ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড, নরওয়ে থেকে:-
মুজিব খান, আমাদের সিলেটের বিশ্বনাথের ছেলে, আমার কাছে ছোটো ভাই এবং বন্ধুর মতো। অনেক ছোট বয়সে প্রায় ১৭ বছর আগে মুজিব নরওয়েতে আসে। বর্তমানে দক্ষিণ নরওয়ের অনিন্দ্য সুন্দর শহর ফারসুন্দ শহরে মুজিবের বসবাস। ফারসুন্দ শহরের উপকণ্ঠে সমুদ্রতীরবর্তী বার্গার কিংয়ের যে শাখা আছে সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানাজার হিসাবে খুবই সম্মানের সহিত কাজ করে মুজিব। বিগত দশ বছর ধরে পরিচয় বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতির কারণে মুজিব আমাকে তার নিজের আপন বড়ো ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করে, আমার কাছেও মুজিব অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ। দক্ষিণ নরওয়ের বিভিন্ন শহর জুড়ে বসবাসকারী আমরা সকল বাংলাদেশিরা একে ওপরের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল এবং সবাই একে অন্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলাফেরা করতে পছন্ধ করি। দক্ষিণ নরওয়ের স্টাভাঙ্গার শহরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশিদের বসবাস এবং নরওয়েতে বসবাসকারী বেশিভাগ বাংলাদেশীই সুশিক্ষিত এবং সবার মাঝে কেমনজানি ভালোবাসার একটা মেলবন্ধন আছে।
তো যাই হোক, দশ বছর আগে মুজিবের সাথে প্রথম যখন দেখা হয় ওর বয়স খুবই কম ছিল। বর্তমানের চেয়ে অনেক পাগলাটে, খামখেয়ালি এবং দুর্বার ছিলো মুজিবের জীবন। কিন্তু বিগত দশ বছরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ও অনেকটা পালটে গেছে, অনেক ধীর স্থির মুজিবকে দেখলে দশ বছর আগের মুজিবের সাথে তুলনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে মুজিব দশ বছর আগে যে প্রানোচ্ছল, হাসি খুশি টগবগে যুবক ছিলো, এখনো ও ঠিক আগের মতোই প্রানোচ্ছল আছে। ওর জীবনী শক্তি দেখলে মাঝে মাঝে হিংসা হয়,, হিংসে হয় এ জন্যই যে ওর মতো লাফ দিয়ে জীবনকে উপভোগ করবার মতো প্রাণশক্তি আমার আর নেই। ও প্রাণখোলা, তারুণ্যে ভরপুর খুবই ভালো একটা ছেলে। দেশে ফেলে আসা স্বজনদের জন্য এ বয়সেই মুজিব যা করেছে, অনেকেই সারা জীবন প্রবাসে থেকেও তা করতে পারেন না। দেশে ফেলে আসা ওর স্বজনদের জন্য ওর ভালোবাসা অনন্য।
২০১৮ সালের এক বিকেলে হঠাৎ করে মুজিবের ফোন,, জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
মুজিব বলল,_ যে করেই হোক আগামী তিন ঘন্টার ভেতর ফারসুন্দ আসতে হবে, ওর নাকি বিয়ে।
আমার দোকান তখন খুবই ব্যস্ত ছিল , তারপরও মুজিবের বিয়ে , আমি না গেলে কি আর হয়? তাই ড্রাইভারকে বলাম গাড়ী নিয়ে চলে আসতে। তিন ঘন্টার ভেতর বিয়ের ফুল নিয়ে আমরা বন্ধুরা ওখানে গিয়ে হাজির হই ,,
কনে পাকিস্তানী এবং কনের পক্ষের কেউ না থাকায় কনের উকিল বাপের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ঘাড়ে। যাই হোক, অনেক আনন্দ ফুর্তির মাঝে সুন্দরভাবে মুজিব শাবানার বিয়েটা সম্পন্ন হয়।
আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা অধ্যায়ই গল্প,
আর প্রত্যেকটা গল্পের মাঝে জুড়ে আছে অনেক মুজিব -শাবানার প্রেমের ছোট্ট গল্পগুলো ।