টরন্টো থেকে:-
লরেটা , এলিয়েট , ক্যারেন আরো অনেকের সাথে প্রতিদিন পার্কে দেখা হয় । আমি সহ আরো ও বাংগালী প্রতিবেশীরাও নিয়ে যাই আমাদের বাচ্চাদের । আমরা তো সারাক্ষন ই ব্যস্ত বাচ্চারা ব্যাথা পেল কিনা? ঝগড়া করছে কিনা ? আবার গায়ে ময়লা লাগছে কিনা? আমাদের এতো টেনশন করতে দেখে এলিটা প্রায় ই বলে তোমরা রিলাক্স করো , ওদের প্রব্লেম ওদেরকে সল্ভ করতে দাও। আর গায়ে ধুলা বালি লাগবে এটাইত খেলতে আসার আসল মজা । মাটির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠার মধ্যে প্রকৃতির সাথে আত্মিক সম্পর্ক ঘটে , সেটা থেকে কেন তাদের বঞ্চিত করবে ?
ব্রায়ান আর স্যামি বয়স তাদের ৩২/৩৩ বাচ্চা তিন টা । বয়স ৬, ৪,৩ এক সাথে পার্কে নিয়ে আসে । আবার লাইব্রেরীতেই দেখা হয় ওদের সাথে । দেখি বাচ্চাদের জন্য যে কর্নার টা রয়েছে বই হাতে সবার , ও নিজে পড়ে শোনাচ্ছে । আবার যাবার সময় দেখি অনেক বই নিয়ে যায় । ওদেরকে বেড টাইম এ পড়ে শোনাবে বলে । আমার তখন মনে হয় ছোট বেলায় আমরা ঘুমের সময় আব্বা, মা , খালাদের কাছে ঘুমপাড়ানির গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম তেমন কিছু । ব্রায়ান বলে এটা খুব ই গুরুত্বপূর্ন তুমি তোমার বাচ্চাকে নিয়ে ওদের বিছানায় শুয়ে গল্প পড়ে শুনাও এক সময় দেখবে তোমার বাচ্চা নিজেই বই নিয়ে পড়ছে । আবার তার সাথে তোমার আত্মিক সম্পর্ক আরোও গভীর হবে ।
জ্যানেট আর কার্লসের সেই এক ই কথা ।ওদের বাচ্চারা বড় টিন এজ বা তার চেয়ে বেশী । প্রতিদিন সন্ধ্যায় খাবার টেবিলে তাদের সারাদিনের কথা । কে কি করল? কিভাবে দিন গেল ? কারো সমস্যা কিনা সব বিষয়ে কথা বলে । ওই স ময় টুকু কারো হাতে কোন টেকনোলোজী থাকতে পারবে না । এটা সম্পূর্ন থাকবে ফ্যামিলির জন্য , ফ্যামিলি টাইম ।
জানতে চেষ্টা করি ওরা নিজেদের জন্য সময় দেয় কখন ।স্যামি বলে আমরা ৯ টার মধ্যে সমস্ত কাজ সেরে বাচ্চাদের বেডে দিয়ে দিব । কোন কথা নাই , সবাই একটা রুটিন ফলো করো । ওদের বেড়ে ওঠাটাকে আনন্দের সাথে এঞ্জয় করো । এই সময় টা দ্রুত চলে যাবে ।তুমি মিস করবে যদি তাদের সাথে এখন সময় না দাও ।
আমার নিজের জানার আগ্রহ থেকেই আমার প্রতিবেশীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলি । আমার নিজের সন্তানেরাও এই সমাজেই বেড়ে উঠছে সেটাও কারন । আমাদের একটা ধারনা উন্নত বিশ্বে মা বাবা ইচ্ছামত ঘুরে বেড়ায় আর ছেলে মেয়েরা ধর্ম আর কালচার বা সামাজিক শিক্ষা থেকে অনেক দূরে থাকে । সেই বিষয় গুলো জানার আগ্রহ থেকেই আমি সবার সাথে মিশি আর স্কুলের কাজের প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন প্লেসমেন্ট তো ছিল ই ।
এখানে বাচ্চাদের বড় করে তোলার ক্ষেত্রে বাবা মা দুজনেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়ে থাকেন । যে যখন সময় পাবে সে ভাবেই তারা ভাগ করে নেয় তাদের বিভিন্ন এক্টিভিটি গুলো ।আপনি পার্কে গিয়ে দেখবেন সেখানে হয়ত খেলার তেমন কিছু নাই , আছে মাংকি বার , আর দোলনা । কিন্ত মাটি আর বালু আছে আশে পাশে , বাচ্চারা ধুলো বালি দিয়ে খেলছে , মাংকী বারে ঝুলছে , ব্যাথা পাচ্ছে , ধাক্কা ধাক্কি হচ্ছে । প্যারেন্টস রা সবাই মিলে গল্প করছে । এর মাঝে বাচ্চারা এসে নালিশ ও করছে আমি প্রায় সব মা বাবাকে বলতে শুনেছি , যাও তোমাদের সমস্যা তোমরা মিটাও । তখন নিজেরা একে অন্যকে সরি বলে আবার খেলা শুরু করে । স্কুলেও তাই যে বাচ্চা বেশী নালিশ করবে সে তার প্রিয় খেলাটি খেলতে পারবে না । এই ভাবে বাচ্চাটিও শিখে যায় কিভাবে সবার সাথে চলতে হবে । শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং এটাই শিক্ষার মুল , এরা ছোট বেলা থেকেই সেই শিক্ষা পায় । আর পরিবারই সব মানবিক শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু , আর স্কুল সেটাকে সমাজে প্রতিফলন ঘটাতে কাজে লাগায় ।
আমি আশা বাদী হতে চাই এই ছোট ছোট শিক্ষার মাধ্ম্যে আমাদের সন্তানন্দের মানবিক হতে প্রেরনা জোগাতে পারব ।
কিন্তু ভাল নাম্বরের আগে ভাল মানুষ হও সে কথা কি শেখানো হয় আজ পরিবার থেকে বা স্কুলে ? আমাদের সন্তানেরা মানবিক হবে , নিজেরা অন্যায় , নীতিহীন কাজ করা থেকে বিরত থাকবে , আমরা অনেকেই সেই শিক্ষা কি দেই নিজের সন্তানকে ? রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকলে পাড়ার যে কোন মুরুব্বী ধ্মক দিয়ে বলতেন তোমার মত ছেলের এগুলো শোভা পায় না ।যে কোন মুরুব্বী্ অন্যায় দেখলে যার ছেলে মেয়েই হোক শাসন করতে পারতেন, এখন কেন তা সম্ভব না ?
বন্ধুর বাবাকে গোপনে হিটলার ( সবাই কে শাসন করত বলে ) বাবা উপাধি দেওয়া ছেলেমেয়েরা কিন্তু ঠিকই ভয় বা সম্মান করত । বাড়ীর একটা অলিখিত নিয়ম মেনে চলত, কেন আজ তা থেকে অনেক দূরে ?
কোন নির্বাসনে আজ তাঁরা ? তারা আজ বিলুপ্ত হওয়া ডাইনসরের মত !!
তাদের কে আজ বড় প্রয়োজন এই “নম্বর ই সব ” শিক্ষা কে বিসর্জন দিয়ে সত্যি কারের সুশীল গড়ে তোলার কাণ্ডারি হিসেবে ।