ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড, নরওয়ে থেকে:-
গেদু চাচা আর রফিক চাচা প্রায় একই সময় ৬ বছরের ব্যবধানে ১৯৭৫ সালে এবং ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাত্রা শুরু করেন। উনাদের প্রথম বাসস্থান ছিল জার্মানিতে। জার্মানিতে অনেক বৎসর থাকার পর উনারা দুজনই সুইডেনে ছিলেন অনেক বৎসর। বিগত ২০ বছর ধরে নরওয়ের পাসপোর্ট গ্রহণ করে এখন নরওয়েতে স্তায়ী বসবাস করছেন। আগেই বলেছিলম যে গেদু চাচার বাড়ি গোপালগঞ্জে এবং উনি শেখ মুজিব সাহেবের এলাকার ছোট ভাই এবং রাজনৈতিক সহচর ছিলেন। অন্যদিকে রফিক চাচার বাড়ি ফেনীতে, ফেনী জেলা আবার জিয়া উর রহমানের পৈতৃক বাড়ি বগুড়া থেকে বেশি দূরে নয় তাই রফিক চাচা মুক্তিযুদ্ধা হলেও জাতীয়তাবাদী ঘরনা (বি এন পি ) দলীয় সমর্থক। একমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছাড়া গেদু চাচা আর রফিক চাচা একে অন্যের জানেমান বন্ধু এবং দুজনই দুর্দান্ত মুক্তিযুদ্ধা।
বিগত ৩৯ বৎসর ধরে উনারা একে অন্যের তরে বন্ধুত্বের অনেক নিদর্শন রেখেছেন, জার্মানে একই বাসায় থেকেছেন, একই কোম্পানিতে কাজ করেছেন, ১৯৮৫ সালে পারিবারিক সুখ শান্তি এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের আশায় শেষেমেশ বুদ্ধি করে একই সাথে সুইডেনের স্টকহোমে মোভ করেছেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য করে লাভবান হবার প্রত্যয় নিয়ে একসাথে মিলে ২০০০ সালে নরওয়েতে এসে ঘাঁটি গেড়েছেন।
৩৯ বছরের জানাশুনা এবং বন্ধুত্বের দিনগুলোতে একেবারেই যে মনোমালিন্য হয়নাই তা না তবে এই করোনা দুর্যুগে গেদু চাচা আর রফিক চাচার মনো মালিন্য তুঙ্গে উঠেছে। গেদু চাচা আর রফিক চাচা দুজনই আমার গুরুজন, সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আমি যেমন উনাদের সম্মান করি ঠিক তেমনি উনারাও আমাকে অনেক স্নেহ করেন। সেদিন রোজার ঠিক আগে উনাদের সাথে কফি হাউস বসে তিনজনে কফি খাচ্ছিলাম, নরওয়েতে করোনা পরবর্তী লক ডাউন উপভোগ করছিলাম, মজার মজার আলোচনা করছিলাম। কিন্তু হটাৎ করে আলোচনা দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় মোড় নেয় এবং উনাদের তর্কে বিতর্কে কফি হাউসের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ঘটনা খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে আমি উনাদের নিয়ে কফি হাউস থেকে বের হয়ে শহরের সাথে লাগানো সমুদ্র সৈকতে চলে আসি। আমি জানি যে সমুদ্রের মিহি বাতাস আর নীল নোনা জল সব কষ্টকে দূরে ঠেলে দেয়, সমুদ্রের আহ্বান বন্ধুত্বের মাঝে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাকে অটুট রাখে।
আপনাদের সবার জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখা ভালো যে নরওয়েতে লক ডাউন থাকা অবস্থায় নরওয়েতে বসবাসকারী সকল নরওয়েজিয়ান সহ নরওয়েতে লিগেলি বসবাসকারী সব বাসিন্দারা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার থেকে টাকা পেয়েছেন তাই লক ডাউনের কারণে এখানে সারাদিন ঘরে বসে থাকার কষ্ট ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট পোহাতে হয়নি।
আমি, গেদু চাচা, রফিক চাচা আমরা সবাই নরওয়েজিয়ান পাসপোর্টধারী হলেও আমাদের মন প্রাণ আত্মা বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশে আমাদের মন প্রাণ সব কিছু পড়ে থাকে তাই আমাদের সব আলোচনায় শেষমেশ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বিষয়াদি উঠে আসে। বর্তমানের করোনা সংকটে তাই স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় করোনাই মুখ্য বিষয় ছিল।
নরওয়ে আর বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন,তারপরও দেশের জন্য টান আর ভালোবাসার জন্য দেশের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে নরওয়েতে আছেন ভুলে গিয়ে গেদু চাচা আর রফিক চাচা জগড়ায়, আলোচনায় মেতে উঠেন,, উনারা ভুলে যান যে বাংলাদেশ নরওয়ে ২০০ বছর দূরে দাঁড়িয়ে, উনারা ভুলে যান যে নরওয়েতে যা পাওয়া যায় সে সকল, নীতি নিয়ম, সুবিধাগুলো বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় আশা করাটা একেবারেই দিবা স্বপ্ন। দেশি পলিটিক্স উনাদের যৌবন থেকে সব কেড়ে নিয়েছে, উনাদেরকে প্রবাসী করেছে কিন্তু উনাদের বুকের ভেতর থেকে দেশের আর দেশের মানুষদের প্রতি ভালোবাসা টুকু কেড়ে নিতে পারেনি।
আমি উনাদের জগড়া শুনি, একে ওপরের প্রতি ভালোবাসা শ্রদ্ধাবোধ আর বন্ধুত্বের নিদর্শন অবলোকন করি আর মনে মনে আমার ব্যক্তি জীবনে গেদু চাচা আর রফিক চাচার মতো বন্ধু খুঁজি।
আল্লাহ গেদু চাচা আর রফিক চাচাদের কে অনেক লম্বা হায়াৎ দান করুন যাতে করে আমি উনাদের কাছ থেকে যৌবনের গল্প শুনতে পারি, বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারি আর অমায়িক দুজন মানুষের ভালোবাসা আর রহমতের ছায়ায় বেঁচে থাকতে পারি।
Dere som forstår norsk burde vite at Gedu onkel og Rofik onkel er det fiktiv karakter . I det virkelige livet er det ingen Gedu onkel og Rofik onkel som bor i Kristiansand.