ওনেকদিন পরে অল্প সময়ের জন্য হলেও বাংলাদেশের সত্যিকারের স্বাদটা উপভোগ করলাম গত কাল সন্ধ্যায়। “দ্যা টেস্ট অফ বাংলাদেশ” এর আয়োজনটা ছিল একটা দেশি আমেজে ভরা অনুষ্ঠান। রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ যখন অনুষ্টান স্থান ছাড়লাম তখনো চলছিলো জেমসের গান। পরের দিন সকালে কাজের তাড়া ছিল, অনিচ্ছা সত্ত্বেও আসতে হলো ।
বাসায় ফেরার পরেও মেলার আমেজটা তখনো ছিল। কিন্তু ফেসবুক খুলতেই সবকিছু কেমন যেন একটু বিস্বাদ মানে হলো। অনেকদিন পরে একটা সুন্দর আয়োজন থাকে ফিরলাম , সেই আমেজটাই কপ্পুরের মতো হওয়ায় হারিয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। তেমন কিছুই না মাত্র দুজন ব্যাক্তির ফেসবুক আলোচনায় সব আনন্দটুকুতে জল ঢেলে দিলো। তখনো হয়তো মেলা চলছে আর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে সমালোচনা।
প্রথম ব্যাক্তির সমালোচনার বিষয় – গার্বেজ বিন। আমি নিজে অবশ্য সেটা দেখে এসেছি। উপচে পড়ার কারণে সাধারণ পাবলিক বিনের আশে পাশে আবর্জনাটা রেখে এসেছেন। কারণ বাড়তি গার্বেজ রাখার বাড়তি কোনো ব্যাবস্তা ছিল না। এটা অনিস্বীকার্য যে এটার প্রয়োজনীতা সম্বন্ধে আয়োজক বৃন্দ আগেভাগে সতর্ক হননি।প্রথম বারের মতো এতবড় একটা আয়োজনে এই ধরণের ভুল হওয়া কোনো বড় রকমের অপরাধ নয়। কিন্তু সমালোচনায় আমরা খড়গ হস্ত , যেখানে ক্ষমার কোনো জায়গা নাই। উনি এক হাত নিতে ছাড়লেন না। এমনকি সেটাকে প্রচারণার জন্য একটি ছবিও প্রকাশ করলেন। উক্ত ভদ্রলোকের কাছে আমার প্রশ্ন:মেলাতে তো অনেক সুন্দর আয়োজন দেখলেন তার মধ্যে কি প্রশংসা করার কিছুই ছিল না ? একটা ভালো জিনিষকে ভালো বলতে এত কার্পণ্য কেন ? পুরো পরিবার নিয়ে অনন্দ করতে তো কোনো কার্পণ্য করলেন না সেখানে।
দ্বিতীয় ব্যাক্তি – উনি প্রথমজনের চাইতেও দশ হাত এগিয়ে। পাশাপাশি দুটি ছবি ছাপলেন তিনি। একটা ঢাকার একটা নর্মাদ আর দ্বিতীয়টি কালকের মেলার সেই উপচে পড়া গার্বেজ বিনটা। উনি লিখছেন “দেশে হোক আর বিদেশে হোক আমরা নিচু জাতি ” ওনার নামটা উল্লেখ করে আমি ওনাকে সবার কাছে ছোট করতে চাই না। কারণ উনি নিজেই নিজেকে “নিচু জাতি” বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই নিচুর নিচে আর নিচু করার কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা। তবে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আপনি ” নিচু জাত।” বলে নিজেকে স্বীকার করলোও অন্যকেও গালি দেবার কোনো অধীকার আপনার নাই। আপনি দেশ ও জাতির কর্ণধার নন !!! আপনি নিজেও সেই “নিচু জাতের” অনুষ্ঠানের সারা সন্ধ্যা স্বপরিবারে কাটিয়ে এসেছেন কিন্তু।
সর্বপরি যে বিষয়টা আমার কাছে আশ্চর্যের মনে হয়েছে , তা হচ্ছে এই দুই ব্যাক্তিই টরন্টোর একটা বড় ধরণের ফেসবুক গ্রূপে এই পোস্ট দুটি দিয়েছেন। আমার জানামতে গ্রূপের প্রতিটি পোস্ট অ্যাডমিন দ্বারা অনুমোদিত। জানিনা নিজের দেশ সম্পর্কে এই ধরণের নেতিবাচক বিষয় গুলিকে কেমন করে অনুমোদন দেয়া হয়। এমনকি পোস্টার পরে অনেকেই সম্ভবত ওই ফেসবুক গ্রূপের সদস্য কমেন্টস বক্সে লিখেছেন “এই আয়োজকদের আয়োজন করার যোগ্যতা নাই , শুধু মাত্র আমাদের গ্রুপের লোকেরাই পারে এই ধরনের অনুষ্টান আয়োজন করতে ” । এটাতো অত্যান্ত খুশির খবর যে আপনাদের সেই যোগ্যতা আছে। আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে আপনাদের সুন্দর আয়োজনও উপভোগ করবো। কিন্তু এই কাজটিতো অন্যের গায়ে কাঁদা না ছিটিয়েও করা যায়। আসুন না অন্তত একবার হলেও সুন্দর কে সুন্দর বলতে শিখি।
ভালো থাকুন , শুভ রাত্রি।