ঠান্ডা এখন কম, তাপমাত্রা শূন্যের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। ভেলকি দিয়ে পথঘাটে জমে থাকা তুষার অদৃশ্য করে দিলে নির্দ্বিধায় বলা যাবে এখন শীত না, হেমন্তকাল। মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়, হিমেল হওয়া বইলে কাপড় চোপড় ভেদ করে অস্থিমজ্জা শুদ্ধ কাঁপিয়ে দ্যায়! তবে তাপমাত্রার কথা বলার জন্যে লিখতে বসিনি আজ।
বাইরে, মাঠে তুষারের স্তুপ, ছেলেপিলেদের হই-হুল্লোড়, বড়দের ব্যাস্ততা। বিভিন্ন আকৃতির কয়েকটা তুষারের বোল্ডার গড়িয়ে এনে একের ওপর এক বসিয়ে বিশাল একটা তুষারমানব বানানো হয়েছে। চোখ-মুখ বসানো হয়েছে ওটার, টুপী এবং শুকনো ডাল দিয়ে তৈরী করা হাতে দস্তানা পড়ানোর কাজও শেষ, এখন গাজর দিয়ে নাক বসানো হলেই হাততালি আর শীষ পড়বে সবার! রাতে এখানে রং-বেরঙের বাতি জ্বালানোর প্রস্তুতি চলছে, শিশুদের হাতে হাতে তারাবাতি জ্বলবে, পুড়বে আতশবাজি, ওড়ানো হবে রঙিন ফানুস, গান গাইবে সবাই। নববর্ষ দোরগোড়ায়।
ঋতু হিসেবে শীত তেমন পছন্দ না হলেও এসময়টা বড় ভাললাগে। যুদ্ধ ছাড়াও এত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার পরও সবার মন খুশী, মুখে হাসি। সমস্ত দুঃখ ভুলে বছরের সবচাইতে বড় উৎসবের অপেক্ষায় সবাই। এখানে চিরসবুজ পাইন কিংবা ফার গাছ (রুশ ভাষায় বলে “ইয়োলকা”) দিয়ে ঘর-বাড়ি-শহর সাজানোর প্রথা হাজারবছরের। শহরের স্কয়ারগুলো রঙিন বাতি, ফিতে, বৃত্ত, খেলনা আর উপহার দিয়ে সাজানো বিশাল আকৃতির ‘ইয়োলকায়’ ভরে গ্যাছে, আশেপাশে মেলা, কনসার্ট, প্রমোদানুষ্ঠান। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘর সাজানোর জন্য ‘চিরসবুজ গাছ’ কেনার ছোট-বড়দের ভীড়। রঙিন বাতি, খেলনা, জরি আর উপহারসামগ্রীর দোকানগুলোর সমুখ দিয়ে যাবার সময় চোখ ঝলসে্ যায়! খাবার এবং পানীয়ের দোকানগুলোয় বিশাল ফর্দ নিয়ে লোকজনের ভিড়, ব্যস্ততা, খাবার- দাবারের পদ এবং রন্ধন-প্রণালী নিয়ে মহিলাদের আলোচনা!
শ্যাম্পেনের গ্লাস তুলে রাত বারোটার আগে আগে পুরোনো বছরকে বিদেয় দেয়া হয়, খানিক বাদেই নতুন বছরের আগমনে আবারো গ্লাস থেকে উপচে পড়বে শ্যাম্পেনের ফ্যানা। এরপর ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে সবাই ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে “দেদ মারোজের” (“গ্র্যান্ডফাদার ফ্রস্ট”, ‘সান্তা ক্লাউসের’ রুশ এনালগ) জন্যে। ওই বুড়ো চিমনি দিয়ে নেমে এসে সবার অগোচরে আঁধার ঘরে ইয়োলকার নীচে সবার জন্যে উপহার রেখে যায় (!)। নববর্ষের উপহার ‘দেদ মারোজ’ নামের কল্পিত বুড়োর কাছ থেকে আসার ব্যাপারটা সবার বিশ্বাস না হলেও তাঁকে পছন্দ করতে কারো আপত্তি আছে বলে আমার মনে হয় না, এই সময়টায় বিশেষ করে শিশুদের সবচাইতে অপেক্ষিত চরিত্র তিনি।
ঘুমিয়ে না পড়লে সকাল অব্দি চলে অনুষ্ঠান। আলোয় আলোকিত শহর,…স্কয়ার আর রেঁস্তোরাগুলো লোকে লোকারণ্য, সুঁচ ফ্যালার জায়গা থাকেনা কোথাও! রেডিওতে বাজে উৎসবের গান, দূরদর্শনে দ্যাখানো হয় নববর্ষের ছবি এবং অনুষ্ঠান। ইউলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারীর সাত তারিখে অর্থডক্স বড়দিন, এবং চৌদ্দ তারিখে (পুরোনো) নববর্ষ পালন করা হয় বলে উৎসব চলে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়া হয় ইয়োলকা, নিভে আসে রঙিন বাতি,……স্মৃতি হয়ে যায় নববর্ষ উদযাপনের আনন্দ!
আমার বাইরে বেরুবার সময় হলো, পাখিদের শস্যের দানা খাওয়াতে হবে,… এবং সবাইকে নবর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে সুদিন আর সুস্বাস্থ্য কামনা করার সময়ও হয়ে এলো….
নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা সবাইকে,…আবার দেখা হবে!
(ডিসেম্বর ৩১,২০১৬, ১১:৩০, খারকভ, ইউক্রেন)
দাদা , নতুন বছরের শুভেচছা।
অনেক দিন পর আপনার দেখা মিললো ,
কোথায় হারিয়ে যান মাঝেমাঝে ?
আমরা বঞ্চিতহই আপনার সুন্দর লেখা থেকে।