টরন্টোতে সবজি বাগানের প্রচলনটা পুরোনো হলেও এটার ব্যাপকতা লাভ করে করোনা কালীন সময়ে।মহামারীর কারণে গৃহবন্দ মানুষের কাছে এটা ছিল একটা বিনোদন বা সময় কাটানোর বিশেষ মাধ্যম।  আঙিনা কৃষি এই সময় ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আমাদের কমুনিটির মাঝে। এমন কি যারা এপার্টমেন্টে থাকতেন তারাও পিছিয়ে ছিলেন না। তাদের ব্যালকনি গুলির যথাযত সৎব্যাবহার করে টবের মাঝে দেশীয় শাক সবজির আবাদ করেন। এই সময় আমাদের কমুনিটির অনেক পেশাদার কৃষিবিদগণ এগিয়ে  আসেন ওনাদের অভিজ্ঞতটার আলোকে পরামর্শ দেবার জন্য। এটি ছিল বাগানীদের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা এবং বড় পাওয়া। এই সময় বিভিন্ন কৃষিবিদ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে চারাও বিতরণ করা হয়।

প্রবাসে আমাদের বাংলাদেশী কমুনিটির দেশীয় শাক সবজির প্রতি একটি স্বভাব সুলভ দুর্বলতা আছে মূলত তাজা টাটকা শাক সবজির প্রতি ।  এ জন্যই প্রতি বছরই বাগানীদের সংখ্যা ক্রমশ  বেড়েই চলেছে। তবে স্বল্প কালীন গ্রীষ্ম কালের জন্য ও আবহাওয়ার কারনে অনেক সময় এটি একটা চেলেঞ্জের মতো। এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার জন্য স্থানীয় অনেক কৃষিবিদ এবং  কৃষি বিজ্ঞানীরা সব সময় বাগানীদের সহযোগিতা করে আসছেন। যাদের অনেকের মাঝে একটি উল্লেখযোগ্য নাম বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ মোহাম্মদ আলী।

ডঃ মোহাম্মদ আলী বর্তমানে টরন্টোর গ্রীষ্ম কালীন সময়ের উপযোগী নতুন জাতের বাংলাদেশী সবজি
চাষের উপর গবেষণা করছেন।  এই মুহূর্তে তিনি ৪টি নতুন জাতের বেগুনের গবেষণার কাজ শেষ করে এখন সেগুলিকে পরীক্ষামূলক ভাবে পর্যাবেক্ষন  করছেন। আর মধ্যে থেকে নতুন ২টি জাতের বেগুনের চারা আগামী  গ্রীষ্ম মৌসুমে বাজারে আসবে। এর মধ্যে একটির নাম “কাজী বেগুন “-বাংলাদেশ এগ্রিকালটারাল রিসার্চ কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক BARI র  ডঃ কাজী  বদরুদ্দোজার নাম অনুসারে। অন্যটি  বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ডঃ শাহ মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের  নামানুসারে  “শাহ বেগুন” ।  দুটি বেগুনই খুবই সুস্বাদু। আগামী মৌসুমে এই দুই জাতের বেগুনের চারা স্থানীয় কৃষিবিদদের কাছ থাকে সংগ্রহ করা যাবে। বেগুন ছাড়াও ডঃ আলী মরিচ,শিম ও অন্যান সবজির উপরেও গবেষণা করছেন।একই সাথে স্থানীয় সবজির জাত নিয়েও গবেষণা করছেন তিনি।

গত বুধবার টরন্টোর বিশিষ্ট রিয়ালেটর ও কৃষিবিদ মোস্তফা কামাল হিমু ভাইয়ের সাথে গিয়ে ছিলাম আলী ভাইয়ের বাগান পরিদর্শনে। এটাকে আঙিনা কৃষি বললে ভুল হবে, এটি রীতিমতো একটি গবেষণাগার। যেখানে উনি একাই একান্তে চালিয়ে যাচ্ছেন তার নিরালস গবেষণার কাজ। একই সাথে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে চলছে তার গবেষণা। দেখার আর জানার মতো অনেক নতুন বিষয় শিখলাম সেখানে।

আলী ভাইয়ের এই গবেষণা সফল ও সার্থক হোক আর তা প্রবাসী বাঙালি বাগানীদের ও  বাংলাদেশের বাগানীদের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসুক-এই শুভ কামনা রইলো।

(পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বেগুনকে পলিথিন ব্যাগের মধ্যে রাখা হয়)

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন