টেম্পুতে গন্তব্যের ভাড়া যদি ১০টাকা হয়, তবে সকালে বিকালে, দশদিন আগে পরে ১০টাকাই। কিন্তু বিমানের তা নয়, সকালে এক তো বিকালে আর এক। দশ দিন আগে পরে বিস্তর তফাৎ। দর কষাকষিও চলে। মাঝে মাঝে ভাবি ,কার মর্যাদা বেশি?টেম্পু মালিকের, না বিমান মালিকের?
অভ্যন্তরীণ ছোট উড়োজাহাজকে আমার কাছে ছিপ নৌকার মত মনে হয়। ঠিক তেমনই একটা ছিপ নৌকায় আকাশে ভেসে ভেসে এসে,ডেট্রয়েট থেকে শিকাগোর ওহারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসে আছি কাতার এয়ারওয়েজ এর অপেক্ষায়।
তেরো ঘন্টায় আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে পৌঁছাবো দোহা। যাত্রা বিরতি নিয়ে পাঁচ’ঘন্টায় প্রাণের শহর ঢাকা আর আমার মমতাময়ী মায়ের কাছে। ছেলে মেয়ে দুটো’কে ছেড়ে আসতে কষ্ট হচ্ছিলো, মায়া বড় কঠিন অনুভূতি।
প্রাণের শহর ঢাকা। টানা দু’মাস আবারো ফুটপাত ধরে হাঁটবো। আশ্চর্য এই ঢাকা শহর। যে আসে তাকেই বুকে তুলে নেয়,জীবনটা বদলে দেয়। এক সময় ভাগ্যের চাকা ঘোরতে এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি, ধীরে ধীরে সময়টা বদলাতে পেরেছি, কিন্তু হাঁটা ছাড়তে পারিনি । মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া, নানা রকম মানুষ দেখা, এ যেন প্রতিদিনের ভিন্ন ভিন্ন পাওয়া।
পশ্চিমের সাইড ওয়াক ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে গেছি নানান দেশের নানান বর্ণের,ধর্মের মানুষের ভিড়ে। মনে পড়েছে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সেই বিখ্যাত কবিতা,,,,
“জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী।
শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা
সবাই আমরা সমান বুঝি।
কচিকাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি
বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।
দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,
জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙ্গা,
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবারই সমান রাঙা”।