প্রবাসে হোমলেস দেখতে পাওয়া যায় সাধারণত ডাউন টাউনের অলি গলিতে অথবা শহরতলীর হাইওয়ের এক্সজিটের কাছে। এনাদের নিয়ে আমাদের মানে এই তথাকথিত ভদ্র লোকেরা বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়ে নিজেদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। প্রবাসী জীবনে এই হোমলেস দের নিয়ে কাজকরা আমার নেশা ও পেশা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এনাদের হয় মানসিক সমস্যা অথবা মাদকাসক্ত সমস্যা থাকে। আর দশজন মানুষের মতো এনাদের থাকে অনেক সুখের, অনেক দুঃখের কথা। চলুন, এই হোমলেস চরিত্রে অভিনীত প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের কথা একটু শোনা যাক।
(এই লেখাটি পড়ার আগে দয়াকরে হোমলেস বিষয়ক আমার প্রথম পর্বটি পরে নিলে আরেকটু মজা পাবেন। কম্পিউটারে বাংলা লেখার তেমন দক্ষতা নেই। তাই, বানানভুলগুলি দয়াকরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
———————————————————————–
চারিদিকে ঝলমলে সোনালী রোদ্দুর উপচে পড়ছে। সেপ্টেম্বরের সকালের হালকা শীতের আমেজ অনেকটাই কেটে উঠেছে। এতক্ষন ৪০১ ও ফিঞ্চ এক্সিটের কাছে হাটু গেড়ে বসে ছিল বাংলাদেশ বংশোভূত কানাডার টরন্টো নিবাসী হোমলেস নিজাম উদ্দিন। এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। আজ সকাল অবধি ইনকাম মনোযোগ দিয়ে গোনা শুরু করলো। ১৩ ডলার ৭৫ সেন্ট। একেবারে মন্দ না। শার্টের বুক পকেট থেকে একটু আগের নেভানো সিগারেট ধরাতে ধরাতে সময়টা আন্দাজ করে নিলো নিজাম উদ্দিন। বেলা এগারোটা সাড়ে এগারোটা হবে হয়তো। একটু ক্ষুধার ভাব মনে হচ্ছে। খালি পেটে সিগারেট তেমন ভালো লাগে না, কেমন যেন বমি বমি ভাব লাগে। হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে বোতল থেকে খানিকটা পানি খেয়ে নেয় নিজাম উদ্দিন। কফির তেষ্টা পাচ্ছে। কফি শপে যাওয়া যেতে পারে। টিমহর্টন হলে আরো ভালো হয়। একঢিলে তিন পাখি মারা যাবে। বাথরুম সারা যাবে, স্ন্যাকস জাতীয়ও ভারী কিছু খেয়ে লাঞ্চটাও সেরে ফেলা যেতে পারে। তারপর না হয় গরম কফিতে চুমুক দিয়ে সিগারেট। এতো হলো দু’টি পাখি মারার কথা। তৃতীয় পাখি মারার কথা সময় বলে দিবে ।
এখানে আসে পাশে খুব কাছে কোনো কফিশপ নেই। ফিঞ্চ ও কীল স্ট্রিটের কাছাকাছি একটি টিমহর্টন আছে, আগে প্রায়ই একটি বিশেষ আকর্ষণে ঘন ঘন সেখানে যেত নিজাম উদ্দিন। প্রায় মাস খানিক হলো ওদিকটায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা হাবিজাবি প্রয়োজনীয় জিনিস চটকরে গুছিয়ে নিয়ে কিল স্ট্রিটের দিকে হাটতে শুরু করে নিজাম উদ্দিন। প্রায় আধা ঘন্টা খানিক হাঁটার রাস্তা। কোনো তাড়া নেই। চারিপাশে তাকাতে তাকাতে হাটতে থাকে নিজাম উদ্দিন।
