ইলা নামের ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটি যার বয়স মাত্র দুই বছর কিংবা একটু বেশি। প্রতিদিন স্কুলে আসে আনন্দের সাথে। সে সারাক্ষণ কথা বলে , হাসে । প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ায় । কখনো কখনো তার ছোট দুটি হাত বাড়িয়ে দেয় একটু জড়িয়ে ধরার জন্য। সার্কেল টাইমে মাঝে মাঝে হয়ত তার স্থান পরিবর্তন করে দেই পাশের বন্ধুর সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু মিষ্টি মেয়েটা বেশিক্ষন মনে রাখতে পারে না আমার কথা। সে আবার কথা বলে হাসে। প্রতিদিন যখন জিজ্ঞেস করি আজ কি বার? সে হাত তুলে চেঁচিয়ে বলে “ফ্রাইডে”। আমি কপট রাগে ওরদিকে তাকাই। তাকে দিনের নাম আবার শিখাই । জানি ফ্রাইডে সবার খুব পছন্দের। কেননা পরের দুদিন স্কুল বন্ধ। দুইদিন পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময়। সবার দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করি আমরা কোন দেশে বাস করি ? ইলা বলে সাউথ আমেরিকা । আমি বলি এটা তো মহাদেশ। সে বলে অন্টারিও । আমি বলি না এটাও হলো না। এটা প্রভিন্স। সে আবার চেঁচিয়ে বলে কানাডা । বলে মিষ্টি হেসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি তার ছোট্ট হাতটা একটু ছুঁয়ে দেই। ক্লাশে সে সবার ছোট । কিন্তু সে সব সময় ভাব করে সে বড় হয়ে গেছে । সে একা একাই সব করতে পারে। কোন কাজে তার ক্লান্তি নাই।
মাস খানেক আগে মিস ইয়ানার এক ম্যাসেজ দেখে আমার চোখ আটকে গেল। তিনি লিখেছেন ইলা এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইদিনের জন্য ওর মায়ের কাছে যাচ্ছে । শিক্ষকরা ইলার মধ্যে যদি কোন অসংগতি লক্ষ্য করে সেটা যেন তাদেরকে জানানো হয়। আর সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ইলা পরবর্তী মাস থেকে ওর মায়ের সাথে অন্য সিটিতে থাকবে। আমি এই ক্লাশটায় নতুন এসেছি । তাই ইলা যে ওর মায়ের সঙ্গে থাকে না এটা জানতাম না। আমি আমার সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করি মিস ইয়ানা কে? আমি তো এতদিন উনাকে ইলার মা ভেবেছি। আমার সহকর্মী আমাকে জানালেন ইলার জন্মের সময় তার মা ছিলেন Drag Addicted. কোর্ট দায়িত্ব দিয়েছিল মিস ইয়ানাকে (ইলার খালা) সেই সময় থেকে ওর দেখাশুনা করার। আর ওর মা ওর জন্মের আগে থেকেই রিহাবে ছিলেন। এখন ডাক্তাররা মনে করছেন উনি পুরোপুরি সুস্থ বাচ্চাকে কাছে রেখে লালন পালন করার জন্য। তারপরেও তিনি বাচ্চার সাথে কেমন আচরন করছে তা তারা মনিটর করবে। তার বা ইলার মধ্যে কোন অসংগতি দেখা গেলে কোর্ট হয়তো আবারও মিস ইয়ানাকেই দায়িত্ব দিবে। সব শুনে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কেমন যেন এক অনিশ্চয়তায় ছেয়ে গেল মন ইলার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে।
আমি জানি একজন মায়ের কাছে তার বাচ্চাটা কতটা আকাঙ্ক্ষিত থাকে। ইলার জন্মের পর যখন সে তার খালার কাছে ছিল তখন ঐ মায়ের মানসিক অবস্থা কি ছিল! কতটা রক্ত ক্ষরণ হয়েছে তার বুকের মধ্যে । ড্রাগ এডিকশন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা সহজ নয় । তারপরেও এই পরীর মত মেয়েটাকে কাছে পাবার আশায় তিনি ঐ মরন পথ থেকে ফিরে এসেছেন।
এই ছোট পুতুলের মত মেয়েটির জন্য আমার এত ভালবাসা জমানো ছিল বুঝতে পারিনি ।
আমরা এই এক মাস সময়ে ইলার মধ্যে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি । তাই আমাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টও স্বাভাবিক । ইলার মায়ের কাছে যাওয়ার সময় প্রায় আগত । মিস ইয়ানা ইলাকে নিতে আসলে আমি জিজ্ঞেস করি ওর মায়ের বর্তমান অবস্থার কথা। তিনি জানান সে এখন খুব ভাল আছে। মেয়ের জন্য সারাদিন ঘুরে ঘুরে কেনা কাটা করছে । রুম গোছাচ্ছে। শুনে আমার খুব ভাল লাগে । আমি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই । মন থেকে এই পুতুল মেয়েটার জন্য বেরিয়ে আসে একটিই দোয়া, ইলা যেন মায়ের আদর আর ভালবাসায় এগিয়ে যায় সামনের সুন্দর ভবিষ্যতে। আর মাও যেন মেয়েটাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে খুঁজে পায় স্বর্গসুখ।