আমাদের প্রত্যেকেরই এখানে এসে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। এখানে অনেকে সংগ্রাম এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের survival job করাকে ধরা হয়। অনেকে মনে করে আমি এখানে কি করি তা যদি দেশে জানাই তাহলেতো মান সন্মান থাকবেনা, বাংলাদেশে আমি এই ছিলাম এখানে এসে এখন এই করছি। দেশে কথা বললে কোনভাবে এড়িয়ে যান এখানে তিনি কি করেন। অনেকে মনে করেন আমাদের সত্যটাই বলা উচিত, আবার অনেকে মনে করেন না তা ঠিক না। এখানেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব জানাবো কি জানাবো না। কি করা উচিত? একেবারে একক কোন উত্তর নাই, এটা ব্যক্তি ও context অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়। আপনি যদি confident না হন শেয়ার করার মতো তাহলে দরকার নাই, আবার আপনি যদি মনে করেন কি করেন শেয়ার করলে আপনার এটা পারিবারিক, সামজিক জীবনে কোন প্রভাব ফেলবেনা, তাহলে কোন সমস্যা নাই। যেমন এখানে সবায় জানে অভিবাসিদের কি ধরনের জব করতে হয়। এটা অনেকটা writing on the wall এর মত। অনেকে মনে করেন এটা বলে অনায়াসে শেয়ার করেন। আবার অনেকে বলেন এই সমস্ত দেশে কোন কাজকেই ছোট মনে করা হয়না। যেমন এখানে যারা লেখাপরা তারা বলতে গেলে সবাই এই ধরনের কাজ করে থাকে। অনেকে এই ধরনের কাজ করে তাদের tuition fees জোগাড় করার জন্য, আবার অনেকে তাদের লাইফটাকে আরও ভালভাবে এঞ্জয় করার জন্য (যেমন দামি ফোন বা ল্যাপটপ কেনার জন্য)। আবার এই ধরনের কাজ করে যে অভিজ্ঞতা হয় তা পরবর্তীতে অনেক কাজে লাগে। আবার সমাজ বিজ্ঞ্যানিরা এটাকে পুজিবাদি সমাজের কারসাজি মনে করে। তারা মনে করে এর মাধমে এই ধরনের কাজ গুলোকে normalize করা হয়। তবে হ্যাঁ context একটা বড় বিষয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অভিবাসিদের social location. Social location বলতে একজনের gender, race, social class, age, ability, religion, sexual orientation, and geographic location ইত্যাদি অনুযায়ী তার অবস্থানকে বুঝায়। বিষয়টা এভাবে বলা যায়, আমার social location হবে পুরুষ, এশিয়ান অরিজিন, নিম্ন মধ্যবিত্ত, প্রাপ্তবয়স্ক, abled bodied, মুসলিম, কানাডা এর নাগরিক, এবং ইংলিশ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ কানাডা এর context এ। এখানে আমার কিছু বিষয় privilege হিসাবে কাজ করে (যেমন পরুষ, abled bodied, নিম্ন মধ্যবিত্ত, ও প্রাপ্তবয়স্ক )। আবার কিছু বিসয় disadvantage হিসাবে (যেমন এশিয়ান অরিজিন মুসলিম, এবং ইংলিশ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ। এখানে একজন পুরুষ, গায়ের রঙ সাদা, উচ্চবিত্ত, মধ্যবয়স্ক, able bodied, Christian, ইংরজি জানা, কানাডা এর নাগরিক সবচেয়ে বেশি privilege পেয়ে থাকে।