প্রায় মাঝামাঝি চলে এসেছে। সামনেই জেন স্ট্রিট পার হলেই প্রায় ১০/ ১৫ মিনিটের পথ। জেন স্ট্রিট পার হতেই ফিক করে একটু হেসে ফেলে নিজাম উদ্দিন। টরেন্টর মানুষ জেন/ফিঞ্চ শুনলেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠে। এদিকটায় কালো চামড়ার মানুষজন বেশি থাকে। অনেক সময় এরা অপেক্ষাকৃত বেশিভাবে অপরাধজগতের সাথে জড়িত থাকে। অপরাধ সব জায়গায় হয়, খালি খালি জেন/ফিঞ্চের দুর্নাম। নিজাম উদ্দিনের জানাশুনা অনেক কালো মানুষ আছে যারা অনেক অনেক ভালো মানুষ টাইপের। মানুষের মধ্যে এই সাদা – কালো বিভক্তি নিজাম উদ্দিনের তেমন পছন্দ না। সব মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার-র চিত্র একই ধরণের। তবুও কেন যেন মানুষের মধ্যে এত ভেদাভেদ। নিজাম উদ্দিনের লেখা পড়ার দৌড় কোনোরকমে টেনেটুনে জামালপুর কলেজ থেকে বিকম পাশ। নিজাম উদ্দিনের ধারণা চারিপাশে মানুষ যত তথাকথিত শিক্ষিত হয় ততবেশি জ্ঞান লোপ পায়। মানুষ মানুষকে অর্থ, বর্ণ, ধর্ম প্রভৃতিতে বিভক্ত করে সেভাবেই মূল্যায়ন করে। এ পর্যায়ে নিজাম উদ্দিন জেন স্ট্রিটের ধার ধরে হাটতে যেয়ে মনের অজান্তেই গুন্ গুন্ করে ভুপেন হাজারিকার গান ধরলো ” মানুষ মানুষের জন্য………..যদি দানব কখনোবা হয় গো মানুষ লজ্জাকি তুমি পাবে না..হে বন্ধু..”একবার ৪০১ হাইওয়ে ও ফিঞ্চ -এর কাছে নিজাম উদ্দিন যখন একটি গাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো গাড়ি-র জানালা নামিয়ে এক কালো ভদ্রলোক নিজাম উদ্দিনকে কাছে ডেকে একটি চক চকে ২০ ডলারের নোট বাড়িয়ে দিলো। নিজাম উদ্দিন কিছুটা থতমত খেয়ে বোকার মতো বললো, “নো, আই ডোন্ট হ্যাভ এনি চেঞ্জ “। কালো ভদ্রলোকটি মিটিমিটি হেসে বললো, ” নো ওরি , ইট ইজ ফর ইউ”। বলেই সা করে গাড়ি হাঁকিয়ে চলে গেলো। অনেক্ষন পর্যন্ত মুখ হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজা উদ্দিন ভাবতে থাকে, এই কালো মানুষদের নিয়ে অযথাই আমরা কত খারাপ ধারণা করে থাকি। মোটামুটি প্রায় কিল স্ট্রিটের কাছে চলে এসেছে নিজাম উদ্দিন। ক্ষুধা টা বেশ ঝামেলা পাকাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে আজ নাস্তা -টাস্তা কিছুই পেটে পড়েনি। নাস্তার কথা মনে হতেই ছেলে বেলার সকালের নাস্তার কথা মনে পরে নিজাম উদ্দিনের। আহা! সকাল বেলার বাংলাদেশের কত রকমারি নাস্তা। ঘুম থেকে উঠে গুড়ের ঝামা নিয়ে বসে মুড়ি খেয়ে পড়তে বসা।শীতের সকালে খেজুরের রস। তারপরে সকাল নয়টা নাগাদ রুটি, আলুভাজি, ডিম্ ভাজা। আবার কখনো গরম ভাতের সাথে ঝাল করে আলু ভর্তা। অথবা সবজি দিয়ে পাতলা খিচুড়ি। উঠানের এক পাশে একটি বেড়ার টিনের চালের চাপড়া দেয়া রান্না ঘর। পাশেই বাঁশ ঝাড়। দিনের বেলায়ও এদিকটা বেশ অন্ধকার থাকে। নিজাম উদ্দিনের একা একা বেশ ভয় করে। রান্না ঘরে রান্নার আয়োজন থাকলেও আবহাওয়া ভালো থাকলে রান্নার আয়োজন চলে উঠোনে থাকা চুলায়। বিশেষ করে সকাল বেলায় অধিকাংশ ক্ষত্রে নাস্তার পর্ব এই উঠানেই চুলা চত্বরেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। সব ভাই-বোন গোল হয়ে মাদুর পেতে বসে মা-কে ঘিড়ে ধরে। নাস্তা পর্বে দায়িত্ব ভাগ করা থাকে। মায়ের দায়িত্ব হলো বড় গামলা ভর্তি আটা নিয়ে পরিমাণমতো পানি মেখে ভালো করে ছেনে লাই বানানো ও গোল গোল বলের মতো দলা পাকিয়ে একপাশে সার করে রাখা। তারপরে, একেকটি গোলাকার আটার কাই এর সাথে কিছুটা কাঁচা আটা মেখে রুটি বানানো। শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে এই রুটি বানা কাজ টি মা খুব দ্রুততার সাথে করে থাকেন। কাঠের তৈরী বিশেষ পিড়াতে বেলুনি দিয়ে মা যখন রুটি বানাতে থাকেন, পীড়ার উপর রাখা গোলাকার আটার পিন্ড চ্যাপ্টা হয়ে বৃত্তাকার ভাবে ক্রমশ: আকারে বড় হতে থাকে ও চক্রাকারে পীড়ার উপর ঘুর্তে ঘুর্তে নিখুঁত ভাবে গোলাকার পূর্ণাঙ্গ রুটি তৈরী হয়, নিজাম উদ্দিন নেশার মতো মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং এই রুটি বানানো প্রক্রিয়াটি উপভোগ করে। মেঝো বোন চম্পার দায়িত্ব হলো খড়ির চুলায় জাল ঠেলা ও বড়বোন আসমা-র দায়িত্ব একটি একটি করে রুটি ভাজা। চম্পা কিছুটা কাজে ফাঁকি দিলেও আসমা খুব নিষ্ঠার সাথে প্রানপনে দায়িত্বপালনের চেষ্টা করে। তবুও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। এই যেমন একবার আসমা আপা কি যেন বিষয়ে ভাবতে যেয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। রুটি এক পাশে বেশ খানিকটা পুড়ে গেলো। মা খুব রেগে গিয়ে আসমা আপার গালে প্রচন্ড কোসে এক চড় মারলেন। “কোনো কাজে মন নেই, একটা কাজও তো ঠিকভাবে করতে পারিসনা , আটা কিনতে পয়সা লাগেনা? টাকা আসে কোথেকে একবার ভাবিস? সারাক্ষন শুধু টোটো করে ঘুরে বেড়ানো।” আসমা আপার ব্যাপারে মায়ের এই স্টেটমেন্টটা একেবারেই খাটেনা। বরং এটা খাটে মেঝো বোন চম্পা আপার ক্ষেত্রে। চম্পা আপার স্বভাব একেবারেই আসমা আপার উল্টো। পড়াশুনায় একেবারেই মন নেই। সারাক্ষন স্কুলে বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা, আর বাড়ী ফিরে পাড়ার সমোবয়সী ছেলে মেয়ের সাথে হৈচৈ করে বেড়ানো। তবুও কেন যেন মা চম্পকেই বেশি পছন্দ করেন। মন্টু ও নিজাম উদ্দিন পিঠা- পিঠি। মন্টু, নিজাম উদ্দিনের চেয়ে প্রায় দুই বছরের বড়। স্বভাবে কিছুটা হিংসুটে হলেও, খুব ভালো ফুটবল খেলে। মন্টুর সাথে চম্পা আপার বেশ ভাব। অধিকাংশ সময় আসমা আপা বই নিয়ে পরে থাকে। ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে পড়তে বসে। অথচ কোনো এক অদ্ভুত কারনে কেন জানি মা আসমা আপাকে দেখতে পারেনা। গায়ের বরং কিছুটা শ্যামলা হওয়ায় সারাক্ষন মা খোটা দিয়ে কথা বলে। নিজাম উদ্দিন আসমা আপাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আসমা অপার উপর এই অন্যায় নিজাম উদ্দিন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা।
আসমা অপার সাথে নিজাম উদ্দিনের বয়সের গ্যাপ প্রায় ১০/১২ বছরের। একবার নিজাম উদ্দিন বাবার একটি দামি কলম স্কুলে নিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলো। পরে আসমা আপা বাবাকে পটিয়ে পটিয়ে কথা বলে ম্যানেজ করে নিয়েছে। বাবা আবার আসমা আপাকে বেশ খাতির করে। আসমা অপার উপর বাবার এই ভালো আচরণের জন্য নিজাম উদ্দিন বাবার সব অপরাধ ক্ষমা করে দেয়। রুটি পুড়ে যাওয়ার অপরাধে মায়ের হাতে চড় খাওয়ায় আসমা অপার লজ্জিত, অপমানিত মুখটি নিজাম উদ্দিনের বেশ মনে পরে। এই পৃথিবীতে কত যে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে কে জানে। বাড়ির সবাইকে অবাক করে আসমা আপা মুনির হোসেন নামের একটা