয় অনেক অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রে আমরা বেশ পিছিয়ে। ডাক্তার বা মেডিসিন সমন্ধে কিছুটা জ্ঞান থাকলে Placebo শব্দটি নিশ্চয় জানবেন। একটি ওষুধের ক্ষতিকারক কিছু না থাকলে অনেক সময় অনেক রুগীকে দেওয়া হয় বিশেষ করে তার মানসিক প্রশান্তির জন্য, যদিও তার কোনো physiological effect থাকে না। হয়তোবা গোমূত্রে কারো কারো এই Placebo effectএ কাজ হতেও পারে কিন্তু সেটি কখনো একটি প্র্যাক্টিস হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার উপর কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা না হয়।

এবার শিরোনামের কথায় আসি। হা, আপনি আপনার মূত্র পান করতে পারেন। এটি পরীক্ষিত, তবে কিভাবে ! আপনারা অনেকেই জানেন যে আমাদের মহাকাশে যে International Space স্টেশন আছে সেটি বলতে গেলে মানুষের তৈরি ছোট আর একটি পৃথিবী। ওখানে বেশ কয়েকবছর ধরে আমেরিকা, কানাডা, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি দেশের কিছুসংখ্যক বিজ্ঞানী ৫/৬ মাস ধরে এক নাগাড়ে বাস করে যাচ্ছেন আর বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন। প্রতিটি জিনিসের ব্যবহার ওখানে খুব হিসাব করে করা হয়, কারণ মাত্র ৫/৬ মাস পরে ওখানে পৃথিবী থেকে একটি ক্যাপসুলের মধ্যে করে ওদের বাজার পাঠানো হয়। এবং ওখানে recycle বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। যেমন ধরুন নভোচারীরা তাদের দাঁত মাজার পরে পেস্ট এবং সাথে যে লালা বা থুতু জমে সেগুলি গিলে খেয়ে ফেলেন। আবার ওরা যে মূত্র ত্যাগ করে, সেটিও recycle করে পানি হিসাবে পান করেন। তবে শুধু রাশিয়ান নভোচারীরা এটা করেন। এক্ষেত্রে জিনিসটি recycle এবং পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এটি মানবদেহে কোনো ক্ষতি করবে না। তবে গরু ছাগল বা অন্য কোনো প্রাণীর মূত্রে মানুষের কতটা ক্ষতি বা উপকার সেটি না জেনে গুরুর বাণী বা কবিরাজের কথা শুনে দলে দলে পান করাটা জনস্বাস্থ্যের জন্য কতখানি ঝুঁকির ব্যাপার সে ব্যাপারে প্রশ্ন থাকে। এ বিষয়ে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত সত্যজিত রায়ের গণশত্রূ ছবির কথা মনে পড়ে। ৩০ বছর আগের কথা, কিন্তু অনেক মানুষের মনমানসিকতা সেই ৩০ বছর আগের মতোই রায়ে গেছে।

যাহোক, আমি বিষয়টি তুলে ধরলাম এই কারণে যে, অন্য কারো আশায় বসে না থেকে আমরা যেন নিজেই নিজের থেকে সচেতন হয়, নিজেদের মধ্যে যদি কেউ থাকে তাকে সচেতন করি, সঠিক তথ্য দিয়ে তাদের মনের ভয়কে দূর করি। অজানা বা অজ্ঞ থাকলে ভয় বেশি হয়। যেমন ধরুন আমি আপনাকে অজানা একটি জায়গায় অন্ধকারে নিয়ে গেলে আপনার পা ফেলতে একটু ভয় বা শঙ্কা কাজ করবে যদিও সেখানে কিছু না থাকে, কিন্তু একই জায়গায় যদি দিনের আলোয় নিয়ে যাই তাহলে আপনি নির্ধিধায় পা ফেলবেন, কারণ আপনি সব দেখতে পারছেন এবং জায়গাটি সমন্ধে জ্ঞাত। আসুন আমরা যে কোনো বিষয় যতদূর সম্ভব জ্ঞাত হই, নিজে না জানলে কোনো কারো সাহায্য নিয়ে authentic জিনিসটাকে জানি এবং অহেতুক ভয় থেকে নিজেকে রক্ষা করি।
আর একটি অনুরোধ, লেখাটিকে কেউ ধর্মীয়, জাতিগত, গোষ্ঠীগত রাজনৈতিক দিকে ধাবিত করবেন না, এবং সেই জাতীয় কমেন্ট থেকে বিরত থাকুন। ধন্যবাদ। দলে দলে গোমূত্র পানের বিষয়টি দেখতে/জানতে আনন্দ টিভির খবরের নিচের ভিডিও ক্লিপটি দেখুন। এই খবর ছাড়াও বিষয়টি আমি দেশের পরিচিত জনের কাছে শুনেছি।

সবাই ভালো থাকবেন।
মুকুল

অবশেষে পাওয়া গেলো করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক,একমাত্র গোমুত্রই পারে এর থেকে বাঁচাতে ;???? জয় শ্রী রাম ????

Posted by Md Sakib Salim on Monday, March 16, 2020

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন