( এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে নিহত ভাইবোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে)

সকালের সূর্য ঝলমলিয়ে উঠার আগেই তারা প্রস্তুত হয়েছিল অফিসের উদ্দেশে । কেউ বাসে, কেউ সিএনজিতে আবার কেউ কেউ নিজের গাড়ীতে। অফিসে যাওয়ার পথে কেউ বা নামিয়ে দিয়েছিল আদরের সোনামনিকে স্কুলের গেটে অফিস শেষে তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। “কেউ হয়তো অসুস্থ বাবার দিকে তাকিয়ে মাকে বলেছিল বাবাকে এই ওষুধ টা খাইয়ে দিও  মনে করে।” অথবা প্রিয়তমা স্ত্রী দুপুরের লান্চ বক্সটা দিতে দিতে হয়তো বলেছিল ” দুপুরে খাবারটা খেয়ো কিন্তু, আমি কষ্ট করে রেধেছি।” কেউ হয়তো ঘর থেকে বের হবার আগে ছোট ভাই টিকে বলেছিলেন “পরীক্ষারতো আর বেশী দেরী নেই। ফাঁকি দিস না যেন।” আজ পরিজনের কাছে সেদিনটি শুধুই স্মৃতি। বুকের মধ্যে কালো ধোঁয়ার মত মুচড়ে বেরিয়ে আসতে চায় । চলে গেছে মাকসুদ, তমাল, মৌলি, বৃষ্টি, তুষার, রুমকি, মিজান  আরো নাম না জানা অনেকে। দূরে বহু দূরে।তাদের চিৎকারে ভারী হয়েছে আকাশ বাতাস। অনেকে ছাদে উঠতে সমর্থ হয়েছে। অনেকে জানালা দিয়ে নীচে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রান হারিয়েছে। দুপুরের খা খা রৌদ্রে সে দৃশ্য দেখেছে সবাই। ২২ তলা ভবনের মধ্যে আটকে পড়া মানুষগুলো বের হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করার পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রিয়জনের সাথে । বলেছে  মাফ করে দিও। দমকল বাহিনী ঠিক মত কাজ করতে পারেনি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা সুউচ্চ ভবনের কারনে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করেছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু কারো কিছু করার ছিল না সেই পঁচিশ টি তাজা প্রান চলে যাওয়া দেখা ছাড়া। আগুনের লেলিহান শিখা শুধু অশিক্ষিত গারমেন্টস শ্রমিকদেরই চিনে না। তাতেে দগ্ধ হয় সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অভিজাত অফিসে কর্মরত প্রতিষ্ঠিিত ভাইবোনরাও।

মানুষের জীবন কত সংক্ষিপ্ত ! মৃত্যু আমাদের কত কাছের !সেই হতভাগ্য ভাই বোনেরা আর ফিরে আসবে না কোনদিন প্রিয়জনের কাছে। তাদের হাসি আনন্দগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের সাথে সাথেই।  কিন্তু তারা রয়ে যাবে প্রিয়জনের মতো আমাদের মনের গভীরে। বুকের মধ্যে জমানো কালো ধোঁয়া হয়ে।


আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন