ইন্টারভিউ পাবার পর খুব খুশী লাগছে , কাজ হোক বা না হোক কল তো পেয়েছি ! এই খবর বেশী ক্ষন মনে চেপে রাখতে পারলাম না , কিছু কাছের বন্ধুকে বললাম । অনেকেই বিস্মিত! কি অবস্থা চাকুরী বা কাজের। যে কোন কাজের জন্য এপ্লাই করলেই দেখা গেল একটা পজিশনের জন্য ২০/২৫ জন প্রার্থী । সহজে শুনিনা কারো চাকুরী হয়েছে । ইতিমধ্যে আমাদের দেশী কয়েক ভাই এর চাকুরী হয়েছে ফেডারেল গভঃ সেটাই তখন অনেক বড় খবর আর সেখান থেকে অনূপ্রাণিত হয়েই নব উদ্যোমে পড়তে আসা !!
পরের দিন ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুতি নিলাম , আর এই ব্যাপারে সাল্ভেশন আর্মির প্লেসমেন্ট টা অনেক কাজে দিয়েছে । ইন্টারভিউ ফেস করার আগে কিছু বিষয়ে জানা খুব জরুরী । যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে জানা , ” নিজের সম্পর্কে বলতে বলবে ” এইখানে নিজের ঢোল পেটাতে পারেন তবে ১ মিনিটের বেশী না । কেন তুমি এখানে কাজ করতে চাও? এখানে তোমাকে হায়ার করলে কোম্পানী কি পাবে তোমার কাজ থেকে ? তোমার চরিত্রের স্ট্রং আর উইক পয়েন্ট গুলো কি ? এসব প্রশ্নের উত্তর যদি কেউ স্ট্রেইট বসে চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়ে আসতে পারে, ধরা হয় চাকুরীটা হবে । সব প্রশ্ন গুলোই থাকে জব রিলেটেড। ( পৃথিবী গোল না লম্বা তা জিজ্ঞেস করে না ) আমার ইন্টারভিঊ ভালো হলো ,আশাবাদী হলাম কেন যেন মনে হলো কাজ টা হবে । সবার শেষে এরা একটা কথা জিজ্ঞেস করে , তা হলো তোমার কিছু বলার আছে কি না !! আমার কাজ টা হবে কি না কবে জানতে পারব জিজ্ঞেস করলাম । তারা আরোও লোকের সাক্ষাতকার নিয়ে , রেফারেন্স চেক ক রে ২/১ দিনের মধ্যেই জানাবে বলে দিল । এখানে আপনি যখনই আসেন যে কোন কাজের জন্য এদেশের এক্সপ্রিয়েন্স আর রেফারেন্স চাবে । সেটা অর্জন করতে হলে ফ্রি কাজ ( ভ্লান্টিয়ারী) ছাড়া গতি কি ! আমাকে কে চিনে এখানে ! আর সেটাই আমি করে আসছিলাম সব সময় ।
আমি যখন টরোন্টো ছিলাম একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কয়েকজন আমাকে । তখন একটা বাংলা জার্নাল বের হতো আমি ই বোধ হয় প্রথম কেউ ভ্লান্টারী করেছিলাম সেই লেখাগুলো অক্ষরে বিন্যাস করে দেবার । মুনির অপ্টিমা ফ্লপী ডিস্কে বাংলা সফট । একটা অক্ষর লিখতে তিনটা কি বোর্ড চাপতে হয় । অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও রাত জেগে কাজটা করেছি । এর সাথে যুক্তছিলেন দীনু বিল্লাহ, ইকবাল করিম হাসনু, ওয়াহিদ আসগর , হিমানী বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ । আমি ৫ টা জার্নালে কাজ করেছি পরে সময়ের অভাবেই আর করা হয় নি । আর ছোট গল্পকার সাদকামালী ভাই এর প্রথম গল্পের বই এর অক্ষর বিণ্যাস ও আমার করা । ঢাকায় ওনারা নিয়ে যেতেন ফল্পি ডিস্কে বই বের করার জন্য । কাজ গুলো আমি করেছি নিজের ভালো লাগা থেকেই । আমি দুপুরে বসে সাদী ভাই এর বই নিয়ে কাজ করছিলাম , ফোন এলো ওয়াল্মার্ট থেকে ” চাকুরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি” !! খুশীতে চোখে পানি চলে এলো । পরের দিন ই যেতে বললো ট্রেনিং জন্য ।
