বেশ কিছু মাস আগে,বহু আগের না হলেও বেশ কয়েক মাস আগের আর কি। কেউ একজন নক করলো দরজায়। হুম এটাও একরকমের দরজা। কড়া নাড়া দিলো। আগের দিনে আমারা যে বাসায় থাকতাম সেটায় তখন কলিং বেল ছিলো না। তো দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, সকাল কড়কড়া কড়া নাড়ার আওয়াজে মন প্রাণ শান্ত করতে হতো। অজোঁপাড়া গা মানুষের হ্রিদতা যেমন বেশি তেমনি কিছুটা আলে খাটো। সময় নাই অসময় নাই পান চিবুতে চিবুতে কড়া নাড়া। ও ওমুকের মা, তমুকের মা কি ( হরো) করো?
যতই বিরক্ত হোক না কেনো তারা তো আসবেই আসবে। যাক ওমনি কড়া নাড়া আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ও আছে। তেমনি কড়া নাড়ার দরুনে পড়ে গেলাম।
– সোজা সুজি কে আপনি? নাম কি বা গতানুগতিক ধারায় যারা প্রশ্ন করে সেটা নয় প্রথম কথাই হলো
– কথা বলতে চাই।
– বাড়ির সামনে নামধামের একটা বিষয় থাকে।
এই যেমন ধরুন, * স্বপ্ন কুঠির * – * স্বর্ণকমল * ( খুলনার বিখ্যাত কুখ্যাত এরশার শিকদার এর বাড়ির নাম) এখনও আছে কি নাই জানি না – বিথী বলে আমার ভালো বন্ধবী ছিলো দোলখোলায় ওদের বাসার নামটা ছিলো অসাধারণ * গল্পগাঁথার ছায়ানীড় * মাকে নিয়ে কয়েকবার গিয়েছিও। বাসাটা আমার চোখে দেখা স্বপ্নের বাসা। কিসের কানাডার বাসা ***
আমার আরেক কাছের বন্ধু ক্লোজআপ ওয়ান এর প্রথম সিজনের ১০ জন এর একজন – মিনা আবিদ শাহরিয়ার ওদের বাসার নাম টাও সুন্দর ছিলো * মায়া বিলাস * আমি যখন যেতাম সেটাও ভীষণ কমই যাওয়া হতো। রক্ষণশীল পরিবারে স্বাধীনতা কম থাকে। পুরুষগুলা নিজেদের কে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ মনে করতো। আবার এরশাদের স্বৈরশাসন ঘরের ভিতর প্রয়োগ করে নিজেকে জাহির করতো। যাক, একদিন অদিতি মহসিন, মিতা হক, পিযুষ বন্ধোপাধ্যায় আর মামুনুর রশীদ কে দেখার জন্য আবিদের বাসায় গেলাম। ওর বাসায় সবার প্রবেশ অনুমতি ছিলো না। ঐ দিনেই বাড়ির নামটা জানলাম। আমি ভাগ্যবশত কোচিং-এ পরিচয়ের মাধ্যমে যেতে পারতাম। তখন ঢাকা থেকে কিছু কলেজ শেষ করা বড় ভাই আপুরা আসতো কোচিং ক্লাস নিতে। ক্লাস সাথে টাংকি বোনাস। আবিদ আর আমার বিষয় টা ভীষণ অপছন্দের ছিলো। সব ঠিক আছে। কিন্তু স্যারের সাথে প্রেম। ধূর ও তো সারাদিন পড়াবে। এ চেয়ে কঁচু গাছের সাথে প্রেম করাও ভালো।
এতেই কথার মাধ্যমে বন্ধু তারপর রবীন্দ্র চর্চা।সাহিত্য নিয়ে কথা এমন কি মাঝেমধ্যে হাদিস পার্কের অনুষ্ঠানে আমাদের তুমুল আড্ডা। আমার আব্বা, ওর আব্বা, বন্ধু – বান্ধবীর বাসার অনেকে… যাক প্রসঙ্গ ঘুরে যাচ্ছে।
– স্যোশাল মিডিয়ার বাড়িতে যে নাম তাতে অনেক সময় বোঝার উপায় নাই তিনি কিশোর, যুবক, পুরুষ, নাকি কিশোরী, যুবতী, না মহিলা ….
এমন মূহুর্তে আবারও এলো, —- কথা বলতে চাই…
– বললাম, বলেন
– আমি আপনাকে চিনি না
– তো আমিও বললাম তাহলে আর কি আসেন চেনাচিনি করি …
– ও পাশ থেকে প্রশ্ন আপনি কি ছেলে না মেয়ে? – বললাম কথায় বুঝে নেন, যদী বুঝতে পারেন তবে কথা এগোবে আর যদী ধরতে না পরেন তবে এখানেই সমাপ্ত হবে।
—- রাজি —– হা হা হা রা – জি ,
– প্রথম কথায় তো কি করলেন আজ সারাদিন? আজ কি রান্না করলেন?
