নরওয়ে থেকে:-
আমরা যখন সদানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম তখন স্কুলের দরজা জানালা বলতে কিছুই ছিলোনা, শুধু একটা টিনের ছাদওয়ালা পাকা শক্ত সামর্থ বিল্ডিং ছিল। স্থানীয় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দরজা জানালা লাগানোর ফান্ড পাওয়া যায়নি বলে স্কুলে দরজা জানালা ছিলোনা। ঝড়ের দিনগুলোতে কিভাবে যে স্কুলের ক্লাসগুলো করানো হতো তা এখন আর মনে নাই । হাই স্কুলে প্রায় শ্রেণী কক্ষগুলোতে মাটির ফ্লোর ছিল, বসবার জন্য তেমন বড়ো শ্রেণী কক্ষ কিংবা টেবিল, বেঞ্চ ছিলোনা, দেয়ালে বা ছাদে সিমেন্টের ভালো কোনো পরত কিংবা রং করা ছিলোনা। গরমের দিনে ক্লাস করতে অন্তরটা হাপিয়ে উঠতো । ক্লাসে কোনো সিলিং ফ্যান ছিলোনা , তাই ক্লাস নাইনে পড়বার সময় অনেকবার এ নিয়ে প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করতে হয়েছিল আমাদের। সিলেট এম সি কলেজে যখন পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ি, ইচ্ছে করেই বেশিরভাগ শিক্ষক ভালো করে ক্লাস নিতেন না , কেননা তাতে করে প্রাইভেট পোড়ানোর যে সুযোগ ওনাদের আছে তা হয়তোবা হাতছাড়া হয়ে যাবে ।
১৫-২০ বৎসর আগে বাংলাদেশে পড়ালেখা করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, ছিল ভালো শিক্ষকদের অভাব, আবার শিক্ষকদের মাঝেও ছিল না পাওয়ার অনেক বেদনা, অনেক হতাশা, অনেক অনীহা, অনেক অপ্রাপ্তি। তারপরও যতদূর পারি আমরা লেখাপড়া করেছি, চেষ্টা করেছি মানুষের মতো মানুষ হবার। সিলেট এম সি কলেজ জুড়ে আমাদের ২০০১-২০০৬ ব্যাচের একটা ছেলে মেয়েও নাই যারা ভালো কোনো পর্যায়ে নাই। যেখানেই যাকে দেখি, সবাই ভালো কোনো কিছু করছে, ভালো কোনো পদ নিয়ে দেশে কিংবা বিদেশে ভালোই আছে। পড়ালেখা করতে, পড়ালেখা করে ভালো কিছু হতে,, ভালো একটা চাকরি করতে কোনো প্রতিবন্ধকতাই আপনাকে থামাতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ইচ্ছা শক্তি আপনার সাথে আছে।
বর্তমান বাংলাদেশ অবকাঠামো খাতে অনেক এগিয়ে গেছে , শিক্ষকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শত শত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , আস্তে আস্তে প্রাইমারি লেভেল পর্যন্ত শিক্ষাদান সহ অনেক কিছু ডিজিটালাইজেড করে ফেলা হচ্ছে, শিক্ষকদের বেতন ভাতা আগের চেয়ে অনেকগুন্ বাড়ানো হয়েছে, অনেক স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খাবারও পরিবেশন করা হচ্ছে।
যে যাই বলুন না কেন, শিক্ষা , অবকাঠামো, এক্সপোর্ট এবং অন্নান্য অনেক খাতে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে, এখন শুধুমাত্র নৈতিক এবং সুশিক্ষিত মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে হবে, সুনিশ্চিত করতে হবে দেশপ্রেমী সুদক্ষ এমন এক তরুণ প্রজন্ম যারা আগামীর চেলেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে এমন এক উচ্চতায় যেখান থেকে ইন্ডিয়া কিংবা পাকিস্তান সহ আশেপাশের অনেক দেশকেই বাংলাদেশের সামনে অনেক ছুটো মনে হবে।
এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অপেক্ষায় রইলাম।
বেলা শেষে আবার ঘরে ফেরা হবে জানি, ফিরতে পারি যেন এক সমৃদ্ধ সোনালী বাঙলায় ।