আমি যাদের কথা বলবো তাদের নাম প্রকাশ করছি না, কারণ তারা বিব্রত বোধ করবেন, তবে কারো যদি তাদের সাথে যোগাযোগ করার বা কথা বলার দরকার হয় তাহলে আমাকে বললে আমি তাদের সাথে যোগাযোগের তথ্য আপনাদেরকে দিয়ে দিবো।
ম. ভাই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে আলাপ করতে এসেছেন। প্রোগ্রাম তাকে জানালো তাদের আর মাত্র দুইদিন বাকি আছে, এর মধ্যে তাকে সবকিছু জমা দিতে হবে। উনি থাকতেন টরন্টো থেকে প্রায় ২০০০ কিঃমিঃ দূরে একটি শহরে । উনি ফিরে যান সেই শহরে এবং পরের দিন প্লেনে করে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টে হাজির হন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার তখন অবাক !!
ওই প্রোগ্রামের আমি প্রাক্তন গ্রাজুয়েট ছিলাম। মাঝে মধ্যে প্রোগ্রামের প্রফেসর বা ইন্সট্রাক্টরা আমাকে Guest Speaker হিসাবে ডাকতেন। একদিন ওই রকম একটি প্রোগ্রামে কথা বলার পর উনি এসে আমার সাথে কথা বলতে চাইলেন। পরে জানলেন আমি উনারই দেশি লোক।
যাহোক, আরো একটি ঘটনা। উনি ওই প্রোগ্রাম শেষ করে ফেলেছেন, এবং একটি চাকরির আবেদন করবেন। উনি সেই আবেদনের বিষয় একদিন কিছু পরামর্শ চাচ্ছিলেন, কিন্তু সেই দিন আবার আমি বাংলাদেশে যাচ্ছিলাম।
উনি আমাকে বললেন ভাই, আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি আপনার সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে পারি, যাওয়ার সময় কিছু কথা বললাম। উনি আমাকে উনার গাড়িতে Ride দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার অলরেডি Ride ছিল। যাহোক আমি রাজি হই। বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে আমরা উনার আবেদনের বিষয় কথা বলি, তারপর আমার লাগেজ চেকিং হয়ে গেলে কিছুক্ষন টিম হর্টনে বসে আরো কিছু কথা বলি, উনি শুনলেন, নোট করলেন। এই, পরবর্তীতে সেই আবেদনে উনি সাড়া পান, ইন্টারভিউ হয় এবং চাকরিও পান। আর এই পর্যন্ত উনার সাথে যেই প্রোগ্রামে যতবার দেখা হয়েছে ততবারই অন্তত ১০ মিনিট আগে এসে হাজির, যদিও তখন বাসায় উনার ছোট ছোট বচ্চা আছে। বর্তমানে উনি এখন একটি প্রতিষ্ঠানে লিডেরশিপ পজিশনে আছেন।
আমার একজন প্রাক্তন ছাত্র (placement student). উনি আমাদের যে প্রোগ্রামে Internship করতে এসেছিলেন সেখানে ২০/২২ ক্লায়েন্টের ব্যাপার উনার দেখাশুনা, শ্যাডো করা বা জানাশোনার কথা। তবে আমি উনাকে আমাদের অফিসের অন্যান্য প্রোগ্রামেও access দিয়ে দেই, এবং অফিসের একটি ল্যাপটপ উনাকে ধার দেওয়া হয়, এবং সেই ল্যাপটপের মাধ্যমে উনাকে অফিসের ফাইলে এক্সেস দেওয়া হয়।
সেই ল্যাপটপ নিয়ে উনি বাসায় বসে বসে সেই ২০/২২টি নয়, আরো কয়েকশত ক্লায়েন্টের আদিঅন্ত সব পড়তে শুরু করেন। আমি ইচ্ছা করে উনাকে মাঝে মাঝে জটিল এবং কঠিন ক্লায়েন্টের পাল্লায় ফেলে দিতাম, সে উনি বিষয়ে কোনো ধরণের বিরক্ত প্রকাশ করে নাই। উনার জানার ওই আগ্রহ আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছিল। এমনকি তাকে আমাদে একজন স্টাফের সাথে শ্যাডো করতে একটি কেস কনফারেন্স মিটিঙে পাঠাই, সেখানে Psychiatrist যখন ওই স্টাফকে ক্লায়েন্টের ১০/১২ বছর আগের একটা ঘটনা জানতে চানা তখন সেই স্টাফ একটু থমকে যায়, কিন্তু উনি (আমাদের প্লেসমেন্ট স্টুডেন্ট) সাথে সাথে সেটি বলে দেন, কারণ উনি তো সব কিছু অ্যাডভান্স পড়ে ফেলেছেন।
উল্লেখ্য, আমাদের ওখানে উনার Placement/Internship শেষ করার দুইদিন আগেই একটি চাকরির ইন্টারভিউ কল পান এবং চাকরিটি হয়। উনার ম্যানেজারকে আমি ৬/৭ মাস পরে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি কেমন করছে কারণ আমি তো উনার রেফারেন্স ছিলাম। উনার ম্যানেজারের উত্তর ছিল, সে তার পজিশনে রেভুলেশন ঘটিয়ে ফেলেছে, এবং আমি উনার সম্মন্ধে যা যা বলেছিলাম ইতিমধ্যে উনি তা সবই প্রমান করেছেন। উল্লেখ, উনি এখন প্রাদেশিক সরকারের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে চাকরি করছেন, এবং যদি কখনো উনি আমার অফিসে বস হয়ে আসেন তাতে আমি বিদ্যুমাত্র অবাক হবো না, কারণ He Possess that quality and enthusiasm, যেটা খুব কম মানুষের মধ্যে আছে।
কথা আছে, চাওয়ার মতো চাইলে এবং চেষ্টা করলে আল্লাহ অবশই আপনাকে দিবেন। একেবারে সত্যি !!