– বুজতে একটুও দ্বীধার মাপকাঠিতে গেলাম না। চোখ বন্ধ করে এটা মহিলা।
– আমিও তখন সবে ৪/৫ পদের রান্না শেষ করে ঘরের ফ্যানটা চালু করে ফেসবুক নামক ( চেহারা বই) এর পাতা উল্টাচ্ছি। বলে ফেললাম।
তার আগে রান্নার গ্রুপে কিছু ছবি মাত্র পোস্ট করেছি। রান্না করতে, খাওয়াতে এবং ছবি তুলতে কোনটায় অনিহা আসে না।
সুখের পায়রা ****
– তো তিনি বললেন আমিও এমনি কথা বলতে চাই।
– আপনার কথা বলার কেউ নাই?
– আছে। আসবে কখন জানি না ?
– বুজলাম হাসবেন্ড নামক জড়পদার্থটার কথা বললো হয়ত। থাক বাবা না ঘাটাঘাটি করি… মা বলতো কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়। কি আবার বের হবে কে জানে। বাপু চুপ থাকি।
– হঠাৎ বললো, আপনার প্রতিটা রেসিপির ছবিগুলো বেশ ভালো লাগে।
– নেও এবার পুরাই ক্লিয়ার, ইনি একজন মহিলা এবং রান্নার কোন গ্রুপের সাথে আমায় ফলো করে।
– আমিও গল্প জুড়ে বসলাম।
– মহিলা আমাকে অবাক করে বলে আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগছে আমি প্রতিদিন কথা বলবো।
– আমিও একরকম হু বলে বিদায় নেই।
পরেরদিন আবারও, আজব তো, হঠাৎ দেশে তো অনেক ধরনের ক্রাইম হয় বাবারে আমি কি ওমন কোন কিছুর পাল্লায় পড়লাম না কি?
আমি কোন কথা না বলে মোবাইল পুরা সাইলেন্ট মুডে নিয়ে রাখলাম।
– ৫/৬ দিন পর দেখি ম্যাসেজের ফুলঝুড়ি।
– আমি সিন করলাম। এবং অনুমতি না নিয়েই কথা বলার জন্যে সোজা ভিডিও কল দিলাম। কারন ভদ্রমহিলা গুরুতর আহত বাথরুমে পড়ে যেয়ে।
– কথা হলো আমাদের। নীলফামারীর কোন এক জায়গায় তার বাড়ি। যথেষ্ট পরিপক্ব বয়স্ক এক শহুরে গ্রামের মহিলা।সুন্দর করে কথা বললো। আমাকে যাবারও আমন্ত্রণ জানালো। কথা হচ্ছিল… চলছিলো।
– একদিন কথার দ্বারায় প্রকাশ পেলো তিনি যথেষ্ট অসুখী স্বামী নামক জড়পদার্থ দ্বারা। সব জানার পর দেখলাম সমস্যা দুজনের ই। সময়ের অভাব। বোঝাপড়া বৈষম্য। অধিকার ফলায়ত্ব, যেটা আমাদের পুরুষদের মধ্যে জঘন্যরকমের ভাইরাস। পরাম্মরা থেকে এই ভাইরাস এই জড়পদার্থগুলো বহন করে যাচ্ছে। এরা নিজেদের কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভাবে ঘরের মা,বোন,বৌ,এবং সন্তানের কাছে।
– মহিলা অসম্ভব সুন্দর করে কথা বলতেন। রেসিপি গ্রুপে তাকে সবাই পছন্দ করতো।
– নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তাই প্রকাশ থেকে বিরত থাকলাম।
তবে সত্যি বলতে, সমাজটা পুরুষের হাতেই বন্দি। কোথাও না কোথাও। কেউ একমত নাও হতে পারে। কেউ বলবে কৈ আমার স্বাধীনতা আছে। আরে স্বাধীনতা দিয়ে কি সব হয় ? এতই স্বাধীন চেতা কিন্তু তোমার আশেপাশে তো আছেই কোন না কোন বারাক ওবামা।
– দিন শেষে দেখো, স্বাধীন হবার দরকার নাই আবার পরাধীন হবার কথাও বলছি না। উভয় উভয়কে ভালোবাসার সম্মান দাও দেখবে এমনিতেই তোমার প্রতি তার প্রতি সকলের প্রতি শ্রদ্ধা আসবে। নয়ত চিল্লায় ও কেউ কারো প্রতি শ্রদ্ধা আসবে না। সামনে হয়ত কিছুই বলে না পিছু চৌদ্দ গুষ্টির কীর্তন গায়।
এলেবেলে কর্ম
নীলিকা নীলাচল***
®