সেই একইভাবে অভিবাসিদের social location পরিবর্তন হয়ে যায় কানাডাতে এসে। বাংলাদেশে পেক্ষাপটে আপনি পুরুষ, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত, প্রাপ্তবয়স্ক, abled bodied এবং mainstream culture এর, কিন্তু এখানে এসে আপনি এশিয়ান অরিজিন (সাউথ এশিয়ান), নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত, কানাডা এর নাগরিক বা PR, marginalized and minority community তে এবং ইংলিশএজ এ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হয়ে যায়। আর আপনার আর্থসামাজিক অবস্থার অবস্থা তো আরও শোচনীয়। আর আপনার ভুমিকার যে কি পরিবর্তন হয় তা আমরা সবাই জানি। এখানে এসে আপনার চিন্তাচেতনার ও অনেক পরিবর্তন হয়। আপনি সবসময় একটা সংকট পূর্ণ অবস্থায় থাকেন। আবার যখন তথাকতিত বা অনেক সময় বাস্তবে terrorism এর ঘটনা ঘটে তখন মুসলিম হিসাবে অনেক চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। এটা যে শুধু মুসলিমদের মধ্যে হয় তা নয়, আমার জানামতে অনেক অমুসলিম যাদের গায়ের রং সাদা নয় তারাও এই চিন্তায় বা সমস্যায় থাকে।
Islamophobia ও অভিবাসীঃ- Islamophobia বলতে সাধারণত ইসলাম বা মুসলিমদের সম্পর্কে বিরূপ বা বৈষম্যমুলক আচরণ করাকে বুঝায়। আপনি যদি আপনার ধর্মের কারনে কোন বৈষম্য মুলক আচরনের শিকার হন তা Islamophobia এর শিকার হিসাবে ধরা হয়। অনেকে মনে করে মিডিয়া তে মুসলিম বা ইসলাম সম্পর্কে এমনভাবে উপস্থাপন করে যার ফলে অমুসলিমদের মনে ইসলাম বা মুসলিম সম্পর্কে ভীতির সোচ্চার হয় তাই Islamophobia । অনেকে আবার এর জন্য কিছু মানুষের নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইসলামকে পুজি হিসাবে ব্যবহার করে। যখন কোন সন্ত্রাসী মুলক ঘটনা ঘটে তখন আমরা আমাদের মুসলিম পরিচয়টা দিতে একটু দ্বিধাতে থাকি। আমি নিজে যখন subway station থাকি তখন বেশি করে সাবধান থাকি, আবার আমি অনেকের কথা জানি যারা এই সময়গুলোতে মুসলিম পরিচয় থাকে এই বিষয় গুলো এরিয়ে চলেন (যেমন দাঁড়ি না রাখা, নিজের মুসলিম নাম না বলা)। তবে সবাই যে এটা করে তা নয়। এখানে আপনি আপনার social location কারনে সমস্যা এর মধ্যে পড়েন যা আমাদের মানসিক সাস্থ্যে অনেক প্রভাব ফেলে। আবার আপনি যদি মুসলিম, অভিবাসী এবং আপনার গায়ের রঙ সাদা না হয় তাহলে তো সমস্যায় সমস্যা। আবার যদি কোন শক্তিশালী দেশ বা দেশ প্রধান কোন এই বিষয়ে ঘোষণা দেন, তাহলে তো আর কথাই নাই। আমাদের ভাগ্য ভাল যে আমরা কেও কেও যথাযথ সাপোর্ট ও সাহায্য পেয়ে থাকি।
Xenophobia ও অভিবাসীঃ- Xenophobia বলতে আসলে অভিবাসী বা বাইরের দেশ থেকে আসা মানুষদের সম্পর্কে সেই দেশীয় মানুষদের বিরুপ আচরণকে বা ধারণাকে বুঝায়। আমি অভিবাসী হওয়ার কারনে এখান কার যারা আদি বাসিন্দা তারা আমারদের সাথে বৈষম্য মুলক আচরন করে থাকে। কানাডা এর ক্ষেত্রে আমরা সবাই অভিবাসী একমাত্র এখানকার Aboriginal People রা ছাড়া। আমরা কেও ৫ বছর আগে বা কেও বা ৫০ বছর আগে এসেছি। তার পর ও কিছু মানুষ যারা হয়তবা ৫০-৬০ বছর আগে এসেছে তারা নতুন অভিবাসিদের সহজে গ্রহন করতে পারে না। তারা কেও কেও অভিবাসীদের সমস্যা মনে করে, তারা মনে করে অভিবাসিদের জন্য তাদের কাজ কর্ম নাই, তারা আগের মত সুবিধা ভোগ করতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত ধারনা অভিবাসিদের সম্পর্কে। অভিবাসিরা যে এক দেশের অর্থনীতিতে কি ভুমিকা রাখে তা একটু খতিয়ে দেখলেই জানতে পারে। কিন্তু তারা সেটা না করে অভিবাসিদের সঙ্গে বৈষম্য মুলক আচরন করে।
চলবে………………………………