মেয়েরাও খুব খুশী বাবা ছাত্র হলেও মায়ের কাজ হলো ।তারাও প্রতিদিন নিত্য নতুন জিনিষ শিখে আসে স্কুল থেকে । বড় মেয়ে বুদ্ধি করে অনেক কিছু না বললেও মেজো টা যা শিখে আসে গড় গড় করে বলতে থাকে । ” I know everything” তাদের অনেক কথার সারাংশ । আমি বুঝতে পারলাম কি জানে তারা । কারন ফর্মে আমি সাইন করেছি । এখানে ক্লাশ ফাইভ থেকে ছেলে ও মেয়েদের হরমোনাল চেঞ্জের কারনে শারিরীক যে সব পরিবর্তন ঘটে তা বোঝানো হয় । আর বড় কন্যা শিখে আসছে টিন এজ প্রেগ্নেন্সী প্রতিরোধ , আর এর অপকারিতা সম্পর্কে । পাব্লিক হেলথ থেকে নার্স এসে সব ক্লাশ নেয় । অন্য সবার বাসায় এক ই অবস্থা তাদের পুত্র কন্যারাও সব বিদ্যা শিখছে । কিন্তু আমরা জানি এখানে ক্লাশ টিচার অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ক্লাশে এসব প্রেজেন্ট করে সুতরাং বোর্ডের কারিকুলাম তারা ফলো করবে । আর ওদের জানা দরকার , লুকোচুরি করাতে আমাদের দেশের বাচ্চারা অনেক কিছু জানতে পারে না,আর ভুল করতে থাকে । আর এখানে ভুল থেকে শেখার সুযোগ দেয়।
এবার আসি ট্রেনিং এর কথায় । ট্রেনিং এর প্রথম কথাই যে কোন সেক্টরে কাজ করতে গেলে অবশ্যই সবাইকে রেস্পেক্ট করতে হবে । হাসি মুখে কথা বলতে হবে । কাস্টমার সব সময় রাইট , ভুল বললেও প্রমান করা যাবে না। । কোন গসিপ করা যাবে না অন্য কলিগদের নিয়ে !! পার্সোনাল হাইজিন এসব শিক্ষার পর যেটা দেখলাম ভিডিওতে তা হলো এখানে বড় বড় সুপার স্টোর গুলোতে কি ভাবে চুরি হয় । আমাদের দায়িত্ব চোর ধরা না , নিজের চোখ খোলা রাখা ।আর ক্যাশ রেজিস্ট্রারে ডাকাত আসলে ক্যাশ ছেড়ে দিতে হবে । নিজের সেফটি ফাস্ট । এখানে হাজার হাজার ডলার চুরি হবে কোম্পানী গুলো তা জেনেই বাজেট করে ,আর সিকিউরিটি রাখে । যাহোক এসব অভিনব কায়দায় চুরির দুই একটা বলি । যেমন কেউ কোন কম্ফোটার (লেপ) কিনবে , যদি প্যাকেট এর চেন টা খুলতে পারে দেখা যায় দামী প্রাইজ ট্যাগ টা সরিয়ে কম দামী টা রেখেছে । আর ক্যাশিয়ার কিন্তু ওটাই স্ক্যান করবে । আর এর ভিতরে যা পারে লুকাবে । সুতরাং কাস্টমার বুঝবে না দায়িত্ব ক্যাশিয়ারের এসব দেখা । ট্রলির নীচে জিনিস রেখে দিবে ভুল হতে পারে কিন্তু হাসি মুখেই বলতে হবে তুমি বোধ হ য় ভুলে গেছো ওটা রেজিস্টারে দিতে । আমার মাথা ঘুরায় এতসব মনে রাখতে যেয়ে ,স্টোর ম্যানেজার আর কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার অভয় দেন এসব ব্যাপার না ! সাহসী হই । আবার ও বাস্তবতাকে মেনে নেই , কানাডা মাল্টিকালচারাল দেশ , সারা পৃথিবী থেকে লোক এসেছে এখানে সুতরাং সব ধরনের জিনিয়াস রাই তো আছে এখানে !
চলবে:-