বখাটে টাইপের ছেলের সাথে পালিয়ে গেলো। বাবার সে কি হয়রানি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেলো আসমা আপা ওই ছেলেটিকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। মা আসমা আপাকে বাড়ির ত্রিসীমানায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। নিজাম উদ্দিন বেশ কিছুদিন মন খারাপ করে কাটিয়ে দিলো। একদিন শবেবরাত রাতে বাবা বললেন, “বাপজানরা চলো মসজিদে যাই, আজকের রাতে আল্লাহর কাছে যা চাইবি, তাই পাবি।” মন্টু, নিজাম উদ্দিন জটপট গোসল সেরে বাবার হাত ধরে মসজিদের দিকে রওনা হলো। পথে যেতে যেতে আল্লাহর কাছে কি চাওয়া যায় মনে মনে নিজাম উদ্দিন তার একটি লিস্ট তৈরী করে ফেললো: ১. স্কুলে যাওয়ার পথে হরিপদ কাকার মিষ্টি-র দোকানের মালিক হওয়া; ২. বন্ধু শরিফুলের মতো কালো রঙের চামড়ার জুতা; ৩. এসিস্টেন্ট হেড স্যারের অতি সত্তর অন্য স্কুলে বদলি ৪. মন্টুর মতো একটি লাটাই ও তিন খানা রঙ্গিন গুড্ডি . ৫. বাড়ীতে আসমা আপার ফিরে আসা।
এতগুলো লিস্ট আল্লাহর কাছে চাওয়া ঠিক হবে কি না বাবার কাছে কি একবার জিজ্ঞাসা করে নিবে? পরক্ষনেই একটু ভেবে নেয়। না থাক, আল্লাহর কাছে চাওয়া পাওয়া এসব ব্যাপারে বাবাকে না টেনে আনাই ভালো, বাবা- যদি আবার রাগ করেন। মন্টুকে বলা যেতে পারে। ওর আবার পেটে কথা থাকেনা। দেখাগেলো সব বন্ধুদের বলে দিয়ে একেবারে কেলেঙ্কারি অবস্থা। লোডশেডিং চলছে। মসজিদ চত্বর আঁধারে ঢাকা। টিম টিম করে ইমাম সাহেবের পাশে জ্বলছে কয়েকটি মোমবাতি। বারান্দায় একটু বড় ধরণের হারিকেন ছাদের বাটামের সাথে টাঙানো হয়েছে। এশার জামাত শেষ হয়ে শবেবরাত উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত চলছে। ইমাম সাহেব সুর করে কান্না/কাটি করে আরবি ভাষায় দোয়া করছেন. মসজিদের মুসুল্লিগন বুঝে না বুঝে আমিন আমিন বলে চলেছেন। বাবার পাশে বসে নিজাম উদ্দিন তার পূর্বের তৈরিকরা লিস্ট ছেঁটে ফেলে নিজের মতো করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে ” হে আল্লাহ মা যেন আসমা আপাকে মাফ করে দেন, আসমা আপা যেন বাড়ীতে ফিরে আসেন”। মোমবাতির আলোয় মসজিদের কেউ টের পেলোনা একটি সাত বছরের বাচ্চা ছেলে দুহাত তুলে বড় বোনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছে। নিজাম উদ্দিনকে অবাক করে চোখ বেয়ে টপ টপ করে কয়েক ফাটা জল গড়িয়ে পড়লো।
বন্ধুদের নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে গোপনে গোপনে আসমা অপার খোঁজ নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলো নিজাম উদ্দিন। অবশেষে, প্রায় ৫/৬ মাস খানিকের মাথায় স্কুল পালিয়ে নিজাম উদ্দিন বাজারের দক্ষিণ দিকটায় আসমা আপার স্বামী মুনির ভাইয়ের দোকানে যেয়ে হাজির। সার ও কীটনাশকের দোকান। দোকানে একপাশে কচু মাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নিজাম উদ্দিন। দোকানে মোটামুটি ভালোই ভিড়। কিছুটা সময় পরে, ভিড় খানিকটা পাতলা হলে মুনির হক দেয়: কি চাই?
নিজাম উদ্দিন ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “আমি আসমা আপার ছোট ভাই?
