আমরা সবাই জানি কিছুদিন আগে ম্যানচেস্টার এ সন্ত্রাসী হামলার কারনে অনেক ছেলে মেয়ের (বেশিরভাগই তরুন) জীবন অঝরে চলে গেছে। কয়েকদিন ধরে রেডিওতে শুনছি তারা এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছে, প্রতিরোধের উপায় নিয়ে। তবে সবচেয়ে যে বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে আর তা হল আমাদের ছেলে মেয়েরা কিভাবে এর প্রভাব মোকাবেলা করবে সেটা নিয়ে আলোচনা করছে। একজন মনোবিজ্ঞানীর মতামত শুনলাম, ভালো লাগলো তাই একজন মনোবিজ্ঞানী হিসাবে মনে হল একটু শেয়ার করা দরকার। আমার আলোচনার বিষয় কিন্তু ধর্ম না, বা এর থেকে উত্তরনের উপায় কি? তাও না, বরং এই সমস্ত অনাকাংখিত ঘটনার কারনে আমাদের অভিবাসীদের ছেলে মেয়েরা কতটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে, তা আলোকপাত করা এবং একজন অভিবাবক হিসাবে আমাদের কিছু করার আছে কিনা? তা দেখা।
অভিবাসীদের ছেলে মেয়েরা বেশি চ্যালেঞ্জ এ পরতে পারে অনেক কারনে। এক, তাদের গায়ের রঙ, দ্বিতীয়ত তাদের ধর্ম, ৩য়, আমরা অভিবাসী। যখনই এই ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে তখনই Islamophobia এবং অভিবাসী সম্পর্কে বিরুপ ধারনা চরমে উঠে। কানাডা এমন একটা দেশ যেখানে এই বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে মোকাবেলা করে থাকে। তারপরও দেখা যায়, স্কুল কলেজে অনেক ছেলে মেয়ে তাদের গায়ের রঙ, ধর্ম এবং অভিবাসী হওয়ার কারনে bullying, discrimination, racism এর শিকার হতে পারে। আপনি নিজে কিন্তু জানবেন না, হটাত আপনার ছেলে বা মেয়েটি কেন চুপচাপ হয়ে গেল, অন্য আরও কারন থাকতে পারে, তবে যদি উপরের কারণগুলো হয়, তাহলে এর ভয়াবহতা হয় ভয়ানক।
যখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটবে, তখনই তরুণদের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হবে। আপনি কি আপনার ছেলে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছেন, সে এই বিষয়টাকে তারা কিভাবে দেখে। তাদের বয়সের কারনে রক্ত গরম থাকতে পারে এবং যদি কোন কারনে এই বিষয়গুলোকে যদি মুক্তির/জান্নাতের সহজ রাস্তা বা দেখানোর মত অথবা নিজেকে চেনানোর উপযুক্ত উপায় মনে করে, তাহলে কিন্তু ভয়ানক। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা এসব কাজ করে তারা ছোটবেলাই নাকি শান্তশিষ্ট ছিল বলে শুনা যায়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যতটা পারা যায় বাচ্চাদের না জানলেই ভাল বিশেষ করে যখন তারা ছোট থাকে (৭-৮ বছরের নিচে)। আবার যখন তারা জানবে বিভিন্ন মাধ্যমে (টিভি, রেডিও, বন্ধুবান্ধব কিংবা সামাজিক মাধ্যম), তাহলে মনে কোন প্রশ্ন বা ভ্রান্ত ধারনা থাকলে অবশ্যই তা দূর করতে হবে এবং এই কাজটি আপনি তখনই করতে পারবেন যখন আপনি তাদের সাথে একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। মনে রাখবেন আপনার একটু অসচেতনাই ডেকে নিয়ে আসতে পারে চরম বিপদ।
মনোবিজ্ঞানে পড়ে আসছি, কেউ যখন ১২-১৩ বছর বয়সে পদার্পণ করে, তখন তার মধ্যে অনেক শারিরিক ও মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই সময়টাকে মনোবিজ্ঞানে ক্রান্তিকাল বলা হয়। কারন এই বয়সে তাদের শারিরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারনে তারা নিজেদের কখনও বড়দের সাথে বা বড় হয়েছে মনে করে। আবার যখন তারা বড়দের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয় তখন নিজেদের ছোট মনে করে, তারা এক ধরনের identity crisis এর মধ্যে থাকে। তারা হটাত করে চুপ হয়ে যেতে পারে, পরিবারের সঙ্গে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে, আবার অনেক ছেলে মেয়েদের মধ্যে বেশি চঞ্চলতা দেখা দিতে পারে। যেটাই হোক, এই সময়ে তাদের অনেক সাপোর্ট এবং সহযোগিতা দরকার হয়। আপনি দেখেন এই সময়ে আপনি কি করেন, আপনার এই বয়সের ছেলে মেয়েদের সাথে? হয়তো উল্টাটা করেন। আবার তাদের এই ক্রাইসিস সময়ে যদি তারা যথাযত সাহায্য সহযোগিতা না পায়, তাহলে তাদের বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
পরিশেষে ছেলে মেয়েরা এই সময়ে একটা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে identity crisis এর কারনে। যখন তারা দেখে তাদের মনের কথাগুলো অন্য কেউ মনোযোগ সহকারে শুনছে, তাদেরকে সমবেদনা দিচ্ছে তখন তাদের প্রতি তারা আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। তারা যদি দেখে তাদের বাড়িতে সেই ধরনের পরিবেশ নেই, তাহলে তারা বেশি সময় বাইরে বন্ধু বান্ধবদের সাথে কাটায়। সচরাচর দেখা যায় তারা তাদের peer group কে বেশি বিশ্বাস করা শুরু করে অথবা যেখানে তাদের মনের মত পরিবেশ পায়, সেখানে বেশি comfort feel করে। অনেকে আবার তাদের এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিপথগামী (জঙ্গি, গ্যাং কালচার) করার চেষ্টা করে, যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই।
যেহেতু এই সময়ে ছেলে মেয়েরা সব দিক থেকে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যায়, তাই আসুন আমরা সবাই একটু সচেতন হই এবং আমাদের ছেলে মেয়েদের বিপদ্গামি হওয়া থেকে বাচাই এবংতা তাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে …।।