নরওয়ে থেকে:
সৎ, কর্মঠ , সজ্জন ও প্রতিভাবান হোন। তবে সে আপনি দেশের মাটি থাকেন কিংবা প্রবাসে যান না কেন, নিজের কর্মদক্ষতায় অনেক উপরে উঠে যাবেন তা শত পার্সেন্ট নিশ্চিত। আমরা যারা বাংলাদেশী, তারা সব সময়ই নিজেদের গুনাগুন ও প্রতিভা সম্মন্ধে সন্ধিহান। বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক ব্যাপারে চরম নেতিবাচক মনোভাব আমাদের। কিন্তু মনে রাখবেন যেহেতো বাংলাদেশ অনেক ছোট একটা দেশ এবং বিশাল জনসংখ্যার ভারে নতজানু, তাই সব ক্ষেত্রে আমাদের আর্থ সামাজিক যে পরিসংখ্যান আছে তা বিশ্বের অন্নান্য উন্নত দেশ গুলোর সাথে পরিমাপ করা মোটেও ঠিক নয় বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশিরা অনেক কর্মঠ ও প্রতিভাবান। যেহেতো দেশের ভেতর সীমার অধিক লোকের বসবাস তাই স্বাভাবিক ভাবেই দেশের ভেতর থেকে সবারই যে প্রতিভা দেখানোর সুজুগ হবে তা কিন্তু হয়ে উঠেনা। আমার প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, প্রবাসে আমরা বাংলাদেশিরা যে যেকোনো প্রতিস্টানেই কাজ করছিনা কেন, ভালো ও কর্মঠ মানুষ হিসাবে আমাদের বিরাট একটা সুনাম আছে। বাংলাদেশীরা যে কোনো প্রতিষ্টানে প্রথমে একেবারে নিম্নমানের কর্মচারী হয়ে ডুকলেও খুব রাতারাতি আমাদের উন্নতি হয় এবং আমাদের সততা, যুগ্যতা ও নিষ্টাবলে অনেক ক্ষেত্রে আমরা বড়ো বড়ো পোস্ট গুলো হাতিয়ে নেই যা আমাদেরই সাথে কাজ করা বিভিন্ন দেশীয় প্রবাসীদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। বাংলাদেশিরা এই ক্ষেত্রে প্রায় সবার চেয়ে এগিয়ে কেন জানেন ? কারণ আমরা কাজ করতে জানি, আমরা কর্মঠ এবং অনাখাঙ্কিত কিছু ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সবাই প্রায় দিয়ীত্বশীল ও সৎ।
ছোট একটা দুকান চালাই, তারপরও কেন জানি সারাদিনে নিজের জন্য তেমন একটা সময় হয়ে উঠেনা। তবে নিজেকে শারীরিক অমানুষিক ভাবে ঠিক রাখবার জন্য প্রতিদিন কাজ থেকে ২ ঘন্টা করে ছুটি নেই। শহরের আশেপাশে ঘুরে বেড়াই , কফি হাউসে বসি, বই পত্রিকা পড়ি। আমি যে শহরে থাকি, সেখানে নরওয়েজিয়ানদের বাদ দিয়ে, আরো হাজার তিনেক ভিনদেশি মানুষদের বসবাস। কেউ পোলিশ, কেউবা ইতালিয়ান, কেউ না আফ্রিকান, কেউ বসনিয়ান, কেউ এরাবিক, কেউ পাকিস্তানী। ম্যান্ডালছোট শহর, আমরা প্রায় সবাই সবাইকে চিনি , সবাই সবার ব্যাপারে জানে, ভাগ্যের ব্যাপার মান্ডালের মোটামোটি প্রায় সবাই আমাকে অনেক স্নেহ করেন । তো যাই হোক সেদিন এক সুপার মার্কেটের ভিতর দিয়ে হাটছিলাম, তো কফি হাউসে বসে থাকা এক গ্রূপ আফ্রিকান আমাকে তাদের সাথে বসে এক কাপ কফি পান করবার জন্য অনুরুদ করলো। কাজের তাড়া, তাই বসবার ইচ্ছে ছিলোনা তারপরও বসলাম। তো কথার শুরুতেই ওরা বললো যে ওরা বাংলাদেশিদের অনেক ঈর্ষা ও সম্মান করে। ঈর্ষা করে কারণ ওদের দেখা মতে প্রায় সব বাংলাদেশীই সারা বৎসর কোনো না কোনো কাজ করেন যেখানে প্রায় ৯০% আফ্রিকানরা বেকার। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সম্মান করার ব্যাপারটা কেন বুঝলাম না ? ওদের মতে বাংলাদেশিরা সব কাজে পারোদর্শী , যেকোনো কিছু মেরামত বলেন, রঙের কাজ বলেন, ইলেক্ট্রিকের কাজ বলেন আর কম্পিউটার চালানো বলেন সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের হাত পাকা।