মুনির ভাই একলাফে দোকানের গদি থেকে নেমে এসে জড়িয়ে ধরে নিজাম উদ্দিনকে। “আরে আমার শালা বাবু যে !” নিজাম উদ্দিন কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে মুনির হোসেন। দোকানের কর্মচারীকে পাঠিয়ে পাশের হোটেল থেকে দুধের মালাই নিয়ে আসে। হোটেলে ভালো চা বানানোর জন্য অনেকক্ষন ধরে দুধ জাল দিতে হয়। ঘন দুধের উপর সরগুলিকে আলাদা ভাবে রেখে দেয়া হয় যাকে বলে দুধ-মালাই। অত্যন্ত মূল্যবান ধরণের খাবার। নিজাম উদ্দিন কে দোকানের গদির পাশেই একটি আলাদা চেয়ারে বসিয়ে রেখে একটি টেবিল ফ্যান সেট করে দেয়া হয়েছে। পিরিচে করে দেয়া হয়েছে দুধ মালাই। একটি সাগর কলা, দুটি গরম কলিজা সিংড়া। এত অতিথিয়তা দেখে নিজাম উদ্দিনের চোখে পানি এসে যাওয়ার মতো অবস্থা। ততক্ষনে প্রায় দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। দোকানে ঝাঁপ ফেলে মুনির হোসেন শালা বাবুকে নিয়ে চলে বাড়ির দিকে। বাড়িতে ঢুকেই চিৎকার, “এই দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?” নিজাম উদ্দিনকে দেখে আসমা আপা খুশিতে ডগমগ। একেবারে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। নিজাম উদ্দিনের সমস্যা হচ্ছে সহজে কাঁদতে পারেনা। নিজাম উদ্দিন লাজুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। আসমা আপার হাজার রকমের প্রশ্ন: “এই বাবা কেমন আছেরে ? মন্টু এবার ফুটবলে প্রাইজ পেয়েছে ? চম্পা টা ঠিকভাবে পড়াশুনা করছে ? সোহেল বাবু কি কি নতুন শব্দ শিখেছে ? তুই কি স্কুল ফাঁকি দিয়ে এখানে এসেছিস? তোর শরীরের এই অবস্থা কেন, গা থেকে বোটকা গন্ধ বেরুচ্ছে, গোসল করিস না কয়দিন হলো?” গড় গড় করতে এক নাগাড়ে আরো অনেক কথা বলতে থাকে আসমা আপা। নিজাম উদ্দিন এক সাথে এত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার অতীত কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আপার দিকে। আসমা আপা একে একে সবার কথা জিজ্ঞাসা করে। একফাকে মুখটা কাছে টেনে নিয়ে মায়ের কথা ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করে। মা-কি এখনো আমার উপর রেগে আছে? নিজাম উদ্দিন মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করে ওবাড়িতে আসমা আপার নিষিদ্ধ আইন এখনো বলবৎ আছে।
দুপুরের খাবার সেরে আসমা আপা ও মুনির হোসেন অনেকটা পথ নিজাম উদ্দিনকে এগিয়ে দিতে আসে। বিদায় মুহূর্তে আবারো কান্নাকাটি পর্ব। “সাবধানে বাড়ী যাবি। আর কখনো স্কুল ফাঁকি দিবিনা। বাবাকে বলিস আমরা ভালো আছি”। মুনির হোসেন শালা বাবুকে চক চকে একটি দশ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দেয়। নিজাম উদ্দিন যত্ন করে টাকাটি বইয়ের ভাঁজে রেখে দেয়। অনেকদূর হাঁটার পর নিজাম উদ্দিন পিছন ফিরে দেখে তখনও আসমা আপা কাঠের পুতুলের মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেই শেষ দেখা। প্রায় মাস সাতেক পরে খবর আসে আসমা আপা বাচ্চা প্রসব করতে যেয়ে মারা গিয়েছে। আসমা আপার মৃত্যুর খবর শুনে নিজাম উদ্দিন হতবম্ভ হয়ে পরে। খাড়া দুপুর বেলা নির্জনে পুকুরপাড়ে কুল গাছের নিচে বসে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে নিজাম উদ্দিন। কেঁপে কেঁপে উঠে নিজাম উদ্দিনের শরীর। বাবা আসমা আপার শোকে পাথর হয়ে শয্যাশায়ী। প্রায় চার মাস যুদ্ধ করে অবশেষে বাবা মারা যান।
