কাপুরুষরাই আত্মহত্যা করে। এরকম একটি প্রবাদ আছে… প্রবাদের সাথে আমি একমত। তবে ভিন্ন ঘটনাও আছে।পৃথিবীর অন্যতম সাহসী বীর হিটলারও আত্মহত্যা করেছিলেন। সেটা কাপুরুষতার না ; মর্যাদা রক্ষা !!আত্মহত্যার প্রবণতা আব্রাহাম লিঙ্কনের ভেতরেও ছিল।
অনেক নোবেল জয়ী সাহিত্যিক , অনেক বিজ্ঞানী সফল ভাবে আত্মহত্যা করে মারা গেছেন। ডিপ্রেশনে ভুগলে আমরা যাদের কাছে পরামর্শের জন্য যাই তারাও ডিপ্রেশনে ভুগে… পৃথিবীতে অনেক বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট আছে যারা এক সময় চরম ডিপ্রেশনে শেষ পর্যন্ত সুইসাইড করেছে।
সামান্য কারণে রেগে যাওয়া , বিষণ্ণতায় চলে যাওয়ার মত হাস্যকর ব্যাপার গুলো বিজ্ঞানী নিউটনের ভেতরেও ছিল।
আমার খুব পছন্দের লেখক অরিন্দম চক্রবর্তী একটি বইতে লিখেছেন ; ”কেউই শখ করে মরে না ; সবই বাধ্যতামূলক আত্মহত্যা৷”
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই যে আমি মাঝে মাঝে এসব নিয়ে লিখি , মানুষকে আশাবাদের কথা বলি… এতে কী সত্যিই কোন কাজ হয় ?
আজ সকালে যার মা মারা গেছে তাকে গিয়ে যদি বলা হয় , প্রত্যেক প্রাণীকেই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।কাঁদার কিছু নেই…
এতে কী তার কান্না থামবে ?
অনেক বছরের চেনা মানুষ যাকে রেখে চলে গেছে তাকে যদি আমি সোলমেটের কথা বলি তাতে কী সে শান্ত হবে ?
একদল মানুষ নিজেরাই কষ্ট তৈরি করে এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি পৃথিবীতে একদল মানুষের জন্মই হয়েছে কষ্ট পাবার জন্য।কেউ যখন বলবে তার মন খারাপ তখন তাকে বক্তিতা দেবার চেষ্টা করবেন না। সে আপনার কাছে জ্ঞান নেবার জন্য আসে নি…
জ্ঞানের দরকার হলে সে বই কিনে পড়ত।
আপনি তাকে মন খারাপ না হবার যে তথ্য জ্ঞান দিচ্ছেন ; এই তথ্য জ্ঞান আপনি নিজে জানার পরেও কী মাঝে মাঝে আপনার মন খারাপ হয় না ??
মানুষের মন জয় করতে চান ? তাহলে বলুন কম , শুনুন বেশি।
সে যদি একবার টের পায় আপনি তার কথা শুনছেন, আগ্রহ নিয়ে শুনছেন তাহলে এক সময় তার সব কথা আপনাকে বলা এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হবে। আপনাকে ছাড়া তার চলবে না…বিষণ্ণতা রোগের সব থেকে বড় প্রেসক্রিপশন হল – মন দিয়ে তার কথা শুনুন।
আপনার চারপাশে অনেক মানুষকে দেখবেন সুইসাইড করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। আপনি এদের ‘কাপুরুষ’ আক্ষা দেবার মানে হল , তার আরেকবার সুইসাইড করার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলা…
সান্ত্বনা না , উপদেশ না , অনুরোধ না- সে শুধু নিশ্চিত হতে চায় আপনি তার পাশে আছেন। এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, ধৈর্য নিয়ে স্বার্থহীন কথা শোনার কোন মানুষ নেই।
***নীলিকা নীলাচল ***
চমত্কার লেখা. আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত. পান্ডিত্ব না দেখিয়ে ধৈর্য নিয়ে কথা শুনলে আস্থা অর্জন অনেক সহজ হয়. একবার এই আস্থা অর্জন করতে পারলে, সময় লাগলেও অনেক কঠিন লক্ষে পৌছানো ও অসম্ভব কিছু নয়. আমার নিজের অভিজ্ঞতা সেরকমই. একসময় Centre for Addiction & Mental Health এ Telephone Support Line Volunteer হিসেবে কাজ করতাম. তখন কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়েছে যে মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য আসলেই active listening এর কোন বিকল্প নেই. অনেক, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে.
লেখাটা চমৎকার, একটা ছোটো বিষয়ে দ্বিমত, “এডলফ হিটলার পৃথিবীর অন্যতম সাহসী বীর” – এইটাতে। হিটলার বীর হলে দুনিয়ার সব মানসিক রোগীরাই একএকজন বীর জেনারেল।