ওদের একটাই কথা , বাংলাদেশিরা যে দেশেই আছে যে শহরেই আছে , কাজের মধ্যে আছে এবং কোনো না কোনোভাবে সবাই এক পর্যায়ে গিয়ে কর্মচারী থেকে প্রমোশন পেয়ে বস হয়ে যায়। ওরা ওদের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলো, যাদের সাথে বসেছিলাম তারা সবাই এক দেশের নাগরিক ছিলোনা , তারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং ভিবিন্ন দেশ ঘুরে তারা শেষমেশ নরওয়েতে এসে স্থায়ী হয়েছে। ওদের কথা হলো, নরওয়েতে আসবার পথে ওরা যে যে দেশেই দু এক বৎসর ছিল, সে সব দেশেই বাংলাদেশিরা ছিল এবং ওদের সব বাংলাদেশী কলিগরা প্রথমে প্রথমে ওদের সহকর্মী ছিল কিন্তু বছর খানেকের মধ্যেই ভালো ভালো পদ হাঁকিয়ে ওদেরই বস হয়ে গিয়েছিলো। ওরা সুদানে থাকাকালীন সময়ে এক বহুজাতির সামরিক রেস্টুরেন্টে নাকি যারা মুছার কাজ করতো , তো ওখানে নাকি আরো ৫ জন লোক লাগবে টেবিল ও রান্না ঘর দুআ মুছা করবার জন্য ও খাবার দাবার পরিবেশন করবার জন্য। যেকোনোভাবেই হোক সেখানে নাকি ৫ বাংলাদেশির আবির্ভাব। সবাই নাকি অনার্স মাস্টার্স পাশ কিন্তু এসেছে জাড়া মুছার কাজে। তো বৎসর ঘুরতেই না ঘুরতেই ওই ৫ বাংলাদেশির ৫ বাংলাদেশী নাকি ভিবিন্ন পদে বস হয়ে গিয়েছিলো আর এর একটাই কারণ ছিল যে োর সবাইই নাকি ইলেকট্রিক, মেকানিক, অর্থনীতি সব ব্যাপারে বিশেষ ভাবে পারদর্শী ছিল যা ওখানে কর্মরত ভিন্ন দেশীয় অন্নান্য কোনো কর্মচারিই ছিলোনা।
নরওয়েতে আমার জানাশুনা মতো যে প্রতিস্টানেই বাংলাদেশিরা কাজ করছেন , প্রায় ৯০ % ভাগই মোটামোটি ভালো ও সম্মানজনক পদে কাজ করছেন ও যে প্রতিস্টানেই কাজ করছেন না কেন, বাংলাদেশিদের প্রায় সবাই উনাদের প্রতিষ্টানের মালিকদের কাছে বিশেষ ভালোবাসার পাত্র। যারা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সামাজিক ও শিক্ষা ব্যবস্তা নিয়ে বেঙ্গ রচনা করেন তারা একটা কথা মাথায় রাখবেন , বাংলাদেশ ১৬ কোটি জনগণের ছোট একটা দেশ, তারপরও এ দেশটা আপনাকে লালন পালন ও সুশিক্ষিত ও দক্ষ করতে যা দিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক অনেক গুন্ বেশি। ১৬ কোটি জনগণের ছুট্ট একটা দেশের কাছে এর চেয়ে অধিক বেশি আশা করাই ঠিক না।
অন্য বাংলাদেশিরা যখন নিজের যুগ্যতা ও কর্ম দক্ষতায় দেশ ও প্রবাসে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছেন সেখানে আপনিই যখন পিছে পড়ে আছেন সেখানে দেশ ও সমাজের ভুল ত্রূটি না খুঁজে নিজের যুগ্যতা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর দিকে খেয়াল দেন। সময়ের সুব্যবহার করতে শেখেন , দেখবেন বৎসর ঘুরতে না ঘুরতেই আপনার ভাগ্য পাল্টে গেছে।
সবাই ভালো থাকবেন। নরওয়ে থেকে সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।