Angolaর একটি ছেলে। এক সময় আমার কলিগ ছিল, পরে কোনো এক কারণে সে ফায়ার হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে একটি ডিপ্লোমা করে চাকরির আবেদন করে। সে থাকতো পার্শবর্তী শহরে। সে তার একটি ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে আমি সহ আরো ২/৩ জনের সাথে যোগাযোগ করতে চায়। আমি তখন অনেক ব্যস্ত। সে সেই শহর থেকে টরোন্টোতে এসে একটি হোটেলে থেকে আমি এবং আর এজন প্রফেশনালের সাথে তার চাকরির আবেদন এবং ইন্টারভিইএর বিষয় আলোচনা করে। বর্তমানে সে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনায় আছেন।
এই রকম আর অনেক উদাহরণ আছে, এবং আমার বিশ্বাস আপনাদের কাছেও আছে। কেউ চেষ্টা করেন, চেষ্টা করতে হয় তাই, আবার কেউ করেন মন-প্রাণ বা অন্তর ঢেলে দিয়ে। যেমন ধরেন আপনি একজনকে ২/৩টি রেসুমির স্যাম্পল কপি দিলেন এবং বললেন ওগুলি দেখে নিজে মতো করে কিছু লিখতে যেটি আপনি চেক করে দিবেন, সে নিজে কাজ না করে কোনোমতে ২/৩তা মিলায়ঝুলাই কপি-পেস্ট করে আপনাকে দিলেন। আপনি ভালো করে সেগুলি দেখেশুনে ভালো কিছু লিখতে পারেন বা নাই পারেন কিন্তু ভাই চেষ্টাটাতো করবেন ! সেইটুকু যদি না করেন তাহলে আপনার কাংখিত জিনিস পাবেন কি করে।
আমাদের হাফিজ ভাই কোনো এক International Studnetকে সাহায্যের নিমিত্তে তার সাথে কথা বলে, কিছু পরামর্শ দিয়ে তাকে যখন তার বিসনেস কার্ডটি দিলেন, সে তখন কার্ডটি হাতের মুঠোয় দলা-মুচা করে পকেটে ঢুকায় রেখে প্রস্থান করলেন। এই রকমও অনেক উদাহরণ আছে।
যাহোক আমার নিজের একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। অনেক অনেক বছর আগে আমি যখন এখানে নতুন এসেছি। একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করি। সেই সময় এখানে প্রফেশনাল বাংলাদেশী খুব একটা দেখা যেত না, এবং তখন সোশ্যাল মিডিয়ার এতো দাপট ছিল না। আমি শুধু খুজতাম আমার প্রফেশনের কাছাকাছি বা রিলেটেড কাউকে যদি পাই। তো, হটাৎ একদিন Lindsay শহরে কোনো এক দাওয়াতে গিয়ে এক ভদ্রলোকের কাছে জানতে পারি Markham শহুরে একজন চিটাগংয়ের ভদ্রমহিলা আছেন যিনি এখানে City of Torontoতে কাজ করেন। উনার সাথে ফোনে যোগাযোগ হয়। উনার Scheduleএর সাথে আমার কাজের কনফ্লিক্ট তাই আমি আমার কাজ থেকে একদিন ছুটি নিয়ে বিকালে -২২ ডিগ্রি ঠান্ডায় লম্বা বাস ভ্রমণ করে উনার বাসায় যাই মূলত একজন প্রফেশনালকে দেখতে। কিছুক্ষন কথা হয়, এবং উনি বেশ কিছু পরামর্শ দেন। সব থেকে বড়ো জিনিস হলো উনাকে দেখে ওই যে আমার মনে আসার আলো এবং কনফিডেন্ট হলো যে একদিন হবে সেটি আমি এখনো ভুলি নাই, তবে সেই একদিন হতে আমার কিন্তু ৫/৬ বছর লেগে যায়। এর পরে এই রকম অনেকের কাছে গেছি, অনেকেই তাদের অবস্থান থেকে যতটুকু পেরেছেন, করেছেন আর তাদের সেই সহযোগিতা, আমার অদম্য আগ্রহ এবং আল্লাহর অশেষ কৃপায় সময় লাগলেও নিজের প্রফেশনে একটি জায়গা হয়েছে।
নিজের মধ্যে Self-Motivationতা তৈরী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং সাথে সাথে স্ট্রং নেটোয়ার্কিংয়েরও কোনো বিকল্প নেই। নিজে যদি না বুঝতে পারি যে “চেষ্টার মতো চেষ্টা” কাকে বলে, তাহলে কারো সাহায্য নিয়ে আগে শিখতে হবে চেষ্টার মতো চেষ্টা কাকে বলে বা কিভাবে করতে হয়, তারপর দেখবেন কাংখিত জিনিশ আল্লাহ ঠিকই দিবেন।
আমি যাদের নিয়ে কথা বললাম এদের সবাই কানাডার নাগরিক অথবা PR হোল্ডার এবং কানাডাতে লিগালি কাজ করার অনুমতি আছে। যাদের ওয়ার্কপারমিট নেই বা লিগ্যাল না তাদের বেপারটাতে আমি খুব একটা জানি না।