ছেলেবেলার কথা মনে করতে করতে টিম হর্টনে প্রায় চলেই এসেছে নিজাম উদ্দিন। ফটকের মূল দরজা পেরিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে পরে নিজাম উদ্দিন। বাথরুম সেরে আয়নায় নিজের মুখটা দেখে নেয়। অনেকদিন চুল কাটা হয়নি। লম্বা চুলে পিছনের দিকে কিছুটা জট পেকে গেছে। মাথায় একটু পানির ছাটা দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো একটু ঠিক ঠাক করার চেষ্টা করে নিজাম উদ্দিন। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ক্যাশিয়ারের দিকে এগুতে এগুতে ব্যাকুল ভাবে কোনো এক পরিচিত মুখ খুজতে থাকে নিজাম উদ্দিন। তবে কি কফি, স্নাক্স এর অর্ডার দেয়ার চেয়োও নিজাম উদ্দিনের কাছে সেই পরিচিত “মুখ” খোঁজা খুব গুরুত্বপূর্ণ ? নিজাম উদ্দিন এই টিমহর্টনে যে পরিচিত মুখ খুজছে তার ব্যাকগ্রাউন্ডটা একটু শুনা দরকার।এটা হচ্ছে সেই তৃতীয় পাখি মারার কথা, যা নিজাম উদ্দিন আধা ঘন্টা খানিক আগে একঢিলে তিনটি পাখি মারার কথা ভাবছিলো। আসে পাশে আরো অনেক কফি শপ থাকলেও এই নির্দিষ্ট কফি শপের উপর তীব্র আকর্ষণের পিছনে রহস্য হচ্ছে একটি মহিলা ক্যাশিয়ার।
মহিলাটির হালকা-পাতলা গড়ন, কিছুটা লম্বাটে। গায়ের রং ফর্সা। কথা বলার ভঙ্গি, হাসির ধরণ হুবহু নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী রুপার মতো। এমনকি রুপার মতো থুতনির নিচে ছোট্ট একটি আঁচিল। পৃথিবীতে কত রহস্য জনক ঘটনাই না ঘটে। নিজাম উদ্দিন অনেকদিন অনেক রাত ভেবে ভেবেও এই মহিলার সাথে রুপার এই যে এতো মিল কিছুতেই এর রহস্য ভেদ করতে পারিনি। নিজাম উদ্দিন প্রথম যেদিন এই টিমহর্টনে কফি খেতে এসেছিলো এই ক্যাশিয়ার মহিলাটিকে দেখে এতটাই অবাক হলো যে বেকুবের মতো হাঁ করে তাকিয়ে থেকে মহিলাটির হাত থেকে কফি নেয়ার সময় কফির কাপ উল্টা ফেললো। চোখের পলকে গরম কফি নিজাম উদ্দিনের হাত গোলে কনুই অবধি ছড়িয়ে পড়লো। মহিলাটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে দৌড়ে একবার বরফ, একবার ফাস্ট -এইড বক্স নিয়ে টানাটানি। গরম কফির উত্তাপের কথা ভুলে তাকে নিয়ে মহিলাটির এই যে ব্যাস্ততা, উৎকণ্ঠা নিজাম উদ্দিনের কাছে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠলো। মহিলাটির জায়গায় স্ত্রী রুপাকে দাঁড় করিয়ে ঘটনাটি ভাবতে থাকে নিজাম উদ্দিন। অন্তত একটি জায়গায় রুপার সাথে এই মহিলার পার্থক্য পাওয়া গেছে। রুপা হলে কি এভাবে তাকে নিয়ে উৎকণ্ঠা হতো? রুপা কি তাকে নিয়ে এত ব্যাস্ত হয়ে পড়তো ? নাকি বেকুব, উম্মাদ বলে অপমানে জর্জরিত করতো? নিজাম উদ্দিনের মনে পরে যায় বছর সাতেক আগে রুপা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সপ্তাহ খানিক আগের ঘটনা। চির দিনের অভ্যাসমতো রুপা নিজাম উদ্দিনের জন্য খাটের পাশের মাথার দিকটায় রাখা ছোট্ট টেবিলে পিরিচ দিয়ে কাচের গ্লাসে পানি ঢেকে রেখেছে। মাঝরাতে নিজাম উদ্দিনের পানি খাবার বাতিক। রুপা প্রায় আধা ঘন্টা আগে শুয়ে পড়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নাজিম উদ্দিন শুয়ে থাকে দেয়াল ঘেঁষে, পাশেই বড় জানালা। রুপার পছন্দমতো খটের শুরুতেই রুপার শোয়ার ব্যাবস্থা। প্রায় মাস খানিক হলো বাল্য বন্ধু একরামকে নিয়ে নিজাম উদ্দিনের সাথে রুপার সম্পর্কের কিছুটা টানাটানি চলছে, খুব দরকার ছাড়া কথা বার্তা তেমন হয়না। যেমন, রুপা বললো : বাসায় ব্রেড শেষ হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনের জন্য কিছু নেই, ব্রেড কিনতে হবে। অথবা, নাজুর গায়ে বেশ জ্বর , ও কে ওয়াকিং ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে। নিজাম