প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি জাতিতে বা প্রতিটি ধর্মেও ভালো ভালো মানুষ এবং ভালো জিনিস আছে, এবং বেশি বেশিই আছে। আমরা কেন যেন সেই জিনিষগুলি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমি জাস্ট ২/৩টি উদাহরণ দেই। আপনাদের অনেকেরই মনে আছে যে ফ্রান্সের ব্যাটিকোলন এবং সুপার মার্কেট আক্রমণের সময় সুপারমার্কেটের বেকারিতে যে লোকগুলি জিম্মি ছিল তাদেরকে মুক্ত করার পিছনে ওখানকার একজন মুসলিম কর্মচারীর ভূমিকা অনেক ছিল। তার জীবনের রিস্ক নিয়ে সে পুলিশের জন্য দরজা খুলে দিলে পুলিশ সন্ত্রাসীকে পরাহত করে জিম্মিদেরকে মুক্ত করে। সে বালকটি একজন রিফুজি ক্লেমেন্ট ছিল, পরে ফ্রান্স সরকার তার এই মহৎ কাজের জন্য তাকে তাদের দেশের permanent residecne করে নেন। মিডিয়া এই খবরটি যেভাবে দেওয়া উচিত সেভাবে দেয় নি।
চলমান সংকটের মুহূর্তে আমাদেরকে যেমন সাবধান এবং সতর্ক থাকতে হবে তেমনি বেশি বেশি করে ভালো জিনিসগুলির উপর জোর দিতে হবে। বিপদ বা সংকট কারোরই কাম্য নয়, তবে অনেক সময় বিপদ থেকে ভালো কিছু জিনিসও বের হয়ে আসে। যে মানুষগুলি চলে গেছে তাদেরকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না, আবার তাদের আত্মীয়দের যে লস সেটিও পূরণ করা যাবে না। তবে হাঁ, এই বিপদের মধ্যে থেকে আমরা যদি ভালো কিছু করতে পারি তাহলে ওই প্রয়াত মানুষগুলির আত্মা শান্তি পাবে, এবং আমাদেরও ভালো লাগবে। আমরাতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ তাই, কিছুটা ভয়-ভীতি, ঘৃণা বা বিদ্বেষ থাকবেই এবং সেটাকে দূর করতে হলে সাবধানতার সাথে সাথে ভালো জিনিসগুলির উপর বেশি করে নজর দিতে হবে তাহলে ভয়-ভীতি, ঘৃণা বা বিদ্বেষ অনেকটাই দূর করা যাবে।
আবার দেখেন গত শুক্রবারের ঘটনায় অনেক অমুসলিম লোক আহতদের সাহায্য করেছেন। এগুলিই হচ্ছে মানবতা। এবার দেখুন আমি উক্ত ঘটনার পরে বের হওয়া একটি ছবি এবং লিংক নিচে শেয়ার করছি। ছবিটি আগে দিয়েছি। ছবিটিতে ইংল্যান্ডের একজন ক্রিশ্চিয়ান ভাই একটি প্লেকার্ডে, “You are my brother. I will keep watch while you pray.” লিখে দাঁড়িয়ে আছেন। জিনিসটি দুটি লাইনের ছোট একটি মেসেজ হলেও সন্ত্রাসী, বর্ণবাদী এবং বদমাইশ লোকদের জন্য একটি বড়ো মেসেজ। এ থেকে প্রমান, নিরীহ মানুষদের হত্যা করা ওই বেটা Coward অথবা গত কয়মাস আগে আমেরিকার pistburg সিনাগগে নিরীহ মানুষদের আক্রমণকারি কতগুলি সুন্দর জীবন কেড়ে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু মানুষের পসিটিভ স্পিরিট তারা কেড়ে নিতে পারে নি।
দ্বিতীয় লিংকটিতে দেখুন একজন মুসলিম ভাই তুষারঝড়ের সময় তার প্রতিবেশীদের কথা চিন্তা করে কিভাবে সহমর্মিতার একটি বন্ধন তৈরী করেছে। আমি সব জায়গার hatersদের বলছি, এবং গ্যারান্টি দিয়ে বলছি আপনাদের থেকে ওই ডক্টর সাবিল অথবা মিঃ এন্ড্রু গ্রেস্টোন অনেক অনেক সুখী মানুষ, এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি এহকালের বা পরকালের আস্তাকুড়ে যাবেন না কি সুখে শান্তিতে থাকবেন। কথায় আছে চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী, তারপরেও আমাদের এগুলি বলতে হবে, আমাদের ভালোর জন্যই।
আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে ২/১টি উদাহরণ। আমাকে আমার বড়ো একটি সার্জারির আগে হটাৎ করে ৯১১ কল করে হাসপাতালে যেতে হয়। আমার বৌ সঙ্গে ছিল। অনেক পরীক্ষার পরে ওরা বললো আমাকে সারারাত ERএ থাকতে হবে, তাই বৌকে বাসায় চলে যেতে হবে। অনেক রাত, সে গাড়ি চালাতে জানে না, তাছাড়া পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনও সুবিধার না। কাছাকাছি আত্মীয় স্বজন ছিল না। এই সময় আমার স্বল্প পরিচিত এক বন্ধু সুজান বাসার থেকে এসে ওই রাত্রে আমার বৌকে বাসায় পৌঁছে দেয় এবং পরদিন আমাকেও রাইড দেয়। এখন ওই সময় সে কি মনে করেছিল সে হিন্দু, আমি মুসলমান! না সে আর একজন ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলো।
ঠিক তেমনি আমার বিল্ডিং এর ওই সুজানের মাধ্যমে পরিচিত এক বন্ধু দীপকের বৌ প্রেগনেন্ট তখন শেষ রাতে হটাৎ করে পেইন উঠে। পাজেল্ড হয়ে সে আমাকে ফোন করে। ৯১১ কল করার মতো না, এবং ডিউ-ডেটও ছিল না, তারপরেও তার কাতরানো দেখে আমরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তাকে তখন তার পাশে থাকতে হবে তাই আমি গাড়ি বের করে তাদের নিয়ে হাসপাতালে যাই এবং সমস্ত কিছু নিশ্চিত করে বাসায় আসি। কিন্তু আমার তো এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় নি সে হিন্দু না মুসলমান। এই জিনিষগুলিই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যত বাধা বিপত্তিই থাকুক না কেন। এগুলি ভাবলে আমার ভালো লাগে।
আমার সার্জারিরই পর আমাকে এক মাস ছুটিতে থাকে হয় আর প্রায় দুমাস অধিকাংশ সময়ে বাসায় বসে কাজ করি। যাহোক সার্জারির আগে আমার এক ক্লায়েন্টকে যখন আমার অনুপস্থিতির কথা বলতে গিয়েছি, তখন সে বিষন্ন মনে বললো তোমার যদি কিছু হয় আমি কি করবো। আমি বললাম আমি ইনশাল্লাহ ভালো হয়ে যাবো, তাছাড়া আমাদের substitute লোক থাকবে তোমার জন্য। এর পরে যে কথাটি সে বললো সেটি আমি জীবনেও ভুলবো না। উনি বললেন, ” লুক মিঃ মুকুল, আমিতো খ্রীষ্টান, কিন্তু আমি কি চার্চে গিয়ে তোমার জন্য দোয়া করতে পারি? যদি অনুমতি দেও আমি তাহলে আমার ছেলে এবং নাতিদের নিয়ে চার্চে গিয়ে তোমার সার্জারির দিনে গডের কাছে দোয়া করবো।” আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম অবশ্যই পারবে, এবং তোমার এই কথার কারণেই আমি অলরেডি অর্ধেক নিশ্চিত হয়ে গেছি যে আমি ভালো হয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
আমার সার্জারির পরে প্রায় ৯/১০ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। আমার আত্মীয় স্বজন বাদে সেখানে প্রায় ২০/২৫ জন লোক আমাকে দেখতে যেত, এবং এদের মধ্যে মাত্র ২৫/৩০% লোক মুসলিম বা বাংলাদেশী। এখন বলুন, আমি মানুষের এবং মনুষত্বের উপর দুই/একটি অবাঞ্চিত ঘটনায় বিশ্বাস হারাই কি করে। আমার জীবনেও অনেক দুঃখ/কষ্ট বা হারানোর ব্যথা আছে, তবে সেগুলির থেকে আমি চেষ্টা করি ওই উপরে উল্লেখিত পসিটিভ বিষয়গুলির উপর জোর দিতে, এবং তাতে আমার ভালো লাগে। চেষ্টা করে দেখুন আপনার ও ভালো লাগবে, এবং আপনার জীবনেও এমনি অনেক ঘটনা আছে।
আসুন আমরা যেমন সতর্ক এবং সাবধান হয় তেমনি পজেটিভ জিনিষগুলিকে বেশি বেশি ফোকাস করি। নিচের লিংক দুইটির জন্য শ্রদ্ধেয় বদর ভাই এবং Ms. Raufun Akhand Shovonকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মুকুল