বর্তমান সময়ে প্লাষ্টিক কার্ড- এ লেনদেন আর অন লাইন ব্যাংকিং নতুন কিছু নয়। এক্ষেত্রে আমার শতভাগ নির্ভরশীলতা শুরু হয়েছে কানাডা আসার পর। আয়-ব্যায় কোন কিছুই ধরা যায় না; শুধু কম্পিউটারের পর্দায় দেখা যায়। সারা মাসে ডলারের স্পর্শ নেই বললেই চলে। পকেটে ডলার থাকে না; কার্ড হোল্ডারে কতগুলো কার্ড থাকে। এসব প্লাষ্টিক কার্ড- এ লেনদেন আর অন লাইন ব্যাংকিং এর সুবিধা অসুবিধা দু-ই রয়েছে। এ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আমার এক অভিজ্ঞতা লিখতেই আজকের প্রয়াস।
অন লাইন ব্যাংকিং এর নিরাপত্তা বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল। মাঝে মাঝে এখানকার সিনিয়রদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তাঁদের সাথে আমি এ বিষয়ে আলোচনাও করি। আমি নিজে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টা করি এবং আমার স্ত্রী শিউলীও যেহেতু একই ভাবে লেনদেন করে তাই তাঁকেও সবসময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেই। তাই কিভাবে কী ঘটলো বুঝতে পারিনি; বুঝবইবা কিভাবে? আমরা যতই সতর্ক থাকি না কেন, পুরোপুরি নিরাপদ থাকা কিন্তু সম্ভব নয়। যে কারো ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাটি কী? বলছি।
আমি প্রায় নিয়মিতভাবেই আমাদের (আমার ও আমার স্ত্রী’র জয়েন্ট একাউন্ট) অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্ট চেক করি। সেদিনও তাই করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমাদের টিডি ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ৫ টি লেনদেন হয়েছে। আমার স্ত্রী’কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। সে বলল যে, সে ঐ লেনদেনগুলো করেনি। “পে- পল” এর নামে এ লেনদেনগুলো করা হয়েছে। তখন রাত প্রায় আটটা বাজে। সাথে সাথে টিডি ব্যাংকের এক পরিচিত বাংলাদেশি ভাইয়ের মোবাইল ফোনে ফোন করলাম। তিনি আমাকে কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করার পরামর্শ দিলেন এবং প্রয়োজন হলে পরদিন ব্যাংকে যেতে বললেন।
কাস্টমার সার্ভিসে ফোন দেয়ার পর সন্দেহজনক সেই ৫ টি লেনদেন সম্পর্কে জানতে চাইলেন এবং বললেন যে, যেহেতু আমরা ঐ লেনদেনগুলো করিনি তাই ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের একাউন্টে সমপরিমান ডলার ফেরত আসবে। তিনি পরামর্শ দিলেন যে সমপরিমান অর্থ ফেরত পাওয়ার পর ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের লেনদেন না হতে পারে সেজন্য আমার উচিত হবে টিডি ব্যাংকের যেকোন শাখায় গিয়ে আমাদের একাউন্টটি বন্ধ করে দিয়ে নতুন একটি একাউন্ট খোলা এবং নতুন একাউন্ট খুলে সাথে সাথে পুরাতন একাউন্টের অর্থ নতুন একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়া। পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলাম। কিন্তু পুরাতন একাউন্টটি খোলা রাখতে হয়েছে যাতে করে আমাদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ ফেরত আনা যায়।
