প্রিন্টের লুঙ্গির কথা মনে আছে? ছোট বেলায় বাবার কাছে বায়না ধরলাম একটা প্রিন্টের লুঙ্গি কিনে দিতে। বাবা কিনে দিলেন। বাটিক লুঙ্গি। বেঁদে ছেলেরা সাধারণত যে ধরণের লুঙ্গি পরত, সে রকম। নতুন লুঙ্গি পরে বাবার সাথে বাসার সামনে আসলাম। তখন মনে হলো আমাদের স্কুলের হেড মাস্টার যদি দেখেন আমি এ ধরনের একটা লুঙ্গি পরেছি, তবে খবর আছে। স্যার এ ধরনের বিষয়ে খুউব কঠোর ছিলেন। কার চুল কত বড়, কে কী রঙের কাপড় পরেছে, নখ বড় কি না ইত্যাদি। ঠিক সেই মুহুর্তে হেড মাস্টার বাপ-বেটার সামনে হাজির। বাবার আড়াল থেকে স্যারকে সালাম দিলাম। কিন্তু স্যারের নজর আমার লুঙ্গির দিকে। স্যারের জিজ্ঞাসা, জাকির এ লুঙ্গি কে কিনে দিয়েছে? আমি কিছু বলার আগে বাবা উত্তর দিলেন।
আরেক দিনের ঘটনা। কুমিল্লা শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠলাম। বাসটি যখন কংশনগর পার হলো তখন আমার একটি কথা মনে হলো। এখন যদি বাসের ড্রাইভার হঠাত করে ব্রেক ধরেন তবে আমার মাথা সামনের সীটে গিয়ে লাগবে।সজোরে ব্রেক ধরলেন ড্রাইভার। আমার মাথা সামনের সীটে গিয়ে আঘাত করল। কপাল ফুলে গেল। প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম।
সেদিনের ঘটনা। এক বন্ধুর বাসায় গেলাম। তাঁকে পাওয়ার পর মনে হলো আমার গাড়িটা তাঁকে একটু দেখানো দরকার। সে আমার চেয়ে গাড়ি বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখে। গাড়ির চাকায় হাওয়া দেয়া দরকার কিনা তার কাছ থেকে পরামর্শ নিব। আবার মনে হলো যদি কোন কারণে চাকার হাওয়া পরীক্ষা করতে গিয়ে, চাকার হাওয়া চলে যায়। আমি বাসায় না ফিরতে পারি। মাথার এসব অলুক্ষণে চিন্তা বাদ দিলাম। তাঁর বাসা থেকে বের হলাম। তাঁকে গাড়ির চাকাগুলো দেখে দেয়ার অনুরোধ করলাম। সে তাঁর গাড়ি থেকে মেশিন পত্র নিয়ে আসল। প্রথম চাকা দেখল। দ্বিতীয়, তৃতীয় চাকা দেখল। চতুর্থ চাকা থেকে প্রেশার মাপার ডিজিটাল ডিভাইসটি বের করার পর হাওয়া বের হতে লাগল। অনেক চেষ্টা করেও চাকা থেকে বাতাস বের হওয়া বন্ধ করতে পারল না। আমাকে তাড়াতাড়ি তাঁর টায়ার ইনফ্লেটরটি এনে দিল। যদি রাস্তায় প্রয়োজন হয়। অনেক দুঃখ প্রকাশ করল। রাত বেশি হয়াতে ওয়ার্কশপে নেয়ার সুযোগ ছিল না। তাই বার বার পরামর্শ দিল যাতে পরদিন আমি অবশ্যই একজন মেকানিক দেখাই। বাসায় ফিরে গ্যারেজে গাড়ি রেখে নিশ্চিন্ত হলাম। বাসায় চলে এসেছি। এবার টায়ারটি আমি চেক করতে লাগলাম। হ্যাঁ বাতাস বের হচ্ছে। চাবি দিয়ে খোঁচা দিলাম। সব ঠিক হয়ে গেল।
করোনা ভাইরাসের আক্রমণ টরন্টোতে তখনো সেরকম নয়। তারপরও আমি বাসায়। একটা প্রফেশনাল পরীক্ষা দেয়ার জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। পড়া-শুনা করছি। রাতে এক দুঃস্বপ্ন দেখলাম। সকাল বেলা বউকে সেই স্বপ্নের কথা বললাম। আমার চিকেন পক্স হয়েছে। খুউব খারাপ অবস্থা। মার্চের ১৭ তারিখ পরীক্ষা দিতে পারি নি। স্বপ্ন দেখার দু’দিন পর পরীক্ষা বিষয়ক ঘোষণা আসল। মার্চ ১৭, ২০২০ তারিখের পরীক্ষা বাতিল।
যেরকম ভাবি, সবসময় তা সত্যি হয় না। তবে অনেক সময় হয়ে যায়। হয়ত এসব কাকতালীয়।