উদ্দিন কোনোরকম ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে প্রানপনে চেষ্টা করে রুপার দেয়া এসব কাজগুনি যেন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পারে। তারপরেও কেমন করে যেন গোল বেঁধে যায়। এই যেমন আজরাতে ব্যালকনি থেকে রাতের শেষ সিগারেট খেয়ে বিছানায় শুতে যাওয়া মুহূর্তে কি করে যেন হাত লেগে পানি ভর্তি গ্লাস উল্টে পড়লো। রুপার গা ভিজে একাকার। রুপা তড়িৎবেগে দাঁড়িয়ে পরে। সদ্য ঘুম ভেঙে টকটকে লাল বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে নিজাম উদ্দিনের দিকে। রুপার ভয়ার্ত মূর্তি দেখে নিজাম উদ্দিন কিছুটা ঘাবড়ে যায়। “মুখ থেকে ভোক ভোক করছে সিগারেটের গন্ধ, উম্মাদ জানোয়ার কোথাকার, চোখে দেখতে পাওনা?” বলেই, রুপা নিজাম উদ্দিনকে হালকা ধাক্কা দিতেই মেঝেতে পরে যায় নিজাম উদ্দিন। মাথায় রক্ত চরে যায় নিজাম উদ্দিনের। বিশ্রী গালমন্দ খেয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। “কি বল্লি , আমি উম্মাদ? আমি জানোয়ার? দাড়া, দেখাচ্ছি মজা”। নিজেকে সত্যি সত্যি এক হিংস্র জানোয়ার মনে হয় নিজাম উদ্দিনের। হঠাৎকরে রুপার চুল ধরে কিল ঘুষি মারতে থাকে। নিজাম উদ্দিনকে অবাক করে রুপা সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত থেকে সটান হয়ে কাঠের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝরাতের কুৎসিত বাবা মায়ের ঝগড়ায় পাশের ঘর থেকে মেয়েটি দৌড়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে মা-কে জড়িয়ে ধরে। ছেলেটি দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে। মুহূর্তেই, রুপার চোখের বাদিকটার নিচে নীলচে হয়ে ফুলে যায়। সেদিনের কথা মনে হতে, নিজাম উদ্দিনের বেশ অস্বস্থি লাগে। সেদিন বড় ফাড়া বেঁচে গিয়েছিলো নিজাম উদ্দিন। রুপা বা বাচ্চারা যদি পুলিশে ফোন করতো, নিজাম উদ্দিনের নির্ঘাত জেল জয়ে যেত। সে রাতের কথা ভেবে, এই টিম হর্টনের মহিলার হাত থেকে কফি নেয়ার সময় নিজের হাতে গরম কফির উত্তাপ সহ্য করে প্রায়শ্চিত্ত করে নিজান উদ্দিন। হুবহু রুপার মতো দেখতে এই ক্যাশিয়ার মহিলাটি নিজাম উদ্দিনকে ভীষণভাবে রুপাকে মনেকরে দেয়। রুপা চলে যাওয়ার প্রায় সাত বছর হয়েছে। এই সাত বছরে রুপাকে নিয়ে একধরেণর জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে করেছে নিজাম উদ্দিনের মনের ভিতর। একরামের সাথে রুপার ভেগে যাওয়া ঘটনাটির জন্য নিজাম উদ্দিন রুপাকে কিছুতেই মাফ করে দিতে পারে না , আবার একই সঙ্গে রুপার প্রতি বছরের পর বছর অবহেলা, বন্ধুদের সাথে মেসে আড্ডা দিয়ে গভীর রাতে বাসায় ফেরা, রুপার সাথে কুৎসিত আচরণ, গায়ে হাত তোলা ইত্যাদি ভাবনা গুলি নিজাম উদ্দিনকে বেশ অপরাধী করে ফেলে। তাই, রাগ-অভিমান-প্রায়শ্চিত্ত ইত্যাদি মিশ্রিত হয়ে এক ধরনের আলাদা এক অনুভূতি সৃষ্টি হয় রুপাকে কেন্দ্র করে। অনেক দিন অনুসরণ করে নিজাম উদ্দিন জানতে পেরেছে এই ক্যাশিয়ার মহিলাটি সোম, মঙ্গোল, বুধ এই তিন দিন ভোর সাতটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত কাজ করে। উইকএন্ডে কখনো কখনো বিকাল তিনটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত কাজ করে, তবে কোন উইকেন্ডে কাজ করে এটা নিশ্চিত না। আজ সোমবার দুপুর প্রায় বারোটা. তাই, নিজাম উদ্দিন ব্যাকুল ভাবে ক্যাশিয়ার মহিলাটিকে খুঁজতে থাকে।