আমার একাউন্টে যখন অর্থ ফেরত পেলাম তখনও রাত অর্থাৎ ব্যাংক বন্ধ। হারানো অর্থ ফেরত এসেছে, সুতরাং সিদ্ধান্ত নিলাম পরদিন সকালেই ব্যাংকে গিয়ে এই একাউন্ট বন্ধ করে দিব। সকাল বেলা ব্যাংকে যাওয়ার আগে আবার অনলাইন (পুরাতন) একাউন্ট চেক করলাম। কী আশ্চর্য! ঠিক সমপরিমান অর্থ আবারও ৫ টি লেনদেনের মাধ্যমে পে পলের নামে আমাদের একাউন্ট থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্যাংকে গেলাম। ব্যাংক কর্মকর্তার অফিস থেকে আবার কাস্টমার সার্ভিসে ফোন দিলাম। সব শুনে কাস্টমার সার্ভিস থেকে পরামর্শ দিলেন যে সন্ধ্যা নাগাদ অনলাইনে (পুরাতন) একাউন্ট চেক করতে এবং অর্থ ফেরত পাওয়ার সাথে সাথে ফোন করে (পুরাতন) একাউন্টটি বন্ধ করে দিতে। সন্ধ্যায় একাধিকবার একাউন্ট চেক করার পর যখন এক সময়ে দেখলাম যে হারানো অর্থ ফেরত এসেছে, দেরি না করে (পুরাতন) একাউন্টটি বন্ধ করে দিলাম। কেবলতো অর্থ ফেরত পেলাম। ঝামেলাতো শেষ হয়নি।
প্রথম কাজ হলো অফিসে নতুন একাউন্টের বিস্তারিত জানানো। না হলে পুরাতন একাউন্টে বেতন পাঠিয়ে দিবে। তারপরের কাজ হলো বিভিন্ন বিল পরিশোধের জন্য যেখানে যেখানে প্রি-অথোরাইজড্ ডেবিট (প্যাড) অনুমতি দিয়ে রেখেছি সেসব জায়গায় নতুন একাউন্টের তথ্য দেয়া। কোথায় কোথায় এ (প্যাড) অনুমতি দিয়ে রেখেছি তা মনে করা ছিল কষ্টকর। মিস করলে জরিমানা। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের প্যামেন্ট, মোবাইল বিল ইত্যাদি দেয়ার জন্য পুরোনো একাউন্টের প্রয়োজনীয় তথ্য আমার ল্যাপটপে সেইভ্ করা ছিল, সেগুলো পরিবর্তন করা।এ ঝামেলা কতদিন বহন করতে হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। সেদিন ব্যাংকে গেলাম একটা চেক জমা দিতে [বিশেষ চেক যা পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছি]। ব্যাংক কাউন্টার থেকে জানতে চাওয়া হলো যে চেকটি ৩/৪ দিন হোল্ড করে রাখলে আমার কোন অসুবিধা হবে কি না? আমি বললাম অসুবিধা নেই কিন্তু কেন হোল্ড করে রাখা হবে? উত্তরে জানানো হলো যে আমার একাউন্টটি নতুন। বললাম, প্রায় ৪ বছর ব্যাংকিং করছি টিডি’র সাথে…. বিস্তারিত কাহিনী শুনিয়ে দিলাম।
আমার খুউব জানার আগ্রহ হয়েছিল কিভাবে এ ঘটনা ঘটলো। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। টিডি’র কাস্টমার সার্ভিসেও জিজ্ঞাসা করেছিলাম। যা বুঝলাম সঠিক উত্তর দেয়া হয়তো সম্ভব নয়। বিভিন্নভাবে আমাদের একাউন্টের তথ্য ফাঁস হতে পারে এবং এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন: আমরা যখন দোকানে কেনা-কাটা করি তখন দোকানের ক্যামেরায় আমাদের কার্ড নম্বর ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত থাকা ও পাওয়া সম্ভব। অনলাইনে কেনা কাটা করার সময় একাউন্টের যে তথ্য দেয়া হয় তা কোনভাবে হ্যাক করা হলে। আমরা বিভিন্ন সময়ে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে থাকি (উদাহরণস্বরূপ: ইন্টারনেটের বিল দেয়ার জন্য, ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম দেয়ার জন্য আমার কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল), সেসব জায়গা থেকে কোনভাবে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে।
আজকের যুগে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও অনলাইন ব্যাংকিং এড়ানো হয়ত সম্ভব নয়। তবে যতটা সম্ভব নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা এবং দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর মানসিক প্রস্তুতি রাখাই উচিত বলে আমি মনে করি।
এস এম জাকির হোসেন
টরন্টো, কানাডা