আপনারা অনেকেই হয়তো গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী জানেন। রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের রাজসভার ভাড়ঁ। একদিন মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্র রাজসভায় জানতে চাইলেন , তার রাজ্যে কোন পেশার লোক বেশি। সভার উপস্থিত সবাই যার যার নিজস্ব মতামত দিতে লাগলেন। শুধু গোপাল ভিন্ন জবাব দিলেন , বললেন এই রাজ্যে ডাক্তারের সংখ্যা বেশী। কিন্তু স্বয়ং মহারাজ সহ সভায় উপস্থিত কেউই গোপালের এই উত্তরটা মেনে নিলেন না। কিন্তু গোপাল তার উত্তরে অনড়। এই পরিস্থিতিতে মহারাজ গোপলকে বললেন যে তাকে তার এই কথার প্রমান দিতে হবে। আর না হলে তার জন্যে তকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। গোপাল এই শর্তে রাজি হয়ে বাড়ী চলে গেল।
পরদিন সকালে যথা সময়ে রাজসভার কার্যক্রম শুরু হোল কিন্তু গোপাল অনুপস্থিত। বেশ কিছু সময় অপেক্ষার পর মহারাজ গোপালের বাড়িতে লোক পাঠান। দূত ফিরে আসে জানালেন যে গোপালের ভীষণ জ্বর , তাই সে রাজ্ সভায় আসতে পারছেনা। একই ঘটনা ঘটলো দ্বিতীয় দিনেও। তৃতীয় দিন সকালেও গোপালের দেখা নাই। মহারাজ দূত পঠালেন গোপালকে রাজসভায় নিয়ে অসার জন্য। কিছুক্ষন পর গায়ে কম্বল জড়িয়ে গোপাল রাজসভায় হাজির।
মহারাজ বললেন: কি ব্যাপার গোপাল, কোথায় ছিলে তুমি?
গোপাল: মাফ করবেন মহারাজ, গত কদিন আমার খুব জ্বর।
মহারাজ: এইটা কোনো ব্যাপার নাকি,একটু থানকুনির রস খেলেতো সব ঠিক হয়ে যেত।
মন্ত্রী : এক চামচ নিম পাতার রস খেলেতো সব ঠিক হয়ে যেত।
সেনাপতি : পুকুরের ঠান্ডা পানিতে ১০০টা ডুব দিলে সব ঠিক হয়ে যেত।
এই ভাবে সভার উপস্থিত সবাই রোগ নিরাময়ের ঔষধের পরামর্শ দিতে লাগলো।
আবার গোপাল তার কম্বলটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আরামে তার আসনে গিয়ে বসলো।
আশ্চর্য হয়ে মহারাজ বললেন: কি ব্যাপার গোপাল, তোমার না জ্বর?
গোপাল: জ্বি না মহারাজ , আমার কোনো জ্বর টর নেই ?
মহারাজ : তবে এতো নাটক কেন করলে ?
গোপাল:মহারাজ আপনাকে বলেছিলাম না আপনার রাজ্যে ডাক্তারের সংখ্যাই বেশী। তার প্রমান পেলেন তো ? সবাই কেমন আমার চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের মতো পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
সহাস্যে মহারাজ গোপালের কথা মেনে নিলেন।
এই গল্পটা বলার পিছনে একটা ঘটনা মনে পড়লো। কতেক দিন আগে কোনো একটা ফেসবুক গ্রূপের একজন সদস্য অনেকটা কষ্ট আর অভিমানে তার পোস্টটা তুলে নিয়েছিলেন। কারণটা ছিল এই রকম , ভদ্রলোক একটা ট্রাফিক টিকেট পাবার পরে পরামর্শ চেয়ে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ছিলেন। যা হবার তাই হলো “মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্রের রাজসভা” – সবাই যার যার নিজস্ব পরামর্শ দিতে লাগলেন। যার কোনোটাই আইন গত পরামর্শ নয় – নিজস্ব মতামত। অনেকে তার এই টিকেট পাওয়াটা নিয়ে বিদ্রুপও করলেন। সম্পূর্ণ উত্তরগুলো ছিল বিভ্রান্তিকর। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ভদ্রলোক তার পোস্টে তুলে নিলেন , বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচার জন্য।
আমরা সাধারণত ফেসবুক গ্ৰুপে প্রশ্ন করি এই বিশ্বাসে যে , নিশ্চই এই গ্ৰুপে এই বিষয়ে উত্তর দেবার জন্য পেশাগত যোগ্যতা সম্পন্ন কেউ না কেউ আছেন। আর সেই উপযুক্ত ব্যাক্তিটিই পারেন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে। আমি বিশ্বাস করি গ্ৰুপের প্রতিটি সদস্যই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং প্রতিভাবান। আপনাদের সেই অভিজ্ঞতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে একটা অনুরোধ , প্রশ্নের উত্তরটা না জানা থাকা দোষের নয়, সঠিক ব্যাক্তিকে সঠিক পরামর্শটা দিতে দিন।
আসুন ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার করি।