একসময় মহিলাটিকে দেখতে পেয়ে নিজাম উদ্দিনের চোখ খুশিতে চিক চিক করতে থাকে। এগিয়ে গিয়ে অর্ডার দেয়: একটি বেগল, টোস্টেড উইথ ক্রিম চিজ, একটি লার্জ ডাবল ডাবল কফি। কফি নেয়ার সময় আর ভুল হয় না নিজাম উদ্দিনের। সাবধানে এক হাতে কফি, ও এক হাতে বিউগল নিয়ে টিম হর্টনের বাহিরের ফুটপাথের এক কোনায় বসে পরে নিজাম উদ্দিন। ইচ্ছা করলে ভিতরেও বসা যেতে পারতো। দেশে যেমন নিজাম উদ্দিন গোত্রীয় মানুষদের রেষ্টুরেন্টের ভিতরে বসে খাওয়া ভাবাই যায় না, কিন্তু এসব দেশে তেমন না। এখানে ধনী গরিব সবার ছেলে মেয়ে একই স্কুলে যায়, একই পার্কে খেলা ধুলা করে, এমন কি একই রেস্টুরেন্টে খেতেও কোনো বিধি নিষেদ নেই। তবুও, নিজাম উদ্দিন লোকালয় এড়িয়ে চলে। বাহিরের ফুটপাথে বসে দ্রুত বিউগলটি খেয়ে ঢোক ঢোক করে পানি খেয়ে গরম কফিতে চুমুক দেয়। আরাম করে আধপোড়া সিগারেটে টান দিয়ে উপরের দিকে কুন্ডলি সৃষ্টি করে সিগারেটের ধূসর ধুঁয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মানুষ বড়োই বিচিত্র এক প্রাণী। মানুষের মাঝে মানুষের সম্পর্ক আরো বেশি বিচিত্র। মানুষের এই সম্পর্ককে গ্রাম বাংলার নদী/নালার মতো মনে হয়। সম্পর্কের মতো, এই গ্রাম বাংলার নদী/নালাগুলি বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ রূপ নেয়। খরার সময় একরকম। বর্ষাকালে আরেক রকম। খরার সময় যে যদি/নালা গুলি শুকিয়ে একাকার অবস্থা , বর্ষাকালে তা যেন আবার জেগে উঠে। মানুষের জীবনেও চৈত্রী আসে, বসন্ত আসে, বর্ষা আসে। একেক মানুষের ভালো দিন যায়, খারাপ দিন যায়। মানুষ বেছে বেছে কেবল ভালো দিন গুলিতেই পাশে থাকতে চায়। এক সময় নিজাম উদ্দিনের সোনালী সংসার সুখে টুইটুম্বর ছিল। ছেলে-মেয়ে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে এই টরেন্টো শহরে কতোই না মজায় কেটেছে। নিজাম উদ্দিনের জীবনে এখন চৈত্রের খরা চলছে। অর্থ নেই, বন্ধু বান্ধব নেই , এমন কি থাকার কোনো জায়গাও নেই। এক বানের জলে ভেসে গেছে সবকিছু। বন্ধুরূপী লোভী একরাম রুপাকে ছিনিয়ে নিয়ে ওলোটপালোট করেছে নিজাম উদ্দিনের জীবন। তার সাথে, দিনের পর দিন ঔষুধ না খাওয়ায় সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জীবনেরএই শুকিয়ে যাওয়া নদীতে একা দাঁড়িয়ে নিজাম উদ্দিন হাই-ওয়ের কাছে গাড়ি থামার অপেক্ষায় থাকে। একেকটি গাড়ি থামে আর ধীর পদক্ষেপে এগিয়েই যায়, কিছু ডলার, বা কিছু ভাংতি পয়সা/অথবা পানির বোতল। দিন যায়, দিন আসে।প্রবাসে বাংলাদেশিরা ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, পিঠা উৎসব, বসন্ত উৎসব প্রভৃতি উৎসবে মুখর হয়ে উঠে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা কানাডার এই সংক্ষিপ্ত সামারে লেকের পাড়, অথবা পাকের সবুজ চত্বরে জেলা সমিতি, প্রফেশনাল এসোসিয়েশন ইত্যাদিতে আঁনন্দে মেতে উঠে । সেখানে নানারকম খেলাধুলা হয়, হাসি তামাশা হয়। রং বেরঙ্গের হরেক রকমের ফুলের পাশে ছবিতুলে স্থায়ী করে রাখতে চায় তাদের সুখময় স্বৃতি সমূহ। বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পাড়ে এই প্রবাসে একজন ‘হোমলেস নিজাম উদ্দিন’ অপেক্ষায় থাকে একটি বর্ষাকালের জন্য। আবারো যদি কোনো দিন জেগে উঠে তাঁর শুকিয়ে যাওয়া সুখের নদী। (চলবে)।
Simply stunning write up Jakaria bhai! Keep writing!!!
জাকারিয়া ভাই,
আবারো একটা সুন্দর লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এ যেন একের মধ্যে অনেক ..প্রবাস জীবনের এক অজানা সত্য।
হয়তো এটাই বাস্তবতা। আলোর নিচেইতো থাকে অন্ধকার।